সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার। ১৯২৬ থেকে ১৯৪১-এর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র সম্পাদক ছিলেন। স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল। এই সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন শ্রীশ্রীমা সারদাদেবীর মন্ত্রশিষ্য। একবার তিনি দীক্ষাদাত্রীর রুদ্রাণী মূর্তি দেখেছিলেন।
বাংলার গভর্নর জেনারেল তখন লর্ড কারমাইকেল। বিপ্লবী আন্দোলনের আঁচে বাংলা তখন পুড়ছে। ক্ষুব্ধ কারমাইকেল এক বক্তৃতায় বললেন, সেবাধর্মের আড়ালে রামকৃষ্ণ মিশন বাংলার বিপ্লবীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিচ্ছে।
আরও পড়ুন-ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের সাহায্য মন্ত্রী ও রাজ্যের
সত্যেন্দ্রনাথ লিখছেন, কারমাইকেলের কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া চলে না। কারণ, ‘বহুপূর্বে প্রথম আমলের গুপ্ত বিপ্লবীদের সঙ্গে ভগিনী নিবেদিতার যোগাযোগ ছিল। এঁদের অনেকেই বিবেকানন্দের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং মঠে যাতায়াত করতেন, এমনকী মঠের শিষ্যও ছিলেন। তাছাড়া মিশনের বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী উপলক্ষে সেবাকার্যে বহু দেশপ্রেমিক যুবক যোগ দিত, এদের মধ্যে গুপ্ত সমিতির সদস্য থাকা কিছু আশ্চর্য নয়। আবার অনেকে রাজনীতি বা গুপ্ত সমিতির সম্পর্ক ছিন্ন করে সন্ন্যাসীও হয়েছিলেন। যেমন আলিপুর বোমার মামলার দেবব্রত বসু, শচীন্দ্র, প্রিয়নাথ, সতীশ মহারাজ প্রভৃতি। গৈরিকের অন্তরালে থেকে অতীত জীবনের কাজের সঙ্গে এঁরা যোগ রেখেছেন এমন সন্দেহ পুলিশের গুপ্তচর ছাড়া আর কেউ করতে পারে না।’
আরও পড়ুন-এমপি কাপে শেষ চারে মল্লিকপুর ও হরিণডাঙা
সত্যেন্দ্রনাথের বক্তব্য, ‘গুপ্ত পুলিশের তীক্ষ্মদৃষ্টি মঠের ওপর বরাবরই ছিল। মঠে যাতায়াত করে এমন সব দেশপ্রেমিক চরিত্রবান বিশেষভাবে অবিবাহিত যুবকদের পেছনে টিকটিকি লেগেই ছিল।’ আর, গোয়েন্দা পুলিশ বা টিকটিকি ওঁদের পিছনে লাগবে না-ই বা কেন! ছাত্র-যুবদের ঘরে ঘরে তখন বিবেকানন্দের বই আর ছবি খানাতল্লাশির সময় হামেশাই মিলত। আর সেসব তো ব্রিটিশ পুলিশের চোখে বোমা-পিস্তলের সমান।
কারমাইকেলের বক্তৃতার পর মঠ ও মিশনের ওপর ‘শনির দৃষ্টি’ তীব্রতর হয়েছিল কি না, সে কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। তবে ‘ভীরু-হৃদয় সরকার-ঘেঁষা’ রামকৃষ্ণ ভক্তমণ্ডলী মিশনের বড় বড় মহারাজদের পরামর্শ দিলেন, ‘বৈপ্লবিক সমিতির লোকদের মঠ থেকে সরিয়ে দেওয়াই ভাল।’
আরও পড়ুন-নন্দীগ্রামে বিরোধীরা ধূলিসাৎ, ১২-০-তে জয় সমবায় ভোটে, মাটি সরে যেতেই দলবদলুদের গুন্ডামির চেষ্টা
‘সত্যাশ্রয়ী সন্ন্যাসীরা অমঙ্গল-উৎপাতের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন’ হয়ে সেইমতো ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপর হলেন। খবরটা কানে গেল সংঘজননী সারদাদেবীর। কথাটা শুনেই তিনি বলে উঠলেন, ‘‘ঠাকুরের ইচ্ছায় মঠ মিশন হয়েছে; রাজরোষে নিয়ম লঙ্ঘন করা অধর্ম। ঠাকুরের নামে যারা সন্ন্যাসী তারা মঠে থাকবে, নয়তো কেউ থাকবে না। আমার ছেলেরা গাছতলায় আশ্রয় নেবে, তবু সত্যভঙ্গ করবে না।”
