সংবাদদাতা, দুর্গাপুর : স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে নির্মিত ‘হুচুকডাঙা পার্কই’ এখন শহর দুর্গাপুরের পর্যটনের নতুন স্বপ্নরেখা। দামোদরের ধার ঘেঁষে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে ডিভিসি-র কয়েকটি ‘অ্যাশ পন্ড’ বা ছাই ফেলার পুকুর। দিনরাত সেই ছাইয়ের পুকুর থেকে উড়ে আসে ছাই।
আরও পড়ুন-উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী
ঘরদোর ভরে যায় ছাইয়ে। গ্রামের মানুষ ভাতের থালায় মুখ দিতে পারতেন না, কারণ সে ভাত ভরে যেত কারখানার ছাইয়ে। কয়েক দশকের এই নরক যন্ত্রণাকে জীবনের সঙ্গী করে তখনও যাঁরা বেঁচে ছিলেন, একদিন তাঁরাই হয়ে উঠলেন প্রতিবাদী। পাশে পেলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। রাজ্যের ক্ষমতাভার হাতে নেওয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নৈতিক সমর্থন পাথেয় করেই তাঁরা নিলেন এক নাছোড় চ্যালেঞ্জ। রাতুরিয়া মৌজার এই দামোদর তীরবর্তী এলাকার ৬ ও ৭ নম্বর অ্যাশ পন্ড দুটিকে রূপ দেওয়া হল মনোরম সুদৃশ্য দুটি জলাশয়ে। হুজুগে মেতে ওঠা একদল বাঙালি যুবকের এই নয়া চ্যালেঞ্জকে স্থায়ী রূপ দিতে পুরো এলাকার নতুন করে নামকরণ করা হল। ‘হুজুগডাঙাই’ স্থানীয় মানুষের কাছে হয়ে উঠল ‘হুচুকডাঙা’।
আরও পড়ুন-এই হারের ব্যাখ্যা হয় না : দ্রাবিড়
রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে সংযোজিত হল এই অখ্যাত জায়গাটির নাম। ঘন আগাছায় ঢাকা ‘পাথরঘাটা শ্মশানকালী মন্দির’ সংলগ্ন যে জায়গাটিতে দিনের বেলাতেও যেতে গা ছমছম করত, দুর্গাপুর নগরনিগমের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সেই রাতুরিয়া গ্রমের ভূগোলটাই বদলে গেল কয়েক বছরের মধ্যে। নীল নির্জন শান্ত পরিবেশে গড়ে উঠল এক মনোরম পর্যটন কেন্দ্র। তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর পুরনিগম ছাড়াও বিভিন্নভাবে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী। এলাকাটিকে তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে সেখানেই তৈরি হল দশখানি কটেজ। আনা হল বেশ কয়েকটি মোটরচালিত ছোট নৌকা। ভ্রমণপিপাসু মানুষদের কাছে এক অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল এই হুচুকডাঙা।
আরও পড়ুন-ডুয়ার্সের উন্নয়নে
এই প্রকল্পেরই অন্যতম কর্মী সুপ্রভাত ঘোষ বলেন, গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সমর্থনে প্রচারে এসেছিলেন সংগীতশিল্পী নচিকেতা। তিনি হুচুকডাঙার এই নতুন প্রকল্পটির নাম শুনেছিলেন কলকাতায় বসেই। স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে তিনি নিরালায় বসে তাঁর স্মরণ বিন বাঁধতেই বেছে নিয়েছিলেন এখানকার একটি কটেজ। জলদগম্ভীর দামোদরের মনমাতানো ছলাৎ ছল শব্দ শুনতে শুনতে কখন যে সাতটা দিন কেটে গেছিল, সুরপাগল এই মানুষটা তার হিসেবই রাখার সময় পাননি।