প্রতিবেদন : বিচার ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করতে মরিয়া মোদি সরকার। দেশের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর কারণে বারবার চেষ্টা করেও এখনও পর্যন্ত সেই কাজে সফল হয়নি বিজেপি। সাধারণত হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করে থাকে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। দীর্ঘদিন ধরেই কলেজিয়ামের সঙ্গে মোদি সরকারের তীব্র মতবিরোধ চলছে। কলেজিয়ামের সুপারিশ করা নামগুলি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখছে মোদি সরকার। ফলে বিভিন্ন হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতিদের শূন্য পদে নিয়োগ করা যাচ্ছে না। কিন্তু তাতেও সুবিধা করতে না পেরে এবার সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে চিঠি দিলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া চিঠিতে রিজিজু জানিয়েছেন, কলেজিয়ামে সরকারের প্রতিনিধিদের ঠাঁই দেওয়া হোক। কারণ হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে সরকারও তার মতামত জানাতে চায়।
আরও পড়ুন-মিড-ডে মিল দেখবে রাজ্য প্রতিনিধিরাও
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মোদি সরকার গোটা দেশে যেভাবে ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতি করছে তাতে বিভিন্ন সময়ে তারা আদালতে ধাক্কা খাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের পছন্দমতো বিচারপতি নিয়োগ করে বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে চায় কেন্দ্র। এই লক্ষ্যে মোদি সরকার চাইছে, ইয়েসম্যানদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করতে।
আরও পড়ুন-বইমেলার প্রস্তুতি শুরু জোরকদমে
সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা আদালত নাকি আইনমন্ত্রক, কার হাতে থাকবে তা নিয়ে মোদি সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই বিচার বিভাগের বিরোধ চলছে। মোদি সরকার বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত একটি কমিশন তৈরি করলেও সুপ্রিম কোর্ট তা অসংবিধানিক বলে বাতিল করে দিয়েছে। যদিও প্রকাশ্যেই সুপ্রিম কোর্টের ওই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। তাই রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ওই কমিশন বাতিল হয়ে যাওয়ায় এখন সরাসরি কলেজিয়ামে সরকারি প্রতিনিধিদের রাখার দাবি তুলছে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন-কর্নাটকের জেল থেকে হুমকি ফোন
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, কলেজিয়ামের সব সদস্যই বিচারপতি। দেশের প্রধান বিচারপতি সেই কমিটির নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। মোদি সরকারের আইনমন্ত্রী রিজিজু একাধিকবার কলেজিয়ামের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু তাতেও কোনও সুবিধা হয়নি। এর পরই আইনমন্ত্রী সরাসরি কলেজিয়ামকে চিঠি দিয়ে কমিটিতে সরকারের প্রতিনিধি রাখার দাবি তুললেন। ফলে কেন্দ্র ও বিচার বিভাগের মধ্যে চলতি বিবাদে এক নতুন মাত্রা যোগ হল। রিজিজু আগেই জানিয়েছিলেন, বিচারপতি নিয়োগে নিজেদের অধিকার ছাড়বে না সরকার। তাঁর এই চিঠি সেকথাই প্রমাণ করল। বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে সরকারের বক্তব্য এতদিন দৃঢ়ভাবে খারিজ করে দিয়েছে বিচার বিভাগ। এখন আইনমন্ত্রীর চিঠির প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি কী জবাব দেন সেটাই দেখার।