পায়ে পায়ে পাহাড়ে

পা রেখেছে শরৎ। এটাই ভ্রমণের আদর্শ সময়। সাধারণভাবে বেড়ানোর পাশাপাশি অনেকেই ভালবাসেন দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে ট্রেক করতে। রুকস্যাক কাঁধে বেরিয়ে পড়েন। দলবেঁধে। রোমাঞ্চকর অভিযানে। আপনারাও বেরিয়ে পড়তে পারেন। অচেনাকে চেনার জন্য। অজানাকে জানার জন্য। হিমালয়ের কোলে আছে দুর্দান্ত কিছু ট্রেকিংয়ের জায়গা। কয়েকটির সন্ধান দিলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স
ফুলের স্বর্গরাজ্য। ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স। অবস্থান উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার দক্ষিণে। জায়গাটির নাম শুনলেই মন ছুটে যেতে চায়। ফুলের উপত্যকায় পৌঁছানোর আগে দেখতে পাওয়া যায় সবুজ ঘাসের সমাহার। বরফ গলতে শুরু করে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে। জুন মাসে এই উপত্যকা ভরে ওঠে নানা রঙের ফুলে। চারিদিকে থাকে নতুন সবুজ ঘাস। তাকালেই চোখের আরাম। দেখে মনে হতে পারে কেউ যেন সবুজ কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে সুউচ্চ হিমালয়ের কোলে। এই উপত্যকায় ৩০০টিরও বেশি প্রজাতির ফুল দেখতে পাওয়া যায়। তবে এখানে পর্যটকেরা ভিড় করেন মূলত ব্রহ্মকমল দেখার জন্য। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্ল্যান করতে পারেন ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্সে ট্রেক করার। যাবেন হাতে সময় নিয়ে।

আরও পড়ুন-সব খেলার সেরা… গাইলেন মুখ্যমন্ত্রী

বিয়াস কুণ্ড
ভারতের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং ট্র্যাক হিসাবে পরিচিত বিয়াস কুণ্ড। ঝুঁকি নিয়ে ট্রেক করতে চাইলে যেতে পারেন। পা ফেলতে হবে খুব সাবধানে। একটু এদিক ওদিক হলেই বিপদ। তবে আনন্দের বিষয়, ট্রেকিং করার সময় অপরূপ সুন্দর বিয়াস নদীর তীরে হাঁটার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি দেখতে পাবেন বাকরাথাচ এবং ধুন্ডির তৃণভূমি এবং পির পাঞ্জাল পর্বতমালার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। ট্রেক উপভোগ করার সেরা সময় মে থেকে অক্টোবর।

আরও পড়ুন-ইন্ডিয়া জোটে প্রধানমন্ত্রী পদের যোগ্য একাধিক, এনডিএতে একজনই, মোক্ষম খোঁচা উদ্ধব ঠাকরের

হাম্পতা পাস
ট্রেক করার জন্য দারুণ জায়গা হাম্পতা পাস। হিমাচল প্রদেশের পির পাঞ্জাল রেঞ্জে অবস্থিত। উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪,৪০০ মিটার। এখানে পৌঁছাতে সময় লাগবে কমপক্ষে চার বা পাঁচ দিন। চারদিকে ঘন দেবদারুগাছের বন। তুষার-ঢাকা উপত্যকা, স্ফটিক-স্বচ্ছ স্রোত এবং ফুলের সৌন্দর্য দূর করে দেবে শরীর ও মনের সমস্ত ক্লান্তি। লক্ষ্যে পৌঁছানো বেশ সহজ। ট্রেকিংয়ের পরিকল্পনা করতে পারেন জুন থেকে নভেম্বরের মধ্যে৷ একা একা নয়, গেলে যাবেন দলবেঁধে।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর ধিক্কার

রূপকুণ্ড
ট্রেক করার জন্য আরও একটি ফাটাফাটি জায়গা রূপকুণ্ড। এর প্রধান আকর্ষণ দাগহীন তুষারময় চূড়া। এ ছাড়াও অনেকেই দেখতে যান বিখ্যাত মিস্ট্রি লেক। এখানে ১২০০০ ফুট উচ্চতায় ট্রেকিং সম্পূর্ণ করতে ৭ থেকে ৯ দিন সময় লাগে। মে থেকে অক্টোবর এখানে ট্রেকিংয়ের সেরা সময়। কথিত আছে যে, ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ বনরক্ষীরা এই হিমবাহ পুলের নিচে শত শত হিমায়িত কঙ্কাল আবিষ্কার করেছিল।

