হোমিওপ্যাথির উপর সাধারণ মানুষের ভরসা কতটা?
চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসাবে হোমিওপ্যাথিকে মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছে। এই গ্রহণযোগ্যতা ক্রমাগত বিস্তার লাভ করেছে। মনে রাখতে হবে, পশ্চিমবঙ্গে এমন কোনও গ্রাম নেই যেখানে একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারবাবু নেই। তিনি ডিগ্রিধারী হন বা ডিগ্রিবিহীন। প্রতি পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধানে একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারবাবু আছেন মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্যে। বাংলার মানুষ তাঁদের first attending doctor হিসাবে নিকটবর্তী একজন হোমিওপ্যাথ-এর পরামর্শ নিয়ে থাকেন। অনেকে অত্যন্ত কার্যকর কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বাড়িতেই রাখেন জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য। যেমন Nux vomica ও Pulsatilla পেটের সমস্যায়, আঘাতের জন্যে Arnica, বর্ষাকালে জ্বর সর্দির জন্য Rhus tox, গরমকালে সর্দি-কাশির জন্যে Bryonia, বমির জন্য Ipeacac, পেটে ব্যথার জন্যে Mag.phos, পোকামাকড় কামড়ালে Ledum, আমাশার জন্যে Aloes ইত্যাদি।
আরও পড়ুন-গেঁওখালিতে নতুন পাঁচ শিল্প
কোন কোন অসুখ হোমিওপ্যাথিতে সারানো সম্ভব?
হোমিওপ্যাথি একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ব্যবস্থা। আপৎকালীন সার্জারি ও কিছু জন্মগত ত্রুটি ছাড়া সব রোগই এই পদ্ধতিতে সারানো বা উপশম দেওয়া সম্ভব। রোগ কোন পর্যায়ে অবস্থান করছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে এলে রোগীকে সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ করা যায়। রোগ যদি গভীরে অবস্থান করে তবে সম্পূর্ণ সুস্থ করা না গেলেও রোগের উপশম দেওয়া সম্ভব। তবে সাধারণ ভাবে পেটের সমস্যা, বাত ও নার্ভের রোগ, হাঁপানি, চর্মরোগ, এলার্জি, মা ও শিশুদের সমস্যা, বয়স্ক মানুষদের অনেক সমস্যা, সংক্রামক ব্যাধি, মেয়েদের ঋতুকালীন সমস্যা ইত্যাদি সারিয়ে তোলা সম্ভব। আর একটা কথা, হোমিওপ্যাথিতে কোনওরকম সার্জারি হয় না। তবে অনেক post surgical complications এই চিকিৎসাতে নিরাময় হয়। অনেক surgical disease যেখানে surgeon operation-এর পরামর্শ দেন, তা হোমিওপ্যাথি ওষুধে সেরে যায়। সাধারণ কাটাছেঁড়া এই ওষুধেই সারে। তবে BHMS পাশ করে ডাক্তার হতে হলে surgery subject পড়া আবশ্যিক।
আরও পড়ুন-গড়ধরায় কর্মী সম্মেলনে মানুষের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিল তৃণমূলের জনভিত্তি বাড়ছে
হোমিওপ্যাথিতে কি দুরারোগ্য ব্যাধি সারে?
অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি বা দীর্ঘকালীন রোগভোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া যায়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে কষ্টের উপশম দেওয়া যায়। তবে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারবাবুর বিধান বা পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ।
হোমিওপ্যাথি ওষুধ ব্যবহারে কী কী বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়, যা অন্য কোনও ওষুধে পাওয়া যায় না?
এই চিকিৎসা পদ্ধতি অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির থেকে সম্পূর্ণ বা অনেকটাই আলাদা। এর কিছু বিশেষত্ব বা সুবিধাগুলি হল—
কম ওষুধে রোগীর চিকিৎসা।
সঠিক ব্যবহারে এই ওষুধ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন।
রোগকে রোগী থেকে আলাদা করে দেখা হয় না, সম্পূর্ণ রোগীর চিকিৎসা করা হয়।
রোগীকে কষ্ট না দিয়ে নির্বিঘ্নে সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলে বা উপশম দেয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উজ্জীবিত করে দীর্ঘকাল সুস্থ রাখে।
স্বল্প খরচে এই চিকিৎসা সম্ভব।
আরও পড়ুন-অনিশ্চিত কমনওয়েলথেও এশিয়াড ট্রায়ালে রাজি নন সাইনা
হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে মানুষের কী কী ভুল ধারণা আছে?
