কিশোর বিপ্লবী ও তাঁদের পরিবার

স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বহু কিশোর। হয়ে উঠেছিলেন বিপ্লবী। অনেকেই শহিদ হয়েছিলেন দেশের জন্য। কারও কারও আদর্শ ছিলেন ক্ষুদিরাম। সেইসব কিশোর বিপ্লবীদের কথা জানা গেলেও, জানা যায় না তাঁদের পরিবার সম্পর্কে। ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস। দিনটি মনে রেখে কয়েকজন কিশোর বিপ্লবী ও তাঁদের পরিবারের কথা বিনম্র চিত্তে স্মরণ করলেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস

Must read

তখন মেদিনীপুর জেলার বোর্ডের মিটিং চলছে। মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করছেন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস। অত্যাচারী হিসেবে তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। চারদিকে পাহারাদার বসিয়েছেন তিনি, বিপ্লবীদের কাছে আতঙ্ক, তাই ডগলাস সঙ্গে রেখেছেন রিভলভার। এর মধ্যেই সভার মধ্যে ঢুকে পড়েছেন দুই তরুণ বিপ্লবী। একজনের চোখে চশমা, সিঁথিটা অন্য দিকে। অন্য জনের মোটা গোঁফ এবং মালকোঁচা-মারা ধুতি। একজন প্রদ্যোত (প্রদ্যোতকুমার ভট্টাচার্য) অন্যজন শুভ্রাংশু (শুভ্রাংশুশেখর পাল)। প্রহরীরা কিছু বুঝতে পারার আগেই ডগলাসের পেছনে ছুটে যান দু’জন, গর্জে ওঠে ওঁদের রিভলভার। শেষ হয় অত্যাচারী ডগলাসের জীবন-অধ্যায়।

আরও পড়ুন-নরওয়ে প্রযুক্তিতে তরল নাইট্রোজেন বউবাজারের ভূগর্ভে

আমাদের আহুতিতে ভারত জাগুক— বন্দেমাতরম্
অন্যদিকে, সভার মধ্যে সবাই চিৎকার করতে থাকেন। ব্যস্ত হয়ে ওঠেন প্রত্যেকে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে। দুই কিশোর বিপ্লবীকে দেখে চিনতে পারেন অনেকেই। একজন কিশোর, অন্যজন গোঁফওয়ালা যুবক। ডগলাসের জীবনের ইতি টেনে তাঁরা দৌড় শুরু করেছেন। দৌড়চ্ছেন স্বাধীনতার দিকে আর তাঁদের পেছনে দৌড়চ্ছে প্রহরীরা। শেষপর্যন্ত গুলি চালাতে হল। প্রহরীদের লক্ষ্যভ্রষ্ট হল সেই গুলি। সিনেমার মতো গুলি চালাতে চালাতে পুলিশের নজরের বাইরে চলে গেলেন গোঁফওয়ালা যুবক। টান মারে ফেলে দিলেন গোঁফ। নাড়াজোল রাজবাড়ির পাশে একটি দিঘিতে ফেলে দিলেন জুতো। কালভার্টের নিচে লুকিয়ে রাখলেন নিজের রিভলভার এবং কার্তুজ। সেখান থেকে সোজা মামার বাড়ি।
কিন্তু বিপ্লবী কিশোর প্রদ্যোত পড়লেন বিপদে। রিভলভার তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বিগড়ে যায়। পুলিশ তাড়া করে, প্রদ্যোতও পাল্টা গুলি চালায়, কিন্তু গুলি বেরোয়নি। এমন সময় কাছে একটা পোড়োবাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেপাইরা বাড়িটা ঘিরে ফেলে, সেখান থেকে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন প্রদ্যোত, ধরা পড়ে যান। তাঁর পকেটে দুটো চিরকুট পাওয়া যায়। যার একটিতে লেখা, ‘হিজলী হত্যার ক্ষীণ প্রতিবাদে— ইহাদের মরণেতে ব্রিটেন জানুক। আমাদের আহুতিতে ভারত জাগুক— বন্দেমাতরম্।’

