প্রতিবেদন : পরিকল্পনাবিহীন লাগামছাড়া নগরায়নই বেঙ্গালুরুতে ডেকে এনেছে অভূতপূর্ব জল-সঙ্কট (Water crisis- Bengaluru)। বিশেষজ্ঞদের মতামত অন্তত সেটাই। গবেষণায় দেখা গিয়েছে বেঙ্গালুরুতে একসময় অন্তত ৩০০টি হ্রদ ছিল। বলা হত ‘সিটি অফ লেক’। কিন্তু তার অনেকগুলোই এখন প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে নগরায়নের জোয়ারে। প্রমোটাররাজের দাপটে এক-এক জায়গায় জলাভূমি এমনভাবে কংক্রিটের জঙ্গলের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছে যে প্রবল বৃষ্টির জলও পৌঁছতে পারছে না ভূগর্ভে। বছরের পর বছর ধরে এই ঘটনা চলতে থাকায় কার্যত শুকিয়ে গিয়েছে মাটির নিচের জলস্তর। এরই জেরে শুধুমাত্র বেঙ্গালুরুতেই শুকিয়ে গিয়েছে অন্তত ৩০০০ নলকূপের জল (Water crisis- Bengaluru)। পরিণতিতে জলের জন্য হাহাকার পড়ে গিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি নগরীতে। পানীয় জল তো বটেই, দৈনন্দিন জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জলটুকুও মিলছে না। অবশ্য জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধিও এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবাসনগুলোতে জলের রেশনিং, অপচয়ের কারণে জরিমানা, গাড়ি ধোয়ায় নিষেধাজ্ঞা- কিছুতেই কিছু কাজ হচ্ছে না। ‘রিসাইক্লিং অফ ওয়াটার’-এর পথ ধরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে। শুধুমাত্র ভারতের সিলিকন ভ্যালি বেঙ্গালুরুতে নয়, সঙ্কট ছড়িয়ে পড়ছে কর্নাটকের অন্যান্য জেলাতেও। সরকারি তথ্যের দাবি, সঙ্কট গভীরতম তুমাকুরু জেলায়। উত্তর কন্নড়ের জেলাগুলোর পরিস্থিতিও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। জলের অভাবে অনেকেই এই প্রচণ্ড গরমেও স্নান করছেন সপ্তাহে মাত্র একদিন। বালতিপ্রতি জলের দাম উঠেছে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। এই মুহূর্তে বেঙ্গালুরুর আশপাশের ১৭৪টি গ্রাম এবং শহরাঞ্চলের ১২০টি ওয়ার্ড তীব্র জলসঙ্কটের মুখোমুখি। স্বাভাবিকভাবেই এই অভূতপূর্ব সঙ্কট মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১৮তে কেপটাউনে ভয়াবহ জলসঙ্কটের কথা। ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়েছিল প্রায় ৪০ লক্ষ বাসিন্দার। বাধ্য হয়ে ১২মে তারিখটিকে ‘ডে জিরো’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল কেপটাউন পুরপ্রশাসন। ঘোষণা করা হয়েছিল, ওইদিন থেকে শহরের আর কোনও কলে জল পড়বে না। আশঙ্কা একটাই, বেঙ্গালুরুও কি এগোচ্ছে সেই পথেই?