ইতিমধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি পঞ্চায়েত নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়েছে। আমাদের সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ সমস্ত নেতা-কর্মীরা মানুষের দরজায় পৌঁছে গেছেন। আমাদের প্রতীকে ভোট দিতে আহ্বান জানাচ্ছেন। সারা রাজ্যে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ মিছিলে হাঁটছেন। মা-বোনেরা দলে দলে নেমেছেন প্রচারে। যুবরা দেয়াল লিখছে। ছোট ছোট সভা করে নেত্রীর বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তখন বিরোধীরা পৌঁছে গেছেন আদালতে। যেন নির্বাচন থেকে তাঁরা পালাতে চাইছেন। কারণ বাংলা জুড়ে তাঁদের সবার অশুভ জোটকে সবাই ধিক্কার জানাচ্ছে।
আরও পড়ুন-চিকিৎসকদের পরামর্শ একপ্রকার অগ্রাহ্য করেই বাড়ি ফিরলেন মুখ্যমন্ত্রী
মানুষ তাদের পছন্দ করছে না সেটা তারা বুঝতে পারছে। বুলেটের লড়াই কোনও সময় জেতা যায় হয়তো। কারণ সেই লড়াইয়ে সামনে থাকে কিছু বিবেকহীন মানুষ। মানুষের কাছে তাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। কিন্তু ব্যালটের লড়াইয়ে জেতা সহজ কাজ নয়। সেখানে সাধারণ মানুষের উপর নির্ভর করতে হবে। সেই কাজটা বিরোধীরা করতে পারবেন না। যতই তাঁরা প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে জোট বাঁধুন না কেন। সহজ কারণ, বাংলার মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিগত বিধানসভা, পুরসভা নির্বাচনে তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং এখন বিরোধীদের একমাত্র কাজ আদালতে যাওয়া ও সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি করা। মাত্র কয়েকটা জায়গায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সমস্যা হয়েছে। সেটাকেই সারাদিন অথবা দিনের পর দিন কোনও কোনও বৈদ্যুতিন প্রচার মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে। আর রাজভবন তো বহুদিন বিজেপির রাজ্য অফিস হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। রাজ্যের নয়, এটা এদেশের গণতন্ত্রের সামনে বড় লজ্জার ব্যাপার।
আরও পড়ুন-প্রয়াত লিথিয়াম ব্যাটারির আবিষ্কর্তা জন গুডএনাফ
রাজ্যপাল মহাশয় প্রায় সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। নিজের মনোনীত নির্বাচন কমিশনারকে, যেটা সাংবিধানিক পদ, তাঁকে যেভাবে প্রকাশ্যে হেনস্তা করলেন তাতে আমার মনে হয় রাজ্যপালের মস্তিষ্ক ঠিক আছে কি না? অথবা তাঁর সংবিধান সম্পর্কে কোনও পাঠ আছে কি না? এই কর্মকাণ্ড দেখে বিজেপি, কংগ্রেস বা বামপন্থীরা উল্লসিত। একথা আদালতের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। আর প্রচার মাধ্যমের তো পোয়াবারো। তারা তাদের দর্শক ও শ্রোতা বাড়াতে চান। সুতরাং সব খবরই হয় ‘ব্রেকিং’ এবং রোমহর্ষক। মনে হয় এই বোধহয় বোমা ফাটল। হ্যাঁ, বোমা পাওয়া যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদের একটার পর এটা থানা এলাকায়। হরিহরপাড়া, রেজিনগর, রানিনগর, বড়ঞা, ডোমকল। প্রায় প্রত্যেকটা থানাতে। কংগ্রেস দল সারা রাজ্যে সাইনবোর্ড। মুর্শিদাবাদেই কিছুটা ছিল। রাজ্যের সভাপতির ভদ্রাসন সেখানেই। কিন্তু তিনিও জানেন সবই এখন অতীত। একটা বিধানসভার আসন তিনি জিততে পারেননি। একটা পুরসভায় জিততে পারেননি। শেষ ভরসা এই পঞ্চায়েত নির্বাচন। বাঁচার লড়াই, মুখরক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন। সর্বশেষ তাঁর মুখ পুড়েছে সাগরদিঘির ঘটনায়।
