ড. পার্থ কর্মকার
জয়েন্ট ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন গভঃ অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যান্ড অ্যাডভাইসর ওয়েস্ট বেঙ্গল স্কুল সার্ভিস কমিশন, প্রাক্তন উপসচিব (শিক্ষা), পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
পরীক্ষার আগের দিনের প্রস্তুতি
১) প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সেন্টারে ঠিকমতো পৌঁছনোর জন্য যে সময় বের হতে হবে সেই সময় মতো বের হবে। না হলে অযথা টেনশন মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। তাই আগের দিন ঠিক করে রাখো কখন বাড়ি থেকে বের হবে।
২) অ্যাডমিট কার্ড এবং রেজিস্ট্রেশন নিতে কখনও ভুলবে না। ভুল হলে সেইদিন অপ্রত্যাশিত মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়।
৩) পেন, পেন্সিল নিতে কখনও যেন ভুল না হয়— সেই জন্য আগের দিন বাক্সবন্দি করে এগুলোকে গুছিয়ে রাখতে হবে। যে পেনগুলি একেবারে নতুন সেগুলো দিয়ে একটু লেখা অভ্যাস করে তবেই বাক্সবন্দি করবে।
৪) একটি Mask ও একটি Sanitizer এর ছোট শিশি হাতের সামনে রাখো।
৫) রুমাল নিতে কখনও ভুলবে না।
৬) মোবাইল ফোন, ক্যালকুলেটর বা কোনও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করবে না।
৭) ছাতা ব্যাগ-এ রাখো, জলের বোতল ও ট্রান্সপারেন্ট রাইটিং বোর্ড নাও। এই সমস্তগুলি এক জায়গায় গুছিয়ে রাখো।
৮) উচ্চমাধ্যমিকে বিভিন্ন বিষয় আছে। তাই সকলের পরীক্ষা একদিনে নয়। রুটিনটা ভাল করে লিখে বা প্রিন্ট করে নিজের চোখের সামনে রেখে দিতে হবে যাতে কোনও তারিখ ভুল না হয়।
আরও পড়ুন-তফাত আছে, তফাত থাকবেই
পরীক্ষার দিন শিক্ষার্থীর কাজ:
১) এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চিরাচরিত প্রথার বাইরে এক নতুন আঙ্গিকে হতে চলেছে। এতদিন ধরে এক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা অন্য স্কুলে অন্য পরিবেশে পরীক্ষা দিতে যেত। কিন্তু বছর নিজের স্কুলে নিজের চেনা বেঞ্চে, নিজের প্রিয় শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সামনে পরীক্ষা দেবে। এটা স্বস্তির বিষয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে পঞ্চম থেকে দশম পর্যন্ত তোমরা অত্যন্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরীক্ষা দিয়েছ। সেটা এই পরীক্ষাতেও বজায় রাখতে হবে। কখনওই ভেবে নেবে না যে তোমাদের স্যর/ম্যাডামদের থেকে তোমরা কোনওরকম সাহায্য পেতে পারো। কারণ পরীক্ষা হলে তাঁরা তোমাদের কোনও অনৈতিক সাহায্য করবেন না। প্রত্যাশা না থাকলে তোমরা খোলা মনে পরীক্ষা দিতে পারবে।
২) যথাসময়ে সেন্টারে পৌঁছে যাওয়ার পর অ্যাডমিট কার্ড দেখে নিজের সিট নম্বর দেখে নিতে হবে। বিদ্যালয় তথা ভেনুতে নোটিশ বোর্ড-এ তোমার সিট নম্বর এবং রুম নম্বর দেওয়া থাকবে। সেটি দেখে নির্দিষ্ট সময় বিদ্যালয়ের গেট খোলার পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিদ্যালয় তথা পরীক্ষার ভেনুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০টায়। তাই অন্তত সকাল ৯.৩০ এর মধ্যে স্কুলে ঢুকে যাবে।
৩) ভেনুতে তোমাদের সাহায্য করার জন্য স্যর ও ম্যাডামরা থাকবেন। সেইজন্য তোমাদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।
৪) পরীক্ষার হলে ঢুকে চোখ বুজে বসে নিজেকে নিজেই বলা, “আমি পারবই, আজকে আমি সেরা” অর্থাৎ সব সময় পজিটিভ থাকা এবং আত্মবিশ্বাসী থাকা।
৫) উত্তরপত্রের টপ সিটের ওপরে নাম, রোল নং, রেজিস্ট্রেশন ও সাবজেক্ট লেখার নির্দিষ্ট জায়গাটি অ্যাডমিট কার্ড দেখে পূরণ করবে। কখনওই উত্তরপত্রের পিছনের পাতায় উত্তর লিখবে না।
আরও পড়ুন-রাশিয়ার তেল: মার্কিন খবরদারিতে ‘না’ দিল্লির
