চিকিৎসা পদ্ধতি যতই উন্নত হোক না কেন, আধুনিক স্ট্রেসে ভরা জীবনে মহিলাদের রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেমটাই পুরো বদলে গেছে। আজকের মেয়েরা ঘরে-বাইরে ব্যস্ত। অফিসে টার্গেট ফুলফিল করা, সঙ্গে সংসারের সব দায়দায়িত্ব পালন, রাত জাগা, লাইফস্টাইলের বদল, অত্যধিক ব্রেনওয়ার্ক, এক্সারসাইজে অনীহা বা সময়ের অভাব— এসবের ফলে তাঁদের স্বাভাবিক ঋতুচক্র প্রভাবিত হচ্ছে। অনেকটা বয়সে গিয়ে তাঁদের বিয়ে হচ্ছে। ফলে দেখা দিচ্ছে বন্ধ্যাত্ব। আবার এখন বেশিরভাগ মেয়েদের মধ্যে শোনা যায় পলিসিস্টিক ওভারির কথা যে রোগটি বিবাহ-পরবর্তী জীবনে মেয়েদের সন্তান ধারণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ইদানীং।
আরও পড়ুন-আগামী অর্থবর্ষে দেশের জিডিপির হার আরও কমবে
একই রকমভাবে ছেলেদেরও ভীষণ মানসিক চাপ। কেরিয়ার গড়তে গিয়ে স্ট্রেসফুল লাইফ লিড করছেন তাঁরা। আইটি সেক্টর হোক বা অন্য সংস্থা, কর্মজীবনের চাপ বদলে দিচ্ছে তাঁদেরও লাইফস্টাইল। যে বয়সে তাঁদের বিয়ে হবার কথা, না হয়ে অনেকটা পরে হচ্ছে। ফলে স্পার্ম কাউন্ট কমে যাচ্ছে। যাকে বলে স্পার্মাটোজেনেসিস। বয়ঃবৃদ্ধির সঙ্গে ছেলেদেরও শারীরিক এবং মানসিক অনেক সমস্যা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তাই বিয়ে হলে সমস্যা আসছে বিভিন্ন দিক থেকে। এখন বিয়ের আগে হবু বরের স্পার্ম কাউন্ট টেস্টও করাতে চাইছেন অনেক হবু স্ত্রী। এটা ম্যানডেটরি নয় কিন্তু এর গুরুত্ব বাড়ছে। তাই বিয়ে নামক মাহেন্দ্রক্ষণটি সুন্দর করে তুলতে জরুরি হল সচেতনতা।
বিয়ে ঠিক হবার পরেই পাত্র এবং পাত্রী কিছু মেডিক্যাল টেস্ট এবং প্রি ম্যারেজ কাউন্সিলিং করলে পরবর্তীকালে হয়তো অনেক গুরুতর সমস্যাকে আটকে দেওয়া সহজ হবে। কী কী পরীক্ষা জরুরি জেনে নিই।
আরও পড়ুন-নতুন ভবন : কেন্দ্রকে প্রশ্ন জহরের
এইচআইভি টেস্ট ও এসটিডি টেস্ট
এইচআইভি (HIV) টেস্ট— বিয়ের আগে বা অন্য কোনওরকম সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজেজ (STD), যেমন গনোরিয়া, সিফিলিস, ওয়ার্টস, ব্যাকটিরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস আছে কি না জানার জন্য HIV এবং STD টেস্ট করানো খুবই প্রয়োজনীয়। অনেক সময় ছেলে বা মেয়েটি যৌনরোগের কেরিয়ার হয়। রোগটা শরীরে আছে অথচ কোনও লক্ষণ নেই। ফলে দু’জনে যদি বাহক হয় তবে সন্তানের মধ্যে সেই রোগ আসবেই।
আরও পড়ুন-বেনিয়মে এগিয়ে বিজেপি রাজ্য, বাংলাতেই শুধু কেন্দ্রীয় দল, মেনে নিলেন মন্ত্রী
ফার্টিলিটি টেস্ট
বেশি বয়সে বিয়ে, স্ট্রেসফুল জীবনধারণের ফলে বন্ধ্যাত্ব সমস্যা কিন্তু বাড়ছে। আর এই সমাজে এখনও সন্তানধারণে সমস্যা হলে দোষ দেওয়া হয় মেয়েদেরই। তাই বিয়ের আগে দু’জনেরই ফার্টিলিটি টেস্ট জরুরি। পুরুষের ফার্টিলিটি চেক করার জন্য সিমেন টেস্ট আর মেয়েদের জন্য ওভিউলেশন টেস্ট করানো হয়। আর জননতন্ত্রে কোনওরকম জেনেটিক অ্যাবনর্মালিটি আছে কি না তা দেখার জন্য পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করানো দরকার। তাছাড়াও প্রোল্যাক্টিন, FSH, LH, টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন ইত্যাদি হরমোনগুলোর পরীক্ষাও করিয়ে নিন।
জেনেটিক টেস্ট
