বিকাশ রায় : অসামান্য অভিনেতা, সাহসী পরিচালক

ভার্সেটাইল অভিনেতা ছিলেন বিকাশ রায়। পারিবারিক আভিজাত্য চুঁইয়ে পড়ত আচার-আচরণে। ছিলেন গভীর সাহিত্যপ্রেমী। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনা করেছেন। ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সামাজিক কাজে। আজ তাঁর প্রয়াণদিবস। স্মরণ করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

জমিদার বংশ
বনেদি পরিবারের সন্তান যুগলকিশোর। আপাদমস্তক সংস্কৃতিমনস্ক। আদি নিবাস নদিয়ার মদনপুরের প্রিয়নগরে। অভিনয়ের প্রতি প্রবল আকর্ষণ। আবৃত্তি করতেন উদাত্ত কণ্ঠে। দাদাও যাত্রা-থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। অভিনয় করেছেন কয়েকটি জনপ্রিয় পালায়। তাঁদের প্রপিতামহ ছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ জমিদার। সেই জমিদারি বাড়ানোর জন্য নাকি জাল নবাব সেজেছিলেন প্রপিতামহের এক ভাই। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরাও চিনতে পারেননি নকল নবাবকে। অভিনয় ছিল এতটাই নিখুঁত।
বিকাশ রায় ছিলেন যুগলকিশোরের পুত্র। এই বংশের সুসন্তান। অভিনয় ছিল তাঁর রক্তে। পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে একবার লিখেছিলেন, ‘এইটুকু যদি বংশপরম্পরায় আমার মধ্যে অভিনেতার রূপ নিয়ে থাকে, তা হলে বলার কিছু নেই।’

আরও পড়ুন-বাবাসাহেব আগেই বলেছিলেন

মেধাবী ছাত্র
কলকাতার ভবানীপুরে জন্ম বিকাশ রায়ের। ১৯১৬-র ১৬ মে। বাবা চাকরি নিয়েছিলেন মহানগরে। কারণ পূর্বপুরুষের বাবুয়ানি এবং উড়নচণ্ডীপনায় ভাঁড়ার প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছিল। টিকেছিল শুধুমাত্র জমিদারিসূত্রে পাওয়া ‘রায়’ পদবিটুকু। বাবা চাইতেন লেখাপড়া শিখে আইসিএস হোক ছেলে। বিকাশকে ভর্তি করা হয় ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে। মেধাবী ছাত্র। কবিতার প্রতিও ছিল অদ্ভুত ভালবাসা। পড়তেন, আবৃত্তি করতেন। কুড়োতেন বাহবা।

আরও পড়ুন-ফুল পাখি প্রজাপতি বন্ধু, গাছবাড়ি দেবে শীতল আশ্রয়, বজবজে প্রকৃতির পাঠশালা

অভিনয়ে হাতেখড়ি
কোনও দিন ফাঁকি দেননি লেখাপড়ায়। ম্যাট্রিকে দারুণ রেজাল্ট। বাংলায় লেটার ও স্বর্ণপদক। ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখানেই আসে নাটকে অভিনয়ের সুযোগ। কলেজ থিয়েটারের দলে ঢুকে শরৎচন্দ্রের ‘বৈকুণ্ঠের উইল’-এ বিনোদের ভূমিকায় বাজিমাত করেন। মদ্যপ চরিত্র। এমন অভিনয় করেন বিকাশ, যেন সত্যিই মাতাল। অথচ কোনও দিন সুরাপান করেননি। পারিবারিক আভিজাত্য চুঁইয়ে পড়ত আচার-আচরণে। বড় হয়েছিলেন এক মুক্ত পরিবেশে। সেই প্রভাব বজায় ছিল জীবনচর্যায়। পরবর্তী সময়ে অভিনয়েও।