সত্যেন্দ্রনাথ স্মৃতিচারণ করতে বসে লিখেছেন, ‘মার কথা শুনে বাবুরাম মহারাজের (স্বামী প্রেমানন্দের) কী আনন্দ!’ শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিবেকানন্দের বিদেশিনী শিষ্যা মিস ম্যাকলাউড মধ্যস্থতা করলেন। কারমাইকেলের সঙ্গে দেখা করলেন স্বামী সারদানন্দ। সব বুঝিয়ে বললেন। তাতে কি সব সমস্যার সমস্যা হয়ে গেল? দ্বন্দ্ব বিবাদ সংশয় সব মিটে গেল? মোটেও তেমনটা হয়নি। সত্যেন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘গভর্নমেন্ট এর পর প্রত্যক্ষভাবে মঠের ওপর চাপ না দিলেও গুপ্ত পুলিশের তৎপরতা বরাবর সমান ছিল।’ অর্থাৎ, সরকার ভীষণ কড়াকড়ি না করলেও নজরদারি বজায় রেখেছিল। আর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনও নিজেদের কাজের ধারায়, চলার ছন্দে বিশেষ কোনও রদবদল করেনি।
আরও পড়ুন-মেঘালয়ে বিপ্লব, উই কার্ডে ৯ দিনে নাম ৬০ হাজারের
সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের উল্লিখিত স্মৃতিকথায় দেবব্রত বসু ও শচীন্দ্রনাথ সেনের কথা বলা হয়েছে। ১৯০৯ সালের মানিকতলা বোমা মামলায় ওঁরা দু’জন মুক্তি পেয়েছিলেন। সারদাদেবীর অনুমোদন ছিল বলেই তাঁরা রামকৃষ্ণ মঠে আশ্রয় পেয়েছিলেন। সারদাদেবীর ‘প্রশ্রয়’ না-থাকলে ওঁরা দু’জন মঠে ‘আশ্রয়’ পেতেন কি না সন্দেহ! মঠে ওঁদের স্থান পেয়ে যাওয়াটা ব্রিটিশ পুলিশ একেবারেই ভাল নজরে দেখেনি। পুলিশের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে শচীন্দ্রনাথ সেন ওরফে স্বামী চিন্ময়ানন্দ সরাসরি সারদামণির কাছেই অনুযোগ করেন। সব শুনে সারদামমণির স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘ঝড়ের এঁটোপাত হয়ে থাক। তোমার অস্তিত্ব থাকবে, ব্যক্তিত্ব থাকবে না, তাহলে তোমার সব জ্বালা যাবে।” সংঘজননীয় পরামর্শ মনেপ্রাণে গ্রহণ করলেন চিন্ময়ানন্দ। পুলিশ আগের মতোই ঝুট-ঝামেলা করতে লাগল। মিশনে তাদের উৎপাতে কোনও ছেদ পড়ল না। কিন্তু বদলে গেল শচীন্দ্রদের মানসিকতা। তাঁরা যেন এসবের প্রতি নিঃসীম উদাসীন। পুলিশের ‘কোনও ব্যবহারই (তাঁদের) মনে রেখাপাত করত না।’
আরও পড়ুন-আরও ৪২ হাজার ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে পড়ুয়াদের
অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল প্রিয়নাথ দাশগুপ্তকেও। ১৯১২-তে উদ্বোধনে আশ্রয় নেন। অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর। আচমকা পুলিশের নজর পড়ল তাঁর ওপর। প্রিয়নাথকে দেড় বছরের জন্য ছাড়তে হল ‘উদ্বোধন’। সেদিনকার ‘উদ্বোধন’ ত্যাগের স্মৃতিচারণা করেছেন প্রিয়নাথ, পরবর্তীকালের স্বামী আত্মপ্রকাশানন্দ। তিনি লেখেন, বিদায়কালে সারদামণি ‘যেন আমার দুঃখে অভিভূতা হইয়া গেলেন এবং অসীম স্নেহকরুণা দিয়া আমাকেও অভিভূত করিয়া ফেলিলেন। আমাকে বারবার অভয়বাণী শুনাইতে লাগিলেন, “ভয় কোরো না, ঠাকুর সব ঠিক করিয়া দেবেন।” মায়ের কাছেই দীক্ষা নিয়েছিলেন আত্মপ্রকাশানন্দ।
সন ১৯১৫। সময়টা এপ্রিলের মাঝামাঝি। বাগনান থেকে বালেশ্বরে যাচ্ছেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ইতিহাস যাঁকে বাঘাযতীন নামে বেশি মনে রেখেছে। ট্রেনে বসেই শুনলেন সারদাদেবীও ওই একই ট্রেনের যাত্রী। তিনি চলেছেন কলকাতা থেকে তাঁর দেশের বাড়িতে। বাঘাযতীন তখন পলাতক। ধরা পড়লে চরম শাস্তি। কিন্তু যখনই শুনলেন সারদামণিও ওই ট্রেনেই যাচ্ছেন, তখনই সব বিপদের ভয় ভুলে ছুটে গেলেন সারদার কাছে। তাঁর আশীর্বাদ নিলেন। এর মাস পাঁচেক পর ঐতিহাসিক বুড়িবালামের যুদ্ধ। ১০ সেপ্টম্বর বালেশ্বর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বাঘাযতীন।
