পুনর্নির্মাণে চমক দিল পার্থ-দেবশঙ্করের ফেরারি ফৌজ

শশী পাঁজার বিশেষ উদ্যোগ

Must read

অর্পিতা চৌধুরী: অঘ্রাণের শীত-সন্ধ্যায় ফিরে দেখা ‘ফেরারি ফৌজ’ (Ferari Fauj)। উৎপল দত্তর নাটক। পুনর্নির্মাণে ‘নৈহাটি নাট্য সমন্বয়’। রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এই নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার। পেশাদার অভিনেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত, প্রশংসিত। নির্মোহ ভঙ্গির সাবলীল দক্ষতায় ফেরারি ফৌজের জ্যোতির্ময়কে তুলে এনেছেন। সিরিয়াস সংলাপের মাঝে ফল্গুধারার মতো ছোট ছোট হাস্যরস। পার্থর অভিনয় যথাযথ। আর আছেন দেবশঙ্কর হালদার। দ্বৈত চরিত্রের বৈপরীত্য সমান মুনশিয়ানায় ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি সেই অভিনেতা, যাঁকে বলা যায় ‘নাটকের জন্য বলিপ্রদত্ত’। ব্রিটিশের গুপ্তচর নীলমণির আড়াল সরিয়ে দেশপ্রেমী-বিপ্লবী শান্তিদার নাটকীয় আত্মপ্রকাশের জার্নি দেবশঙ্করের দুর্দান্ত অভিনয়ে।

পরাধীন ভারতের প্রেক্ষাপটে ফেরারি ফৌজ। বিপ্লবের স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গের চালচিত্র। একদল বাঙালি স্বাধীনতা জয়ের স্বপ্ন দেখছে। সমান্তরালভাবে আর একদল ব্রিটিশ শাসকের হাতিয়ার। একদলের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা অন্য দলের চোখে মাস হিস্টিরিয়া। একদিকে ঘরশত্রু বিভীষণের মতো দালাল-গুপ্তচর, অন্যদিকে দেশের শত্রু শাসক ব্রিটিশ। দুই শক্তির মোকাবিলায় বিপ্লবীদের নানা কৌশল। সামনাসামনি, আড়ালে-আবডালে। স্বাধীনতা জয়ের লক্ষ্যে অসম লড়াই ঘরে-বাইরে। একদিকে যখন বিপ্লবের আশা-উত্তাপ, হার না মানা জেদ, স্বপ্ন— অন্যদিকে তখন আত্মঘাতী ভুলে জর্জরিত হয়ে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, শহিদের মৃত্যু। কখনও কৌশলের ভুল, কখনও অকল্পনীয় বিশ্বাসঘাতকের গোপন ছুরি। বারবার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, বন্ধুবেশী শত্রুর চক্রান্তে ফালাফালা হয়ে যায় বিপ্লবের স্বপ্ন। তারপরেও নতুন স্বপ্ন নিয়ে জোট বাঁধার প্রতিজ্ঞা। অত্যাচার, যন্ত্রণা, হতাশা, ব্যর্থতা শেষে বদলের বার্তা।

আরও পড়ুন- আজ শিলিগুড়িতে সভা মুখ্যমন্ত্রীর

গোটা নাটকের জার্নিতে যে গতি আছে তা আবহসঙ্গীত আর যন্ত্রানুষঙ্গের দৌলতে আরও টানটান হয়েছে। মঞ্চ জুড়ে অভিনেতাদের শারীরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার দাপট, আলোর ব্যবহার, দৃশ্যায়ন— সব মিলিয়েই ফেরারি ফৌজের সফল পুনর্নির্মাণ করেছে নৈহাটি নাট্য সমন্বয়। এজন্য বিশেষভাবে কৃতিত্ব দিতে হয় পরিচালক দেবাশিসকে। কালজয়ী এক নাটক পুনর্নির্মাণের চ্যালেঞ্জ সফলভাবে সসম্মানে উতরেছেন তিনি। সহ-নির্দেশনায় ভাস্কর মুখোপাধ্যায়।

গোটা নাটকেই টিম-ওয়ার্ক খুব ভাল। তবু আলাদা করে কয়েকজনের কথা উল্লেখ করতেই হয়।
ট্র্যাজিক হিরোর চরিত্রে অশোক চ্যাটার্জিকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তোলার কৃতিত্ব অভিনেতা বুদ্ধদেব দাসের। বিশেষত তাঁর চরিত্রটিতে বৈচিত্র্য-সংঘাত প্রচুর। নানা অবস্থার মানসিক দ্বন্দ্ব, যন্ত্রণা-সংকল্পের বহুমুখী মেজাজ চমৎকার তুলে ধরেছেন। মৃত্যুর মুহূর্তে ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ অভিব্যক্তি অসাধারণ। আবার ঝানু পুলিশকর্তা হিতেন দাশগুপ্তর চরিত্রায়ণে পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্দান্ত। পাশাপাশি প্রকাশ মুকুটির চরিত্রে অনুরণ সেনগুপ্ত। দালাল, লম্পট পুলিশের ভূমিকায় এঁদের অভিনয় এত স্বাভাবিক, যা দেখলে দর্শকের রাগ-ক্ষোভ-ঘৃণা হবে। এখানেই অভিনেতার জিত। এ ছাড়া উল্লেখ করতে হয় কস্তুরী চক্রবর্তী (শচী), দেবযানী সিংহ দত্ত (রাধারানি), সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত (বঙ্গবাসী) আর ছোট্ট গোপার চরিত্রে ঐশিকী চক্রবর্তীর অভিনয়। বাকিরাও যথাযথ। সব মিলিয়ে দারুণ টিম-ওয়ার্ক। গোটা নাটকেই চমকপ্রদ গতি আছে, যা দর্শককে টানটান উত্তেজনায় শুরু থেকে শেষ ধরে রাখবে।
রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার সৌজন্যে সম্প্রতি গিরিশ মঞ্চে হয়ে গেল ফেরারি ফৌজ (Ferari Fauj)। হলভর্তি দর্শকের সঙ্গে বসে পুরো নাটকটি দেখেছেন শশী। নাট্যমোদী দর্শক হিসাবে ছিলেন সাংবাদিক-রাজনীতিক কুণাল ঘোষও। বাংলার নানা প্রান্তের আরও অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছে যাক ‘ফেরারি ফৌজ’, দর্শক হিসাবে এই প্রত্যাশা থাকবেই।

Latest article