নারী হোক বা পুরুষ, কিংবা তৃতীয় লিঙ্গ— ভারতে সম্পত্তির অধিকার কিন্তু মৌলিক অধিকার নয়। এককালে ছিল। ১৯৭৮ সালে সংবিধানের ৪৪-তম সংশোধনের পর এ-দেশে সম্পত্তির অধিকার মানবাধিকার বলে গণ্য হয়েছে। মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তফাত আছে। সমস্ত মৌলিক অধিকার হল মানবাধিকার, কিন্তু সব মানবাধিকার মৌলিক অধিকার নয়।
আরও পড়ুন-দিল্লির বুরারিতে পিটবুলের কা.মড়ে আহত শিশু
যখন কয়েকটি মানবাধিকারকে দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং সাংবিধানিক নিশ্চয়তা (Constitutional guarantees) দ্বারা সংরক্ষণ করা হয় তখন তাদের মৌলিক অধিকার বলা হয়। মানবাধিকার বলতে বোঝায় প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অতি-আবশ্যিক সেই সকল সুযোগ-সুবিধা, যেগুলি জন্মসূত্রে প্রাকৃতিক ভাবে মানুষ অর্জন করে। সাধারণত অধিকার বলতে বোঝায় রাষ্ট্রীয় আইন কর্তৃক স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত কিছু সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু মানবাধিকার হল সেই সকল সর্বজনীন মানবিক অধিকার, যেগুলি সীমিত ও সংকীর্ণ রাষ্ট্রীয় অধিকারের থেকে অনেক ব্যাপক এবং সুস্থ স্বাভাবিক জীবনধারণের জন্য একান্ত অপরিহার্য। সম্পত্তির অধিকার মানবাধিকার এবং আইন দ্বারা রক্ষিত হয়।
১৯৫৬ সালে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন চালু হয়েছিল, তার আগে স্মৃতিশাস্ত্র থেকে তা মানা হত। দায়ভাগ ও মিতাক্ষরা নামে দুটি আইন ছিল স্মৃতিতে। দায়ভাগ হল জীমূতবাহন রচিত আইনগ্রন্থ যা মূলত হিন্দু উত্তরাধিকার পদ্ধতির কথা আলোচনা করে। মিতাক্ষরা হল যাজ্ঞবল্ক্যস্মৃতির ব্যাখ্যা (আইনি ভাষ্য) যা ‘জন্মসূত্রে উত্তরাধিকার’ তত্ত্বের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। একাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং দ্বাদশ শতাব্দীর শুরুতে পশ্চিম চালুক্য আদালতের পণ্ডিত জ্ঞনেশ্বর এটি রচনা করেন। দায়ভাগের পাশাপাশি, ব্রিটিশরা ভারতে আইন পরিচালনা শুরু করার সময় থেকে মিতাক্ষরাকেও হিন্দু আইনের অন্যতম প্রধান উৎস হিসাবে বিবেচনা করেছিল।
আরও পড়ুন-ডার্বি জিতে শেষ চারে ইস্টবেঙ্গল
স্বাধীনতার পর ১৯৫৬ সালে এক ও অভিন্ন হিন্দু উত্তরাধিকার আইন চালু করা হয়, তার আগে যা ছিল না। হিন্দু মহিলারা বহু ক্ষেত্রে সম্পত্তির কোনও অংশই পেতেন না। ১৯৫৬ সালের এই আইনের অনেক ভাষ্য টীকা তৈরি হয়েছে। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা দরকার। ২০০৫ সালে বিচারপতি অরুণ মিশ্র, এস নাজির এবং এম আর শাহকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ হিন্দু উত্তরাধিকার আইন নিয়ে একটি রায় দিয়েছিলেন। হিন্দু মেয়েরা সম্পত্তির সমান অধিকার পাবেন, যে-কথা ১৯৫৬ সালের মূল আইনে আছে। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হত না। ফলে ২০০৫ সালের সংশোধনে বলা হল, সম্পত্তির অধিকার মেয়েরা পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার বাস্তবায়ন দরকার। স্পষ্ট করে বলা হয়, হিন্দু পারিবারিক সম্পত্তির ক্ষেত্রে মেয়েরাও ছেলেদের সঙ্গে সমানাধিকার পাবে তা আইনে নিশ্চিত করা হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর ছেলেদের মতো মেয়েরাও পারিবারিক সম্পত্তির সমান অধিকার পাবে। মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার থেকে কোনওভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না।
