অনবদ্য দুটি কবিতা-পত্রিকা

কিছু পত্রিকা প্রকাশিত হয় কোনওরকম বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়াই। মেটায় দীক্ষিত পাঠকের মন ও মস্তিস্কের খিদে। তেমনই দুটি পত্রিকার উপর আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ‘শুধু বিঘে দুই’ পত্রিকার (Papers) দ্বাদশ সংখ্যা। সংগীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়। শুরু থেকেই এই পত্রিকা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে মননশীল পাঠকদের। সম্পাদক লিখেছেন, ‘আমাদের যোগাযোগ হয় কবিতা সার্ভারে। এভাবেই এগোনো, এভাবেই আগামীর পথ চলা।’ পত্রিকাটি এগিয়ে চলবে, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। চোখ রাখা যাক সাম্প্রতিক সংখ্যাটির উপর। শুরুতেই স্থান পেয়েছে রোশনারা মিত্রের সাক্ষাৎকার। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন অর্পিতা কুণ্ডু। সাক্ষাৎকারটি আন্তরিক। কথাবার্তা শুরু হয়েছে ঘরোয়া ভঙ্গিতে। ধীরে ধীরে তীক্ষ্ণ হয়েছে প্রশ্ন। সাবলীলভাবে বেরিয়ে এসেছে উত্তর। দুই কবির কথোপকথন ছুঁয়ে গেছে বিবিধ প্রসঙ্গ। একটি প্রশ্নের উত্তরে নয়ের দশকের কবি রোশনারা বলছেন, ‘নব্বই দশক একটা খুব ট্রানজিশনের সময়। ডিডি বাংলা থেকে মেট্রো চ্যানেল আসছে টিভিতে, প্রথম বাইরের জিনিসগুলো ঢুকছে, কম্পিউটার ঢুকছে, বলা যায় যে, এই সময়টা, যেটা এখন চলছে, সেটা ইন্ট্রোডিউসড হচ্ছে নব্বইয়ে। আমরা কিন্তু বুঝতে পারছি না তখন যে এরকম সময় আসবে।’ একটা বাঁক বদলের ছবি ফুটে উঠেছে উচ্চারণে। আমূল বদলে যাওয়া একটা সময়। যেটা আমাদের অনেকেরই চেনা। চোখের সামনে ছায়াছবির মতো ভেসে ওঠে। সাক্ষাৎকার শেষে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একগুচ্ছ কবিতা।

আরও পড়ুন: ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’-এ বাংলার দিদি, তুমুল উৎসাহ অনুরাগীদের

পারমিতা চক্রবর্তী লিখেছেন প্রবন্ধ। শিরোনাম ‘কবিতার বিষণ্ণ সরণি’। তাঁর কথায়, ‘কবিতাকে বুঝতে গেলে হৃদয়ে লাগে বেশি, সেখানে মস্তিষ্কের ভূমিকা খুবই সামান্য।’ এটা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত মত। সর্বজনগ্রাহ্য নাও হতে পারে। কারণ কবিতা অনুধাবনের জন্য যতটা হৃদয় লাগে, ততটাই মস্তিষ্ক। প্রবন্ধটি তিনি গুছিয়ে লিখেছেন। বিষণ্ণতার অন্বেষণ করেছেন বিভিন্ন কবির কবিতা ছুঁয়ে। আলোচনায় উঠে এসেছে মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, বিনয় মজুমদার, জয় গোস্বামী, ভাস্কর চক্রবর্তী প্রমুখ কবির পঙক্তি। চমৎকার বিশ্লেষণ। বিষণ্ণতার ধারাজলে স্নান করায় পাঠক মনকে। সংখ্যাটির অন্যতম আকর্ষণ এই সময়ের একঝাঁক কবির একগুচ্ছ কবিতা। শেষে আছে পাঠকের কথা। লিখেছেন যশোধরা রায়চৌধুরী এবং শুভম চক্রবর্তী। প্রচ্ছদশিল্পী রোচিঞ্চু সান্যাল। দাম ২০০ টাকা।
বিশুদ্ধ কবিতার ব্যতিক্রান্ত পত্রিকা ‘ক্লেদজ কুসুম’। ৪৩ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়। কবিতার এই অনবদ্য পত্রিকাটি বহু আগেই পাঠক মহলে সমাদৃত হয়েছে। চোখে পড়ে নিষ্ঠা, গভীরতা। হাতে এসেছে উৎসব সংখ্যাটি। বরাবরের মতো অনুবাদ বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। বিভাগটির নাম ‘অন্য ভাষা দীপ্রমুখ’। শুরুতেই অনূদিত হয়েছে হোর্হে লুইস বোর্হেস, পাবলো নেরুদার কবিতা। স্প্যানিশ থেকে অনুবাদ করেছেন শুভ চক্রবর্তী। সুবীর ঘোষের অনুবাদে প্রকাশিত হয়েছে নিকানর পাররার, রবার্ট ফ্রস্ট, এমিলি ডিকিনসনের কবিতা। সি মাস হিনির কবিতার ভাষান্তর করেছেন সুধাংশুরঞ্জন সাহা। শ্যামল জানা অনুবাদ করেছেন ম্যাক্সিম গোর্কির কবিতা।
বিদেশি কবিতার পাশাপাশি অনূদিত হয়েছে দেশীয় অন্য ভাষার কবিতাও। এন রঞ্জিতা সরকারের অনুবাদে প্রকাশিত হয়েছে রঘু লৈশাংথেমের কবিতা। অসমিয়া কবি হীরেন ভট্টাচার্যর কবিতা অনুবাদ করেছেন ব্রজকুমার সরকার। জ্যোতির্ময় দাশ অনুবাদ করেছেন কুমার বিক্রমের কবিতা। হেমন্ত দিভতের কবিতা প্রকাশ পেয়েছে সায়ন রায়ের ভাষান্তরে। বিভাগটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেতু রচনা করেছে দেশ-বিদেশের অন্য ভাষার কবিতার সঙ্গে।
একটি কবিতা উপহার দিয়েছেন শ্যামলকান্তি দাশ, শংকর চক্রবর্তী, পাপড়ি ভট্টাচার্য, গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ কওসর জামাল, সুশীল মণ্ডল, দুর্গাদাস মিদ্যা, অমিত কাশ্যপ, গৌতম হাজরা প্রমুখ। একাধিক কবিতা উপহার দিয়েছেন মলয় রায়চৌধুরী, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, উদয়ন ভট্টাচার্য, সৈয়দ হাসমত জালাল, মধুসূদন দরিপা প্রমুখ। এ ছাড়াও আছে চারটি মূল্যবান নিবন্ধ। লিখেছেন শাশ্বতী ভট্টাচার্য, উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, পারমিতা ভৌমিক, সুনীল মাজি। শ্যামল জানার প্রচ্ছদ প্রশংসনীয়। দাম ১২০ টাকা।

Latest article