আজব প্রথা, ঠোঁটকাটা নারীরাই সৌন্দর্যের প্রতীক!

Must read

সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : আফ্রিকার উপজাতিদের বিচিত্র সাজপোশাক ও জীবনচর্যা বাকি দুনিয়ার কাছে প্রায়ই প্রবল কৌতূহল তৈরি করে। এই যেমন আফ্রিকার মুরসি উপজাতির ঠোঁটকাটা নারীরা। এই ঠোঁটকাটা কিন্তু আমাদের প্রচলিত অর্থে নয়। এই গোষ্ঠীর নারীদের সবার ঠোঁট সত্যি সত্যিই কাটা। এবং স্বেচ্ছায়। আর এটাই নাকি তাঁদের সৌন্দর্যের বৈশিষ্ট্য। আদতে বিষয়টা অত্যন্ত যন্ত্রণার হলেও প্রথার নামে তাই চলে আসছে বংশ পরম্পরায়।

আরও পড়ুন-মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি এক বহুমুখী অনন্যা

কী সেই প্রথা? আফ্রিকার দক্ষিণ সুদানের সীমান্ত অঞ্চলে ইথিওপিয়ার ওমো উপত্যকায় বসবাসকারী মুরসি উপজাতিদের মধ্যে দেখা যায় এই নিয়ম। এখানকার মহিলাদের সবার ঠোঁটেই আস্ত একটা প্লেট ঝুলে থাকে। যা দেখে বাইরের মানুষের অস্বস্তি বোধ হতে বাধ্য। কিন্তু ওই প্লেট নিয়েই উপজাতি মহিলারা বেশ স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করেন। প্রথা মেনে মুরসি উপজাতির নারীদের ঠোঁট ১৫-১৬ বছর বয়সেই কেটে দেওয়া হয়। তারপর সেখানে একটি মাটির প্লেট বসিয়ে দেওয়া হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই প্লেট বদলে ক্রমশ বড় প্লেট বসানো হয়। এতে ঠোঁটটি আরও প্রসারিত হয়।
কিন্তু কেন এই যন্ত্রণাক্লিষ্ট অদ্ভুত রীতি? তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। কেউ বলেন, বহুকাল ধরে এখানে একটি প্রথা চলে আসছে। সবাই সেটাই অনুসরণ করেন। নানা গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঠোঁটে এই প্লেট ধারণ মেয়েদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে। মাটির প্লেটটি যদি বড় হয়, ওই যুবতী বা কিশোরী নাকি ততই আকর্ষণীয় ও বিবাহযোগ্য হয়ে ওঠে। এই পরম্পরা মেনে চলার পাশাপাশি এই সমাজে মেয়েদের সম্মানের চোখে দেখে সবাই। তবে এই অদ্ভুত প্রথার পিছনে আরও একটি তথ্য একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম ১৯৩৮ সালের এক রিপোর্টের সূত্রে বলা হয়েছে, দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই আজব প্রথা শুরু হয়েছিল।

আরও পড়ুন-হ্যাটট্রিকের পর এই প্রথম উত্তরবঙ্গ সফর, বাংলাই মডেল : মুখ্যমন্ত্রী

একসময় আরবের ধনী ব্যক্তিরা এই এলাকার নানা গ্রামে এসে মেয়েদের ওপর নির্বিচারে অত্যাচার চালাত। তাদের দাস হিসেবে কিনে নিয়ে যেত। এই দাসত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই ঠোঁট কেটে প্লেট বসানের প্রথা চালু হয়। যাতে মহিলাদের দেখতে খারাপ লাগে। তাদের আর কেউ পছন্দ না করে। ওমো উপত্যকার পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও শিশুকন্যাদের ঠোঁট ফুটো করে কাঠের টুকরো ঢুকিয়ে দেওয়ার রীতি রয়েছে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ফুটোর আয়তন বাড়তে থাকত এবং সেখানে বড় প্লেট বসানো হত। ব্রাজিলের কায়াপো উপজাতির বয়স্ক মানুষজনও প্রায় ৬ সেন্টিমিটার লম্বা একটি পাত্রের আকারের জিনিস ধারণ করে।
২০০৭ সালের আদমশুমার অনুযায়ী ওমো উপত্যকায় ৭,৫০০ জন মুরসি উপজাতির লোকজন রয়েছেন। পরের দিকে বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। তবে এখনও এখানকার মানুষের মধ্যে এই অদ্ভুত ও দৃশ্যত ভয়ঙ্কর প্রথা চালু রয়েছে, যা তাঁরা প্রজন্ম ধরে বহন করছেন।

Latest article