কল্প-ঐতিহাসিক বার্বেনহাইমার
পরমাণু বোমার ‘জনক’ রবার্ট ওপেনহাইমারের পুলিৎজ়ারপ্রাপ্ত বায়োগ্রাফি ‘কাই বার্ড’ এবং মার্টিন শেরউইনের ‘আমেরিকান প্রমেথিউয়াস’-এর ভিত্তিতে এর চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান। গোটা গল্পটি বলা হয়েছে দু’টি আইনি শুনানির মাধ্যমে। একটি ১৯৪৯ সালের ‘কুখ্যাত’ ওপেনহাইমার সিকিউরিটি হিয়ারিং। অন্যটি ১৯৫৮ সালে। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইসেনহওয়ার যখন সেক্রেটারি অফ কমার্স পদের জন্য স্ট্রসের নাম নির্বাচন করেছিলেন কংগ্রেসের অনেকেই তাঁর বিরোধিতা করেন। ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে ওপেনহাইমারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে সেনেটের শুনানি-প্রক্রিয়া শুরু হয়।
আরও পড়ুন-অনলাইন গেম, ক্যাসিনোয় জিএসটি ২৮%
আরেক দিকে ইউটোপিয়ান জগতের রাজকন্যা ‘বার্বি’। ‘বার্বিল্যান্ড’-এর সব থেকে সুন্দরী বার্বি। ‘বার্বিল্যান্ড’-এর বার্বি পুতুল সে, যার চুলের রং থেকে পোশাকে যে স্বপ্নপরী। ‘বার্বিল্যান্ড’ এমন একটা দুনিয়া, যেখানে পিতৃতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। সেই জগতে হেসেখেলে দিন কাটাতে কাটাতে এক দিন হঠাৎ করেই বার্বির মনে মৃত্যুর চিন্তা জাগে। নিজের সৌন্দর্য বাঁচাতে ‘উইয়ার্ড বার্বি’র শরণাপন্ন হয় সে। উইয়ার্ড বার্বি তাকে নিজের সৌন্দর্য ফিরে পাওয়ার উপায়ও বাতলে দেয়। বাস্তব দুনিয়ায় গিয়ে তাকে খুঁজে বার করতে হবে সেই মানুষকে, যে এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা মাথায় নিয়ে তার সঙ্গে খেলা করছে। তখন বাস্তবের দুনিয়ায় পা রাখে বার্বি। ২১শে জুলাই একসঙ্গে রিলিজ করেছিল হলিউডের দুটো ছবি ‘বার্বি’ এবং ‘ওপেনহাইমার’।
আরও পড়ুন-এবার সরাসরি কলকাতা-ঢাকা বাস, চালু হচ্ছে শীঘ্রই
বার্বি ও ওপেনহাইমার দ্বৈরথ
ক্রিস্টোফার এডওয়ার্ড নোলানের পরিচালনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় তৈরি ছবি ‘ওপেনহাইমার’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোসিমা এবং নাগাসাকিতে যখন পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সেই পারমাণবিক বোমার জনক জে রবার্ট ওপেনহাইমারকে নিয়ে এই ছবি। যদিও এটা পুরোপুরি বায়োপিক নয়। পারমাণবিক বোমার সৃষ্টি এবং উৎক্ষেপণের পরের গল্প বলেছে এই ছবি। নোলানের নিজের কথায় তাঁর সবচেয়ে বড় নির্মাণ এই ছবি। মূল চরিত্রে রয়েছেন পিকি ব্লাইন্ডার্সের কিলিয়ন মার্ফি। গুরুগম্ভীর ঘরানার এই ছবির উল্টোদিকে রয়েছে গ্রেটা গারউইগ পরিচালিত ‘বার্বি’। যেখানে রয়েছে আইকনিক পুতুল ‘বার্বি’ এবং তার দোসর ‘কেন’। বার্বিল্যান্ড থেকে বহিষ্কৃত হবার পর বার্বি এবং কেন পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় এবং তাদের যাত্রাপথে ঘটতে থাকে মজার মজার সব ঘটনা। বাস্তব দুনিয়ায় তারা মুখোমুখি হয় নানা অভিজ্ঞতার। ‘বার্বি’র বিশেষত্ব হল হলিউডের নারী পরিচালক হিসেবে প্রথম তিনদিনে সবচেয়ে বেশি আয়ের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছেন গ্রেটা। ‘বার্বি’ চরিত্রে রয়েছেন হার্লি কুইন খ্যাত মার্গো রবি। ‘কেন’-এর চরিত্রে রায়ান গসলিং। একই দিনে রিলিজ এবং একইরকম ক্রেজ হলেও অনেকের মতেই দর্শক পছন্দের তালিকায় ‘ওপেনহাইমার’ ‘বার্বি’র চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন-সাংসদ নুসরতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী
কী বলছে বক্স অফিস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা-সহ উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় প্রথম তিনদিনে ১৪৫ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে বার্বি। ওপেনিং উইকেন্ডে যেটার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৫ মিলিয়ন ডলার। তিনদিনে ‘বার্বি’র মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৩৩৭ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে, উত্তর আমেরিকায় ‘ওপেনহাইমার’ ব্যবসা করে ৮০ মিলিয়ন ডলার। সবমিলিয়ে তিনদিনে এই ছবির মোট আয় ১৭৪ মিলিয়ন ডলার।
ভারতের বাজারে
মুক্তির দিন ভারত থেকেও দুটি ছবির বক্স অফিস কালেকশন দুর্দান্ত। রিপোর্ট বলছে ‘ওপেনহাইমার’ ছবিটির ওপেনিং ডে-তেই অগ্রিম বুকিংয়ের দু লক্ষ টিকিট এবং ‘বার্বি’র আশি হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। এর থেকেই বোঝা যায় হলিউডের এই দুই ছবির জন্য কী ব্যাপক ক্রেজ তৈরি হয়েছিল এদেশে প্রথম দিন থেকেই।
আরও পড়ুন-৬-৭ মাস ভোটের বাকি, বিজেপি শুরু করেছে দাঙ্গা
২০২৩ বিগেস্ট হলিউড ওপেনার ছবির তকমা ছিনিয়ে নিয়েছে ‘ওপেনহাইমার’। তিন বছর পর এই ছবির হাত ধরেই বড় পর্দায় কামব্যাক ক্রিস্টোফার নোলানের। কাহিনি, পটভূমিকা থেকে শুরু করে সবটা আলাদা হয়েও দুটো ছবি একইরকম হাইপ পেয়েছে। কখনও এর পাল্লা ভারী তো কখনও ওর। কয়েক বছরে কোনও ছবি ঘিরে এমন উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি।
বিতর্কেও এক দুই ছবি
‘বার্বেনহাইমার’ সাফল্যে যেমন তাল মিলিয়েছে, তেমনই বিতর্কেও। সম্প্রতি টেসলার অধিকর্তা ইলন মাস্ক ‘বার্বি’ ছবিটি নিয়ে বলেছেন, ‘এই ছবিতে এতবার প্যাট্রিয়ার্কি (পিতৃতন্ত্র) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যে, ছবিটি শেষ হওয়ার আগেই দর্শক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে বাধ্য।’ ভারতেও বার্বি নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। সম্প্রতি টেলিভিশনের নামকরা অভিনেত্রী জুহি পারমার সোশ্যাল মিডিয়াতে কটাক্ষ করে লেখেন, ছবিটি দেখতে গিয়ে তিনি দশ মিনিটেই তাঁর ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। কারণ ছবিটি তেরো বছর ও তার ঊর্ধ্বের জন্য হলেও তাদেরও দেখা উচিত নয়। জুহির এই পোস্টকে সমর্থন জানিয়েছেন অনেকেই। ভিয়েতনামে ‘বার্বি’ সিনেমা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও হাজারো বিতর্ক সত্ত্বেও প্রশংসা কুড়িয়েছে এই ছবিটি।
আরও পড়ুন-৬ অগাস্ট রাজ্যজুড়ে ব্লকে ব্লকে ধর্না তৃণমূলের, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
এরপর আসে ‘ওপেনহাইমার’ প্রসঙ্গ। এক সাংঘাতিক বিতর্কের মুখে এই ছবি। ছবির একটি দৃশ্যে দেখা গিয়েছে ওপেনহাইমারকে (অভিনেতা কিলিয়ান মার্ফি)। তাঁর প্রেমিকা জিন ট্যাটলক (সহ-অভিনেত্রী ফ্লোরেন্স পুগ) তাকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় গীতা থেকে শ্লোক পড়তে বলেন। বান্ধবীর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হয়ে শ্লোক আওড়ান ওপেনহাইমার! এই দৃশ্য নিয়ে ঘোরতর ক্ষোভ নেটমহল থেকে মন্ত্রীমহল।
যদিও বলিউডের অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত এ-বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, ‘ছবিটিতে আমার সবচেয়ে পছন্দের অংশ হল ভগবদ্গীতা ও ভগবান বিষ্ণুর রেফারেন্স।’ তিনি ছবিটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ভারতের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘মহাভারত’-এর ‘কৃষ্ণ’-খ্যাত অভিনেতা নীতীশ ভরদ্বাজ এই প্রসঙ্গে নোলানের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবুও ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ‘ওপেনহাইমার’ সার্বিক সফল একটি ছবি।