ছিঁড়ে ফেলো মিথ্যের মুখোশ। ছুঁড়ে ফেলো কুৎসার খোলস। নানা ‘অজুহাতে’ ১০০ দিনের কাজ, আবাস সহ একাধিক প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে মোদি সরকার। অথচ সেই মোদি সরকারেরই সচিব ‘বাংলা মডেল’ সামনে রেখে কাজের নিদান দিলেন গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের মতো ডবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিকে।
আরও পড়ুন-ইসিএল-এর হেলদোল নেই, ফের ধসে বিপন্ন রানিগঞ্জ
অস্যার্থ, উন্নয়নের ক্ষেত্রে সত্যিই বাংলা আজ অন্যান্য রাজ্যের কাছে মডেল। একথা আমাদের মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন। কেন্দ্রও তা স্বীকার করে নিল। কেন্দ্রীয় বরাদ্দ নির্ভর আরকেভিওয়াই তো বটেই, অন্যান্য ক্ষেত্রেও রাজ্য একক প্রচেষ্টায় কৃষকবন্ধু, বাংলা শস্যবিমা ইত্যাদি নানা প্রকল্প চালু করেছে। বাংলাকে অনুসরণ করে অনেক রাজ্য এসব প্রকল্প চালু করছে।
আরও পড়ুন-রাজ্যের প্রতি ক্রমাগত আর্থিক বঞ্চনা সত্ত্বেও কৃষিতে স্বীকৃতি, বাংলাকেই মডেল করার পরামর্শ কেন্দ্রের
গত বুধবার আরকেভিওয়াই প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়া এবং বরাদ্দ অর্থ খরচ না করতে পারা নিয়ে বৈঠক হচ্ছিল। দিল্লির কৃষিভবনের সেই বৈঠকে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় স্ক্রিনে পশ্চিমবঙ্গের প্রেজেন্টেশন ফুটে উঠতেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন কৃষিমন্ত্রকের সচিব মনোজ আহুজা সহ অন্যান্য পদস্থ কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা। বাংলা এই খাতে পাওয়া টাকা যথাযথ খরচ করেছে এবং জমা পড়েছে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট সহ হিসেব সংক্রান্ত সমস্ত নথি। ফলে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের চতুর্থ কিস্তি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের প্রথম কিস্তির টাকা। বাংলা ছাড়া এই টাকা পেয়েছে একমাত্র তামিলনাড়ু। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, মহারাষ্ট্র সহ অন্যান্য রাজ্যগুলি আগের টাকা খরচ করতেই পারেনি। ফলে পায়নি এই দুই কিস্তির টাকা। সেই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাজকে উদাহরণ বা মডেল হিসেবে সামনে রেখে প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বৈঠকে একাধিকবার বলেন মন্ত্রকের সচিব থেকে শুরু করে পদস্থ কর্তারা।
আরও পড়ুন-প্রার্থী ঘোষণা হতেই প্রচার শুরু
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত এই প্রকল্পের ৬০ শতাংশ টাকা দেয় কেন্দ্র, ৪০ শতাংশ রাজ্য। রাজ্যে কৃষি দফতরকে মাথায় রেখে প্রকল্প রূপায়ণ করে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন, পঞ্চায়েত, মৎস্য, সমবায় ইত্যাদি দফতর। একটি কিস্তির ৫০ শতাংশ টাকা খরচ হলে তবেই পরবর্তী কিস্তির টাকা পাওয়া যায়। ২০২২-২৩ রাজ্যের অংশ মিলিয়ে মোট বরাদ্দ ২৮৯ কোটি। ওই অর্থবর্ষের টাকা সময়মতো খরচ করার ফলেই চলতি বছরের প্রথম কিস্তির ৪২.৯০ কোটি টাকা পেয়েছে বাংলা। এর ৫০ শতাংশ খরচ নিশ্চিত করে অগাস্টেই দ্বিতীয় কিস্তির টাকার জন্য আবেদন করতে চলেছে রাজ্য।
আরও পড়ুন-ন্যায় সংহিতা অসাংবিধানিক, বললেন সিবাল
অন্যদিকে মোদি সরকারের ভূমিকার দিকে তাকানো যাক। অচ্ছে দিন, ১৫ লক্ষ টাকার খোয়াব, কৃষকের আয় দ্বিগুণ, পাঁচ ট্রিলিয়নের অর্থনীতি সব পিছনে। পরিবর্তে বিরোধীদের উপর আক্রমণ দেখতে দেখতে বিগত একদশক ধরে আমরা ক্লান্ত। মাঝে মাঝেই রিপিট টেলিকাস্ট! চোখের পলকে আলোচনা ছাড়াই একটার পর একটা বিল পাশ, আইন প্রণয়ন বিগত ন’বছরে জলভাত। প্রতিবন্ধকতা যেটুকু তা তৈরি করেছে আদালত। তাই এবার বিচার ব্যবস্থার উপর আক্রমণ তীব্রতর হচ্ছে।
