মণীশ কীর্তনীয়া, গঙ্গাসাগর : বাড়ছে কোভিড (Covid), সঙ্গে দোসর ওমিক্রন (Omicron)। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে রাজ্যে কড়া পদক্ষেপের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। বুধবার গঙ্গাসাগরের (Gangasagar) প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলেন, সরকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। সেরকম হলে কলকাতায় (Kolkata) কনটেনমেন্ট জোন-সহ রাজ্যে একাধিক বিধিনিষেধ জারি করা হতে পারে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসচিবকেও পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister)। নতুন করে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে গঙ্গাসাগরের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা আগাম জানিয়েছেন। সেগুলি হল—
১) বাইরে থেকে এখানে আসছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। সুতরাং এ বিষয়ে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা দেখতে প্রশাসনিক আধিকারিকদের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বাইরে থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁরা কলকাতাতেই বেশি থাকছেন। ফলে বিদেশ থেকে কেউ এলেই কোভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। সুতরাং কলকাতায় করোনা ছড়াচ্ছে বেশি। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি দেখে ফের কলকাতায় কনটেনমেন্ট জোন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
২) নতুন বছরের নানা অনুষ্ঠান রয়েছে। তাই নতুন বছরের ১ ও ২ তারিখ বাদ দিয়ে, প্রয়োজনে ৩ জানুয়ারি থেকে কলকাতায় কনটেনমেন্ট জোন চালু করার ভাবনায় রয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
আরও পড়ুন-সাগরে প্রশাসনিক বৈঠকে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, সুন্দরবন নিয়ে মাস্টার প্ল্যান
৩) এদিন গঙ্গসাগরের প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের কাছে কলকাতার করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ফের ৫০ শতাংশ কর্মীকে আগের মতো বাড়ি থেকে কাজ করানোর ভাবনা শুরু করে দিয়েছে প্রশাসন।
৪) করোনা এবং ওমিক্রন ঊর্ধ্বমুখী হলেও এখনই লোকাল ট্রেন বন্ধ করা হচ্ছে না। তবে লোকাল ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার ভাবনা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। প্রয়োজনে লোকাল ট্রেনের সংখ্যা কম করা হবে। প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এ-ব্যাপারে রিভিউ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন সামনে গঙ্গাসাগর মেলা রয়েছে। সুতরাং লোকাল ট্রেন বন্ধ করলে সমস্যা হবে। মানুষ রোজগারের জন্য কলকাতায় আসছেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ রোধে ট্রেন চললেও কীভাবে কোভিড প্রতিরোধ করা যেতে পারে সে-নিয়েও আধিকারিকদের চিন্তা-ভাবনা করতে বলেছেন।
৫) মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করে জানান, ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু এটা ছড়ায় দ্রুত। ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে নতুন করে ভাবতে হবে। কিছুদিনের জন্য আবার স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে হবে। সামনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা আছে, সেগুলিও যাতে সুষ্ঠুভাবে নেওয়া যায় তা দেখতে হবে। বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষা সচিবকে পড়ুয়াদের ওপর নজর রাখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
৬) টিকাকরণের ওপরও জোর দিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয় ডোজ শেষ করে বুস্টার ডোজ চালু করার নির্দেশ দেন তিনি। নতুন বছরের প্রথমেই ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হচ্ছে। তবে বুস্টার ডোজ চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, সর্বত্র কোভিড সতর্কতা মেনে চলতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে করোনা সতর্কতার প্রচার আরও বাড়ানো হবে। জনবহুল এলাকায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।