প্রতিবেদন : রাজনৈতিক কারণে একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত রাজ্য। শুধু কেন্দ্রীয় প্রকল্প নয়, আমফান, ইয়াসের ক্ষতিপূরণ, পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ, জিএসটি বাবদ ক্ষতিপূরণেও রাজ্যকে বছরের পর বছর বঞ্চিত করে রেখেছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। মঙ্গলবার বিধানসভায় রীতিমতো পরিসংখ্যান পেশ করে এই বঞ্চনা নিয়ে সরব হলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন-এনবিএসটিসির কর্মীদের ভাতাবৃদ্ধি
তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপি যাই যুক্তি দিক না কেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই বাংলাকে ভাতে মারার এই কৌশল। বিভিন্ন ভাবে বাংলাকে কেন্দ্রের বঞ্চনার নিন্দা করে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বিধানসভায় এদিন এক নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়। শাসক ও বিরোধী দলের একাধিক বিধায়ক সেই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন। বিরোধীরা ওজর তোলেন, আবাস ও ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির কারণেই কেন্দ্রের বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন কেন্দ্রের বরাদ্দ রাজ্য ঠিকমতো খরচ করতে পারছে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রের দেওয়া টাকা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকছে। সংখ্যালঘু উন্নয়নে কেন্দ্রের বরাদ্দ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা রাজ্য খরচ করতে পারেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন-গোরক্ষার নামে ২ খুনের অভিযুক্তই দাঙ্গার পান্ডা
শুভেন্দু বলেন, একশো দিনের কাজ এবং আবাস যোজনার প্রাপকদের নামের তালিকা বাছাই করার ক্ষেত্রে ভুল করেছে রাজ্য। তিনি বলেন, একশো দিনের কাজ, আবাসের টাকা আটকে গিয়েছে আপনাদের কৃতকর্মের ফলে। আপনারা ভুল করেছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করেছেন। একই সঙ্গে শুভেন্দুর দাবি, বিভিন্ন খাতে রাজ্যকে কেন্দ্রকে দেওয়া বরাদ্দের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। জবাবে অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বিরোধীদের পাল্টা তীব্র আক্রমণ শানান। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের বকেয়ার পরিমাণ এপর্যন্ত ৪৮ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। শুধু কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ নয়, পিছিয়ে পড়া এলাকা উন্নয়ন তহবিলে ২০১৪ সাল থেকে ২৩৩০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে রাজ্যের বকেয়া ৫২৪ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন-হাত গুটিয়ে সরকার, মণিপুর-কটাক্ষ তৃণমূলের
অর্থমন্ত্রী জানান, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান এখনও অনুমোদন না করে ফেলে রেখেছে কেন্দ্র। সেখানে তাদের অংশীদারি বাবদ রাজ্যকে দেওয়ার কথা ৭৪৩ কোটি টাকা। এছাড়া ইয়াস, আমফানের প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় আট হাজার কোটি টাকা রাজ্যকে দেয়নি কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলা প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার। তাঁর প্রশ্ন, যদি প্রকল্পের নাম বদল নিয়ে সমস্যা হয় তাহলে ইন্দিরা আবাস যোজনার নাম বদলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা কেন করল কেন্দ্র? বিরোধীরা রাজ্যের প্রকল্পের অডিট নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। প্রধানমন্ত্রীর পিএম কেয়ার ফান্ডের ক’বার অডিট হয়েছে? অর্থমন্ত্রীর এই কথা শুনে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন বিরোধীরা। তারপর স্লোগান দিতে দিতে সভা থেকে বেরিয়ে যান। অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায় বিরোধী দলনেতাকে। ট্রেজারি বেঞ্চের অনেকেই তাঁর আচরণের প্রতিবাদ জানান। নিন্দা করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতা বন্ধ করেননি। আলোচনার শেষে ধ্বনিভোটে নিন্দা প্রস্তাব সভায় গৃহীত হয়।