তিনটি খবর। ১৫ অগাস্টের সকালে। বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিকে।
খবর তিনটিকে পাশাপাশি রাখলেই বোঝা যাচ্ছে, ভাল নেই আমাদের স্বদেশ। এক্কেবারে ভাল নেই।
ক্যাগ রিপোর্টে প্রকাশ, প্রচার করতে গিয়ে গরিব মানুষের ভাতা, পেনশনের টাকাতে পর্যন্ত থাবা বসাতে দু’বার ভাবেনি মোদির কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১৭-’১৮ থেকে ২০২০-’২১, টানা পাঁচ অর্থবর্ষ ধরে জাতীয় সামাজিক সহায়তা কর্মসূচির (এনএসএপি) টাকা অন্যান্য প্রকল্পের প্রচারের কাজে খরচ করেছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। প্রবীণ, বিধবা এবং বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য পেনশন প্রকল্প এই এনএসএপি-র অন্তর্ভুক্ত। এই ভাতার খাত থেকে প্রায় ৬০ কোটি টাকা কেটে অন্য খাতে খরচ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-একবার ফিরে পুরনো, ঝলক দেখাক নাদাল
গত মঙ্গলবার লোকসভায় পেশ করা রিপোর্টে এমনই তথ্য জানাল দেশের শীর্ষ অডিট সংস্থা কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)। দারিদ্র্যসীমার নিচে (বিপিএল) বসবাসকারীদের জন্য পেনশন প্রকল্পের অর্থের ঢালাও অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে তারা। এনএসএপির আওতায় তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগের জন্য নির্ধারিত ২ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা অন্যান্য প্রকল্পের প্রচারের জন্য সরানো হয়েছে। ফলে এই কর্মসূচির সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা যায়নি সাধারণ মানুষকে। এতে আখেরে বঞ্চিত হয়েছে সম্ভাব্য সুবিধা প্রাপকরা। এ ছাড়াও, মোট ৫৭ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার তহবিল ছ’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অন্য প্রকল্প বা অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। সেই রাজ্যগুলি হল— ছত্তিশগড়, রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর, বিহার, গোয়া ও ওড়িশা। হিসেব অনুযায়ী, ওই সময়কালে সব ক’টি রাজ্যেই হয় আংশিক, নয় পুরোপুরিভাবে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি।
আরও পড়ুন-ভারানের গোলে জিতল ম্যান ইউ
উল্লিখিত রিপোর্ট মোতাবেক, নির্দিষ্ট সময়ে পেনশন বরাদ্দ না হওয়ায় ১১ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৬১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা পাননি ৯২ হাজার ৬০২ জন পেনশনপ্রাপক। ১৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৪৩ কোটি টাকা কম পেনশন পেয়েছেন প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ।
এরই সমান্তরালে আর একটি খবর। জুলাই মাসে খুচরো মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৪৪ শতাংশ। গত ১৫ মাসে এই হার সর্বাধিক। শুধু তা-ই নয়, ৯ মাস পর খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার ৭ শতাংশ অতিক্রম করে গেল। তবে পাইকারি মুদ্রাস্ফীতিতে সুরাহা মিলেছে। খনিজ তেল, ধাতু, রাসায়নিক পণ্য এবং বয়নজাত পণ্যের দাম কমেছে অনেকটাই।
আরও পড়ুন-শুরুতেই গোল পেতে চায় মোহনবাগান, কামিন্সদের সামনে মাচিন্দ্রা
