অলিম্পিকে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বুল্টি
আনন্দ নেই মনে
হুগলির তারকেশ্বরের জয়কৃষ্ণবাজার। এখানেই ছোট্ট টালির ভাড়া ঘরে স্বামী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার মহিলা অ্যাথলিট বুল্টি রায়ের। ছোটবেলা থেকেই দৌড়তে ভালবাসেন। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার। দারিদ্রের সঙ্গে নিত্যলড়াই। স্বামী ট্রেনে হকারি করেন। সামান্য রোজগার। টেনেটুনে কোনওরকমে চলে। এই পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও বুল্টি অলিম্পিকে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি চান বড় আসরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে। আগামী ১৯-২১ অগাস্ট শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে অংশ নিতে চলেছেন বুল্টি। দেশের হয়ে। শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক দিয়াগামা স্টেডিয়াম থেকেই তিনি পেতে পারেন প্যারিস অলিম্পিকে যাওয়ার ছাড়পত্র। তবু আনন্দ নেই মনে। বুকে চেপে রয়েছে চিন্তার ভার।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
কী কারণে চিন্তা?
শ্রীলঙ্কা যেতে অনেক খরচ যে! কীভাবে জোগাড় হবে অতগুলো টাকা। ৩০ পেরিয়ে গেছেন। নাহলে এসব নিয়ে ভাবতেই হত না। কিছু সহৃদয় ব্যক্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। তবে সেটা যথেষ্ট নয়। চাই আরও অনেক টাকা। ঘুম ছুটে গেছে বুল্টির। চেষ্টা করছেন অর্থ সংগ্রহের। যেভাবেই হোক শ্রীলঙ্কা তাঁকে যেতেই হবে। ইতিমধ্যেই তিনি পেয়েছেন বেশকিছু সাফল্য। কী কী সাফল্য পেয়েছেন? জাতীয় স্তরে জিতেছেন ১৭টি স্বর্ণপদক। তাতেও বদলায়নি ছবি। ঘরে সেই অভাব। মুথাইয়া মুরলিধরণের দেশে তিনি নামবেন ৪০০ মিটার হার্ডলস, ২০০ মিটার হার্ডলস এবং ৪০০ মিটারে। আগে তিনি কখনও আন্তর্জাতিক ইভেন্টে নামেননি। ২০২৩-এর ১৪-১৮ ফেব্রুয়ারি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আয়োজিত সিনিয়র ন্যাশনাল অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার পর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
আরও পড়ুন-মাধ্যমিকে জেলার দাপট, মেয়েরাই আবারও শীর্ষস্থানে
শুরু হয়েছিল কীভাবে?
৭-৮ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হন বুল্টি। জাঙ্গিপাড়া রায়পুরে বাপের বাড়ি। বাবার চাষের কাজ করতেন। বাড়িতে টিভি ছিল না। তবে যেভাবেই হোক তাঁর কানে এসেছিল জ্যোতির্ময়ী শিকদারের সাফল্যের খবর। তখন ছোট্ট বুল্টির মনে হয়েছিল, আমিও দিদির মতো দৌড়াব। দিদি পারলে আমিও পারব। তারপর শুরু হয় প্র্যাকটিস। দৌড়তেন ধান জমিতে, আলপথ দিয়ে। কারণ ওখানে মাঠ ছিল না। অংশ নেন স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। ৭৫ মিটার দৌড়, আলু দৌড় এবং লং জাম্পে। প্রথম পুরস্কার আসে তিনটেতেই। বেড়ে যায় উৎসাহ। তারপর অংশ নিলেন রাজ্য মিটে। সেখানে লং জাম্পে প্রথম স্থান। এইভাবে তিনবার রাজ্য মিটে অংশ নিয়ে পেলেন সাফল্য। কোচবিহারে ১০০ মিটার দৌড়, ২০০ মিটার দৌড় এবং লং জাম্পে প্রথম।
আরও পড়ুন-অভিষেককে আটকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাবেন নবজোয়ারে, জানালেন দলনেত্রী
শিক্ষকের কাছে