শুধু বামপন্থীরাই নয়, রাস্তাঘাটে কান পাতলেই শোনা যাবে সবাই এই কাজের জন্য দায়ী করছে। সেই কারণে মুখ বাঁচাতে একটি সামান্য ছুঁতো নিয়ে বড়ঞা ব্লক অফিসের সামনে অবস্থানে বসে পড়লেন। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায় পছন্দ হওয়ায় তিনি ক্ষান্ত হলেন। কিন্তু তিনি ভরপুর জানেন এসবে পায়ের তলায় মাটি তাঁর আর ফিরে আসবে না। সেই কারণে হিংসার আশ্রয় নিতে চেষ্টা করছেন। প্রধান অস্ত্র বোমা। সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এর মতো তীক্ষ্ণ অস্ত্র আর হয় না। শুধু মুর্শিদাবাদে কেন? সারা রাজ্যে বিরোধী বোমা জোগাড় করছে। অর্ডার দিয়ে বোমা বানাচ্ছে। যেগুলো সাধারণ মানুষের উপর প্রয়োগ করার ইচ্ছা তাদের। কারণ তারা জেনেই গেছে মানুষ তাদের ভোট দেবে না।
আরও পড়ুন-বাংলার সাতটি রাজ্যসভার আসনে ২৪ জুলাই নির্বাচন
সুতরাং ভোটে জিততে সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করেছে তারা। তবে এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুদক্ষ পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা এখনও সঠিক আছে। হাজার হাজার বোমা উদ্ধার করছে পুলিশ। সেই সঙ্গে উদ্ধার করছে বেআইনি অস্ত্র। এসব কিছু পাওয়া যাচ্ছে বিরোধীদের গহ্বর থেকে। কারণ তারা জানে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন তাদের কাছে শেষ লড়াই। এই লড়াইয়ে তারা পরাজিত হবে। বিরোধীরা যথেষ্ট পরিমাণ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। তারা নিজেরাই বলছে তাদের কাছে এটা রেকর্ড। জেলা পরিষদ আসনে তো প্রায় সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে সবাই। মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি এমন অভিযোগ আসেনি। এমনকী মহামান্য আদালতের নির্দেশে মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে।
আরও পড়ুন-এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ব্লকে মুখ্যমন্ত্রী, কুশল জানলেন রাজ্যপাল
এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী। মামলার পর মামলা। আমাদের পার্টি সবসময় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে। তাতে বিদেশ থেকে ফৌজ আসবে না কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না। এটা একেবারেই নির্বাচন কমিশনারের ব্যাপার। তিনি যেমন বুঝবেন, তা করবেন। আদালত কিছু নির্দেশ দিলে তিনি নিশ্চয় মান্য করবেন। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন। মানুষ যেন ভোট দিতে পারে। ফৌজ আনাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু ভোটার আনাতে আপত্তি আছে। বিরোধীরা পশ্চিমবাংলায় ভোটার না পেয়ে যদি উত্তরপ্রদেশ থেকে ভোটার আনতে চান আমরা সেটা হতে দেব না। পশ্চিমবাংলার মানুষ সেটা আটকাবে এবং সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের জোড়াফুলে ভোট দিয়ে জেতাবে। কোনও অন্যথা হবে না।
আরও পড়ুন-এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ব্লকে মুখ্যমন্ত্রী, কুশল জানলেন রাজ্যপাল
বিরোধীরা সেই কারণে মরিয়া। সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি কর, হাজার হাজার বোমা ফাটাও। বাংলার শান্ত পরিবেশ উত্তপ্ত কর। গুলি-বন্দুকের খেলা চালাও। এটাই কংগ্রেস, বিজেপি বা বামেদের কাজ। একটা আদর্শহীন, দিশাহীন, রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে নেমে তারা মানুষকে দিশাহারা করতে চাইছে। কিন্তু বাংলার মানুষ বোমা নয়, ব্যালটকে মান্যতা দেবে। যা অতীতে দিয়েছে। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই আহ্বানই দিয়েছেন।