এর জেরে জুলাই মাসে পাইকারি মুদ্রাস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ‘মাইনাস’ ১.৩৬ শতাংশ। এই নিয়ে পরপর চার মাস পাইকারি মুদ্রাস্ফীতির হার ঋণাত্মক থাকল। তবে খাদ্যপণ্যের দাম ধরলে কপালে চিন্তার ভাঁজ আসতে বাধ্য। কারণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যের পাইকারি মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১৪.২৫ শতাংশ। জুন মাসে এই হার ছিল মাত্র ১.৩২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাইকারি মুদ্রাস্ফীতি ঋণাত্মক থাকলেও এখনই সুদের হার কমার সম্ভাবনা কম। কারণ, সুদের হার কমানোর জন্য খুচরো মুদ্রাস্ফীতির উপর নজর রাখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সেই হার নির্ধারিত স্বস্তির সীমার অনেক উপরে। ওদিকে, এই জুলাই মাসেই রপ্তানি বাণিজ্য ১৫.৮৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২২৫ কোটি ডলারে।
অর্থাৎ, বিপদ ঘরে-বাইরে। বিপন্ন মধ্যবিত্ত ও গরিবরা। সৌজন্যে মোদি সরকার।
ওপরের দুটি খবরের পাশে আর একটি খবর। ভারতকে দুর্নীতি-মুক্ত করার স্বপ্ন ফেরি করে গদিতে আসীন হয়েছিল যারা, তাদের দুর্নীতিতে যুক্ত হওয়ার খবর।
আরও পড়ুন-প্রয়াত কিংবদন্তি ভারতীয় ফুটবলার মহম্মদ হাবিব
গুরুগ্রাম-দিল্লি যানজট সমস্যা সমাধানে ভারতমালা পরিযোজনা ফেজ ওয়ানের আওতায় এক্সপ্রেসওয়েটি তৈরির কাজ শুরু হয়। এক কিমি রাস্তা তৈরিতে কেন্দ্রের অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি বরাদ্দ করেছিল ১৮ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। কিন্তু সেই খরচই বেড়ে দাঁড়াল ১৪ গুণ। দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রতি কিমিতে খরচ হয়েছে ২৫০ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা! কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)-এর রিপোর্টে সামনে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০১৭-’১৮ থেকে ২০২০-’২১ পর্যন্ত ক্যাগ রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রথমে ঠিক ছিল দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করবে হরিয়ানা সরকার। কিন্তু কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় তা ভারতমালা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ জন্য হরিয়ানা সরকার জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় জমিও দেয়। কিন্তু সেই জমি অধিগ্রহণের পরও রাস্তাটি ১৪ লেনের করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে ক্যাগ রিপোর্টে। তাতেই খরচ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৮৭ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পে বড়সড় অনিয়মেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে এসব ঘটনা।
সব মিলিয়ে, স্বাধীনতা এখন স্বাদ হীনতায় ভুগছে। সৌজন্যে মোদি জমানা। বিদ্বেষবাদী জঞ্জাল পার্টির কারণে আজ বিপন্ন আমার, আপনার স্বদেশ।
আরও পড়ুন-প্রয়াত হলেন ‘সুলভ’-এর স্রষ্টা বিন্দেশ্বর পাঠক
আরএসএস-এর হিন্দুত্ববাদ তাদের সদস্যদের একটা প্রার্থনা মন্ত্র শেখায়। তার কিছু শব্দ বদলে সেটিকে সর্বধর্মাবলম্বীদের উপযোগী করে তুললে, প্রার্থনামন্ত্রটি এরকম দাঁড়াবে—
নমস্তে সদা বৎসলে মাতৃভূমে
ত্বয়া ধর্মভূমে সুখং বর্ধিতেহহম্।
মহামঙ্গলে পুণ্যভূমে ত্বদর্থে
পতত্বেষ কায়াে নমস্তে নমস্তে।।
প্রভাে শক্তিমন্ ধর্মনিরপেক্ষরাষ্ট্রাভূতা
ইমে সাদরং ত্বাং নমামাে বয়ম্
ত্বদীয়ায় কার্যায় বদ্ধা কটীয়ং
শুভাশিষং দেহি তৎপূৰ্তয়ে।
আসুন, সবাই একযোগে বলি, হে স্নেহময়ী মাতৃভূমি তোমাকে প্রণাম। হে ধর্মভূমি তোমার দ্বারা আমি সুখে প্রতিপালিত হচ্ছি। হে মঙ্গলময় পুণ্যভূমি, তোমার জন্য এই শরীরের পাতনেও ক্ষতি নেই। হে শক্তিমান প্রভু! ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের অঙ্গীভূত আপনি, আপনাকে প্রণাম। আপনার কাজের জন্য আমরা কোমর বেঁধেছি। সেই কাজ, সেই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য শুভাশিস প্রদান করুন।
কী সেই কাজ?
মাতৃভূমির মঙ্গলার্থে ২০২৪-এ বিজেপি বিসর্জন।
শুভাশিষং দেহি তৎপূর্তয়ে।
জয় INDIA! জয় বাংলা!