৬) তোমরা একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাওনি। তাই প্রশ্নপত্র সম্পর্কে খুব ভাল ধারণা নাও থাকতে পারে সকলের। তোমাদের দুটি প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে— PART A এবং PART B। পার্ট B হবে MCQ ও SAQ। আর পার্ট A হবে বড় প্রশ্নের জন্য। আগে পার্ট B র উত্তরগুলো করবে মাথা ঠান্ডা রেখে। এগুলোতে পুরো নম্বর তোলার সুযোগ আছে। তাতে তোমরা অনেকটাই এগিয়ে যাবে। এরপর পার্ট A করবে। এই ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা প্রশ্ন ভাল করে পড়ে নিয়ে যেগুলিতে পার্ট প্রশ্ন আছে যেমন: 1+1+3=5/2+2+1=5— সেগুলি উত্তর করার চেষ্টা করলে নম্বর বেশি হবে।
আরও পড়ুন-ছাড়ার আশ্বাস
৭) মাধ্যমিক পরীক্ষা বা স্কুলের পরীক্ষায় তোমরা বড় খাতা পেয়েছিলে, এবার কিন্তু ছোট খাতা পাবে। তাই লুজ শিট বেশি লাগবে। প্রথমেই সেই লুজ শিট-এ রোল নং আর নামটা অবশ্যই লিখে নেবে। আর পৃষ্ঠা নম্বর অবশ্যই দেবে যাতে খাতা গোছানোর সময় ভুল না হয়।
৮) উত্তরপত্রের মার্জিনে কালি ব্যবহার না করে ভাঁজ করে মার্জিন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৯) সুন্দর হাতের লেখা, সঠিক উত্তর, নির্ভুল বানান পরীক্ষায় অধিক নম্বর পেতে সাহায্য করে।
১০) কালো এবং নীল কালি ব্যবহার করবে। কখনওই সবুজ অথবা লাল কালি ব্যবহার করবে না।
১১) প্রশ্ন নির্বাচন করার পরে উত্তরপত্রে যখন উত্তর লিখতে যাবে তখন প্রশ্নের নম্বর দিতে ভুলো না যেন।
১২) পরীক্ষা শেষ করে রিভিশন দেওয়ার মতো সময় রাখবে। রিভিশন দেওয়ার সময় দেখবে কোনও প্রশ্নের উত্তর লিখতে গিয়ে বাকি থাকল কি না।
আরও পড়ুন-পঞ্চাশ টাকায় স্ট্রবেরি, কেনা যাবে মাছ-সবজি, হোলিতে ধোনির উপহার, তিনদিন খোলা ফার্মহাউস
১৩) উত্তর লেখা শেষ হলে এমনকী রিভিশন শেষ হলে সময়মতো খাতা জমা দিতে হবে।
১৪) যে পরীক্ষা হয়ে যাবে তা নিয়ে ওইদিন অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না কেননা অযথা মানসিক চাপের সৃষ্টি হতে পারে। পরের পরীক্ষার জন্য ভাবতে হবে এবং মন দিয়ে পড়তে হবে। বাড়িতে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে পরের দিনের পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করতে হবে।
১৫) একটা দাগ নম্বর-এ তিনটি প্রশ্ন থাকলে উত্তর লেখার সময় ৩টি প্যারাগ্রাফ করে তার উত্তর লিখতে হবে।
১৬) MCQ-এর সাধারণত চারটি সেট হয় । সেই কারণে পাশাপাশি ছাত্রদের MCQ-এর দাগ নম্বর অনুসারে প্রশ্নের উত্তরে কোনও মিল পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ একটি ছাত্রের ২ নং প্রশ্নের উত্তর যদি C হয় ঠিক তার পাশের ছাত্রের ২ নং প্রশ্নের উত্তর C হবে এমন নয় অর্থাৎ পাশের ছাত্রের সেই উত্তর A অথবা B অথবা D তে থাকবে। সেই কারণে পাশের ছাত্রের দাগ নং দেখে প্রশ্নের উত্তর মার্কিং করলে সেটি যেমন অসদুপায় হবে তেমনি উত্তরটি ভুলও হতে পারে।
আরও পড়ুন-বেসুরো শরিক
১৭) MCQ-এর (PART-B) যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত জানা আছে তাদের পেন দিয়ে ডানদিকের বক্স-এ A, B, C, D এর মধ্যে যেটি সঠিক উত্তর তা পরিষ্কার ভাবে লিখে দিতে হবে। কিন্তু যেসমস্ত MCQ-এর উত্তর নিয়ে কোনও প্রকার সন্দেহ আছে তাদের উত্তর হয় পেন্সিল দিয়ে লিখতে হবে অথবা পরের দিকে উত্তর করতে হবে। এই প্রশ্নগুলি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
১৮) MCQ অর্থাৎ PART-B এর মধ্যে নাম, রোল নং এবং রেজিস্ট্রেশন নং পরিষ্কার করে লিখতে হবে। এই অংশটি মূল খাতা শেষে সঠিকভাবে বেঁধে দিতে হবে। খাতা বাঁধার ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে তা হল— মূল খাতা 👉 loose sheet (1,2,3,…) 👉 Part B (MCQ)।