আরও পড়ুন-বাদশার শহরে আজ ইজ্জতের লড়াই

কঠিন লড়াই
জীবনে এসেছে বহু ঝড়ঝাপটা। একটা সময় ভুগতে হয়েছে অর্থকষ্টে। বিয়ে করেছিলেন ২২ বছর বয়সে। ভবানীপুরের ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী কমলা ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন বিকাশ। পরিবারের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে করেছেন কঠিন লড়াই। সকালে ছাত্র পড়াতেন। তার পরে ভবানীপুর থেকে হেঁটে যেতেন হাইকোর্ট পাড়ায়। ১৯৪১ সালে আইন পাশ করেন। কিন্তু ওকালতিকে স্থায়ীভাবে পেশা হিসেবে নেননি। কর্মজীবন শুরু করেন একটি ব্যারিস্টারি ফার্মের জুনিয়র হিসাবে। কিছুদিন পর আইন ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে হেড ক্লার্কের চাকরি নেন। সরকারি সিভিল ডিফেন্স বিভাগে। সেখানেও থাকেননি বেশিদিন। ১৯৪৬-এ রেডিওয় ঘোষক হিসেবে যোগ দেন। মাস মাইনে আশি টাকা। সেই চাকরি ছিল অনিশ্চিত। পরে এক বাল্যবন্ধুর সহযোগিতায় যোগ দেন একটি বিখ্যাত বিজ্ঞাপন সংস্থায়।

আরও পড়ুন-জি-২০ সম্মেলনের জেরে দিল্লিতে বিপন্ন রূপান্তরকামীরা

সিনেমায় অভিনয়
রেডিওয় কাজের সময় কিংবদন্তি বেতারব্যক্তিত্ব বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র তাঁকে সিনেমায় নামার পরামর্শ দেন। হঠাৎ চলে আসে সুযোগ। চিত্রনাট্যকার জ্যোতির্ময় রায় নিয়ে গেলেন পরিচালক হেমেন গুপ্তের কাছে। তারপর? ১৯৪৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। মুক্তি পেল হেমেন গুপ্ত পরিচালিত ছবি ‘অভিযাত্রী’। বাংলার দর্শকরা প্রথম পরিচয় পেল অভিনেতা বিকাশ রায়ের। একেবারে নির্মলেন্দু লাহিড়ী, রাধামোহন ভট্টাচার্য, কমল মিত্র, শম্ভু মিত্রর মতো বিখ্যাত শিল্পীদের পাশে।

আরও পড়ুন-ফিরহাদ হাকিমের সভায় বেশি লোক হবে বলে স্থানবদল, আজ বিজেপিকে পাল্টা তৃণমূলের

সার্থক হল অভিনয়
পুরোদস্তুর নায়ক ছিলেন না বিকাশ রায়। ছিলেন না নায়কোচিত দর্শনধারীও। ধীরে ধীরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন আলাদা উচ্চতায়। কমেডি করেছেন, পাশাপাশি তাঁকে দেখা গেছে খলচরিত্রে। ‘৪২’ ছবিতে অত্যাচারী অফিসার মেজর ত্রিবেদীর চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন। ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমিকায় তৈরি। পরিচালক হেমেন গুপ্ত ছিলেন জেল-খাটা স্বাধীনতা সংগ্রামী। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫১-র অগাস্টে। শোনা যায়, কলেজের একদল ছাত্র সিনেমাটা দেখে মারমুখী হয়ে ছুটছিলেন ইন্দ্রপুরী স্টুডিওর দিকে। গেটে‘তুমুল চিৎকার, চেঁচামেচি শুনে বাইরে বেরিয়ে আসেন বিকাশ রায়। তাঁকে দেখে একটি ছেলে জুতো ছুঁড়ে মারে। সেই জুতো মাথায় নিয়ে বিকাশ রায় বলেছিলেন, সার্থক হল আমার অভিনয়।

আরও পড়ুন-বহু মানুষের অপেক্ষা, গরমে হয়রানি, বিতর্কে জনরাজভবন ব্রাত্য রইলেন জনতাই

