কেরল অনেকের পছন্দের জায়গা। ছুটি পেলে বহু মানুষ ঘুরে আসেন ভারত বিখ্যাত ফুটবলার আই এম বিজয়নের রাজ্যে। আছে দেখার মতো অনেক জায়গা। তবে সেখানে গিয়ে ব্যাকওয়াটার্সে হাউসবোটে (Houseboat) বেড়াননি এমন মানুষ খুব কমই আছেন। বেড়িয়ে এসে তাঁরা গল্প শোনান আত্মীয় বন্ধুবান্ধবদের। শ্রোতারা মনে মনে কল্পনা করেন, স্বপ্ন দেখেন ইচ্ছেপূরণের। কেউ কেউ পূরণ করেন, কারও অধরা থেকে যায়। যাঁদের ইচ্ছেপূরণ হয়নি, তাঁদের জানাই, হাউসবোটে (Houseboat) বেড়ানোর জন্য এখন আর কেরল যাওয়ার প্রয়োজন নেই! কলকাতায় বসেই পেতে পারেন এই স্বর্গীয় অনুভূতি। তাও আবার গঙ্গাবক্ষে। বিশেষ এই উদ্যোগ নিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড। উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে মঙ্গলধারা ট্যুরিজম প্রপার্টি। প্রশ্ন জাগছে, কোথায়? কলকাতা থেকে ১ ঘণ্টার দূরত্বেই রয়েছে সেই জায়গা। বারাকপুরে। গান্ধীঘাটের ঠিক পাশেই। সারা সপ্তাহে ব্যস্ততা। সপ্তাহান্তে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন। এই হাউসবোট সময় কাটানোর এক মোক্ষম জায়গা। চারদিকে গঙ্গা। মাঝে হাউসবোটে (Houseboat) থাকার এক অন্যরকম পরিবেশ। সঙ্গে রয়েছে বিনোদনের নানা উপকরণ। তার মধ্যে অন্যতম বাউল গান। পুরোপুরি হোটেলের আদলে তৈরি এই হাউসবোট। রয়েছে চারটে সুসজ্জিত ঘর। ঘরে রয়েছে সবরকম স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা। আছে ছোট্ট একটা কিচেন। এখানেই অতিথিদের জন্য খাবার তৈরি হয়। আগে থেকে বুকিং করে যেতে হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উদ্যোগটি। অতিথিদের আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। ঘর ফাঁকা পাওয়াই যায় না। খরচ মোটামুটি মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে। বারাকপুর স্টেশন থেকে খুব দূরে নয়। টোটো অথবা নিজস্ব গাড়িতে যাওয়া যায়। বিস্তারিত জানতে দেখে নিন ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড ওয়েবসাইট।
বারাকপুরের হাউসবোটে (Houseboat) ঘোরার পাশাপাশি কাছাকাছি বেড়িয়ে আসা যায় কয়েকটি জায়গা।
আরও পড়ুন-বাজেটে নেই কর্মসংস্থানের দিশা, গর্জে উঠল আইএনটিটিইউসি
গান্ধী স্মারক সংগ্রহশালা
বারাকপুর গান্ধী স্মারক সংগ্রহশালা ভারতের সুপরিচিত গবেষণালয়ের মধ্যে অন্যতম। এটি গান্ধী স্মারক সংগ্রহালয় নামেও পরিচিত। বারাকপুরের ঐতিহ্যবাহী এই জাদুঘরে পাঁচটি গ্যালারি, একটি অধ্যয়ন কেন্দ্র এবং একটি লাইব্রেরি রয়েছে।
এটি দেশের প্রথম সারির মিউজিয়ামের মধ্যে একটি। এখানে মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে বহু আকর্ষণীয় তথ্য রয়েছে। এ ছাড়াও তাঁর অন্যান্য দুর্লভ সংগ্রহ, লেখা বইপত্র, নিবন্ধ এখানে সংরক্ষিত আছে।
মঙ্গল পাণ্ডে পার্ক
বারাকপুরের মঙ্গল পাণ্ডে পার্ক ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী মঙ্গল পাণ্ডের সম্মানে তৈরি হয়েছিল। এই পার্কের অপর নাম শহিদ মঙ্গল পাণ্ডে মহা উদ্যান। পার্কটিতে মঙ্গল পাণ্ডের একটি দেখার মতো মূর্তি রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে গাছ এবং নানারকম ফুল-সহ সবুজের সমারোহ। সারা বছর দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে।
অন্নপূর্ণা মন্দির