হিন্দু মেয়েরা এই অধিকার পান জন্মসূত্রে। তবে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন মুসলিম, খ্রিস্টান, পার্সি, ইহুদিদের ক্ষেত্রে বলবৎ হয় না। কিন্তু শিখ, বৌদ্ধ, জৈনরা এই আইনের আওতায় পড়েন।
আর একটা কথা বলা জরুরি। হিন্দু উত্তরাধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ ও ২০১৮ সালে পরস্পরবিরোধী রায় দিয়েছিল। তখন দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টে নানা উত্তরাধিকার মামলা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। স্বার্থান্বেষীরা নানাভাবে মেয়েদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে থাকে। এমত পরিস্থিতিতে বিচারপতি অরুণ মিশ্রর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সেই জটিলতার স্পষ্ট সমাধান দিল। বেঞ্চ জানিয়ে দিল, এখন আর কোনও জটিলতাই থাকল না। হাইকোর্টগুলিকে এই সংক্রান্ত সব মামলার ফয়সালা করে দিতে বলা হয়েছে, যার ভিত্তি হল পুত্র ও কন্যার সমানাধিকার।
আরও পড়ুন-স্টেশনে ভিক্ষা করেই কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ব্যালান্স!
ধর্মনিরপেক্ষভাবে বাস্তবে দেখা যায়, বেশির ভাগ ভারতীয় পরিবারে মহিলাদের নামে কোনও সম্পত্তির মালিকানা নেই এবং পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার থেকে তাঁরা বঞ্চিত হন। সেই জন্য ২০০৫ সালে (Hindu Succession Amendment) হিন্দু উত্তরাধিকার (সংশোধন) আইন করা হয়।
একটা সময়ে বাবার সম্পত্তিতে হিন্দু মেয়েদের অধিকার নিয়ে খুব বিতর্ক হয়েছে। বিবাহিতা মহিলারা ওই সময়ে বাবার সম্পদের অধিকার দাবি করতে পারতেন না। বিয়ের আগে পর্যন্ত একজন হিন্দু মেয়ে আইনত তার বাবার উপর নির্ভরশীল। তাই বাবারও দায়িত্ব এবং কর্তব্য তাঁর সব দায়ভার গ্রহণ করা। মেয়ের প্রাপ্য অধিকারগুলি হল—
জন্মের মুহূর্ত থেকেই থাকতে পারেন বাবার বাড়িতে। সাবালিকা হওয়ার পরেও সেই অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকে। আয় ও অবলম্বনহীন অবিবাহিতা মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে বাবা অস্বীকার করতে পারেন না। বাবা যদি সব সম্পত্তি ছেলের নামে লিখে দেন, সেক্ষেত্রে বঞ্চনার অভিযোগে আদালতে যাওয়া যায়। কন্যা বাবার সম্পত্তির অধিকার অবশ্যই পাবেন। পুত্র-কন্যা থাকলে সম্পত্তি সকলের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে। সমান অংশ পাবেন স্ত্রী-ও। কারণ, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন বলছে, বাবার সম্পত্তিতে স্ত্রী-সহ তাঁর প্রতিটি সন্তানের সমান অধিকার।
তবে বেঁচে থাকতে উইল করে গেলে ভিন্ন কথা। সেক্ষেত্রে বাবা মেয়েকে যতটা দেবেন, ততটাই পাবেন তিনি। আর না-দিলে পাবেন না। তবে বাবা যদি উইল করে মেয়েকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেন, তা হলেও আপত্তি জানানোর অধিকার থাকে তাঁর। আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন কন্যা। বিয়ের পরেও মহিলাদের পিতার সম্পত্তিতে পূর্ণ অধিকার থাকে।
আরও পড়ুন-ডায়মন্ড হারবারের নেতাড়া স্টেশনের কাছে ভস্মীভূত চামড়ার কারখানা
শুধু কন্যা নয়, স্বামীর অর্জিত সম্পত্তিতে স্ত্রীরও আইনসঙ্গত অধিকার আছে। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ১৯৫৬ অনুযায়ী, স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর অর্জিত সম্পত্তি স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এবং মায়ের মধ্যে সমান অংশে ভাগ হবে। সম্প্রতি মাদ্রাজ হাইকোর্ট কমসালা আম্মাল বনাম কান্নাইয়ান নায়ডু মামলার রায় দিতে গিয়ে জানিয়েছে, পরিবারের অর্থাৎ স্বামীর যাবতীয় সম্পত্তিতে সমান অধিকার থাকবে গৃহবধূর।