ভার্সেটাইল অভিনেতা
‘আরোগ্য নিকেতন’-এ অভিনয় করেছেন জীবনমশাই চরিত্রে। যিনি নাড়ি টিপে বলে দিতে পারতেন মৃত্যু ঠিক কত দূরে। ‘উত্তর ফাল্গুনী’ ছবিতে তিনি ব্যারিস্টার মণীশ। সুচিত্রা সেনের নায়ক। ব্যর্থ প্রেমিক, অথচ দায়িত্বশীল অভিভাবক। সম্পূর্ণ আভিজাত্যে মোড়া একটি চরিত্র। পাশাপাশি দর্শকদের হাসিয়েছেন ‘ছেলে কার’, ‘ছদ্মবেশী’র মতো ছবিতে। ‘শেষ অঙ্ক’ ছবিতেও ফাটিয়ে অভিনয় করেছেন। এককথায়, তিনি ছিলেন ভার্সেটাইল এবং স্টাইলিশ অভিনেতা। বাচনভঙ্গি, কণ্ঠস্বর এবং অভিনয়ের সাবলীলতাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় সম্পদ। সমঝদার মানুষজন তো বটেই, একেবারে সাধারণ দর্শকও বিকাশ রায়ের অভিনয় প্রতিভায় চিরকাল মজে থেকেছেন।

আরও পড়ুন-রাম-বাম-কং হাত মিলিয়ে গোহারা হল তৃণমূলের কাছে

সাহিত্যপ্রীতি
চলচ্চিত্রে সাফল্য পেলেও, একটা সময় গভীর অনুরাগ ছিল সাহিত্যে। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় কলেজ ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখতেন। মূলত গল্প। ‘বেদুইন’ নামে একটা সাহিত্য পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন। শোনা যায়, সিনেমায় নাম করার পর কলকাতার একটি বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকার দফতরে গিয়েছিলেন নিজের কিছু গল্প জমা দিতে। সম্পাদক তাঁকে বলেন, আপনার গল্প ছাপতে পারব না বিকাশবাবু। কারণ এই গল্পগুলো ছাপা হলে সবার ধারণা হবে পত্রিকার বিক্রি বাড়াতে জনপ্রিয় অভিনেতার গল্প ছেপেছি! সেটা হতে দিচ্ছি না মশাই। অনেক পরে প্রকাশিত হয়েছে বিকাশ রায়ের লেখা বই ‘মনে পড়ে’, ‘কিছু ছবি কিছু গল্প’, ‘প্রসঙ্গ অভিনয়’, ‘আমি’। বইগুলো পাঠক মহলে সমাদৃত।

আরও পড়ুন-বর্ষশেষ ও বর্ষবরণের আসর বসল শান্তিনিকেতনের আশ্রমে

পরিচালক-প্রযোজক
অভিনয় জীবন ছিল ৩৮ বছরের। পাশাপাশি ছবি পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন। তাঁর পরিচালিত ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ বাংলা ভাষার অন্যতম সেরা ছবি। সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন বলেই হয়তো এইরকম একটি কাহিনি বেছে নিয়েছিলেন। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার, অনিল চট্টোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। শ্যুটিং হয়েছিল চাকুলিয়া, ঘাটশিলা, দিঘা প্রভৃতি জায়গায়। ক্যামেরার সামনে দিঘার বালিয়াড়িই হয়ে উঠেছিল বালুচিস্তানের হিংলাজ মরুভূমি। হাঁটা-পথে এক জোড়া উট উঠিয়ে আনা হয়েছিল বেনারস থেকে। পরিচালক হিসেবে ছিলেন নিখুঁত। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিলেন সংগীত পরিচালনায়। সুপারহিট গানে কোরাসে গলা মিলিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর ও গীতার দত্তের মতো শিল্পীরা। এবং সুরকার ও শিল্পী কোনও পারিশ্রমিক নেননি মরুতীর্থ হিংলাজের প্রযোজক বিকাশ রায়ের কাছ থেকে। অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’-এর শ্যুটিংয়ের সময় আমরা প্রায় একমাস বাইরে ছিলাম। শ্যুটিং হয়েছিল বেশকিছু জায়গায়। ওই ছবিতে বিকাশ রায় ছিলেন পরিচালক এবং অভিনেতা। পরিচালক হিসেবে ছিলেন দারুণ। গরমে বালির মধ্যে কাজ। উঠে গিয়েছিল আমাদের গায়ের চামড়া। তবু হাসিঠাট্টার মধ্যে সবাই মিলে কাজ করেছি। ইউনিটে ছিলেন একশোর বেশি মানুষ। বিকাশদা সমস্ত কিছু সামলেছেন। এমন পরিচালক আমি খুব কম দেখেছি। তাঁর প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা আছে, ভালবাসা আছে।