অনেকে ভাবেন এই চিকিৎসায় অনেক সময় লাগে। এটা সবক্ষেত্রে ঠিক নয়। সঠিক ওষুধ নির্বাচন ও সঠিক মাত্রা প্রয়োগে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে রোগ সারে। বহু মানুষের ধারণা এই ওষুধের কোনও ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সেটা সব সময় ঠিক নয়। নিয়মমতো বা বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার না করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ভবিষ্যৎ কী? নতুন প্রজন্ম কতটা হোমিওপ্যাথিক পরিষেবা নিচ্ছে?
হোমিওপ্যাথি তার জন্মলগ্ন থেকেই স্রোতের বিপরীতে হেঁটেছে। নিজস্ব দর্শনকে অক্ষুণ্ণ রেখে আজও স্বমহিমায় বিরাজিত। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে হোমিওপ্যাথির প্রসার ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বমুখী। অ্যালোপ্যাথির পরে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। পঁচিশ থেকে তিরিশ শতাংশ মানুষ এর উপর নির্ভরশীল। আশিটির বেশি দেশে হোমিওপ্যাথি চলে। এই পরিষেবা ভালভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে আলাদা আয়ুষ বিভাগ আছে এবং ভারত সরকারের অধীনে আলাদা আয়ুষ মন্ত্রক আছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে Homoeopathic Medical Officer নিয়োগ করা হয়েছে এই পরিষেবা মানুষের কাছ পৌঁছে দেওয়ার জন্য। পঞ্চায়েত দফতর প্রতি পঞ্চায়েতে একজন হোমিও ডাক্তার নিয়োগ করেছে, সেখানে মানুষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করছে। এই নিয়োগ আরও চাই, তবেই এই চিকিৎসার সুফল মানুষ পাবে।
পশ্চিমবঙ্গে কতগুলো হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল আছে?
আরও পড়ুন-বোর্ড-বৈঠকে ঋদ্ধি-ইস্যু
পশ্চিমবঙ্গে মোট বারোটা হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল আছে। তার মধ্যে একটা National Institute of Homoeopathy, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। বাকি এগারোটির মধ্যে চারটি সরকারি ও অন্যগুলো বেসরকারি। এই সব কলেজগুলিতে NEET পরীক্ষার মাধ্যমে BHMS কোর্স-এ ভর্তি হওয়া যায়। কিছু কলেজে একই সঙ্গে AIAPGET এর মাধ্যমে MD (Homoeopathy) কোর্স-এ ভর্তি হওয়া যায়। ডিগ্রিগুলি স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত।
এই কলেজেগুলিই ডাক্তার তৈরির আঁতুড়ঘর। কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে আধুনিক গবেষণার সুযোগ অত্যন্ত জরুরি। হোমিওপ্যাথিকে আধুনিক বিজ্ঞানের হাত ধরে নিজস্ব দর্শনকে অক্ষত রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন-নিউইয়র্কে ফের বন্দুকবাজের হামলা, আহত ১৩
বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস কীভাবে উদযাপিত হল?
হোমিওপ্যাথির জনক ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের জন্মদিন ১০ এপ্রিল। দিনটি ‘বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত। পাশাপাশি ১০ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ‘বিশ্ব হোমিওপ্যাথি সচেতনতা সপ্তাহ’ পালন করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আয়ুষ বিভাগ-এর আর্থিক সহায়তায় রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সম্বন্ধে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মহেশ ভট্টাচার্য হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালও উদ্যোগে শামিল হয়েছে। আমরা ১০ এপ্রিল মহাত্মা হ্যানিম্যান-এর মর্মর মূর্তিতে মাল্যদান ও রোগীদের ফল বিতরণ করেছি। ১১ এপ্রিল এই কলেজ ও হাসপাতালের পুরাতন প্রাঙ্গণে নতুন বহির্বিভাগের উদ্বোধন হয়েছে। আয়োজিত হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির। ১২ এপ্রিল একটি মেডিক্যাল ক্যুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ১৩ এপ্রিল আয়োজিত হচ্ছে একটি সেমিনার। অতিথি এবং বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়, মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি, বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজি সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ। পাশাপাশি সারা সপ্তাহ জুড়ে health screening চলছে ও শহর জুড়ে tablo সহ প্রচার চলছে।