সংবাদদাতা, শান্তিনিকেতন : বেনজির ঘটনা। রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর উপাচার্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় না বসে পাল্টা ঢিল ছুঁড়লেন। একজন শিক্ষাবিদের এই আচরণ দেশে আজ পর্যন্ত হয়নি। বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীরা ভাঙচুর করে ধরনা মঞ্চ। পড়ুয়াদের রান্না করা ভাত ফেলে দেয় নিরাপত্তারক্ষীরা। সেই সঙ্গে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে মস্তানিও করলেন উপাচার্য।
আরও পড়ুন-এমপি কাপ সাত গোল তারকের
এই ঘটনায় বিশ্বভারতীর প্রবীণ আশ্রমিক কালীপদ সিংহরায় বলেন, আমি দেখলাম উনি ঢিল ছুঁড়ছেন। খুবই নিন্দনীয়। আগে বাম আমলে সিপিএম করতেন। পরে দিল্লিতে আরএসএস করে বিশ্বভারতীতে উপাচার্য হয়েছেন। উনি অনেক কেলেঙ্কারিতে যুক্ত। ইনি না সরলে বিশ্বভারতী শেষ হয়ে যাবে। একইভাবে ছাত্রদের বিরুদ্ধে চেয়ার ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে। আন্দোলনকারী ছাত্রী মীনাক্ষী ভট্টাচার্য বলেন, উপাচার্য যেখানে ছাত্র আন্দোলনে নিজের হাতে ঢিল ছুঁড়ছেন সেখানে আর আমরা কী আশা করতে পারি? উনি যখন নিরাপত্তারক্ষী বেষ্টিত হয়ে আমাদের ধরনা মঞ্চের সামনে দিয়ে অফিসে যাচ্ছিলেন তখন আমরা হাতজোড় করে বলেছিলাম, আমাদের সঙ্গে কথা বলুন। তা না করে উনি পেশিশক্তি প্রদর্শন করলেন। তাই আমরা চাই এরকম ছাত্রবিদ্বেষী প্রতিহিংসাপরায়ণ উপাচার্যের বিদায়। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ায় নতুন করে উত্তেজনা বিশ্বভারতীতে৷ ফের পুলিশের সামনেই উপাচার্যের বাসভবনের সামনে পড়ুয়া-নিরাপত্তারক্ষীদের হাতাহাতি শুরু হয়। ছাত্র আন্দোলন ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আরও পড়ুন-বাদ বাংলার কৃষকরা
মঙ্গলবার সকালে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী তাঁর বাসভবন থেকে বেরোতে গিয়ে পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। অবস্থা সামলাতে ডেকে নেন নিরাপত্তারক্ষীদের। উপাচার্যকে ঘেরাওমুক্ত করতে গিয়ে এর পরেই পড়ুয়াদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালেন নিরাপত্তারক্ষীরা। নিরাপত্তারক্ষীদের ঘেরাটোপে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল অফিসে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যান উপাচার্য। কিন্তু সেখানেও একপ্রস্থ ঝামেলা হয়। বারবার ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন পড়ুয়া এবং নিরাপত্তারক্ষীরা। পুরো ঘটনায় পাল্টা আন্দোলনকারী পড়ুয়ারাও নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে তেড়ে যায়৷ এর পরেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়৷ খবর পেয়ে এসডিপিও’র নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়৷ উপাচার্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভিতরে যান।
আরও পড়ুন-সংসদে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্ন, বাংলার প্রাপ্য বকেয়াই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, স্বীকার করল কেন্দ্র
তবে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখায় প্রায় দু’ঘণ্টা। সেখানে থাকার পর ফের বিপুল সংখ্যক বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী সঙ্গে নিয়ে ব্যারিকেড করে নিজের বাসভবনের দিকে রওনা হন। পরে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে নিজের দফতর থেকে ফের বাসভবনে ফেরেন উপাচার্য। সেই সময় স্লোগান দেয় পড়ুয়ারা৷ পরে ফের নতুন করে শুরু হয় নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে পড়ুয়াদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। উত্তেজনা চরম আকার নেয়। ধরনা মঞ্চের সামনে দিয়ে আসার সময় খোদ উপাচার্য পড়ুয়াদের লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়েন বলে অভিযোগ। যা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।