‘কণ্ঠে মোদের সুরের জোয়ার, জেলার নাম আলিপুরদুয়ার’ স্লোগান তুলে ২০১৪-র ২৫ জুন মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে জন্ম নেয় সবুজে ঘেরা জেলা আলিপুরদুয়ার। মাত্র ৯ বছরেই এই নতুন জেলার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করে দেশে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ তারই খতিয়ান।
যোগাযোগ : নতুন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ১০০০ কোটি টাকার ওপর ব্যয় করে বহু রাস্তা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পুরনো রাস্তা সংস্কার ও চওড়া করা হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামেগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন করতে রাস্তাশ্রী ও পথশ্রীতে ৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কাজ চলছে পুরো গতিতে। পাশাপাশি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৪৮ কোটি টাকায় ২৫০টি রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। সঙ্গে ২৫টি কালভার্টও, ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে। রাস্তায় আলোর জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকায় সোলার লাইট বসানো হয়েছে।
আরও পড়ুন-ফের বন্দে ভারতে খাবার নিয়ে যাত্রী ক্ষোভ, পাথরের মতো পনির,পচা ডাল
পানীয় জল : জেলার প্রতিটি বাড়িতে নলবাহী পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে যাচ্ছে। ৮০০ কোটি টাকায় কাজ চলছে। ১২০টি প্রকল্প তৈরি হয়ে প্রায় এক লক্ষ বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছেও গিয়েছে। জেলা জুড়ে ১২০টি ওয়াটার এটিএম, ২০০টি গভীর নলকূপ ও হ্যান্ড টিউবওয়েল বসানো হয়েছে ১২ কোটি খরচা করে।
সেচ : জেলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভুটান থেকে নেমে আসা বেশ কয়েকটি পাহাড়ি নদী। নদীভাঙন একটি বিরাট সমস্যা। রুখতে সেচ দফতর ৪৫ কিলোমিটার নতুন নদীবাঁধ নির্মাণ এবং ১০০ কিলোমিটার পাড় সংস্কার করেছে।
আরও পড়ুন-পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন প্রতিটি জেলায় কমিশনের কন্ট্রোল রুম, জেনে নিন নম্বর
পরিকাঠামো : জেলা পরিষদ ভবন নির্মাণের কাজ চলছে ২০ কোটি খরচে। কৃষকদের সুবিধার্থে ছ’টি কিসান মান্ডি হয়েছে বিভিন্ন ব্লকে। কর্মতীর্থ হয়েছে আটটি। নতুন বিদ্যুতের সাবস্টেশন হয়েছে ছ’টি। তৈরি হয়েছে নতুন মহিলা থানা ও সাইবার ক্রাইম থানা। মাঝের ডাবরিতে আট কোটি টাকা ব্যয়ে হচ্ছে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ।
স্বাস্থ্য : ফালাকাটায় তৈরি হয়েছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। মোট সুস্বাস্থ্যকেন্দ্র ২০৩টি। ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দুটো দোকান করেছে রাজ্য। রোগী পরিষেবায় বিভিন্ন ব্লককে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্স। নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র হয়েছে ৫৬০টি।
শিক্ষা : ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজ হয়েছে, হয়েছে আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। দমনপুরে হয়েছে পলিটেকনিক কলেজ। নতুন মডেল স্কুল হয়েছে তিনটি। প্রাথমিক বিদ্যালয় সাতটি। ১২টি হাইস্কুলকে হায়ার সেকেন্ডারিতে উন্নীত করা হয়েছে। নতুন ছ’টি কলেজ, দুটো আইটিআইও হয়েছে।
পর্যটন : জেলার মূল উপার্জনের একটি পথ পর্যটন। তাকে তুলে ধরতে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছে জেলা প্রশাসন। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে। হোম স্টের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য। এছাড়াও হয়েছে বেশ কয়েকটি বায়োডাইভারসিটি পার্ক, যেখানে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। ভুটান ঘাটে ৯ কোটি টাকায় হয়েছে যুব আবাস।
আরও পড়ুন-‘দুয়ারে সরকারের প্রতিনিধি বাড়িতে রেশন দেবে’, স্পষ্ট জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
সাহায্য : কয় বছরে জমির পাট্টা পেয়েছেন ১১৩১০ জন। উদ্বাস্তু পাট্টা পেয়েছেন ১২৪৯২ জন। ফরেস্ট পাট্টা পেয়েছেন ৬৩৯৭ জন। আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৬৯১ জন। ১৪ লক্ষ মানুষ খাদ্যসাথীর আওতায়। প্রায় চার লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছেন। কিসান ক্রেডিট কার্ড পেয়েছেন ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৩২০ জন। জেলায় তিন লাখ ২৫ হাজার মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছেন। কন্যাশ্রী পেয়েছেন ১ লক্ষ ছাত্রী। দেড়লাখ ছাত্রছাত্রী ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ পেয়েছে। রূপশ্রী পেয়েছে ৩৪ হাজার ২৩০ জন। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ৭৬৪ জন ছাত্রছাত্রী ঋণ পেয়েছে। বৃদ্ধভাতা ও বিধবাভাতা পেয়েছেন ৬৭ হাজার ২৫৮ জন, জয় জোহারের উপভোক্তা ২০,২৭৫ জন। তফসিলিবন্ধু পেয়েছেন ২৮৯৫১ জন। জেলায় চা-শ্রমিকদের জন্য সরকার করেছে চা-সুন্দরী আবাসন। চা-শ্রমিকদের স্বার্থে হচ্ছে ৭০টি ক্রেশ ও অতিরিক্ত ৪২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এ ছাড়াও মজুরি বাড়ানো হয়েছে শ্রমিকদের।
আরও পড়ুন-রাজ্যের দাবি আদায়ে দিল্লির ধর্নায় মুখ্যমন্ত্রী, ইঙ্গিত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
শিল্প : আলিপুরদুয়ার জেলায় ৭৫টি মাঝারি শিল্প হয়েছে। বিনিয়োগ হয়েছে ১৫৪ কোটি টাকা। কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় চার হাজার লোকের। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ছোট শিল্প তৈরি হয়েছে, যাতে কর্মরত ৩৮ হাজার মানুষ।