প্রতিবেদন : ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন ব্যাঙ্ককে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আরও বেশি করে ঋণ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। শুক্রবার নবান্নে স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির বৈঠকের পরে রাজ্যের আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র বলেন, রাজ্যের দাবি মেনে নিয়ে আগামী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের আরও ৪২ হাজার নতুন ক্রেডিট কার্ডের অনুমোদন দেওয়া হবে বলে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা কথা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-কোর্ভিভ্যাক্সে ছাড়পত্র, সাবধানি পদক্ষেপ রাজ্যের
এখনও পর্যন্ত ৩৮ হাজার স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। অন্যদিকে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে চলতি অর্থ বছরে বিভিন্ন শিল্পোদ্যোগীদের এক লক্ষ ১০ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭০ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের ঋণ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার যে আর্টিজেন ও রিভার্স ক্রেডিট কার্ড দেয় সেখানে প্যান কার্ড থাকতে হবে বলে কেন্দ্রীয় সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্যের তরফে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চিঠি দেওয়া হবে বলেও অমিতবাবু জানান।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এছাড়াও রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে আগামী তিন বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে আরও বেশি করে ঋণ দেওয়ার বিষয়েও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ প্রকল্পের অভাবনীয় সাফল্য। রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের ঋণ পাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই যার পরিমাণ ১০০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে গিয়েছে। সব ঠিক থাকলে জানুয়ারির মাঝামাঝিই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ঋণপ্রাপকের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহারে রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ ঋণের ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। নির্বাচনে জয়ের পরই পড়ুয়াদের জন্য ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ প্রকল্প চালু করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ৩০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের সূচনা হয়।
আরও পড়ুন-সিকিমে পথ দুর্ঘটনায় জওয়ানদের মৃত্যু, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত আটমাসে ১ হাজার ১০৫ কোটি টাকারও বেশি ঋণ অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। মোট ৩৭ হাজারের বেশি পড়ুয়া ঋণ পেয়েছেন। নবান্ন সূত্রের খবর, এমাসেই আরও প্রায় ২১ হাজার পড়ুয়ার ঋণ অনুমোদন পেতে চলেছেন।
আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আরও ২১ হাজার পড়ুয়ার ঋণ অনুমোদন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড থাকলে উচ্চশিক্ষার জন্য ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পান পড়ুয়ারা।
পড়ুয়া চাইলে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারেন, আবার ১০ লক্ষও ঋণ নিতে পারেন। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এই ঋণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারই গ্যারান্টার। সুদের একটা বড় অংশও দেয় রাজ্য সরকার। যার ফলে পড়ুয়ারা অনেক কম সুদে ঋণের সুবিধা পান।
আরও পড়ুন-পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বিস্ফোরণ, নিহত ১ , আহত একাধিক পুলিশকর্মী
রাজ্যের বহু পড়ুয়া এই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য ইতিমধ্যেই আবেদন করেছেন। শুধু স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড নয়, স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার প্রকল্পে ঋণদানের ক্ষেত্রেও রাজ্য অগ্রণী ভূমিকায়। আজ শুক্রবার ব্যাঙ্ক কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় রাজ্য সরকার জানিয়েছে, মহিলাদের গোষ্ঠীগুলির ঋণ ফেরত দেওয়ার হার প্রায় ৯৮ শতাংশ।
তাই এই গোষ্ঠীগুলিকে ঋণদানের পরিমাণ আরও বাড়ানো হোক। আগামী ৩ বছরের মধ্যে রাজ্যের এই গোষ্ঠীগুলিকে ৬ কোটি ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্য সরকার। ব্যাঙ্ক এবং ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে সমন্বয়সাধনের জন্য রাজ্য সরকার ২১০০ মহিলাকে আলাদা প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যাঁদের বলা হচ্ছে ‘ব্যাঙ্কিং সখী’।
আরও পড়ুন-যুদ্ধের অবসান চাইছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন
রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এদিন ব্যাঙ্কিং সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার শেষে সবিস্তার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র এবং রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।