আরও পড়ুন-চব্বিশে দিল্লিতে জাতীয় পতাকা তুলবেন ‘ইন্ডিয়া’র প্রধানমন্ত্রী

অন্যটিতে লেখা— ‘A fitting reply to premeditated and prearranged barbarous & cowardly attempt on the patriotic sons of Bengal— Bengal revolutionaries.’
প্রদ্যোত ওরফে কোচি প্রথম শ্রেণিতে ম্যাট্রিক পাশ করেই বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি তাঁর পরিবার। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বিপ্লবীদের তাঁর ভাল লাগত। কোচির বাড়ির পাশেই থাকতেন ক্ষুদিরামের দিদি অপরূপা দেবী। প্রায়ই তাঁর কাছে যেতেন কোচি। শুনতেন ক্ষুদিরামের গল্প। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ডগলাস হত্যা মামলার বিচারে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়। জেলে বসেই মাকে চিঠি লেখেন— ‘মাগো, আমি যে আজ মরণের পথে আমার যাত্রা শুরু করেছি তার জন্য কোনও শোক কোরো না।… যদি কোনও ব্যারামে আমায় মরতে হত তবে কী আপশোসই না থাকত সকলের মনে। কিন্তু আজ একটা আদর্শের জন্য প্রাণ বিসর্জন করছি, তাতে আনন্দ আমার মনের কানায় কানায় ভরে উঠছে, মন খুশিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।’

আরও পড়ুন-মণিপুর নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিচ্ছেন পুজোর মহিলা উদ্যোক্তারা

আমার প্রতিটি রক্তবিন্দুতে যেন একটি করে শহিদ তৈরি হয়
ফাঁসির আগের দিন রাজবন্দি কৃষ্ণলাল চট্টোপাধ্যায়কে শেষ ইচ্ছা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার প্রতিটি রক্তবিন্দুতে যেন একটি করে শহিদ তৈরি হয়’। কিশোর বিপ্লবী প্রদ্যোতের শেষ চিঠি মা পঙ্কজিনীদেবীকে লেখা, ‘মা তোমার প্রদ্যোত কি কখনও মরতে পারে? আজ চারিদিকে চেয়ে দেখো, লক্ষ লক্ষ প্রদ্যোত তোমার দিকে চেয়ে হাসছে। আমি বেঁচেই রইলাম, মা অক্ষয় অমর হয়ে— বন্দেমাতরম্।’ এ তো শুধু চিঠি নয় এ যেন বিবাগী মায়ের চোখের জলের স্বরলিপি। প্রদ্যোতের মতো কিশোর বিপ্লবীরা এইভাবে বাংলাদেশে বিপ্লবের সুর বেঁধেছেন। আজও বর্ষার দিনে এই পঙ্কজিনীদেবীদের পরিবারে বেজে চলে বিপ্লবের মেঘমল্লার।

আরও পড়ুন-লালফৌজের সঙ্গে ফের বৈঠক

ক্ষণিকের অতিথি
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুঠের পর পালিয়ে যাচ্ছেন অনন্ত সিংহ। ইংরেজদের হতে ধরা না পড়ার জন্য নিয়েছেন পাগলের ছদ্মবেশ। গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ফেনির কাছে বারাহিপুর গ্রামে একদল বাচ্চা ছেলে তাঁকে তাড়া করে। উপায় না দেখে অনন্ত সিং আশ্রয় নেন একটা বাড়িতে। সেখানে এক কিশোরী তাঁকে সেবা শুশ্রূষা করে, খাইয়ে নিরাপত্তা দেন। কিন্তু অনন্ত সিংকে জেলে কাটাতে হয় তারপর বহু বছর। জেল থেকে অনন্ত সিং তাঁর জীবনের স্মৃতি ‘চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে’র প্রথম খণ্ডে লিখছেন, ‘এই মধুর স্মৃতি আমার জীবনে একটি অপূর্ব সঞ্চয়।…সেদিনের হে অনামী, অখ্যাত, সামান্য বালিকা! তোমার মমতাপূর্ণ দরদী হৃদয়ের প্রতি সেই দিনই আমার অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছি।… যদি কোনওদিন এই সামান্য ঘটনা তোমার মনে পড়ে, তবে জানবে উন্মাদবেশে যে ক্ষণিকের অতিথি তোমাদের বাড়ি গিয়েছিল সে আর কেউ নয়,— ভারতের মুক্তিযুদ্ধের একজন সৈনিক— অনন্ত সিংহ।’ মেয়েটির নাম উষারানি নন্দী। এই লেখাটি যখন উষারানির হাতে গিয়ে পড়ে তখন উষা প্রৌঢ়া। তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে চিঠির উত্তর দেন। দেখা করতে যান তাঁর সঙ্গে প্রায় ৩৬ বছর পর। ১৯৭৬ সালে উষারানির লেখা সেই চিঠি আজও ঐতিহাসিক দলিল।