আরও পড়ুন-কোর্ভিভ্যাক্সে ছাড়পত্র, সাবধানি পদক্ষেপ রাজ্যের
২৪ বছর বয়সি বিধবা ননীবালা দেবী। সারদাদেবীর মন্ত্রশিষ্য রামচন্দ্র মজুমদার গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু তাঁর কাছে একটা মাউজার পিস্তল রাখা ছিল, সেটা গেল কোথায় তারই খোঁজে ননীবালা তাঁর সঙ্গে জেলে দেখা করতে গেলেন। সেজন্য রামচন্দ্রের স্ত্রী সাজলেন তিনি। হিন্দু বিধবা হয়েও মাথায় দিলেন সিঁদুর। কিন্তু নিজেকে আড়াল করতে পারেননি ননীবালা। পেশোয়ার থেকে গ্রেফতার করা হল তাঁকে। নিয়ে আসা হল কাশীতে। চলল অকথ্য নির্যাতন। একটা কথাও তাঁর কাছ থেকে বের করতে পারল না ব্রিটিশ পুলিশ। কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠনো হল ননীবালাকে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিলেন তিনি। পুলিশের কর্তাব্যক্তিদের শত কাকুতিমিনতিতেও অনশন ভাঙলেন না। তখন আসরে নামলেন গোয়েন্দা পুলিশের স্পেশ্যাল সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডি। বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেন, ননীবালা যদি খাবার মুখে তোলেন তবে গোল্ডি তাঁর যেকোনও ইচ্ছে মেটাতে রাজি। ননীবালাকে তাঁর ইচ্ছা জানিয়ে একটা দরখাস্ত লিখতে বলা হল। ননীবালার লিখিত আর্জি, ‘আমাকে বাগবাজারে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রী কাছে রেখে দিন, তাহলে খাব।’ দরখাস্তটা নিয়ে গোল্ডি সেটাকে ছিঁড়ে দলা পাকিয়ে ছেঁড়া কাগজের টুকরিতে ফেলে দিল। অমনি সপাটে গোল্ডির গালে একটা চড় কষিয়ে দিলেন ননীবালা। দ্বিতীয় চড়টা মারতে যাবেন, ঠিক তখনই উপস্থিত বাঙালি গোয়েন্দা কর্মচারীরা তাঁর হাত চেপে ধরল। বিপ্লবী অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দূর সম্পর্কের পিসিমা ছিলেন ননীবালা। তাই গোয়েন্দারা বলে উঠল, ‘‘পিসিমা করেন কী? করেন কী?’’ গর্জে উঠলেন ননীবালা, ‘‘ছিঁড়ে ফেলবে তো, আমায় দরখাস্ত লিখতে বলেছিল কেন?’’ সরকারি নথি বলছে, ১৯১৮-র ৩ নং রেগুলেশনে ধৃত বাংলার একমাত্র মহিলা স্টেট প্রিজনার ননীবালা দেবী।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
যে রামচন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে জেলে দেখা করতে গিয়েছিলেন ননীবালা সেই রামচন্দ্র মজুমদারকে অরবিন্দ বললেন, তিনি সারদা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান। স্বামী সারদানন্দকে রামচন্দ্র সে কথা জানালেন। সারদানন্দ অরবিন্দকে নিয়ে আসতে বললেন। কুমার অতীন্দ্রকৃষ্ণ দেব বাহাদুরের ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে কৃষ্ণকুমারের বাড়ি গেলেন রামচন্দ্র। সেখান থেকে অরবিন্দ আর তাঁর পত্নী মৃণালিনী দেবীকে নিয়ে তিনি গেলেন বাগবাজারে উদ্বোধনের অফিসে। সেখানে পৌঁছে সস্ত্রীক অরবিন্দ দোতলায় উঠে গেলেন। সারদাদেবীকে প্রণাম করলেন দু’জনে। সারদা অরবিন্দকে দেখে বলে উঠলেন, ‘‘এইটুকু মানুষ, এঁকেই গভর্নমেন্টের এত ভয়!’’ আদর করে বললেন, ‘‘আমার বীর ছেলে।”
সারদাদেবীর ঘর থেকে বের হলেন স্বামী-স্ত্রী। গৌরী মা তখন উদ্বোধনে। তিনি অরবিন্দের চিবুক ধরে বলে উঠলেন, ‘‘যত উচ্চ তোমার হৃদয় তত দুঃখ জানিও নিশ্চয়। হৃদিবান নিঃস্বার্থ প্রেমিক এ জগতে নাহি তব স্থান।”