জেনেটিক ডিজঅর্ডার কিন্তু এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে ছড়ায়। তাই বিয়ের আগে জেনেটিক টেস্ট করা খুবই জরুরি। আর পারলে বিয়ের আগে দুই পরিবারেরই মেডিক্যাল হিস্ট্রি জেনে নিন।
ব্লাড গ্রুপ ও কমপ্যাটিবিলিটি টেস্ট
এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা। অনেকেই চায় তার হবু বউ বা বরের ব্লাড গ্রুপ এক হোক তাহলে তারা একে অপরকে ব্লাড ডোনেট তো করতে পারবে। সেই সঙ্গে ‘আরএইচ ফ্যাক্টর’ও দেখা হয় অর্থাৎ দু’জনেই যেন পজিটিভ হয় বা দু’জনেই নেগেটিভ হয়। ও পজিটিভ বা এবি নেগেটিভ যাই হোক না কেন, দু’জনেরই এক হলে ভাল। কারণ এরা ভবিষ্যতে একে অপরকে অর্গান ডোনেট বা অঙ্গদানও করতে পারবে প্রয়োজনে। সন্তানের ব্লাড গ্রুপও এক হবে। এখন তো খবরের কাগজে বিয়ের বিজ্ঞাপনে পাত্র অথবা পাত্রীর ব্লাড গ্রুপ দেওয়া থাকে। এর কারণ এটাই। অর্গান বা টিস্যু ডোনেশনের যুগে এখন চাইলে লিভার, কিডনি, স্কিন, কর্নিয়া সব দান করা যায় তাই কমন ব্লাড গ্রুপ হলে স্বামী এবং স্ত্রী ভবিষ্যতে প্রয়োজনে একে অপরকে এগুলো দিতে পারবে।
আরও পড়ুন-মালদহে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পাশে মুখ্যমন্ত্রী, আর্থিক সাহায্য ও চাকরির ঘোষণা
ব্লাড ডিজঅর্ডার টেস্ট
এরমধ্যে মূলত তিনটে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা রয়েছে— হিমোফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া এবং সিকল সেল অ্যানিমিয়া।
হিমোফিলিয়া
হিমোফিলিয়া হলে রক্ত জমাট বাঁধে না। সেই ব্যক্তির অনুচক্রিকা কম হয়, রক্ত জমাট বাঁধতে চায় না। যে কোনও সময় ব্লিডিং হয়। এই রোগের ক্ষেত্রেও একজন কেরিয়ার বা বাহক হতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্যদিকে যিনি আছেন— স্বামী বা স্ত্রী, তিনি কেরিয়ার না হলে তাঁদের ঔরসজাত শিশুও বাহক হতে পারে কিন্তু যদি দু’জনেই বাহক হন তাহলে তাঁদের সন্তানেরও এই রোগ হবে।
থ্যালাসেমিয়া
থ্যালাসেমিয়া টেস্ট খুবই জরুরি কারণ এক্ষেত্রেও বিষয়টা একইরকম। পাত্র বা পাত্রী দু’জনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে ভবিষ্যতে তাঁদের শিশু কিন্তু একশো শতাংশ থ্যালাসেমিয়া নিয়েই জন্মাবে। ফলে তাঁদের গোটা জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কোনও একজন কেরিয়ার হলে শিশুটি বাহক হতে পারে।
আরও পড়ুন-তারাপীঠে দ্বারকা নদীর ধারে এবার সন্ধ্যারতি
সিকল সেল অ্যানিমিয়া
এটা এক ধরনের জিনগত অসুখ। এই রোগের জন্য বাবা-মা দু’জনেই দায়ী হতে পারেন। দু’জনের মধ্যে একজনের শরীর থেকে এই সিকল জিন গর্ভস্থ সন্তানের মধ্যে প্রবেশ করে। বাবা-মা দু’জনেই যদি এই জিনের বাহক হন তবে শিশু এই রোগের শিকার হবে। তাই এক্ষেত্রেও টেস্ট খুব জরুরি। এখন ছোট-বড় সব ল্যাবে এই সব পরীক্ষা করবার সুব্যবস্থা রয়েছে, সেই সঙ্গে রয়েছে প্যাকেজের সুবিধা। প্যাকেজ নিলে খরচ অনেকটা কমে যাবে।
প্রি ম্যারেজ কাউন্সেলিং
এই সবকিছুর শেষে বিয়ের আগে আরও একটা জরুরি বিষয় হল প্রি-ম্যারেজ কাউন্সেলিং। যে কোনও হবু দম্পতির এটা করা দরকার। ধরে নেওয়া যাক হবু বর অকেশনালি মদ্যপান করেন কিন্তু হবু স্ত্রী যে পরিবেশে বড় হয়েছে সেখানে সে এগুলোকে অপরাধ মনে করে তাহলে সেটাও কিন্তু ভবিষ্যতে বড় আকার নিতে পারে। আমরা এগুলো গুরুত্ব দিই না। প্রি ম্যারেজ কাউন্সেলিং অনেক সমস্যার সহজ সমাধান।