আরও পড়ুন-‘আপনি জানেন বাংলা নব জাগরণের পুন্যভূমি, সংস্কৃতির মাটি’ মোদিকে তোপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

কারাগারের ভিতরে পড়েছিল জ্যোৎস্না
কিশোর বিপ্লবীরা যখন জেলে কাটাতেন, তখন তাঁদের প্রিয়জন ও পরিবারের আপনজনদের লিখতেন প্রাণের কথা, লিখতেন অনুভবের শব্দ— ‘কারাগারের ভিতরে পড়েছিল জ্যোৎস্না/বাইরে হাওয়া, বিষম হাওয়া,/ সেই হাওয়ায় নশ্বরতার গন্ধ/ তবু ফাঁসির আগে দীনেশ গুপ্ত চিঠি লিখেছিলেন তাঁর বউদিকে :/ আমি অমর, আমাকে মারিবার সাধ্য কাহারো নাই!’
দীনেশের আর এক কিশোর বিপ্লবীবন্ধু বাদল ওরফে সুধীর গুপ্ত। রাইটার্স বিল্ডিংয়ের বারান্দা-যুদ্ধে শহিদ হয়েছিলেন। পুলিশের কাছ থেকে মৃতদেহ নিয়েছিলেন তাঁর কাকামণি তরণীনাথ। তরণী-কন্যা খুকু তখন বুঝতে পারেননি তাঁর দাদামণি বাদলের সঙ্গে আর খুনসুটি করা হবে না, দাদামণি থাকবেন ইতিহাসের পাতায়। দাদামণির কাছ থেকে শিখেছিলেন দেশকে ভালবাসা, দেশের জন্যে বাঁচা। পরবর্তীকালে পরিবারের সকলকে দিয়েছিলেন দেশপ্রেমের মন্ত্র। এই কিশোর বিপ্লবী তাঁর পরিবারের মধ্যে দিয়ে চিনিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালির আগুন, দৃঢ়তা ও দেশপ্রেম। চিনিয়ে দিয়েছিলেন দেশাত্মবোধ।

আরও পড়ুন-১৬৫৭ দিন পর ডার্বি জয় ইস্টবেঙ্গলের

যেন পিঞ্জরাবদ্ধ সিংহ
আলিপুর বোমা মামলায় অভিযুক্ত চারুচন্দ্র বসু। কিশোর বিপ্লবী চারুর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর প্রতিদিন ইংরেজ পুলিশ সেলে ঢুকে চারুকে ইলেকট্রিক শক দিয়েছে। যন্ত্রণায় কাতরেছে চারু। তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে আশুতোষ-খুনের মূল অপরাধীর নাম। চারু কিন্তু মুখ খোলেননি। চারুর হয়ে মুখ খুলেছেন নিবেদিতা— ধরেছেন কলম। তিনি ছিলেন বিপ্লবীদের পরিবারের আপনজন। তাই চিঠিতে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ফাঁসি সম্পর্কে রেটক্লিফকে লিখেছেন, ‘তোমরা কি জানো, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ফাঁসির আগে তাঁকে আধ্যাত্মিক সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বৃদ্ধ শিবনাথ শাস্ত্রী মহাশয়কে ডেকে পাঠানো হয়েছিল? ভাল কথা! ওই কাজটা তাঁকে করতে হয়েছিল গরাদের বাইরে দাঁড়িয়ে।

আরও পড়ুন-‘আপনি জানেন বাংলা নব জাগরণের পুন্যভূমি, সংস্কৃতির মাটি’ মোদিকে তোপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