আরও পড়ুন-মর্মান্তিক মৃত্যু, কোথায় গেল হোক কলরব
নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসেছিলেন ২০১৪ সালের মে মাসে। তার দু’মাস পরই সংবিধানের ৯৯তম সংশোধন আনা হয়। ১৩ অগাস্ট প্রথমে সেটি পাশ হয় লোকসভায়। পরদিনই পাশ হয়ে যায় রাজ্যসভায়। সেই সংশোধনীতে কলেজিয়াম প্রথা তুলে দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত ও হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন গঠিত হয়। অর্থাৎ বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা পুরোপুরি সরকার নিজের হাতে নিতে চাইল এই ৯৯তম সংশোধনীর মাধ্যমে। সংসদের দুই কক্ষে পাশ হয়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রপতিরও কিছু করার ছিল না। ওই বছরেরই শেষ দিনে ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি তাতে সইও করে দেন। কার্যকর হয় এনজেএসি আইন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তার ক্ষোভ জানাতে মোটেই দেরি করেনি। পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠিত হয়। এবং মাত্র চার মাসের মধ্যেই শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ ওই সংশোধনী এবং সেইসঙ্গে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন বাতিল করে দেয়। কিন্তু সরকারও ছাড়ার পাত্র নয়। চব্বিশে জিতে এলে কলেজিয়াম তুলে দেওয়ার লড়াই কিন্তু আরও তীব্র হবে, সেকথা নিঃসন্দেহে বলে দেওয়া যায়। আর একটা কথা। আরও একটা প্রসঙ্গ।
আরও পড়ুন-স্বাধীনতা দিবসে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা
কেন্দ্রের আইনমন্ত্রী অর্জুন মেঘাওয়াল গত বৃহস্পতিবার বাদল অধিবেশনের শেষ পর্যায়ে একটি বিতর্কিত বিল নিয়ে এসেছেন। ওই বিলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে আর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কোনও ভূমিকাই থাকবে না। সিলেকশন কমিটি থেকেই প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বদলে নির্বাচন কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত কেন্দ্রের কোনও ক্যাবিনেট মন্ত্রী। অর্থাৎ স্বশাসিত নির্বাচন কমিশনের মাথাদের টিকিটা সরকারের কাছে বাধা পড়ে গেল। আরও নির্দিষ্ট করে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গুলিহেলনেই চলবে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুন-‘দ্রুত তদন্ত শেষ করতে পারব’, যাদবপুর কাণ্ডে আশাবাদী পুলিশ কমিশনার, রিপোর্ট চাইল ইউজিসি
সেদিন সংসদে প্রধানমন্ত্রী মজা করে বললেন, অনাস্থা তাঁর কাছে চিরদিন আশীর্বাদের মতো। কালা টিকা। কারণ অনাস্থার মুখোমুখি হলেই পিছন পিছন সাফল্য আসে। আমাদের জিজ্ঞাসা, মণিপুরের মতো গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে, অসহায় বিবস্ত্র মহিলাদের ধর্ষণের আলোচনায় রাষ্ট্রনায়ক মস্করা করেন কোন আক্কেলে! লজ্জাও করে না ওঁর?
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
গত ন’বছরের মোদি সরকারের অভিযাত্রায় দেশের চেয়ে বারে বারে হিন্দুত্বের এজেন্ডাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। আর তা নিশ্চিত করতে গিয়েই মানুষে-মানুষে দূরত্ব ও বিভাজন বেড়েছে বই কমেনি। এর জেরেই বারে বারে বিপন্ন হয়েছে সংবিধান, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য। মানুষের ভাত আর কাজের অধিকারের লড়াই পথ হারিয়েছে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নিকষ অন্ধকারে।
সেই অন্ধকার সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারেও মডেল হোক বাংলা। যতই নোংরামি হোক না কেন, বাংলাকে ঘিরে।
সত্যমেব জয়তে!