বছর দুই আগে বোম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ জানিয়েছে, নতুন করে অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে হলেও স্বামীর সম্পত্তির অধিকার পাবেন হিন্দু মহিলারা। তবে স্বামী মারা যাওয়ার আগেই কোনও মহিলা যদি পুনরায় বিয়ে করেন, সেক্ষেত্রে এই অধিকার পাবেন না তিনি। আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, যেদিন থেকে ‘সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য’ হবে, তার পরে যদি কোনও মহিলা পুনরায় বিয়ে করেন তাহলেও তিনি মৃত স্বামীর সম্পত্তির অধিকার পাবেন।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মেয়েদের সমান অধিকার নেই। এ-কথা ঠিক যে, ইসলাম ধর্ম প্রথম মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার দিয়েছিল। কিন্তু তা আজ থেকে প্রায় ১৩০০ বছর আগে। মধ্যযুগের ওই সময়ের নিরিখে তা নিঃসন্দেহে ছিল বৈপ্লবিক। কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে একজন বোন ভাইয়ের সমান সম্পত্তি পায় না। পুত্র বাবার সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ পায় আর কন্যা পায় এক ভাগ। অর্থাৎ, কন্যা পায় পুত্রের অর্ধেক। বাবা-মায়ের যদি কেবল কন্যাসন্তান থাকে তা হলে তাঁদের সম্পত্তির খানিকটা অংশ নিকটাত্মীয়রা পাবেন। কিন্তু শুধু পুত্র-থাকলে সম্পত্তি পরিবারের বাইরে যাবে না। আল-কোরানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘লিজ্জাকারে মিসলু হাজ্জিল উন সাইয়াইন’ অর্থাৎ দুই মেয়ের সমান সম্পত্তি একজন ছেলে পাবে৷ পবিত্র কোরানে এই বিধান জারি করার শ্লোক বা আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, ‘তিলকা হুদুদুল্লাহ’ অর্থাৎ এগুলো আল্লাহ-র সীমারেখা, এগুলো তোমরা অতিক্রম করবে না৷ এই জন্য ধর্মবেত্তারা ইসলামের উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তনের পক্ষে মত প্রদান করেন না৷ অর্থাৎ, ইসলামের উত্তরাধিকার আইনে কোনও পরিবর্তন আনা যাবে না৷ এর যুক্তি হিসাবে এমন কথা বলা হয়, স্ত্রী-সন্তান-বৃদ্ধ পিতা-মাতা সবার দায়িত্ব পুরুষের ওপর৷ এই দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামের ধর্মীয় আইন পৈতৃক সম্পত্তি পুত্রকে বেশি অর্থাৎ দ্বিগুণ দিয়েছে৷ তবে সব ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের বিষয়ে ছেলেরা দ্বিগুণ পায় আর মেয়েরা যে এক গুণ পায়, এমন নয়৷ সন্তান মারা গেলে, সন্তানের সম্পদ থেকে পিতা-মাতা সমান ছয় ভাগের এক ভাগ পায়৷ তেমনি কোনও ব্যক্তি মারা গেলে, সন্তান বা পিতা-মাতা না থাকলে ভাই-বোন তার সম্পদের ভাগ সমান অংশ পায়৷ এভাবে দেখা যায় ১০টি ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সমান অংশ পায়৷ তবে বিধবা তাঁর স্বামীর সম্পদ পুত্র ও কন্যাদের থেকে অনেক কম পান। স্বামীর সম্পত্তির এক- অষ্টমাংশ তিনি পেয়ে থাকেন।
কিন্তু তাতেও সমানাধিকারের প্রশ্নটি থেকেই যায়। যে যুক্তিতে পুত্র বেশি সম্পত্তি পায়, সেই দায়িত্ব কি সে পালন করে? অর্থাৎ বৃদ্ধ পিতা-মাতা ও অন্যান্য আশ্রয়হীন আত্মীয়দের দেখভাল কি সে করে? বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, কন্যাই বৃদ্ধ বাবা-মার দায়িত্ব নেয়। সেক্ষেত্রে সম্পত্তি বণ্টনের এই বিভাজন-নীতি কি লঙ্ঘিত হচ্ছে না? এমন মনে করলে বাবা-মা পুত্র ও কন্যার মধ্যে সম্পত্তি সমান ভাবে বণ্টন করার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। সেই সুযোগও ইসলামি আইনে আছে। কীভাবে?