পাঁচ থেকে ছয়জন ইউরোপীয় ও ভারতীয় ওয়ার্ডার ও কারারক্ষী তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে সে-সব শুনছিল। কানাইলাল দত্তের সম্পর্কেও অনুরূপ করার আবেদন তাঁকে করা হয়েছিল।’… শাস্ত্রীমশাই নাকি বলেছিলেন, ‘কানাইকে দেখলাম সে পায়চারী করছে— যেন পিঞ্জরাবদ্ধ সিংহ। বহু যুগ তপস্যা করলে তবে যদি কেউ তাকে আশীর্বাদ করার যোগ্যতা লাভ করতে পারে।’

আরও পড়ুন-ঘৃণাসূচক বক্তব্য ঠেকাতে এবার কড়া নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

রাজার বাগানের মালি
আর একজন কিশোর বিপ্লবীর কথা না বললেই নয়। তিনি বিপ্লবী রামপ্রসাদ বিসমিল। কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলায় যে চারজনের ফাঁসি হয়েছিল তাঁদের মধ্যে রামপ্রসাদ একজন। রেল ডাকাতির পর তাঁরা সবাই আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যান। সেখান থেকে বিসমিল লেখেন, ‘আমি ভাল আছি। সম্ভবত আপনার মনে থাকবে যে, আমাদের পিতামহের শ্রাদ্ধশান্তি এ-মাসের ১৩ তারিখে (রবিবার) হবে। এতে আপনার উপস্থিতি একান্ত কাম্য।’ বিপ্লবী সহকর্মীদের এই হাতচিঠি বিলি করা হয়েছিল। আসলে কাকোরি রেল ডাকাতির পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করার জন্যে বিপ্লবীরা বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কিশোর বিপ্লবীরা পরিবারের সঙ্গে এবং সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন বিভিন্ন রূপকধর্মী চিঠিতে। বিপ্লবী জ্যোতিষচন্দ্র জোয়ারদার বক্সা স্পেশ্যাল জেল থেকে লেখেন— ‘প্রিয়বরেষু ভাই, মিঃ বাবু। রাজার বাগানের মালি, কাঙালি সারাদিন হাজারো রকমের ফুল গাছের যত্ন করে বেড়াবে, সন্ধ্যাবেলায় ভাবে কোন্ চারাটিকে কাল কীভাবে খিদমত করবে। রাতে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে, গাছে গাছে বসে গেছে ফুলের মেলা। কনকচাঁপা সবার মাথার উপর মাথা জাগিয়ে আত্মপ্রচারে মুখর করে তুলেছে আকাশ-বাতাস। আর শেফালী ধুলার বুকে লুটিয়ে পড়ে বাগানতলে এঁকে দিয়েছে দিব্য এক আলপনা।’ এই কিশোর বিপ্লবীর পরিবারের লোক প্রশ্ন তোলেন, রাজাটি কে, রাজা হতে পরে ব্রিটিশরা, মালি, কাঙালী, হয়তো কর্মচারীরা। আর ফুলের অনুষঙ্গে আছেন বিপ্লবীরা।

আরও পড়ুন-ফ্লোরিডায় আজ সমতা ফেরানোর লড়াই

আমি যত শীঘ্র বাড়ি যাইতে চেষ্টা করিব
ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্তকে বোমা বানিয়ে দিয়েছিলেন যতীন দাস। ১৯৩১ সালে তিনি গ্রেফতার হন এবং অনশন শুরু করেন। কিছু দিন পর ইংরেজ সরকার একটু নরম হলে ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর অনশন তুলে নেন। জেদি যতীন দাস ছিলেন একরোখা। তাঁর প্রতিটি দাবি ইংরেজদের মানতে হবে, নাহলে অনশন চলবে আমৃত্যু। ৬৩ দিনের মাথায় নল দিয়ে জোর করে খাওয়ানোর সময় শ্বাসনালিতে খাবার আটকে যতীন দাসের মৃত্যু হয়। জেলে থাকার সময় যতীন দাস নিয়মিত বাবাকে চিঠি লিখতেন। চিঠিতে বাবাকে বলতেন ছোট ভাই কিরণের কথা, বলতেন বাড়ি ফেরার কথা। ১৯২৮ সালে ৮ জুলাই লিখলেন— ‘পাঞ্জাবের জেল হইতে অদ্য আমাকে এখানে লইয়া আসিয়াছে। … আমাকে বোধ হয় শীঘ্রই হয় খালাস করিয়া দিবে, না হয় কোনও গ্রামে নজরবন্দী করিয়া রাখিবে। আমি যত শীঘ্র বাড়ী যাইতে চেষ্টা করিব। … কিরণ যদি আসিয়া থাকে ত’ অবিলম্বে আমার সহিত যেন সাক্ষাৎ করে। ইতি খেঁদু (যতীনের ডাকনাম খেঁদু)।’

