তিনি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মী। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, দু-দুবার জেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ, বিধায়ক থেকে এবার জেলা পরিষদের সভাধিপতির গুরুদায়িত্বে। রাজনীতির পাশাপাশি তাঁর আরেক পরিচয় তিনি সংগীতশিল্পীও। আছে সংগঠনও। স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত অনুষ্ঠান করেন। উদ্বৃত্ত টাকায় গরিব মানুষজনকে সাহায্য করেন। সবাইকে নিয়ে চলতে ভালবাসেন। বিরোধীদেরও আহ্বান জানিয়েছেন জেলাকে সেরা করতে পাশে থাকতে।
আরও পড়ুন-সাফ চ্যাম্পিয়ন ভারতের ছোটরা
দুবার গুরুত্বপূর্ণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ, জেলা পরিষদের পরিষদীয় দলনেতা, বিধায়ক। এবার সভাধিপতি। কী বলবেন?
উঃ প্রথম কৃতিত্ব দেব দলের নেত্রী, আমাদের দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যিনি এতগুলো পদে আসিন হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। তারপর কৃতিত্ব দেব দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দায়িত্ব দেওয়া, মূল্যায়ন করা ও পর্যবেক্ষণ করা, সবটাই করেছেন। যখন যেখানে ভোটে লড়েছি, সেখানকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে। তাদেরও কৃতিত্ব দেব। সর্বোপরি কৃতিত্ব দেব সাধারণ মানুষকে, যাঁরা আমাকে ভোট দিয়েছেন। অনেক দায়িত্ব বাড়ল।
আরও পড়ুন-গান্ধী হত্যাকারীদের মুখে নয়া হুমকি
সভাধিপতির চেয়ারে বসে প্রথম কোন পাঁচটি কাজের উপর জোর দেবেন?
উঃ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন শুধু রাস্তাঘাট তৈরি মানেই উন্নয়ন নয়। জেলার সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে, যাতে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়। সেই মতো জেলার সামগ্রিক উন্নয়নই লক্ষ্য। এই মুহূর্তে জেলার কিছু কিছু ব্লকে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত। তা প্রতিরোধই প্রথম কাজ। এ ছাড়াও বসিরহাটে নদীবাঁধ, নিকাশি সমস্যার সমাধানে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আর্সেনিক সমস্যার সমাধানে পরিস্রুত পানীয় জল, জেলা পর্যটনের মান উন্নয়নের দিকে নজর থাকবে। সঙ্গে রাস্তাঘাটের সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণের কাজ বর্ষার সময় বাদ দিয়ে সারাবছরই চলবে।
আরও পড়ুন-তিন দিনেই ৩০০ কোটি!
বিরোধীশূন্য জেলা পরিষদে উদ্বুদ্ধ হবেন কীভাবে?
উঃ একটা কমপ্লেন বক্স বানাব। যেখানে যে কেউ কাজের ভুল-ত্রুটি, নতুন পরিকল্পনা, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে জানাতে পারবেন। নাম-ঠিকানা গোপন রাখা হবে। সভাধিপতি সহ জেলা পরিষদের একটা প্রতিনিধিদল ২২টি ব্লকে নির্দিষ্ট সময় অন্তত ভিজিট করবে। বুথ থেকে ব্লকস্তরের প্রতিটি কাজের অগ্রগতি, সমস্যা, খতিয়ে দেখা হবে।
এত বড় জেলা, বিস্তর কাজ। কীভাবে সমাধান?
