পুজোয় হাজির বৌদি canteen

ব্যবসা করলে কি বাঙালির জাত যায়? পুরুষালি, মেয়েলি, এই সংজ্ঞাগুলো কারা ঠিক করে? মেয়েদের স্বাধীন হওয়া কি পুরুষের মতো হওয়া? এরকম একাধিক জোরালো ও জরুরি প্রশ্ন নিয়ে আসছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘বৌদি ক্যান্টিন’। ছবির ট্রেলার লঞ্চ হল সম্প্রতি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

মাসকয়েক আগে লুক শেয়ার করে জানিয়েছিলেন ‘পৌলোমী আসছে। প্রত্যেক মেয়েদের মনের কথা নিয়ে।’ সাদামাঠা চেহারার শুভশ্রীকে দেখে আন্দাজ ছিল তখনই, ইদানীং যেমন একের পর এক ছবিতে ব্যতিক্রমী কিছু চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক মনে ছাপ ফেলছেন তিনি, পৌলোমীও তেমনই হতে চলেছে। আন্দাজ সঠিকভাবে মিলে যাওয়ায় দর্শক খুশি। পৌলোমী ‘বৌদি ক্যান্টিন’-এর (Boudi Canteen) মুখ্য চরিত্র আর ছবির ট্রেলার লঞ্চ হতেই বোঝা গেছে, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর অভিনয়-গুণে অবিকল পৌলোমী হয়ে উঠেছেন, সেই পৌলোমী যে আমাদের আশপাশের অসংখ্য পৌলোমীর প্রতিনিধি। ছবির ট্যাগ লাইন বলুন, ক্যাচ লাইন বলুন, কনটেন্ট বলুন ছত্রে ছত্রে মেয়েদের কথা, মেয়েদের মনের কথা। লড়াই তো আছেই, থাকেই, কিন্তু সেসব লড়াই তো ইতিহাসের পাতায় স্থান পায় না, গতানুগতিকতায় হারিয়ে যায়। তাই তার গুরুত্ব থেকে যায় শুধু তাদের কাছে যারা সেটা লড়ে আর যারা সেই সফরে পাশে থাকে! এ ছবি মেয়েদের হৃদয় ছুঁতে বাধ্য কারণ এই একান্ত যাপনগুলো রোজ তারা অতিক্রম করে। কেউ হারে, কেউ থামে, কেউ জেতে। ‘বৌদি ক্যান্টিন’ জেতার কথা বলে। বলে, একজন নারী যদি নিজেকে খুঁজে পান রান্নাঘরে, ব্যবসায়, তাহলে ক্ষতি কী? বলে আরও অনেক কথাই, কিন্তু সেসব দেখতে হলে আপনাকে পুজোর ছুটিতে ‘বৌদি ক্যান্টিন’ দেখতে হল-এ যেতে হবে।

পেশায় শিক্ষিকা পৌলোমী। কিন্তু নেশা রান্না। রান্না নিয়ে ভাবতে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভীষণ ভালবাসে। পৌলোমীর হাতের রান্নায় মুগ্ধ পরিবার থেকে পরিজন সকলে। এমনকী স্বামীর সহকর্মীরাও। প্রচুর প্রশংসা পায় রোজ। কিন্তু পৌলোমী যখন নেশাটাকেই পেশা করতে চায় কাজটা সহজ হয় না। আর সহজ হয় না বলেই পৌলোমী হাল ছাড়ে না। যাবতীয় আপস, অশান্তি, নিয়ম এবং প্রাচীনতার বেড়া টপকে নিজের মর্যাদা আদায়ের লড়াইটা যে নিজেকেই করতে হয় এবং লেগে থাকলে যে লড়াইটা লড়ে নেওয়া যায়, পৌলোমী তা দেখিয়ে দেয়। আর এটাই ছবির ইউএসপি। শুধু মানুষের মন ছোঁয়া নয়, তাদের ভেতর ভেতর কোথাও এগিয়ে দেওয়া। বিয়ে মানেই আপস, শ্বশুরবাড়ি মানেই মেনে কিংবা মানিয়ে নেওয়া আর হাতে রইল পেন্সিল-এর মতো নিজস্ব হা-হুতাশ, তা আর নয়।
এছাড়া আরও একটা বিষয় নিয়ে সোজা-সাপটা প্রশ্ন তোলা হয়েছে ছবিতে। বাঙালি ব্যবসা বোঝে না বা পারে না, অন্য প্রদেশের মানুষেরা যেমন এ-ধারণায় বিশ্বাসী তেমনই শিক্ষিত বাঙালি শ্রেণির এক অংশও ব্যবসা করাকে একটু খাটো চোখেই দেখে। এক ধরনের উন্নাসিকতায় আক্রান্ত তাঁরা মনে করেন, চাকরি না পেলে তবেই বাধ্য হয়ে ব্যবসা! চিরাচরিত এ-ধারণাও ভাঙতে চায় পৌলোমী।