আরও পড়ুন-মোহনবাগান ক্লাবে এসে আপ্লুত গাভাসকর

বিকাশ রায়ের পরিচালনায় প্রকাশিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’র শ্রুতি-অভিনয়ের রেকর্ড। অমিত-লাবণ্যের ভূমিকায় কণ্ঠ দিয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও লিলি চক্রবর্তী। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন মঞ্চেও। খেলেছেন ফুটবল। বিভিন্ন সামাজিক কাজেও দেখা গেছে তাঁকে। প্রয়োজনে চলচ্চিত্র শিল্পীদের সঙ্গে রাজপথে নেমে করেছেন অর্থ সংগ্রহ। সেই টাকা তুলে দিয়েছেন বন্যাদুর্গতদের হাতে। সবমিলিয়ে বিকাশ রায় ছিলেন একজন বড় মাপের এবং বড় মনের মানুষ। ১৯৮৭-র ১৬ এপ্রিল চলে যান না-ফেরার দেশে।

আরও পড়ুন-পুলিশের সামনেই আততায়ীদের হাতে খুন ‘গ্যাংস্টার’ আতিক আহমেদ ও তাঁর ভাই

এই সময়ের অভিনেতাদের চোখে
বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী
বিকাশ রায়ের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ আমার হয়নি। তবে ওঁর প্রচুর ছবি দেখেছি। বাংলা চলচ্চিত্রের একজন অসামান্য অভিনেতা ছিলেন। ওঁর মতো চরিত্রাভিনেতা খুব কম এসেছে। যেমন কমেডি করেছেন, তেমন নেগেটিভ চরিত্র। বিকাশ রায়ের কণ্ঠাভিনয় ছিল অসাধারণ। সিনেমা, সিরিয়ালের পাশাপাশি আমি শ্রুতি নাটকের কিছু কাজ করি। গৌরী ঘোষের পরিচালনায় ‘চিরকুমার সভা’য় অভিনয় করেছিলাম। পেয়েছিলাম রসিকের চরিত্র। তখন গৌরীদি স্টক হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপে একটা অডিও রেকর্ডিং পাঠিয়েছিলেন। তাতে রসিকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিকাশ রায়। অসাধারণ ছিল তাঁর রসবোধ। আমি ব্যর্থ অনুকরণ করেছিলাম। বিকাশ রায়ের পরিচালনায় প্রকাশিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’র শ্রুতি অভিনয়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলতেন, ‘শেষের কবিতা’ এত সুন্দর হয়েছিল একমাত্র বিকাশদার জন্য। উচ্চারণ ছিল স্পষ্ট। কণ্ঠ ছিল সাবলীল। শুনেছি, উনি ডিক্লেয়ার করে অভিনয় জীবন থেকে অবসর নিয়েছিলেন। একজন সেলফ এমপ্লয়েড মানুষের পক্ষে এটা করা খুব কঠিন। কিন্তু সেটা উনি করেছিলেন। একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ‘অতি উত্তম’ নামে সিরিজ দেখানো হত। রাজা সেনের পরিচালনায় হয়েছিল ‘ছদ্মবেশী’। ওঁর অভিনীত চরিত্রে আমি অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রযোজনাটা মনে দাগ কাটার মতো হয়নি, ভাল হয়নি আমার অভিনয়ও। আসলে ওই চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে শুধুমাত্র একজন বিকাশ রায়কেই লাগে।

আরও পড়ুন-সরকার ফেলতে চক্রান্ত!