তখনও পর্যন্ত বুল্টি প্র্যাকটিস করতেন নিজে নিজেই। তারপর শিক্ষকের সন্ধান পান। তারকেশ্বরের শিবুপ্রসাদ ধাড়া। তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। কেমন ছিল সেই দিনগুলো? জানতে চাইলাম। বুল্টি ডুব দিলেন অতীতে, ‘‘মা অথবা বাবার সঙ্গে যেতাম প্র্যাকটিসে। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। গরু বিক্রি করে বাবা আমাকে কিনে দিয়েছিলেন গেঞ্জি-প্যান্ট-জুতো। সপ্তাহে চার-পাঁচদিন প্র্যাকটিসে যেতাম। কোনও কোনও দিন যেতাম সপ্তাহে ছয়দিন। দুই বেলা প্র্যাকটিস। সকালে-বিকেলে। দুপুরে স্টেশন প্লাটফর্মে বসে সময় কাটাতাম। খেতাম মুড়ি। বড় প্রতিযোগিতায় নামতে হলে দুই বেলা প্র্যাকটিস দরকার। হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পর বাড়ালাম প্র্যাকটিসের সময়। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিলাম। স্কুল ন্যাশনালে পেলাম তিনটি সোনা এবং একটা রুপো। গিয়েছিলাম চেন্নাই। জুনিয়র ন্যাশানাল, রাজ্য মিটেও নেমেছি। স্কুলের শিক্ষকরা উৎসাহ দিতেন। পরে আমি যুক্ত হয়েছিলাম জগন্নাথ ক্লাবের সঙ্গে। মাধ্যমিক দেওয়ার পর হয়ে যায় আমার বিয়ে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মাঠের থেকে।”
আরও পড়ুন-আর ২০০০ টাকার নোট ছাপবে না RBI, নোট জমা করতে হবে ব্যাঙ্কে
বন্ধ ছিল দৌড়
বিয়ের পর ৯ বছর মাঠের মুখ দেখেননি বুল্টি। বন্ধ ছিল প্র্যাকটিস। তখন তিনি তারকেশ্বরে থাকেন। তারকেশ্বর পুরসভার উদ্যোগে প্রতি বছর আয়োজিত হয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। উদ্যোক্তারা বুল্টির কথা জানতে পারেন এবং একদিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বলেন। ততদিনে তিনি দুই সন্তানের মা। একটু সংশয় ছিল মনে, পারব তো! ওঁরা সাহস দিলেন। নামলেন বুল্টি। দৌড়, দৌড়, দৌড়। যেন শুনতে পেলেন, ‘ভাগ বুল্টি ভাগ।’ পেলেন সাফল্য। ১০০ মিটার দৌড়, ২০০ মিটার দৌড় এবং লং জাম্পে হলেন প্রথম। ওখানে ছিলেন শিক্ষক শিবুপ্রসাদ ধাড়া। তিনি খুশি হলেন ছাত্রীর সাফল্য দেখে। বললেন প্র্যাকটিসে যোগ দিতে। বুল্টির স্বামী সন্তোষ রায়। স্ত্রীকে এগিয়ে দিলেন মাঠের দিকে। আবার শুরু হল প্র্যাকটিস। ছয় মাস পর বুল্টি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে নামলেন রাজ্য মিটে। ৪০০ মিটার হার্ডলসে পেলেন সোনা। এইভাবে এগোতে থাকলেন।
আরও পড়ুন-অভিষেককে আটকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাবেন নবজোয়ারে, জানালেন দলনেত্রী
কাজের কাজ হয়নি
সাফল্যের আনন্দ আছে। তবে সাফল্য সহজে আসে না। তার জন্য বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়। কারণ খেলাধুলায় খরচ অনেক। গেঞ্জি প্যান্ট জুতো তো আছেই, খেতে হয় ভাল ভাল খাবার। কিছুই তেমন জোটে না বুল্টির। খুঁজেছেন একটা চাকরি।
অনেককেই আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাঁকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার করেছে তারকেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। টেলিভিশনের ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ সহ বেশকিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বুল্টি। এইভাবেই তাঁর কথা ছড়িয়ে পড়েছে মুখে মুখে। মানুষের ভালবাসার পাশাপাশি পাচ্ছেন কিছু সাহায্য।
আরও পড়ুন-২০২৪-এর মাধ্যমিক পরীক্ষা কবে? জানাল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
শ্রীলঙ্কায় কতটা আশাবাদী?
