মুঘল থেকে মুসলমান— এদের নিয়ে এক ঘৃণ্য অপপ্রচার চালাচ্ছে গেরুয়া পক্ষ। যেমন, গোহত্যা ও গোমাংস ভক্ষণ ইস্যুতে শোরগোল তোলা হয়েছে। তাদেরই প্রচারে উঠে এসেছে, হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের জনক, আর্যরাই ভারতের ভূমিপুত্র, টিপু সুলতান হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন, মন্দির ভেঙে তৈরি হয়েছে একটি নামী মসজিদ, এমন আরও কতকিছু। তাজমহল আসলে হিন্দু রাজার তৈরি মন্দির—তাদের এই দাবিটি অবশ্য ২০০০ সালে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বাতিল করে দেয়। আবার প্রচারে এসেছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সংখ্যালঘুদের নাকি কোনও ভূমিকাই নেই!
আরও পড়ুন-উন্নয়নে ভোল বদলাবে জেলা হাসপাতালের
এর পাশাপাশি অমিত শাহদের দাবি, ভারতে পাণ্ডব সাম্রাজ্য ৮০০ বছর শাসন করেছে, অহম সাম্রাজ্য ৬৫০ বছর। পল্লব সাম্রাজ্য ৬০০ বছর, চোলরা ৬০০ বছর শাসন চালিয়েছে। আবার আফগানিস্তান থেকে লঙ্কা পর্যন্ত ৫৫০ বছর দেশ শাসন করেছে মৌর্যরা। সাতবাহন ও গুপ্ত সাম্রাজ্য ৫০০ বছর করে রাজত্ব করেছে। অমিত শাহের কথায়, এই নয়া ইতিহাস লেখা হলেই ‘ভুল’ ইতিহাস ধীরে ধীরে মুছে যাবে এবং ‘আসল সত্য’ প্রকাশিত হবে। ইতিহাসবিদদের অনেকেই বলছেন, হিন্দু রাজাদের রাজত্ব নিয়েও বহু ইতিহাস লেখা আছে। তা আরও বেশি করে লেখা যেতেই পারে। কিন্তু তার জন্য মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসকে মুছে ফেলতে হবে কেন? ভারতীয় জঞ্জাল পার্টির মুঘল বিদ্বেষ এতটাই যে, পারলে ইতিহাসের পাতা থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের সময়কালটাই মুছে দিতে চায়।
আরও পড়ুন-৪৮ গেরুয়া কর্মীর বিরুদ্ধে পরোয়ানা
শুধু মুখের কথা নয়, মুঘল আমলের তৈরি বা মুঘল নামধারী স্টেশন, রাস্তাঘাট, বাগান, গ্রাম-শহরের নাম, এমনকী মোগলাই খাবারের নামও বদলে দেওয়ার হিড়িক চলছে দেশজুড়ে। পাশাপাশি হিন্দু রাজাদের গৌরবগাথা প্রতিষ্ঠা করতে নতুন করে ইতিহাস লেখার কাজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি তীব্র কটাক্ষ করেছেন প্রবীণ অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। তাঁর সাফ কথা, ‘‘মুঘলদের কাজকে গৌরবান্বিত করার যেমন দরকার নেই, তেমনই খলনায়ক সাজানোরও প্রয়োজন নেই।’’ কতটা মুঘল বিদ্বেষ এই শাসকদলের তার একটা উদাহরণ হতে পারে রাষ্ট্রপতি ভবনের মুঘল গার্ডেনের নাম পরিবর্তনের ঘটনা। কাশ্মীরের মুঘল গার্ডেন, তাজমহলের সামনের বাগান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রিটিশরা রাষ্ট্রপতি ভবনের ভিতরে ১৫ একর জমির উপর তৈরি করেছিল এই বাগান। তারাই নাম দেয় ‘মুঘল গার্ডেন’।
আরও পড়ুন-বিজেপিকে ভোট দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ভয় দেখাল মহিলাদের
গত জানুয়ারি মাসে এই গার্ডেনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘অমৃত উদ্যান’। শাহজাহানের আরও এক বিস্ময় সৃষ্টি আগ্রার তাজমহল। দেশের এই দুই আইকনিক স্থাপত্য মুঘলদেরই সৃষ্টি। মোদি স্রষ্টা হিসেবে মুঘলদের প্রতি শ্রদ্ধাবনত না হলেও এটা সত্যি। গান্ধী, নেতাজির সঙ্গে এক সুরে উচ্চারিত হচ্ছে সাভারকরদের নাম। গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী নেতারা চেয়েছিলেন, দেশ থেকে মুসলিমরা বিদায় নিক, ইংরেজরা নয়। এই যুক্তিতেই ইংরেজদের পাশে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনকে দুর্বল করতে চেয়েছিল আরএসএস। জনগণ এই মিথ্যাজীবী সরকারের সর্বৈব পতন সুনিশ্চিত করবে ২০২৪-এর নির্বাচনে। —শিবাজি চট্টোপাধ্যায়, সিমলা, কলকাতা