আরও পড়ুন-ভিসটেক্স এশিয়ার সিইও সঞ্জয় শাহ ২৫তম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে ক্রেন থেকে পড়ে প্রয়াত
ইদানীং অনেকেই এমন করছেন। আরও বহু মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যায়, যাতে তাঁরা তাঁদের সম্পত্তি সমানভাবে তাঁদের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিতে পারেন৷ এই ক্ষেত্রে বাবা-মা বেঁচে থাকতেই যদি তাঁদের সম্পত্তি হেবা করে দেন। হেবা মানে দান। এই দান বাবা-মা করবেন তাঁদের সন্তানদের, সেখানে তাঁরা সমান ভাগ দিয়ে হেবাটা করতে পারেন, তাতে ধর্মীয় আইন লঙ্ঘিত হয় না৷ এক অর্থে যে অসম ব্যবস্থা আছে, সেটার সমাধান এ-ভাবে করা সম্ভব৷
ইদানীং দেখা যায়, মধ্যবিত্তদের মধ্যে কোনও দম্পতির একমাত্র কন্যাসন্তান বা দু’জন কন্যাসন্তান আছে, অথবা যাঁদের ছেলে-সন্তান মেয়ে-সন্তান দুই-ই আছে, দম্পতি মারা যাওয়ার পর ছেলে-মেয়েদের মধ্যে যাতে কোনও কোন্দল বা ভুল বোঝাবুঝি না হয় তাই তারা আগে থেকে ঠিক করে যাচ্ছেন যে, কীভাবে তাদের সম্পত্তি ভাগ করা হবে৷ এভাবেও সমাধান করা যায়৷ সেক্ষেত্রে শরিয়া কোনও সমস্যাই হয় না, যেহেতু শরিয়া অনুযায়ী হেবা বা দান করা যায়৷
ইসলামের উত্তরাধিকার আইনে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। আবার সুন্নিদের চার মাজহাবের মধ্যেও অল্পস্বল্প তফাত আছে। তবে মূল সুর সর্বত্র এক।
ভারতীয় খ্রিস্টানদের উত্তরাধিকার আইনে কন্যারা পুত্রের সমান সম্পত্তির অধিকার পান। তবে খ্রিস্টান আইনে মহিলাদের সম্পত্তির অধিকার অনুসারে, একজন মা তাঁর সন্তানদের উপর নির্ভরশীল নন। এছাড়া বলা হয় যে একজন মা সন্তানদের কাছ থেকে খোরপোশও পেতে পারেন না। তবে, যদি তাঁর সন্তান মারা যায় এবং তাঁর আর কোনও সন্তান না থাকে, তাহলে ওই মা তাঁর মৃত পুত্রের সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাওয়ার যোগ্য।
আরও পড়ুন-নারীত্বের পক্ষে মেয়েলিপনার বিপক্ষে
একটা প্রশ্ন ওঠে, খ্রিস্টান কন্যা কি বিয়ের পর বাবার সম্পত্তি দাবি করতে পারে? আইনত পারে। তবে বিষয়টি নির্ভর করে বাবার উপর। বাবা কাকে কতটা সম্পত্তির ভাগ দিতে চান তা তিনিই ঠিক করতে পারেন। ঠিক না করে গেলে সমান অংশ কন্যা পাবেন। পিতার সম্পত্তিতে বিবাহিত কন্যারও সমান অধিকার রয়েছে। শুধুমাত্র তার বিবাহের কারণে, কেউ তাকে পিতার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না।