বুল্টির লক্ষ্য সোনা। তিনি চান বিদেশের মাটিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে। জোরকদমে চলছে প্র্যাকটিস। সকালে তিন ঘণ্টা, বিকেলে তিন ঘণ্টা। তারকেশ্বর হাইস্কুল মাঠে। শিক্ষক শিবুপ্রসাদ ধাড়া প্রয়াত হয়েছেন ছয় মাস আগে। বুল্টি জানালেন, ‘‘শ্রীলঙ্কায় স্বর্ণপদক জিতে আমার শিক্ষককে উৎসর্গ করতে চাই। এটাই হবে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।”
বুল্টি রায়ের কথায়…..
নানা সময় গেছি দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই। অংশ নিয়েছি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। সরকারি ব্যবস্থাপনায়। কারণ তখন বয়স কম ছিল। পেয়েছি সাফল্য। গত রাজ্য মিটেও নেমেছিলাম। পেয়েছি স্বর্ণপদক। ফেডারেন্স থেকে গিয়েছিলাম ন্যাশনালে। পেয়েছি তিনটে সোনা, দুটো রুপো। এবার অংশ নেব ইন্টারন্যাশনালে। শ্রীলঙ্কায়। ভারত থেকে যাচ্ছে একটা দল। আমি যাব নিজের খরচে। কিছু সাহায্য পেয়েছি। এখনও অনেকটাই বাকি। হাল ছাড়িনি। আশা করি কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। নিজেকে উজাড় করে দেব মাঠে। দেশকে সোনা এনে দেব।
আরও পড়ুন-আর ২০০০ টাকার নোট ছাপবে না RBI, নোট জমা করতে হবে ব্যাঙ্কে
###
দৌড়ে চলেছেন রেজওয়ানা মল্লিক হেনা
অতিক্রম করেছেন বাধা
হরিণের মতো দৌড়তেন। ছোটবেলা থেকেই। পেরিয়ে যেতেন সবুজ মাঠের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত। প্রথমে শখে, পরে গুরুত্ব দিয়ে। নিয়মিত অনুশীলন এবং অধ্যবসায়ের ফলে অল্প বয়সেই মুঠোয় পুরেছেন সাফল্য। তিনি নদিয়ার ধুবুলিয়ার রেজওয়ানা মল্লিক হেনা। বাড়ির অর্থনৈতিক অবস্থা আহামরি নয়। বাবা একটি স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক। মেয়ের খেলার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। করতে হয় অতিরিক্ত কাজ। বহু বাধা বিপত্তি এসেছে চলার পথে। সবকিছু অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছেন হেনা। পাঁইপাঁই দৌড়। কোনও প্রতিকূলতাই আটকাতে পারে না এই সোনার মেয়েকে।
আরও পড়ুন-ওগো বধূ সুন্দরী
রেকর্ড ভাঙা রেকর্ড গড়া
উজবেকিস্তানের তাসখন্দে এশিয়ার যুব অ্যাথলেটিক্সে ৪০০ মিটার বিভাগে সোনা ছিনিয়ে এনেছেন হেনা। দৌড় শেষ করেছেন মাত্র ৫২.৯৮ সেকেন্ডে। এখানেই থামেননি। ভেঙে দিয়েছেন দীর্ঘ আট বছরের পুরনো মিট রেকর্ড। সাফল্য এসেছে আরও। আজ তিনি ভারতের সবচেয়ে দ্রুততম মহিলা অ্যাথলিট। একই সঙ্গে অবশ্যই অনূর্ধ্ব-১৮ মহিলা বিভাগে দ্রুততম দৌড়বিদ। আন্তর্জাতিক রেকর্ড ভাঙার পাশাপাশি এশিয়াডে প্রাক্তন রুপোজয়ী জিসনা ম্যাথুরও রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন তিনি। পঞ্চম ইউথ এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে মিক্সড রিলেতেও সোনা জিতেছেন। অসমে অনুষ্ঠিত জুনিয়র ন্যাশনাল অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ৩০০ মিটার প্রতিযোগিতায় জাতীয় রেকর্ড ৩৮.