উঃ ১০ বছর জেলা পরিষদের পূর্ত ও পরিবহণের কর্মাধ্যক্ষ থাকায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলাকে হাতের তালুর মতো চিনি। কোথায় কী সমস্যা আছে জানা। জেলা পরিষদের নয় কর্মাধ্যক্ষ, সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি, আমলা মিলে একটি পরিবারের মতো এক ছাতার তলায় থেকে কাজ করব। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই সভাধিপতি ও প্রতিনিধিদল ২২টি ব্লকে ঘুরবে ‘দুয়ারে সভাধিপতি’ কর্মসূচি নিয়ে।
আরও পড়ুন-মেঝেতে ছেলের পচাগলা দেহ, পাশের ঘরে অসুস্থ বৃদ্ধা মা
রাজনীতিতে সূত্রপাত কী করে? সর্বক্ষণ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, পরিবারকে কখন সময় দেন?
উঃ হাবড়া চৈতন্য কলেজে পড়ার সময় ছাত্র পরিষদ করেছি। ১৯৯৩ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ। তখন থেকে যুব কংগ্রেস, ২০০৮ সালে স্বরূপনগর থেকে ভোটে জিতে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ২০১৩-য় হাসনাবাদ থেকে জিতে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, ২০১৮-য় বারাসত ১ নম্বর ব্লকের নীলগঞ্জ থেকে জিতে পুনরায় পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, ২০২১-এ অশোকনগরের বিধায়ক, ২০২৩-এ জেলা পরিষদের সভাধিপতি। স্ত্রী বৈশালীও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। রাজনৈতিক ময়দানেই পরিচয়। তারপর বিবাহ। ছেলে সার্থক ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ছে। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে আমি অন্যরকম। ছেলে, স্ত্রীর সঙ্গেই সময় কাটাই। ঠাট্টা-ইয়ার্কি হয়। ছেলে গিটার বাজিয়ে গান শোনায়। কখনও পরিবার নিয়ে বেড়িয়েও আসি।
আরও পড়ুন-আসানসোলে চালু দুই দূষণহীন বাস
এত ব্যস্ততার মধ্যেও সংগীতচর্চা রেখেছেন কীভাবে?
উঃ ছোট থেকেই গানের প্রতি ঝোঁক। প্রচুর গান শুনতাম। প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও খোলা গলায় গান করতাম। রাজনৈতিক জীবনে চাপ কমাতে গান করতাম, এখনও করি। তবে ইদানীং ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত রেওয়াজ করা হয় না। স্ত্রীও গান করেন। মূলত ওঁর উদ্যোগে মিউজিক্যাল গ্রুপ ‘সপ্তক’-এর হয়ে গান করি। অনুষ্ঠান থেকে যা লাভ হয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ার, কানে শোনার যন্ত্র, অক্সিজেন সিলিন্ডার, দুঃস্থদের ওষুধ কিনে দেওয়া ইত্যাদি আছে।
আগামী দিনে কী পরিকল্পনা আছে?
উঃ রাজনীতির বাইরে থাকতে পারব না। আগে যা ছিলাম, এখনও তাই আছি, আগামীদিনেও থাকব।
আরও পড়ুন-পুজোয় নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে উন্নয়নে কী আবদার রাখবেন?
উঃ মুখ্যমন্ত্রী কিছু চাইবার আগেই দিয়ে দেন। উনি সব জায়গার খোঁজ রাখেন। আমি চাইবার আগেই উনি প্রয়োজন মনে করলে দিয়ে দেবেন। তার পরেও কিছু প্রয়োজন হলে চলে যাব, তাঁর হাতে-পায়ে ধরে আদায় করে আনব।
জেলার মানুষদের উদ্দেশ্যে কী বার্তা দেবেন?
উঃ জেলার মানুষ তৃণমূল, বিশেষত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ভরসা রেখে ১০০ শতাংশ আসনে আমাদের জয়ী করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ। দলমতনির্বিশেষে সকলের জন্য আমার দরজা খোলা। সবাইকে বলছি, আসুন রাজনীতির রঙ ভুলে সকলে মিলে জেলাকে উন্নয়নের নিরিখে রাজ্যে প্রথম স্থানে নিয়ে যাই। সকলে হাত না বাড়ালে একাজ কারও একা করা সম্ভব নয়।