খ্রিস্টান, পার্সি এবং ইহুদিদের ক্ষেত্রে ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫ মানা হয়। একজন খ্রিস্টান মহিলা পূর্ব-নির্ধারিত অংশের অধিকারী হন। সেই শেয়ারের পরিমাণ নির্ভর করে মৃত ব্যক্তির অন্য আত্মীয়দের পরিচয়ের উপর। মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে, তার বিধবা সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পায়, বাকিটা সন্তানদের কাছে যায়। যদি উত্তরাধিকারীরা সন্তান ব্যতীত অন্য আত্মীয় হয় তবে বিধবা সম্পত্তির অর্ধেক পাবে এবং অবশিষ্টাংশ মৃতের অন্য আত্মীয়দের কাছে যাবে। যদি কোনও সন্তান বা অন্য আত্মীয় না থাকে তবে ওই বিধবা পুরো সম্পত্তি পায়।
আরও পড়ুন-কিলার স্যুপ
একজন পার্সি (জরাথ্রুস্ট ধর্মাবলম্বী) বিধবা তাঁর স্বামীর সম্পত্তিতে সন্তানের অর্ধেক অংশ পান। মৃতের বাবা-মা ছাড়াও তাঁর সন্তান সমান অংশ পাওয়ার অধিকারী। পিতামাতার অবর্তমানে, ওই সম্পত্তি পার্সি মহিলা এবং তার সন্তানদের মধ্যে বণ্টন করা হয়, যাতে বিধবা এবং সন্তানরা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে সমান অংশ পায়।
ভারতে প্রচলিত সমস্ত উত্তরাধিকার আইনের দিকে তাকালে এটি স্পষ্ট হয় যে আইন প্রণেতারা যতটা সম্ভব ন্যায়সঙ্গতভাবে মহিলাদের স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। স্ত্রী, মা বা কন্যা যাই হোক না কেন, একজন মহিলা আইনত তার প্রিয়জনের সম্পত্তিতে কিছুটা অংশ পাওয়ার অধিকারী। আমাদের আইনসভা এবং বিচার বিভাগ বিবাহ এবং ধর্মের বাইরে বেরিয়ে মহিলাদের উত্তরাধিকারের আইন রক্ষা করেছে। যেসব অধিকার আছে, তা হয়তো সব ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠা করে না, কিন্তু যেটুকু অধিকার আছে তা থেকে নারীদের বঞ্চিত করা হয়। বহু ক্ষেত্রে মেয়েরা তা মেনে নেন। সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা এবং সেগুলি দাবি করার সাহসই নারীদের একমাত্র অস্ত্র, যা তাদের বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে বা বৃহত্তর সমাজে কোনও অন্যায়ের প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুন-চল রে চল রে চল
নারীর ভূমিকা ও অধিকার সবসময়ই গতিশীল। নারীর ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি আশু প্রয়োজন। নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীন হওয়ার কারণে নারীর অবস্থানের বেশ খানিকটা উন্নতি হয়েছে বটে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাও অনেক আইন ও আইন সংশোধনের মাধ্যমে সঠিক পথে অগ্রসর হয়েছে যা বহু ক্ষেত্রে নারীদের পুরুষের সমান অধিকার দিয়েছে। এই প্রশ্নটি খুব জরুরি— একজন মহিলা, সে তিনি চাকরিজীবী/ শ্রমিক হোন বা গৃহকর্মী, তিনি তাঁর অধিকারগুলি ভালভাবে জানেন কি? বিশেষ করে সম্পত্তির অধিকার? উত্তরাধিকার আইন তিনি বোঝেন কি এবং যখন প্রয়োজন হয় তখন তা প্রয়োগ করেন কি? সম্পত্তির অধিকার মৌলিক অধিকার না হলেও মানবাধিকার, আইনের দ্বারা তা সুরক্ষিত।