৫৭ টাইম-সহ স্বর্ণপদক লাভ করেছেন। কেরলে ৪০০ মিটার ওপেন ন্যাশনালে অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা বিভাগে ৪০০ মিটার দৌড়ে ন্যাশনাল রেকর্ড করে ৫৩.২২ স্বর্ণপদক লাভ করেন। ইউথ ন্যাশনাল ৪০০ মিটার দৌড়ে মিট রেকর্ড ৫৩.৪৪ টাইম করে স্বর্ণপদক পান। ২০০ মিটার হিটে ২৪.২২ টাইম রেকর্ড করেন ও ফাইনালে ২৪.৬১ টাইম করে রুপো লাভ করেন। তবে এখানেই থামতে চান না তিনি। এশিয়াডে অনূর্ধ্ব-১৮-তে নতুন রেকর্ড তৈরি করতে চান।
আরও পড়ুন-৩২হাজার চাকরি বাতিলে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের
পাশে পরিবার
মেয়ের এই রেকর্ডে খুশি তাঁর পরিবার। হেনার বাবা জাতীয় পর্যায়ের কবাডি প্লেয়ার। খেলতেন মা-ও। শুধু তা-ই নয়, তাঁর কাকাও সোনাজয়ী কবাডি প্লেয়ার। ছোটবেলা থেকেই এই রকম পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছেন হেনা। মা-বাবা-কাকাদের থেকে উৎসাহ পেয়েছেন, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছেন। কথা হল হেনার সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘‘তখন আমার পাঁচ বছর বয়স। প্র্যাকটিস করতাম গ্রামে। তারপর যোগ দিই কৃষ্ণনগরের কোচ অনিরুদ্ধ পাল চৌধুরীর কাছে। প্রথমে নেমেছি স্কুলের স্পোর্টসে। তারপর নাম লেখাই শ্রীরামকৃষ্ণ পাঠাগার ক্লাবে। জেলার প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। ৬০০ মিটার এবং ১০০ মিটার দৌড়ে। ৬০০ মিটারে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। তখন আমি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। পড়াশোনা এবং খেলাধুলা চলছিল পাশাপাশি। এখনও তাই। বর্তমানে আমি শোনডাঙা হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। যত সাফল্য পেতে থাকলাম, তত উৎসাহ বাড়তে লাগল। খেলাধূলার জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব, মুম্বই, অসম, কেরল প্রভৃতি জায়গায় গেছি। সব জায়গাতেই পেয়েছি সাফল্য। হয় স্বর্ণ, নয় রৌপ্যপদক। কেরালায় জাতীয় রেকর্ড করেছিলাম অনূর্দ্ধ ১৬-য়। ইউথ ন্যাশানালে পেয়েছিলাম সোনা। গড়েছিলাম অনূর্ধ্ব-১৮ মিট রেকর্ড। কিছুদিন আগেই উজবেকিস্তানে গিয়েছিলাম। পেয়েছি স্বর্ণপদক। একক এবং দলগত ইভেন্টে।”
আরও পড়ুন-ওড়িশার হাসপাতালে মৃত্যু এগরা বিস্ফোরণকাণ্ডের পাণ্ডা ভানু বাগের
আগামী লক্ষ্য
সামনেই আছে জুনিয়র এশিয়া প্রতিযোগিতা। ৫ জুন শুরু হবে। আসর বসছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ৪০০ মিটার মহিলা রিলে এবং মিক্সড রিলেতে অংশ নেবেন হেনা। তাঁর আশা, দেশকে স্বর্ণপদক এনে দিতে পারবেন। প্রথমবার বিদেশ সফরের আগে নার্ভাস ছিলেন। কোচ মোটিভেট করেছিলেন। এবার আর সেই সমস্যা নেই। দক্ষিণ কোরিয়ায় পা ফেলার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। বিদেশের মাটিতে হেনা মুখ উজ্জ্বল করতে চান বাংলার, দেশের।