স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়েও হইচই। কারণ মেয়েদের সবচেয়ে পছন্দসই প্রফেশন হল শিক্ষকতা। সেই দশটা-পাঁচটার চাকরি ছেড়ে পৌলোমী চায় হেঁশেল নিয়ে ব্যবসায় নামতে! সরাসরি প্রশ্ন তোলে, ‘ব্যবসা করলে কি বাঙালির জাত যায়?’ সব তির্যকতা ফুৎকারে উড়িয়ে হাতে হাতা-খুন্তি নিয়ে নিজের প্যাশনকেই প্রফেশন বানাতে এগিয়ে যায় সে। খোলে, ‘বৌদি ক্যান্টিন’ (Boudi Canteen)।

এই গোটা গল্পটি পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ভাবনায় আসার কারণ একজন নারীই! যার জীবন জেনেই তিনি সবটা ছবিতে তুলে ধরতে চেয়েছেন। ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান শেফ আসমা খান। আসমার জীবনকাহিনির আধারেই তৈরি হয়েছে ‘বৌদি ক্যান্টিন’। জন্মসূত্রে বাংলার সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও বর্তমানে আসমা লন্ডনের একাধিক ভারতীয় রেস্তরাঁর মালিক। পরমব্রত জানালেন নিজের ভাবনার কথা, ‘‘কোনও জ্ঞান দিতে নয়, একেবারেই একটা বার্তা দিতে আসছে, ‘বৌদি ক্যান্টিন’। দারুণ আধুনিকতার মধ্যে বাস করলেও আমাদের ভাবনার মধ্যে অনেক ধরনের সীমাবদ্ধতা আছে। এগুলো সময়ের সঙ্গে এসেছে, থেকেও গেছে। যেমন, আমাদের সমাজের একাংশ নারীর কাজকে তখনই মান্যতা দেয় যদি সে বাইরে গিয়ে কাজ করে। বাড়িতে থেকে, নিজের গুণাবলিকে এক্সপ্লোর করেও যে প্রফেশনালি সফল হওয়া যায় এটা বিশ্বাস করতেই পারে না। তা ছাড়া নারীদের সফল হওয়া মানেই যে পুরুষের সমকক্ষ হওয়া তা তো নয়। এরকম অনেক ভুল ধারণা আমাদের মজ্জাগত হয়ে আছে। ‘বৌদি ক্যান্টিন’ সেগুলো ভাঙতে সাহায্য করলে খুব খুশি হব।”

আরও পড়ুন: ব্রিটেনের ৭০ বছরের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রয়াত, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছবির কলাকুশলীরা সবাই। সাদামাঠা মধ্যবিত্ত গৃহিণীর মেকআপে ছবিতে দেখা গেলেও অনুষ্ঠানে শুভশ্রী ছিলেন দারুণ ঝকঝকে। পরমব্রত পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন ছবিতে। পৌলোমীর স্বামীর চরিত্রে আছেন সোহম চক্রবর্তীও। পৌলোমীর বন্ধুর চরিত্রে। গোটা বিষয়টি যিনি মানতে নারাজ ছিলেন, অর্থাৎ পৌলোমীর শাশুড়ি সুরভী, সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনসূয়া মজুমদার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, পূষণ দাশগুপ্ত, জয় সরকার, শ্রীজাত, অরিত্র সেন। ‘বৌদি ক্যান্টিন’-এর গল্প লিখেছেন অরিত্র। যৌথভাবে চিত্রনাট্য লিখেছেন সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌম্যশ্রী ঘোষ। ছবিতে সুর দিয়েছেন জয় সরকার। গান লিখেছেন শ্রীজাত এবং দীপাংশু আচার্য। ছবির সিনেমাটোগ্রাফার তিয়াস সেন। শিল্প নির্দেশনায় নিরঞ্জন ভট্টাচার্য। ‘বৌদি ক্যান্টিন’ প্রযোজনা করেছেন শ্যাডো ফিল্মস, আরটি নেটওয়ার্ক সলিউশনস এবং রোড শ্যাডো ফিল্মস। ছবি মুক্তি পাবে
৩০ সেপ্টেম্বর।

Latest article