বাংলার রাজনীতিতে নারীশক্তির অবদান অপরিসীম। বিশ্লেষণ করেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. অজন্তা বিশ্বাস
নারীমুক্তিবাদী ঐতিহাসিকদের এক সতত অভিযোগ এই যে— নারী, মানবপ্রজাতির অর্ধাংশ হলেও প্রচলিত ইতিহাস রচনায় সর্বদাই পরিত্যক্ত বা অবহেলিত। প্রচলিত ইতিহাস শুধুমাত্রই বর্ণনা করেছে পুরুষ সমাজের ইতিবৃত্ত, তাদের ধ্যানধারণা, সাফল্য অথবা ব্যর্থতা। ঔপনিবেশিক শাসনপর্বেও ভারতীয় নারীরা পুরুষতন্ত্রের অধীনস্ত থেকে অন্তঃপুরেই অন্ধকারময় জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে। শিক্ষার আলো পৌঁছতে পেরেছিল মুষ্টিমেয় নারীর জীবনে। তাঁদের অপরিসীম ইচ্ছাশক্তি ও জেদ তাঁদের উন্নতির শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল। ঊনবিংশ শতকের ‘নব্যপুরুষতান্ত্রিকতার’ তাগিদে নারীর সার্বিক উন্নতিসাধনে প্রয়াসী হয়ে উঠেছিলেন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ। সমাজ উন্নয়নের অন্যতম মাপকাঠি হিসাবেই মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজ নারীর অবস্থার উন্নতিসাধনে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। শিক্ষার আলোকে আলোকিত সেকালিনীরা অন্তঃপুরে আবদ্ধ জীবনকে পরিত্যাগ করে এগিয়ে এসেছিলেন সমাজ ও জাতির মঙ্গলসাধনে। শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রকেই তাঁরা উজ্জ্বল করেননি দশের ও দেশের স্বার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রাজনীতির অলিন্দেও।
আরও পড়ুন-খেলা হবে: লোকসভায় আওয়াজ তুললেন অভিষেক, সঙ্গে তৃণমূল-সহ বিরোধী সাংসদরা
বারংবার নিজেদের দৃঢ়তার দ্বারাই প্রমাণ করেছেন নিজেদের অসামান্য যোগ্যতা বিংশ শতাব্দীর সূচনায় ‘দেশ পূজার’ সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনের একাত্মকরণ এবং ‘শক্তি’ ও নারীশক্তি জাগরণের বন্দনা ক্রমশই বর্ধিত হতে থাকে। ফলত, স্বাধীনতা আন্দোলনের পর্বে বিবিধ জাতীয় আন্দোলনে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মহিলাদের যোগদান সুসাধ্য হয়ে ওঠে। গান্ধীজি ও তৎকালীন আন্দোলনের শীর্ষ নেতাবর্গ আন্দোলনে মহিলাদের অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানান। এর ফলে মহিলাদের মধ্যেও গণ-আন্দোলনে শামিল হয়ে দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত হওয়ার উৎসাহ ও উদ্দীপনাও দেখা যায়। বাংলায় ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের আঁতুড়ঘর। রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের অধিকাংশই বাংলা থেকেই পরিচালিত হত। তাই তৎকালীন বাঙালি নারীর রাজনীতির মঞ্চ তথা গণ-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার ইতিহাস অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তীদেবী। তিনি বিদেশি দ্রব্য বিক্রয়কারী দোকানগুলিতে মহিলাদের নিয়ে পিকেটিংয়ের নেতৃত্ব দেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর কলকাতার রাস্তায় খদ্দর ফেরি করার জন্য বাসন্তীদেবী, ঊর্মিলাদেবী ও সুনীতিদেবী গ্রেফতার হন। চিত্তরঞ্জন দাশের কারাবন্দিত্বের সময় বাসন্তীদেবী প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভানেত্রী (১৯২১- ২২ খ্রিস্টাব্দ) হন এবং ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্বও করেন। সরোজিনী চট্টোপাধ্যায় (পরবর্তীকালে নাইডু)ও এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন ও বহুবার কারারুদ্ধ হন। গান্ধীজির আদেশে তিনি জাতীয় আন্দোলনের প্রচারের জন্যও পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর আমেরিকায়। বাসন্তীদেবী ও সরোজিনী নাইডু ছাড়াও জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন উমাদেবী, সীতাদেবী, বগলা সোম, মোহিনী দাশগুপ্তা, বীণাপাণিদেবী, জগমোহিনীদেবী প্রমুখ বাঙালি নারীরা। কলকাতার আইন অমান্য আন্দোলনে মহিলাদের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিংশ শতকের সূচনায় যখন সমগ্র বঙ্গদেশ স্বদেশি আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল তখন বাংলার অন্তঃপুরবাসিনীরাও চুপ থাকতে পারেননি। স্বদেশের ডাক উপেক্ষা না করে যোগ দিয়েছিলেন আন্দোলনে। বিংশ শতকের প্রথম দশকেই অধিকাংশ মহিলা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ এবং সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয়ভাবে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সঞ্জীবনী পত্রিকার সম্পাদিকা লীলাবতী মিত্র এবং তাঁর কন্যা সুপ্রভাত পত্রিকার সম্পাদিকা কুমুদিনী মিত্র সক্রিয় বিপ্লবপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের (জন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা) বিধবা ভগিনী সরোজিনীদেবী বরিশালে বৈপ্লবিক জাতীয়তাবাদের সক্রিয় প্রচারে অংশ নিলেন। এ ছাড়াও বহু বিপ্লবী বঙ্গসন্তানের পরিবারের মহিলারা পর্দার আড়ালে থেকে বিপ্লববাদকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তবে প্রকাশ্যে গুপ্ত সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন খুব কম মহিলাই।
মূলত পরোক্ষভাবেই মহিলারা বহু বিপ্লবীকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে আশ্রয় দিয়ে, সংবাদ সরবরাহ করে, অস্ত্র লুকিয়ে রেখে, কখনও-বা নির্দিষ্ট ঠিকানায় অস্ত্র পৌঁছে দিয়ে, পত্রপ্রেরকের কাজ করে এবং পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বিপ্লবীদের সাহায্য করেছিল। যে সময় মেয়েদের বাঁচার স্বাধীনতাই ছিল প্রশ্নাতীত বিষয় সেই সময় দাঁড়িয়ে দশের ও দেশের স্বার্থে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পরোক্ষভাবে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তৎকালীন নারীদের সাহসিকতা ছিল সত্যই প্রশংসনীয় বিষয়। বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে বাঙালি নারীরা আরও একধাপ এগিয়ে পুলিশি আতঙ্ককে উপেক্ষা করে সম্মুখসমরে উত্তীর্ণ হয়েছিল। তারা পুলিশি অত্যাচার, গ্রেপ্তার ও নির্বাসনকে পরোয়া করেনি। হাওড়া জেলার বালির সূর্যকান্ত ব্যানার্জির বালবিধবা কন্যা ননীবালাদেবী ভারত জার্মান বিপ্লবী ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়ে ১৯১৮ সালে পালিয়ে যান এবং শেষে পেশোয়ারে গ্রেপ্তার হন। একই বিপ্লবী ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার জন্য কারারুদ্ধ হন সিন্ধুবালাদেবী। তিনি পুলিশের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। বিখ্যাত রডা কোম্পানির অস্ত্রপৃষ্ঠনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ফণিভূষণ চক্রবর্তীর স্ত্রী দুড়কিবালাদেবী। সশস্ত্র সংগ্রাম ও দেশসেবায় নিযুক্ত থাকার জন্য তিনি দু’বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। অনুরূপ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ঢাকার বগলাসুন্দরীদেবী, বিন্দুবাসিনীদেবী ও বরিশালের দুর্গামণি পাইন। তাঁরা ঢাকার অনুশীলন সমিতির বিপ্লবীদের পালাতে সাহায্য করে দুঃসাহসিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। বিপ্লবীদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য ব্রিটিশ পত্রিকা The Daily Telegraph বাংলার মহিলাদের ব্রিটিশ শক্তির এক বিপজ্জনক বিরোধী গোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। ১৯২০-’৩০-এর দশকে সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের অধিকাংশই উঠে এসেছিল মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবার থেকে। ছাত্রীসমাজের বড় অংশের বিপ্লবে যোগদান ছিল এই সময়ের উল্লেখযোগ্য বিষয়। লীলা নাগ ছাত্রীদের নিয়ে ঢাকায় দীপালি সংঘ (১৯২৩ সালে) গঠন করেন। পরে বিপ্লবী নেতা অনিল রায়ের বিপ্লবী সংগঠন সংঘের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। তাঁর সুযোগ্য সহযোগীরা ছিলেন রেণুকা সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, বীণা রায়, ঊষারানী রায় প্রমুখ ছাত্রী। কল্যাণী দাস ও সুরমা দাস সহপাঠীদের সহযোগিতায় কলকাতায় গড়ে তুলেছিলেন ছাত্রী সংঘ। এই সংঘের সদস্যরা ছিলেন কল্পনা দত্ত, সুহাসিনী গাঙ্গুলি, ইলা সেন, সুলতা কর, কমলা দাশগুপ্ত প্রমুখ ছাত্রীরা, যাঁরা যুগান্তর দলের বিখ্যাত সদস্য বিপ্লবী দীনেশ মজুমদারের কাছে লাঠি ও ছুরি খেলার শিক্ষা নিতেন। এ ছাড়াও এই সংঘের সদস্যরা সাঁতারকাটা, শরীরচর্চার দিকেও নজর দিত। মাস্টারদা সূর্যসেনের সহকারীরূপে কল্পনা দত্ত ডিনামাইট ষড়যন্ত্রে যোগদান করলেন। অস্ত্র হাতেই নারী প্রত্যক্ষ সংগ্রামে যোগদান করতে শুরু করেন। সুনীতি চৌধুরী ও শান্তি ঘোষ কুমিল্লা জেলাশাসককে গুলি করে হত্যা করেলেন। এই সময় থেকেই ছাত্রী ও বাঙালি নারী সমাজের চূড়ান্ত শক্তির প্রকাশ ও রণমুখিতা চরমপন্থী রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে তরান্বিত করেছিল। নারীদের সম্পাদিত পত্র-পত্রিকাগুলি দেশাত্মবোধ ও বিপ্লবের বাণী ছড়াতে লাগল। লীলা নাগের জয়শ্রী, বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্সের মুখপত্র বেণু ছাড়া সন্ধ্যা, মন্দিরা প্রভৃতি এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। শুধুমাত্র হিন্দু পরিবারের নারীরাই নন, হালিমা খাতুন ও রাজিয়া খাতুনের মতো কিছু মুসলিম নারীও তৎকালীন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁরা। স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্তিম লগ্ন পর্যন্ত বাংলার মেয়েদের সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও দৃঢ়। তাই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সাহসী বাঙালি নারীরা।
আরও পড়ুন-কলকাতায় প্রয়োজন আরও উড়ালপুল, বহু রাস্তা সম্প্রসারণ : নীতীন গড়কড়িকে জানিয়েছেন মমতা
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়কালেও বাঙালি নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। মণিকুন্তলা সেন, ইলা মিত্র, সুধা রায়, কনক মুখার্জি, রেণু চক্রবর্তী, ফুলরেণু গুহ প্রমুখ মহিলা নেত্রীর অবদান রাজনৈতিক ইতিহাসে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম দিকের সক্রিয় মহিলা রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মণিকুন্তলা সেন। একজন মহিলা রাজনীতিবিদ হিসাবে তাঁর রাজনৈতিক স্মৃতি তিনি তাঁর স্মৃতিকথা সেদিনের কথা গ্রন্থে সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। শুধুমাত্র সক্রিয় রাজনীতিই নয় নারী স্বাধীনতা এবং সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ যখন বাংলাকে চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল তখন নিশ্চুপ বসে না থাকে এই সাহসী নারী এগিয়ে এসেছিলেন ত্রাণকার্যে সাহায্য করতে।
