মোহালি, ৪ মার্চ : মোহালিতে ক্রিকেট মানেই চলমান পার্টি। ম্যাচের ফাঁকে পাঞ্জাবি গান আর ভাংড়া নাচ বহু পরিচিত দৃশ্য। এখানে এটাই রীতি। শুক্রবার সেভাবেই এগোচ্ছিল কিং কোহলির একশো ম্যাচ। কিন্তু কোন এক লাসিথ এম্বুলদেনিয়া এসে ‘ওয়ে…ওয়ে’ ক্রিকেট পার্টিটাই নষ্ট করে দিলেন!
আরও পড়ুন-বাকরুদ্ধ শচীন-রিচার্ডস
শুক্রবারের আগে এম্বুলদেনিয়াকে বিশেষ কেউ চিনত না। বছর ছাব্বিশের তরুণ। কলম্বোয় বাস। বাঁ হাতি স্পিনার। মোহালি টেস্টে শ্রীলঙ্কার একমাত্র স্পিনার। এটুকুই। তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে আসা বলটা এদিন একটু বেশি স্পিন করে বিরাটের (৪৫) অফস্ট্যাম্প ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল। ব্যাস, বুক-চাপা আতর্নাদের সঙ্গে থম মেরে গেল গ্যালারি। মোহালির একটা বিরাট-স্বপ্নের সেখানেই পরিসমাপ্তি। শেষবেলায় মাঠের মুড ফিরিয়ে এনেছিলেন ঋষভ পন্থ (৯৬)। কিন্তু সেখানেও ধাক্কা! চার রানের জন্য হল না পন্থের সেঞ্চুরি। তবু ন’টি চার, চারটি ছয়ের এই ইনিংসের জন্যই শ্রীলঙ্কার হিরুদ্ধে প্রথম দিন ৩৫৭-৬ তুলতে পেরেছে ভারত।
আরও পড়ুন-সেরা তিন মুহূর্ত, শতাব্দীর সেরা বল
শ্রীলঙ্কার ৩০০তম টেস্টের প্রথমদিন এম্বুলদেনিয়া যে কাণ্ড ঘটালেন, তাতে মোহালির চোখে চিরকালীন ভিলেন হয়ে গেলেন অবশ্যই। বিরাট কোহলি তখন পঞ্চাশের খুব কাছে। একটু একটু করে এগোচ্ছেন হাফ সেঞ্চুরির দিকে। আড়াই বছর বাদে সেঞ্চুরির সুবাসও যেন আসছে। বক্সে বসে হাসি ছড়াচ্ছেন অনুষ্কা শর্মা। এমন এক আবহে ইন্দ্রপতন! পা বাড়িয়ে খেলতে পারতেন বিরাট। না করে পিছনের পায়ে ভর রেখে পয়েন্ট আর কভারের দিকে আড়াআড়ি পুশের চেষ্টা করলেন তিনি। বল প্রত্যাশার চেয়ে বেশি স্পিন করে স্ট্যাম্প ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল। বিরাট যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। তবে এরই মধ্যে তিনি এদিন টেস্টে ৮ হাজার রান পূর্ণ করে ফেললেন। তাঁর আগে মাত্র ৫ জন ভারতীয় ক্রিকেটার এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।
আরও পড়ুন-মার্শকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন জাদুকরও
রোহিত কিন্তু মায়াঙ্ককে নিয়ে ভালই শুরু করেছিলেন। কিন্তু দুজনেই সেট ব্যাটসম্যান হিসাবে বেশিদূর যেতে পারেননি। দলের ৫২ রানে ফিরে গেলেন রোহিত (২৯)। তারপর ৮০-তে মায়াঙ্ক (৩৩)। দ্রত দুটি উইকেট চলে গেলেও পরের জুটিতে হনুমা বিহারী (৫৮) আর বিরাট মিলে পরিস্থিতি সামলে নিয়েছিলেন। পুজারার জায়গায় তিনে নেমে হনুমা সাবলীল ব্যাটিং করলেন। গোটা পাঁচেক বাউন্ডারিতে সাজিয়ে নিয়েছিলেন নিজের ইনিংস। তবে উল্টোদিকে বিরাট থাকায় মোহালির নজর ছিল সেদিকেই। বিরাট এদিন খেলেছেন নিজের মেজাজেই। ৭৬ বলের ইনিংসে পাঁচটি চার। বেশিরভাগই পছন্দের কভার অঞ্চল দিয়ে। কিন্তু রানটা এগোল না। এদিন ছয়ে নেমে ২৭ রান করে গিয়েছেন শ্রেয়স আইয়ারও।
আরও পড়ুন-ওয়ার্ন নেই, আরও অনেক দেওয়ার ছিল
মোহালিতে প্রথমদিনের শেষবেলা এবশ্য জমিয়ে দিয়েছিলেন পন্থ। ষষ্ঠ উইকেটে জাদেজাকে নিয়ে তিনি জুড়ে গেলেন ১০৪ রান। কিন্তু দেশের মাঠে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির সুযোগ এদিন নষ্ট করেছেন দিল্লির উইকেটকিপার-ব্যাটার। সুরঙ্গা লাকমলের ভেতরে ঢুকে আসা বলে উইকেট দিয়ে গেলেন তিনি। পূর্বসূরী মহেন্দ্র সিং ধোনির মতোই এই নিয়ে পাঁচবার নব্বইয়ের ঘরে আউট হলেন পন্থ। ৭৩ বলে হাফ সেঞ্চুরিত্ পৌঁছনোর পর ঝড় তুলতে শুরু করেছিলেন তরুণ বাঁহাতি। এরমধ্যে এম্বুলদেনিয়ার এক ওভারে দুটি ছক্কা-সহ তিনি তোলেন ২২ রান। পরিস্থিতি সামলাতে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক করুণারত্নে তাঁর ফিল্ডারদের ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বাউন্ডারির ধারে। প্রথম দিনের শেষে জাদেজা ৪৫ ও অশ্বিন ১০ রানে ব্যাট করছেন।