রজতাভ দত্ত
বিকাশ রায় আমার খুবই পছন্দের অভিনেতা। শুধু আমার নয়, আপামর বাঙালির। বিভিন্ন ধরনের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। ‘উত্তর ফাল্গুনী’র ব্যারিস্টার চরিত্রের পাশে রাখা যাক ‘৪২’-এর নেগেটিভ চরিত্র অথবা ‘ছদ্মবেশী’র জামাইবাবু চরিত্রটি। কোনওটার সঙ্গে কোনওটার কিন্তু মিল নেই। একটা অদ্ভুত ডিগনিফাইড আভিজাত্যপূর্ণ বাঙালির চরিত্রায়ণ উনি বহন করতেন। প্রায় সব ধরনের চরিত্রেই আভিজাত্যটা দেখা যেত। অভিনয়ের পাশাপাশি ছবি পরিচালনা করেছেন। মনে পড়ছে ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’-এর কথা। শুধু এখনকার নয়, তখনকার শিল্পীদের কাছ থেকেও শ্রদ্ধা আদায় করে নিতে পেরেছিলেন। আমরা যারা ওঁর ছবি দেখে বড় হয়েছি, প্রত্যেকের মনে সচেতন বা অচেতনভাবে ওঁর অভিনয়ের প্রভাব বা ছাপ রয়ে গেছে। আমি ওঁর ছবি দেখেছি শুধুমাত্র দর্শক হিসেবে, অভিনেতা হিসেবে নয়। দেখতে দেখতে মনে হয়েছে, এই চরিত্রটি আর কারও পক্ষে এত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হত না। আসলে উনি যখন যে চরিত্রে অভিনয় করতেন, তখন সেই চরিত্রটাই হয়ে উঠতেন। ছাপ রেখে যেতেন দর্শকদের মনে।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

বিশ্বনাথ বসু
আগেকার দিনের সিনেমায় রূপ এবং চেহারা একটা বড় ব্যাপার ছিল। ছবি বিশ্বাসের মধ্যে ছিল একটা জমিদার ভাব। কমল মিত্রের ছিল রাশভারী চেহারা। এঁদের দেখলে মনে হত লার্জার দেন লাইফ। বিকাশ রায় ছিলেন একেবারেই অন্যরকম। চেহারা, চলনবলন মিলিয়ে ছিলেন একজন ব্রিটিশ ধাঁচের মানুষ। অভিনয়ের মধ্যেও ছিল ব্রিটিশ-ছোঁয়া। এইরকম বহুমুখী অভিনেতা খুব কম দেখেছি। যেমন নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তেমন করেছেন কমেডি। ‘৪২’ দেখার পর ‘ছদ্মবেশী’ দেখে অবাক হয়ে যাই। ‘উত্তর ফাল্গুনী’ ছবিতে উনিই তো নায়ক। ‘শেষ অঙ্ক’, ‘আরোগ্য নিকেতন’ ছবিগুলিও অসাধারণ। পরিচালক বিকাশ রায় খুব বড় মাপের। অবধূত-এর মতো সাহিত্যিকের লেখা নিয়ে বানিয়েছিলেন ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’। উত্তমকুমারকে দিয়েছিলেন পাগলের চরিত্র। দর্শকরা কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। এই সাহসটা দেখিয়েছিলেন পরিচালক।

Latest article