রেজওয়ানা মল্লিক হেনার কথায়…
আমার মা-বাবা দু’জনেই কবাডি খেলতেন। খেলতেন কাকাও। তাঁদের দেখেই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী হই। তবে কবাডি নয়, অ্যাথলেটিক্সে। পরিবারের সমর্থন পেয়েছি। সমর্থন পেয়েছি স্কুলের, পাড়া-প্রতিবেশীদের। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মইবুল হোসেন আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। বর্তমানে প্র্যাকটিস করছি ব্যক্তিগত কোচ অর্জুন অজয় এবং জাতীয় দলের কোচ কল্যাণ চৌধুরীর কাছে। দু’জনেই যথেষ্ট উৎসাহ দেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় জুনিয়র এশিয়া প্রতিযোগিতায় আমাকে সফল হতেই হবে।
আরও পড়ুন-হাইকোর্টে জোর ধাক্কা খেলেন বিরোধী দলনেতা
###
দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চান রাসমণি
নতুন ইতিহাস
মোটামুটি ৬-৭ বছর আগেও মালদায় মেয়েদের কোনও ক্রিকেট দল ছিল না। মেয়েরা যে ব্যাট-বল নিয়ে বাইশ গজ মাতাতে পারে, ধারণা ছিল খুব কম মানুষের। ২০১৮ সালে লেখা হয় নতুন ইতিহাস। চাঁচল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে নাম লেখান দুই কন্যা। নেমে পড়েন মাঠে। তাঁদেরই একজন রাসমণি দাস। চাঁচল থানাপাড়া রবীন্দ্র পল্লির বাসিন্দা। প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন কোচ রাজেশ দাশের কাছে। কিন্তু শুধু প্রশিক্ষণেই হবে না। খেলতে হবে ম্যাচ। দল তো নেই। রাজেশ দাশ বাড়ি বাড়ি ঘুরে মা-বাবাদের অনুরোধ করলেন। বললেন তাঁদের মেয়েদের পাঠাতে। মিলতে লাগল সবুজ সংকেত। এক-এক করে এলেন ১৭-১৮ জন মেয়ে। শুরু হল প্রশিক্ষণ। বর্তমানে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৭ থেকে ১৭ বছরের মেয়েরা ক্রিকেট খেলছেন। মালদা জেলা মহিলা ক্রিকেট দল প্রথম ম্যাচ খেলে ২০২০ সালে। ২০২১ সালে সেই দল থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলা দলে ডাক পান রাসমণি দাস। প্রথম ম্যাচে সুবিধা করতে পারেননি। দ্বিতীয় ম্যাচে সাফল্য পান। শুরু হয় স্বপ্নের দৌড়। যা আজও অব্যাহত।
আরও পড়ুন-জমায়েত করেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদ, নবজোয়ার প্রস্তুতি বৈঠকে মানস
জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ডাক
‘‘মেয়েরা আবার ক্রিকেট খেলবে কী? ক্রিকেট তো ছেলেদের খেলা।”— যাঁরা বলেছিলেন, তাঁরা এখন সুর বদলেছেন। জয়ধ্বনি দিচ্ছেন সোনার মেয়ে রাসমণির নামে। এর মধ্যে এসেছে আরও এক সাফল্য। অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন রাসমণি। ১৭ এপ্রিল থেকে ১১ মে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়নগরমে আয়োজিত হয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ শিবির।
পেয়েছেন উৎসাহ