আরও পড়ুন-বিশ্বভারতী-কাণ্ড: সুবিচার চেয়ে চিঠি নির্যাতিতা ৪ ছাত্রীর

মারখা উপত্যকা
মারখা উপত্যকায় ট্রেক করলে পৌঁছে যাবেন হেমিস জাতীয় উদ্যানে। ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে অনেকেরই স্বপ্ন থাকে লে ও লাদাখ যাওয়ার। মারখা উপত্যকার ট্রেকিং শুরু হয় লে-এর চিলিং থেকে। ৬ দিনের ট্রেকিং রুটে পড়বে স্কিউ, নিমালিং, কংমারু লা ইত্যাদি। ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় ট্রেক করা প্রথম কষ্টকর মনে হতেও পারে। কিন্তু অভিজ্ঞতা না থাকলেও এই নদী-উপত্যকা আপনি সহজেই হেঁটে পার করতে পারবেন।

আরও পড়ুন-ফাইনালে উঠে হুঙ্কার কুয়াদ্রাতের, ইস্টবেঙ্গলকে হারানো কঠিন আগেই বলেছি

জোংরি ট্রেক
নতুন ট্রেক করতে চাইলে আদর্শ জায়গা হতে পারে জোংরি ট্রেক। এই ট্র্যাকটি তুলনায় সহজ। মোটামুটি ৫ দিনের। যা য়ুকসোমে শেষ হয়। এই ট্রেকটি করতে চাইলে প্রথমে ১৫,০০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছতে হবে। তারপর অতিক্রম করতে হবে ২১ কিলোমিটার দূরত্ব। ট্রেকিং ট্রিপে আপনি বাখিম, কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান, সাচেন এবং শোখার মতো সুন্দর জায়গাগুলি দেখতে পাবেন। পাশাপাশি দেখতে পাবেন কিছু জলপ্রপাত এবং দুর্দান্ত ব্রিজ। এখান থেকে নেওয়া যায় জংগ্রি লা শৃঙ্গ-সহ হিমালয়ের ছবি। ট্রিপ সম্পূর্ণ করার পর মনের মধ্যে জন্ম নেবে অদ্ভুত এক প্রশান্তি।
প্রস্তুত। যেতে পারেন সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে।

আরও পড়ুন-আজ রাখি বন্ধন উৎসব, টুইটবার্তায় শুভেচ্ছা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের

সান্দাকফু ট্রেক
পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় ট্রেকিং রুট সান্দাকফু। উচ্চতা ১১ হাজার ফুট। এই ট্রেকটি করতে সময় লাগে ৬ দিন। দেখা মিলবে কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোটসে এবং মাকালুর। ট্রেক রুটের মধ্যে পড়বে সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান। এখানে রেড পান্ডার মতো বিরল প্রজাতির বিভিন্ন পশু ও পাখির দেখা মিলতে পারে। যদিও ট্রেকটি বছরের যে কোনও সময় করা যায়। কিন্তু যদি গরমে ট্রেক করেন তাহলে মন কেড়ে নেবে লাল টুকটুকে রডোডেনড্রন। যদি শীতে পরিকল্পনা করেন সান্দাকফু যাওয়ার, তাহলে পথে সঙ্গী হবে শুধুই সাদা বরফ।

মনে রাখবেন

ট্রেক করতে গেলে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিষয় মাথায় রেখে চলতে হবে। দুর্গম পাহাড়ে হাঁটতে গেলে শারীরিক ভাবে শক্ত-সামর্থ হতে হয়। সঙ্গে চাই মানসিক জোর। কিন্তু যাঁরা কোনওদিন ট্রেক করেননি কিংবা ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা নেই, তাঁদের পক্ষে প্রথমবার পাহাড়ে হাঁটা কষ্টকর হতে পারে। যদিও কিছু ট্রেক আছে, কোনও অভিজ্ঞতা ছাড়াই অতিক্রম করা যায়। তাই শরীর এবং মন ঠিকমতো সঙ্গ দিলে তবেই পা বাড়ান দুর্গম পাহাড়ি পথে।

Latest article