পরবর্তীকালে তিনি Women’s International Democratic Federation এবং All India Women’s Conference-এর সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ১৯৫২ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। মণিকুন্তলা সেনের মতোই কনক মুখার্জি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি তৎকালীন নারী আন্দোলনেরও পথিকৃৎ হয়ে উঠেছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্যসমিতির সদস্য ছিলেন ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৮ সালে পর্যন্ত সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত সদস্য হয়েছিলেন দুবার, ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সালে। ১৯৪২ – ’৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের সময় তিনি বঙ্গীয় মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির মুখপাত্র হিসাবে ত্রাণকার্যে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন। দৃঢ় রাজনীতিবিদ হিসাবে কনক মুখোপাধ্যায়ের অবদান ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের অপর এক সক্রিয় মহিলা বাম রাজনীতিবিদ ছিলেন রেণু চক্রবর্তী। মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। তেভাগা আন্দোলনেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। প্রায় চার দশক ব্যাপী তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সংগঠিত করেছিলেন বিভিন্ন শ্রমিক আন্দোলন। ধর্মঘটে শামিল হয়ে কারারুদ্ধ হয়েছিলেন বহুবার। তিনি ১৯৫২ এবং ১৯৫৭ সালে লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে সফল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৬২তে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে পুনর্বার নির্বাচিত হন। শুধুমাত্র সক্রিয় রাজনীতিই নয় নারী হিসাবে রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ লড়াই থেকে পিছপা না হয়ে যে সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন তা তৎকালীন নারী আন্দোলনকেও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রমাণ হয়েই লিপিবদ্ধ থাকবে ইতিহাসের পাতায়। তৎকালীন বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বহু বাঙালি নারী। উল্লেখযোগ্যতাও পেয়েছিলেন নিজেদের অনবদ্য যোগ্যতার নিরিখে সংগ্রামী কৃষক নেত্রী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন ইলা মিত্র। শোষিত বঞ্চিত কৃষকদের অধিকার রক্ষার তাগিদেই রাজনীতিকে অস্ত্র হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেত্রী সুধা রায়ও বিবিধ শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করার মধ্য দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছিলেন। মুসলিম নেত্রী হিসাবে সাকিনা বেগমও উল্লেখযোগ্যতা লাভ করেছিলেন বাম রাজনীতির হাত ধরে। শুধুমাত্র বামপন্থা রাজনীতি নয় ডানপন্থা রাজনীতিতেও স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে বাঙালি নারীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হিসাবে ঘাট ও সত্তরের দশকের বাংলা তথা ভারতের রাজনীতিতে নিজের উল্লেখযোগ্যতা প্রমাণ করেছিলেন ফুলরেণু গুহ। ১৯৬৪’র এপ্রিল থেকে ১৯৭০-এর এপ্রিল মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর মন্ত্রিসভায় ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সমাজসেবী মন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেছিলেন। ১৯৮৪ সালে লোকসভা নির্বাচনেও তিনি জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৭৭-এ পদ্মভূষণ উপাধিও লাভ করেছিলেন। রাজনীতির ময়দানে নিজের বলিষ্ঠতা প্রমাণ করেই থমকে থাকেননি ফুলরেণু গুহ। নারী আন্দোলনের সঙ্গেও নিজেকে যুক্ত করেছিলেন বারংবার। প্রাক্-স্বাধীনতা পর্ব থেকেই বঙ্গনারী রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক স্থাপন করলেও স্বাধীনোত্তর পর্বে নারী তার লড়াইয়ের পরিধিকে বিস্তৃত করেছিল রাজনীতিকে অস্ত্র হিসাবে কাজে লাগিয়ে। নারী তার চলার পথের প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করেই রাজনৈতিক হুঙ্কারে সোচ্চার হয়েছেন বারবার দেশবাসীর দুঃখমোচনের জন্যই রাজনীতির মধ্যে অবতীর্ণ হয়েছেন নারী।