রাসমণির বাবা রবীন্দ্রনাথ দাস পেশায় লটারি বিক্রেতা। চাঁচলের বাসস্ট্যান্ডে গুমটি রয়েছে তাঁর। আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। অভাব-অনটন নিত্য সঙ্গী। তবে গোটা পরিবার আছে রাসমণির পাশে। পাশে আছে জেলা প্রশাসন। বিভিন্ন ভাবে তাঁকে উৎসাহিত করা হয়। ইতিমধ্যেই বেশকিছু প্রতিষ্ঠান তাঁকে সংবর্ধিত করেছে। রাসমণির সঙ্গে কথা হল। তিনি জানালেন, ‘‘বর্তমানে আমি দশম শ্রেণির ছাত্রী। খেলাধুলার পাশাপাশি চলছে পড়াশোনা। স্কুলের শিক্ষিকারা যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। পড়তে পড়তেই এসেছি খেলায়। চতুর্থ শ্রেণিতে উৎসাহ তৈরি হয়। পঞ্চম শ্রেণিতে খেলাধূলার সঙ্গে ভালভাবে যুক্ত হই। আমার কোচ রাজেশ দাশ প্রতি মুহূর্তে উৎসাহ দেন।’’
আরও পড়ুন-তদন্তকারীদের খোঁজ, বাজির মশলায় নাকি বোমা বানাতে গিয়েই বিস্ফোরণ
বিজয়নগরমের অভিজ্ঞতা রাসমণি বোলিং অলরাউন্ডার। ডানহাতি মিডিয়াম পেসার, ডানহাতি ব্যাটার। তাঁর আদর্শ ঝুলন গোস্বামী। বাংলা দলের মেন্টর। কিছুদিন আগেই বিজয়নগরমে শেষ হয়েছে ন্যাশনাল ক্যাম্প। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? রাসমণি জানালেন, ‘‘বিজয়নগরমে খুব ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমাদের বোলিং কোচ ছিলেন নেহা তনোয়ার। তিনি জাতীয় দলে খেলেছেন। ছিলেন আরও অনেকেই। ওখানে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি। বোলিং কোচ অনেক ধরনের ভেরিয়েশন শিখিয়েছেন। নিয়মিত অনুশীলন এবং জিম করার ফলে বেড়েছে আমার ফিটনেস লেবেল।’’
আগামী দিনের লক্ষ্য
বহু ম্যাচে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। ‘‘বাংলা দলের হয়ে খেলেছেন মুম্বই, সিকিম, বরোদা, চণ্ডীগড়, ওড়িষা, মিজোরামের বিরুদ্ধে। রাসমণি বললেন, “বাংলার হয়ে ডেবিউ ম্যাচে তেমন কিছু করতে পারিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে তুলে নিয়েছিলাম ৩ উইকেট। তারপর প্রায় প্রতি ম্যাচেই উইকেট পেয়েছি। ব্যাটের সুযোগ আসেনি। পাঁচটা ম্যাচের মধ্যে তিনটে জিতেছিলাম। লিগ ম্যাচ হয়েছিল মধ্যপ্রদেশে। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল হয়েছিল চেন্নাইয়ে। এবার আমি দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি। আশা করি একদিন আমার স্বপ্ন সফল হবেই।’’
আরও পড়ুন-কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, ডেপুটি হচ্ছেন শিবকুমার, শপথ শনিবার
রাসমণি দাসের কথায়….
ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেনে খেলেছি। তবে প্র্যাকটিস ম্যাচ। ওটা তো আমাদের ঘরের মাঠ। বিভিন্ন সময় আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মনোজ তিওয়ারি প্রমুখ। ঝুলন গোস্বামী নিয়মিত পরামর্শ দেন। বাংলার কোচ প্রিয়াঙ্কা রায়ের কাছেও অনেক কিছু শেখার সুযোগ পেয়েছি। আমার স্বপ্ন ভারতীয় দলের হয়ে মাঠে নামা। প্রথমে জুনিয়র দলে, পরে সিনিয়র জাতীয় দলে। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি জোরকদমে। নিয়মিত অনুশীলন করছি।