আদি-নব্যের দ্বন্দ্ব নতুন নয় কিন্তু এবার নব্যদের সিন্ডিকেটের অভিযোগ। ভোটের আগেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত বিজেপি (BJP)। বাদ নেই যুব মোর্চাও। যুব মোর্চার সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ (Indranil Khan) ও তাঁর সহযোগী রাজ চৌধুরীর (Indranil Chowdhuri) বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে (JP Nadda) চিঠি দিল বিজেপির যুব মোর্চার একাংশ।
আরও পড়ুন-এক ধাক্কায় কলকাতায় তাপমাত্রা ১৮, দেশজুড়ে শীত কবে
কী লেখা আছে সেই চিঠিতে?
চিঠিতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যুব মোর্চা সম্প্রতি “যাত্রাপালার রঙ্গমঞ্চে পরিণত হয়েছে”। মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ “শারীরিক এবং মানসিকভাবে যুব মোর্চার কার্যকর্তাগণ এবং বৃহত্তর আঙ্গিকে রাজ্যের যুব সমাজের থেকে সহস্র যোজন দূরে অবস্থান করছেন। তিনি মোর্চার কোন নীতিগত এবং দৈনিক কাজকর্মের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে অপারগ”।
আরও পড়ুন-বেলুড়ে নেচারোপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ
শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে ইন্দ্রনীল মোসাহেব পরিবৃত হয়ে থাকছেন। ইন্দ্রনীলের জায়গায় রাজ্য যুব মোর্চার কার্যালয় সম্পাদক রাজ চৌধুরী বকলমে রাজ্যে বিজেপির যুব মোর্চা পরিচালনা করেন এবং “সবার উপর ছড়ি ঘোরান” বলে চিঠিতে অভিযোগ। এমনকী জেলার যুব নেতাদের নাম করে ‘ধমকানো-চমকানো’ হচ্ছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কার্যকর্তাদের থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। জে পি নাড্ডাকে লেখা চিঠিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, রাজের কাছে কোনও কারণে ইন্দ্রনীল এমনভাবেই বাধা পড়ে রয়েছেন যে, তাঁর সমস্ত কথায় তিনি সম্মতি জানাচ্ছেন। রাজনীতির পদের অপব্যবহার করে রাজ যুব মোর্চার দফতরটিকে তোলাবাজির আখড়া করে ফেলেছেন বলেও অভিযোগ। তিনি কারও থেকে দু লক্ষ, কারও থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করছেন। “যুব মোর্চার বিভিন্ন পদ অর্থের বিনিময় বিক্রি করা হচ্ছে” বলেও অভিযোগ। “টাকা-পয়সা ছাড়াও আই-ফোন, সোনার গয়না, এসব দাবি করছেন রাজ।“ বেড়ানোর খরচ, দামী রেস্তোরাঁয় খাওয়ার খরচ, মোবাইল বিল মেটানোর খরচ, এমনকী সংসার খরচের টাকাও দাবি করছেন রাজ। “যাঁরা টাকা দিচ্ছেন তাঁরাই পদে থাকছেন। যাঁরা দিচ্ছেন না তাঁরা অপমানিত হচ্ছেন। ছাঁটাই করা হচ্ছে।“ ইন্দ্রনীল যুব নেতা কিন্তু তার সাত হাজারি জামা, কুড়ি হাজারি জিনস, কোটি টাকার মোটরবাইক। তিনি যুব নেতা, না ফ্যাশন মডেল তা বোঝা মুশকিল। “সেজেগুজে ফুল বাবু হয়ে কার্যালয় এসে হেসে হেসে সেলফি তুলে চলে যান।“ অথচ গ্রাম বাংলায় যুবকর্মীরা অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দল করছে, সেদিকে ইন্দ্রনীল খাঁ কোনও নজর নেই বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। “উনি সংগঠনের ‘স’ বোঝেন না। রাজনীতির ‘র’ বোঝেন না। শুধু বোঝেন ঘাম রক্ত ঝরানো যুবকর্মীদের মাথার উপর বসে কী করে দুধ-সর-মালাই খেতে হয়“।
আরও পড়ুন-মেলবোর্নের ফাইনালে আশঙ্কা সেই বৃষ্টি নিয়েই কাপের লড়াইয়ে মুখোমুখি, আজ পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড
এছাড়াও বিস্ফোরক অভিযোগ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। বলা হয়েছে, “রাজ whatsapp গ্রুপে মোর্চার বহু কার্যকর্তাদের যৌন ইঙ্গিতবাহী এবং তাঁর সঙ্গে সমকামী যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাবমূলক বার্তা পাঠিয়েছেন যা নথি আকারে যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে“।
চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, এখনই ব্যবস্থা না নিলে যে হারে যুবমোর্চার মধ্যে ক্ষোভ এবং হতাশা বাড়ছে তাতে সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে ক্রস ভোটিং হবে এবং বাংলায় বিজেপির ভরাডুবি অবশ্যম্ভাবী। “স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবও দিল্লি থেকে তা আটকাতে পারবেন না।“ এভাবে চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে গেরুয়া শিবের পর্যুদস্ত হবে এবং সেখানে বামেরা জায়গা করে নেবে বলেও চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-দেব সেনাপতি কার্তিকের ইতিবৃত্ত
এই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করে কিছুদিন আগেই বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুও (Sayantan Basu) চিঠি লেখেন জেপি নাড্ডাকে। সেখানেও বঙ্গে বিজেপি-র জনসমর্থন তলানিতে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে যাঁরা দল চালাচ্ছেন, তাঁদের ‘দলবদলু সিন্ডিকেট’ বলে হয়। এভাবে চললে, বামেরা যে বিজেপির জায়গায় দখল করবে সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের প্রতি কেন্দ্রীয় নেতারা কোনও পদক্ষেপ করেছেন বলে জানা যায়নি। এবার যুব নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও যুবমোর্চার ক্ষোভ প্রমাণ করে দিচ্ছে, বিজেপির অন্দরে সর্বস্তরেই তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। যার জেরে বঙ্গে গেরুয়া শিবিরের ভরাডুবি, “স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবও দিল্লি থেকে আটকাতে পারবেন না।“