আরও পড়ুন-সিকিমে পথ দুর্ঘটনায় জওয়ানদের মৃত্যু, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
১৯১৩ সালে অনুশীলন সমিতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন ডক্টর প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ। রাজনৈতিক ডাকাতি, গুপ্তহত্যা, এসব নীতিগত প্রশ্নে এই সম্পর্ক ছেদ। তিন বছর পর, ১৯১৬-র ১৩ সেপ্টেম্বর প্রফুল্লচন্দ্র এলেন মাতৃদর্শনে। মায়ের পায়ে মাথা রাখলেন। সারদা তাঁর মাথায় রাখলেন হাত। পরবর্তীকালে এই প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন। ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় দায়িত্ব নেওয়ার আগে, স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পর থেকে ১৯৪৮-এর ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের এই ডক্টরেট মুখ্যমন্ত্রিত্বের দায়ভার সামলেছেন। এরপর অজয় মুখোপাধ্যায়ের যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন হলে, ২ নভেম্বর, ১৯৬৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ পর্যন্ত এই গান্ধিবাদী নেতাই ছিলেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এহেন প্রফুল্লচন্দ্র নিজের ‘জীবন-স্মৃতির ভূমিকা’-তে লিখেছেন, ‘সেদিনের স্মৃতি (১৩.০৯.১৯১৬-র স্মৃতি) আমার জীবনের অক্ষয় সম্পদ। আমি জীবনে যখনই কোনও কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি বা কখনও যদি হই, তখন সেই মুহূর্তটি আমি স্মরণ করি: আমি শ্রীশ্রী মায়ের চরণে মাথা রেখে প্রণাম করছি এবং তিনি আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করছেন।’
আরও পড়ুন-পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বিস্ফোরণ, নিহত ১ , আহত একাধিক পুলিশকর্মী
এমন সব মানুষজন মায়ের চারদিকে ঘিরে ছিলেন বলেই বোধহয় সারদাদেবী বারবার বলেছেন, ব্রিটিশ সরকারের সম্বন্ধে, ‘আগে ওদের ধ্বংস হবে, নিজেদের রাজ্য নিজেদের হবে।’ যখনই কেউ বলতেন, ‘‘ইংরেজ সরকার আমাদের দেশের অনেক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বাড়িয়েছে’’, সঙ্গে সঙ্গে সারদাদেবী বলতেন, ‘‘কিন্তু বাবা, ওইসব সুবিধা হলেও আমাদের দেশের অন্নবস্ত্রের অভাব বড় বেড়েছে। আগে এত অন্নকষ্ট ছিল না।”
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে সারদাদেবীর আন্তরিক যোগাযোগ প্রসঙ্গে ইতিহাসের অধ্যাপক জীবন মুখোপাধ্যায়কে একবার একজন সিপিআই নেত্রী যা বলেছিলেন, সেটা এই বিষয়ক প্রবন্ধের উপসংহৃতি সন্ধি রচনা করতে পারে। ওই নেত্রী বলেছিলেন, ‘‘সেটা রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের যুগ। স্বামীজির অবর্তমানে দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা-সংগ্রামীরা যে দলে দলে মায়ের কাছে আশীর্বাদ ভিক্ষা করতে যাবেন, তাতে আশ্চর্যের কী আছে!’’
হেমচন্দ্র ঘোষ ছিলেন সংগ্রামশীল ভারতের অগ্নিপুরুষদের অন্যতম। তিনি যা বলেছিলেন সেটাও এই প্রসঙ্গের, সম্ভবত, সারকথা।
‘সারদাদেবীর ওই শান্ত সমাহিত নীরব জীবনের মধ্যেই রয়েছে অতিবিপ্লবের বীজ। রামকৃষ্ণ-সারদা-বিবেকানন্দ, এই ত্রয়ী এক মহাবিপ্লবের প্রতীক। …এঁদের বিপ্লবে চাঞ্চল্য নাই, গতির চমক নাই। …(কিন্তু) আগামী কালের মানুষ দেখতে পাবে যে, এই নীরব বিপ্লবের তরঙ্গ সমগ্র জগৎকে প্লাবিত করে দিয়েছে।’