দেশে বেড়ে চলেছে নারী ও শিশু নিগ্রহ, অভিষেকের প্রশ্নে স্বীকার করল কেন্দ্র

সংসদে লিখিত প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রশ্নে সংবেদনশীল এবং জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলেছে

Must read

প্রতিবেদন : শত প্রচারেও যে বদলাচ্ছে না পরিস্থিতি, তা এবার সংসদে স্বীকার করতে বাধ্য হল কেন্দ্র। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ‍‘বিকশিত ভারত’ স্লোগান নিয়ে পথে নেমেছে বিজেপি। কিন্তু কী বিকাশ আর কাদের বিকাশ, তা মানুষ দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাতেই প্রত্যক্ষ করছে। বিজেপির এই তথাকথিত বিকাশের দাবির মধ্যেই দেশজুড়ে ক্রমশ বেড়ে চলেছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা। অবস্থা এতই উদ্বেগজনক যে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়া যাচ্ছে না। মঙ্গলবার লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ও অন্য দুই সাংসদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্র এক লম্বা ফিরিস্তি দিয়ে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হলেন, ভারতে শিশু ও মহিলাদের সুরক্ষার প্রশ্নটি ক্রমশ গুরুতর হয়ে উঠেছে। আইন কঠোর করেও শিশু ও নারী নিগ্রহ কমানো যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন-২৩ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতন গৃহে সানাইয়ের সুরে হবে সূচনা ঐতিহ্যের পৌষ-উৎসব 

সংসদে লিখিত প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রশ্নে সংবেদনশীল এবং জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলেছে। যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধের জন্য ফৌজদারি আইন (সংশোধনী), ২০১৩ প্রণীত হয়েছিল। ১২ বছরের কম বয়সি মেয়েদের ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ড সহ আরও কঠোর শাস্তির বিধান নির্ধারণের জন্য ফৌজদারি আইন (সংশোধন), ২০১৮ প্রণীত হয়েছিল। আইনটি অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ২ মাসের মধ্যে ধর্ষণের মামলার তদন্ত এবং চার্জশিট দাখিল এবং ২ মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়। কড়া আইন তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সমস্যার কোনও সুরাহা হচ্ছে না। লিখিত জবাবের সঙ্গে মন্ত্রী ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) পরিসংখ্যানও জুড়ে দিয়েছেন। তাতেই পরিষ্কার, দেশে নারী ও শিশু সুরক্ষার করুণ চিত্র। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে নারী নির্যাতনের নথিবদ্ধ ঘটনার সংখ্যা দেওয়া হয়েছে মন্ত্রীর সংযোজনে।

আরও পড়ুন-হুথি জঙ্গি.দের আটকাতে ১০ দেশের জোট গঠন আমেরিকার

২০১৮ সালে দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল ৩,৭৮,২৩৬টি। যৌন অপরাধ সংক্রান্ত আইন আরও কঠোর করার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯-এ নথিভুক্ত ঘটনার সংখ্যা পৌঁছে যায় ৪,০৫,৩২৬-এ। ২০২২ সালে নথিভুক্ত ঘটনার সংখ্যা ৪,৪৫,২৫৬। পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দিচ্ছে, সারা দেশে কীভাবে বাড়ছে নারী নির্যাতনের ঘটনা।
তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় এবং আরও দুই সাংসদ জানতে চেয়েছিলেন, শিশু নির্যাতনের হাল হকিকত। স্বরাষ্ট্র রাষ্ট্রমন্ত্রীর পেশ করা এনসিআরবি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে একমাত্র ২০২০ সাল ছাড়া প্রতিবছরই শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে ১,৪১,৭৬৪টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। ২০২২ সালে ওই সংখ্যা পৌঁছে যায় ১,৬২,৪৪৯-এ। এনসিআরবি-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় চার্জশিট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রচণ্ড অনীহা আছে। যেমন, বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ। ২০২২ সালে যোগীরাজ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৬৫৭৪৩টি, আর চার্জশিট দাখিল হয় ৫০৬১৬টি মামলায়। শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রেও একই সময়ে ১৮৬৮২টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, চার্জশিট হয়েছে ১৩০৪৭টি মামলায়। বোঝাই যাচ্ছে, নারী-শিশু নির্যাতনের মামলায় দোষীদের ধরার ক্ষেত্রে কতটা উদাসীন ও নিষ্ক্রিয় বিজেপি রাজ্য উত্তরপ্রদেশ।

Latest article