অন্নপূর্ণা মন্দির বারাকপুরের একটি জনপ্রিয় মন্দির। রানি রাসমণি ঘাটের পাশে অবস্থিত। এই মন্দিরের স্থাপত্য এককথায় অসাধারণ। কিছুটা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদল রয়েছে। এই মন্দির ১৮৭৫ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব উদ্বোধন করেছিলেন। রানি রাসমণির কনিষ্ঠা কন্যা জগদম্বাদেবীর উৎসাহে অন্নপূর্ণা মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল। স্থানীয়ভাবে এটা রানি রাসমণি মন্দির নামেও পরিচিত। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে বারোটি শিবমন্দির আছে। তবে অন্নপূর্ণা মন্দিরে আছে ৬টি শিবমন্দির। প্রবেশদ্বারে চোখে পড়ে বিশাল সিংহমূর্তি। পাশেই গঙ্গা। ঘাট থেকে নদীর শোভা দেখার মতো।
বার্থোলোমিউ ক্যাথেড্রাল
বার্থোলোমিউ ক্যাথেড্রাল একটি চার্চ। একে গ্যারিসন চার্চও বলা হয়। তৈরি হয়েছে ১৮৪৭ সালে। নির্মাণে গথিক স্থাপত্যের নিদর্শন চোখে পড়ে। চার্চটি ব্রিটেনের অনেক গির্জার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ ব্রিটিশ স্থপতিরা যখন বারাকপুরে বসবাস করছিলেন তখন তৈরি করেছিলেন। চার্চের নির্মল এবং আরামদায়ক পরিবেশ মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দের জন্ম দেয়। বহু মানুষ আসেন প্রভু যিশুর কাছে প্রার্থনার জন্য।
গান্ধীঘাট
গান্ধীঘাট হল গঙ্গা নদীর তীরে তৈরি একটি বাঁধানো ঘাট। এখানে আছে মহাত্মা গান্ধীর একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছিল ‘ফাদার ওফ নেশন’ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য। ঘাটে রয়েছে অসংখ্য ম্যুরাল। এই ম্যুরালগুলো গান্ধীজির সারাজীবনের বিভিন্ন কাজ সগৌরবে তুলে ধরেছে। গান্ধীজির ভস্মের একটি অংশ এই ঘাটে একটি স্মৃতিসৌধে সযত্নে রাখা আছে। ভিতরেও একটি বিশাল ম্যুরাল রয়েছে, যা তার উল্লেখযোগ্য অবদানগুলিকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরে। ঘাট থেকে গঙ্গা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। নিরিবিলি পরিবেশে অনেকেই কিছুটা সময় কাটিয়ে যান। এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য সুন্দরভাবে দেখা যায়।
জওহর কুঞ্জ
বারাকপুরের অন্যতম জনপ্রিয় বেড়ানোর জায়গা জওহর কুঞ্জ। প্রতিদিনই বহু দর্শনার্থী এখানে আসেন। শীতের মরশুমে অনেকেই জওহর কুঞ্জে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে পিকনিকে মেতে ওঠেন। নদীকে পাশে রেখে বাগানের পথ দিয়ে হাঁটতে দারুণ লাগবে। সুন্দর দৃশ্যকে পিছনে রেখে মন দিয়ে তোলা যায় ছবিও। এ ছাড়াও এখানে আছে একটি কিডস জোন। এখানে ছোটরা খেলাধুলা এবং চুটিয়ে মজা করতে পারে।
পুরাতন বারাকপুর ক্যান্ট
ব্রিটিশ শাসন চলার সময় ভারতের প্রাচীনতম এবং প্রধান সেনানিবাস ছিল বারাকপুর। ক্যান্টনমেন্টটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। আছে দেখার মতো বহু জিনিস। অনেককিছুই সংরক্ষিত হয়েছে। সমস্তকিছু দেখার জন্য যেতে হবে হাতে সময় নিয়ে।
পুরাতন কোঠি
বাংলার অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি পুরাতন কোঠি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মালিকানাধীন একটি পুরানো বাংলো, যা বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত। এই কোঠিকে ভূতুড়ে বলে মনে করা হয়। সূর্যাস্তের পরে জরাজীর্ণ এই ভবনের পাশ দিয়ে যেতে অনেকের গা-ছমছম করে। তবে দিনের আলোয় অনেকেই ঘুরে দেখেন।