আরও পড়ুন-ঘৃণাসূচক বক্তব্য ঠেকাতে এবার কড়া নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

স্বার্থ-গন্ধ থাকবে না, প্রাণের ভয় পর্যন্ত থাকবে না
কিশোর বিপ্লবীদের মধ্যে যিনি বিপ্লবের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে উঠেছেন তিনি ক্ষুদিরাম। বিপ্লব ছিল তাঁর রক্তে। তাঁর বয়স তখন ১৪ বছর। এক শীতের সকালে লক্ষ্মীনারায়ণ দাস নামে এক ভিক্ষুক ক্ষুদিরামের বাড়িতে এসে হাজির। ঠান্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপছে লক্ষ্মীনারায়ণ। তাকে দেখে কেঁদে উঠল ক্ষুদিরামের মন। দেওয়ার মতো কিছু নেই তার, রয়েছে শুধু বাবার শেষ স্মৃতিজড়ানো একটি দামি শাল। সেই শাল ভিক্ষুকের হতে তুলে দিয়ে বললেন— ‘তোমাকে দেবার মতো আমার কিছুই নেই। এই শাল আমি গায়ে দিইনি, দেবার সুযোগ আমার জীবনে আসবে কিনা জানি না। বাবার স্মৃতিটা দেবার মতো যোগ্য পাত্র তোমার চেয়ে বেশি কি আর মিলবে?’ ক্ষুদিরামের পরিবার ছিল এই দেশ। ক্ষুদিরামদের দেখেই শরৎচন্দ্র লিখেছিলেন— “স্বার্থ-গন্ধ থাকবে না, প্রাণের ভয় পর্যন্ত থাকবে না, একদিকে দেশসেবক নিজে আর একদিকে তার দেশ, মাঝে আর কিছু থাকবে না। বল, অর্থ, দুঃখ, বাধা, পুণ্য, ভাল, মন্দ সব যে দেশের জন্য বলি দিতে পারবে, দেশসেবা তার দ্বারাই হবে।”

আরও পড়ুন-দেবী মনসা পদ্মাসনা সর্পদেবী

ক্ষুদিরামের আত্মা আমায় এ-পিস্তল দিয়ে গেছে
সব বিপ্লবীই বেড়ে উঠেছেন ক্ষুদিরামের পারিবারিক আদর্শে। কারণ ক্ষুদিরাম নিজেই একটি পরিবার।
রাজসাক্ষী নরেন গোসাঁইকে জেল হাসপাতালের মধ্যেই গুলি করে মেরেছেন কানাইলাল দত্ত। বিচারের সময় যখন কানাইলালকে জিজ্ঞাসা করা হয় জেলের ভিতর কীভাবে তিনি অস্ত্র জোগাড় করলেন, উত্তরে বললেন, ‘ক্ষুদিরামের আত্মা আমায় এ-পিস্তল দিয়ে গেছে।’ আজ স্বাধীনতার এত বছর পরেও ভারতবর্ষের যুবসমাজ, কিশোরমন স্বপ্ন দেখে ক্ষুদিরামের। তারাও তো ক্ষুদিরামের পরিবারেরই লোক। তাদের মনেও প্রশ্ন জাগে— ‘কোথায় ভাই ক্ষুদিরাম? আঠারো মাসের পরে আসবে বলে গেছ, এসেছেও হয়তো প্রতি ঘরে ঘরে। কিন্তু আঠারো বছর যে কেটে গেল ভাই! সাড়া দাও— সাড়া দাও আবার, যেমন যুগে যুগে সাড়া দিয়েছ ওই ফাঁসির মণ্ডপের রক্তমঞ্চে দাঁড়িয়ে।’

Latest article