মণীশ কীর্তনীয়া: ২০২৩-শে ঢেলে সাজানো হবে উত্তরকে। রাজ্য সরকারের একাধিক দফতরের সমন্বয়ে এই ঢেলে সাজানোর কাজ হবে। ইতিমধ্যেই নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছে দফতরগুলি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার উত্তরের জেলাগুলিতে পর্যটনকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নের রূপরেখা তৈরির কথা বলেছেন। এর মধ্যে পাহাড় আলাদা গুরুত্ব পায় অবশ্যই। সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি-সহ উত্তরের জেলাগুলির পর্যটন মানচিত্রকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সঙ্গে জুড়েছে বনদফতরের একাধিক পরিকল্পনা। রয়েছে সেচ ও পিএইচই দফতরের একাধিক প্রোজেক্ট।
আরও পড়ুন-সাগরমেলায় বাড়তি পানীয় জল
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব পাওয়ার পর মন্ত্রী উদয়ন গুহ দেখেন অনেকগুলি প্রকল্পের কাজ মাঝপথে পড়ে রয়েছে। সেগুলি দ্রুত শেষ করার দিকে নজর দেন তিনি। একই সঙ্গে বন দফতর, সেচ দফতর, পিএইচই-র কাজও খাপছাড়াভাবে বিভিন্ন জায়গায় চলছিল। সেগুলি যাতে গতি পায় তা নিয়ে এই দফতরগুলির মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। তাতেই কেল্লা ফতে। উদয়ন গুহর কথায়, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করাও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে ২০২৩-এর মে মাসে। তার আগে পঞ্চায়েত-কেন্দ্রিক উন্নয়নের কাজগুলি দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-দিলীপকে জবাব তৃণমূলের
উন্নয়নকে সামনে রেখেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাঁপাবে তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার বকেয়া না দিলেও নিজেদের মতো করে তা সামাল দিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রতিটি দফতরেই অপচয় কমিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা হিসেব করে আর্থিক বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ চলছে। হাজার প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও উন্নয়নের কাজ কোথাও থমকে নেই। এই অবস্থায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর চাইছে সীমিত আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যেই যতটা বেশি সম্ভব কাজ করা যায়। সম্প্রতি বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গে, সেখানে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে বনদফতরের বেশ কিছুটা জমি থাকায় তাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন বনমন্ত্রী। উদয়ন গুহ জানান, উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ পর্যটনের সঙ্গে জঙ্গল জড়িয়ে। এখনও এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে পর্যটকরা গিয়ে আবার দিনের দিন ফেরত চলে আসেন। কারণ সে-সব জায়গায় এখনও আস্তানা বা থাকার মতোন পরিকাঠামো নেই। অথচ, দিন দিন ভিড় বাড়ছে।
আরও পড়ুন-১২-০, সমবায় ভোটে ফের জয়
এরকম একটি জায়গা তুফানগঞ্জের ‘রসিকবিল’। এখানে কাছাকাছি মিনি জু-সহ একাধিক দ্রষ্টব্য জায়গা রয়েছে। কিন্তু থাকার জায়গা নেই। বনদফতরের তরফে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এই ‘রসিকবিল’-এ বারোটি কটেজ তৈরি করার জন্য। যার মধ্যে ছটি করে দেবে ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন। বাকি ছটি করবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। এ ছাড়া, শিলিগুড়ি-লাগোয়া বেঙ্গল সাফারি এখন যথেষ্ট জনপ্রিয়। সেখানেও থাকার জায়গা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, কোচবিহারের ‘পাতলাখাওয়া’তে রাইনো প্রজেক্ট করবে বনদফতর। সেখানেও সহযোগিতায় থাকবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। এর সঙ্গে অবশ্যই পর্যটন দফতরের সঙ্গেও একাধিক পরিকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সমস্ত জায়গাতে কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন স্থানীয়রাই। শুধু কটেজ তৈরি নয়। উত্তরের জেলাগুলির একাধিক জায়গায় কত বেশি সম্ভব হোম-স্টে তৈরি করা যায় তা নিয়েও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। পাহাড়ে ইতিমধ্যে হোম-স্টে বেশ জনপ্রিয়। সেখানে সারাবছরই প্রায় ঠাঁই নাই অবস্থা। এই আবহে হোম-স্টে পরিকাঠামোকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দিতে চায় রাজ্য সরকার। এর জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা অনেক আগেই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি স্থানীয়দের রোজগার হবে। পর্যটকেদেরও সুবিধে হবে।
আরও পড়ুন-প্রতিরোধে ফিরল বাহিনী
শুধুমাত্র পর্যটন নয়। উত্তরের জেলাগুলিতে সার্বিকভাবে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজও জোরকদমে চলছে। বিশেষ করে সেচের জল ও পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার। সেচ দফতরের একাধিক ড্যাম-প্রকল্প শেষের পথে। পানীয় জল প্রকল্পের কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। জানুয়ারির শেষের দিকে সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক আলিপুরদুয়ার-জলপাইগুড়িতে যাবেন একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধনে। এর সঙ্গে রয়েছে চা-বাগান শ্রমিকদের দৈনন্দিন জীবন-যাপনের মান উন্নয়ন। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চা-শ্রমিকদের সম্মেলনে গিয়ে কয়েক মাস আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন ইতিমধ্যে তার কাজ এগোচ্ছে দ্রুতগতিতে। অভিষেক নিজে বলেছেন, তিনি দুমাস অন্তর উত্তরের জেলাগুলিতে যাবেন এবং সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন সেখানকার মানুষের সুবিধে-অসুবিধে। ফলত একদিকে রাজ্য সরকারের তরফে প্রশাসনিকভাবে বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে যেমন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ঢেলে করা হচ্ছে, আবার একই সঙ্গে দলীয়স্তরেও সাংগঠনিকভাবে নজর রাখা হয়েছে উত্তরের মানুষের চাওয়া-পাওয়া সুবিধে-অসুবিধেও। সবমিলিয়ে নতুন বছরে উত্তরের জেলাগুলিকে আরও নিবিড়ভাবে উন্নয়নের মাপকাঠিতে উপরের দিকে নিয়ে যাওয়ার সবকরম প্রয়াস জারি থাকবে।