কবির কাগজ কবিতার কাগজ ‘নতুন কবিসম্মেলন’। প্রকাশিত হচ্ছে কুড়ি বছর ধরে। শ্যামলকান্তি দাশের সম্পাদনায়। মনস্বী কবি-লেখক-চিন্তকরা এখানে লিখেছেন। মুক্ত মনে কথা বলেছেন। নিজেদের প্রকাশ করেছেন নবীনরাও। পুজোর আগেই বেরিয়েছে শারদীয়া সংখ্যা। এই সংখ্যাতেও ঘটেছে প্রবীণ-নবীনের মেলবন্ধন। কবিতার পত্রিকা। তবে গদ্যকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। জন্মলগ্ন থেকেই। গদ্যগুলো মূলত কবিতা-কেন্দ্রিক। সংখ্যার শুরুতেই রয়েছে সৌরীন ভট্টাচার্যর অসামান্য গদ্য ‘নারকী প্রেমের স্বর্গ’। রচনার আধার রবীন্দ্রনাথের ‘পরিশোধ’ কবিতা। যা থেকে গড়ে উঠেছে পূর্ণাঙ্গ নৃত্যনাট্য ‘শ্যামা’।
আরও পড়ুন-পেশাদারি রঙ্গালয়ের ১৫০ বছর
কবিতাটি বিশ্লেষণের পাশাপাশি আলোচনা করা হয়েছে শ্যামা, বজ্রসেন, উত্তীয় চরিত্রগুলো নিয়ে। মারাঠি সন্ত কবি তুকারাম। তাঁর কবিতা-সরোবরে স্নান করেছেন মারাঠি-ইংরেজি দ্বিভাষিক কবি দিলীপ চিত্রে। মগ্ন থেকেছেন অনুবাদে। অনুবাদের অনুবাদ-সহ দুই কবিকে নিয়ে নাতিদীর্ঘ গদ্য ‘দিলীপ চিত্রের তুকারাম’ উপহার দিয়েছেন অমিয় দেব। শেখর বসুর গদ্যের শিরোনাম ‘স্বপ্ন, সত্য ও কলকাতা’। আবর্তিত হয়েছে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী এসথার দুফলো এবং কলকাতাকে ঘিরে। চিত্রশিল্পী এবং কবিদের বন্ধুতার নির্মল ছবি এঁকেছেন সুমিতা চক্রবর্তী। ‘যামিনী রায় ও সমকালীন কবিরা’ শীর্ষক গদ্যে। তারাশঙ্করের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল যামিনী রায়ের। বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গেও ছিল নিবিড় বন্ধুত্ব। তাঁদের সম্পর্কের সমীকরণ চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে লেখায়। ছবি ও ভাস্কর্য স্থাপত্য সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন শঙ্খ ঘোষ। দেখতেনও নিয়মিত। লিখেছেন অবনীন্দ্রনাথ, যামিনী রায়, রবীন্দ্রনাথের ছবি নিয়ে।
আরও পড়ুন-ঈশ্বরের আপন দেশে
জানিয়েছেন মৃণাল ঘোষ, ‘শঙ্খ ঘোষের দৃশ্যকলা ভাবনা’ রচনায়। কবি জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে ‘কাঞ্চনফুলের কবি’ লিখেছেন মাসউদ আহমাদ। কীভাবে জন্ম নিয়েছে উপন্যাসটি, বিশেষ রচনায় তুলে ধরেছেন লেখক। আশ্চর্য গদ্যভাষা কমল চক্রবর্তীর। ‘আপেল বীক্ষণ’ রচনায় তিনি যাপন করেছেন স্বদেশ সেনের কবিতার সঙ্গে। জয় গোস্বামীর ‘দৈব’ কাব্যগ্রন্থের গভীর আলোচনা ফুটে উঠেছে অভীক মজুমদারের ‘ভাষা থেকে ভাষাতীতে মুহূর্ত থেকে মহাবিশ্বে : দৈব’ রচনায়। এ ছাড়াও কালীকৃষ্ণ গুহ, হিরণ মিত্র, সৈয়দ কওসর জামাল, মৃদুল দাশগুপ্ত, যশোধরা রায়চৌধুরী, সুধাংশুশেখর মুখোপাধ্যায়, মোস্তাক আহমেদ, অভিরূপ মুখোপাধ্যায়ের গদ্য সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে।
আরও পড়ুন-আজ মহারণ, অপেক্ষা শুধু বিরাট সেঞ্চুরির
প্রকাশিত হয়েছে অরুণ মিত্রের অপ্রকাশিত পত্রাবলি। সেইসঙ্গে আছে দুটি সাক্ষাৎকার। গণেশ হালুইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন সঞ্জয় ঘোষ। দেবশঙ্কর হালদারের সঙ্গে নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়। রংতুলি ও মঞ্চের দুই দিকপালের ভাবনার বিচিত্র দিক ধরা পড়েছে সাক্ষাৎকার দুটিতে। এ ছাড়াও আছে ধ্রুব এষ, চিন্ময় গুহর অন্য রচনা, ছন্দা চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক ঠাকুরের ভ্রমণ, অমৃতা ভট্টাচার্যর কাব্যনাটক।
কবিতা লিখেছেন জয় গোস্বামী, দেবারতি মিত্র, সুবোধ সরকার, রণজিৎ দাশ, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, শংকর চক্রবর্তী, শ্যামলকান্তি দাশ, গৌরশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজিত সরকার, কৃষ্ণা বসু, নির্মল হালদার, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, বিভাস রায়চৌধুরী, শিবাশিস মুখোপাধ্যায়, সুবীর সরকার প্রমুখ। সবমিলিয়ে সুসম্পাদিত একটি সংখ্যা। বিনোদন দেয় না। পাঠকমনকে ভাবায়। প্রচ্ছদ শিল্পী ধ্রুব এষ। দাম ২৫০ টাকা।
আরও পড়ুন-যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উড়িয়ে গাজার অ্যাম্বুল্যান্সে হামলা ইজরায়েলের
এই সময়ের অনিবার্য সাহিত্যপত্র ‘প্রতীতি’। বহু বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে গৌতম হাজরার সম্পাদনায়। বেরিয়েছে শারদীয়া সংখ্যা। বিষয়-বৈচিত্র্যে ভরপুর। আছে বেশকিছু মূল্যবান প্রবন্ধ। সুশীল সাহার লেখার শিরোনাম ‘ভাঙা পথের রাঙা ধুলায়’। রচনার আলো একটি চিঠি। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের মাতৃবিয়োগের পর লিখেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। যে চিঠিতে বন্ধুর মা সম্পর্কে ঝরে পড়ছে গভীর শ্রদ্ধা। পাশাপাশি বন্ধুর প্রতি রয়েছে কোমল পরামর্শ এবং বন্ধুপত্নীর অকুণ্ঠ প্রশংসা। শূন্যতাকে এক আত্মিক পূর্ণতায় উত্তীর্ণ করে দেবার শক্তি যে অলোকরঞ্জনের মধ্যে ছিল, জানা যায় চিঠিটি পড়ে। সন্তোষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন ‘কবি ও কবিতা— এক অস্তিত্ব চূর্ণ করা বিস্ময়’। কয়েকজন কবিকে ছুঁয়ে এগিয়েছে মননশীল এই আলোচনা। বাংলা ভাষার বহু কবির কবিতায় দেখা যায় অন্য ভাষার ছন্দের ব্যবহার। ভারতচন্দ্র, বুদ্ধদেব বসু এই পথে হেঁটে সফল হয়েছেন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত একই প্রবণতায় কয়েকটি সংস্কৃত ছন্দ প্রয়োগ করেছেন বাংলায়। লিখেছেন প্রণব চৌধুরী, ‘পরভাষার ছন্দানুকৃতি : কবিতার শত্রু মিত্রের’ প্রবন্ধে। এ ছাড়াও মুহম্মদ মতিউল্লাহ, গৌতম গুহ রায়, অংকুর সাহা, কামরুজ্জামান, শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তীর প্রবন্ধগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো।
আরও পড়ুন-যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উড়িয়ে গাজার অ্যাম্বুল্যান্সে হামলা ইজরায়েলের
নানা স্বাদের গল্প উপহার দিয়েছেন অসীম ভৌমিক, ছন্দা চট্টোপাধ্যায়, প্রবীর চক্রবর্তী, তরুণকুমার দাস, শুভায়ন বসু। সেইসঙ্গে আছে অণুগল্প, রম্যরচনা, ভ্রমণ, গ্রন্থ পর্যালোচনা এবং অনুবাদ।
কবিতা লিখেছেন সুবোধ সরকার, শ্যামলকান্তি দাশ, মাহমুদ কামাল, সুনীল মাজি, শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, উদয়ন ভট্টাচার্য, বেণু সরকার, ঋজুরেখ চক্রবর্তী, সুদীপ্ত মাজি, বিজয় মাখাল, শঙ্কর ঘোষ, আশিস মিশ্র, অমিত কাশ্যপ, তাজিমুর রহমান, হাননান আহসান, প্রদীপ আচার্য প্রমুখ। সুবর্ণ রায়ের দীর্ঘ কবিতার পাশাপাশি আছে নির্মল হালদার, অসিতবরণ চট্টোপাধ্যায়, উত্তম চৌধুরীর গুচ্ছ কবিতা। সুসম্পাদিত এই পত্রিকাটিও বিনোদন দেয় না। ভাবায়। প্রচ্ছদশিল্পী রাজদীপ পুরী। দাম ১৫০ টাকা।