সকলের প্রবেশাধিকার ছিল না জমিদার বাড়ির পুজোয়

শান্তির প্রতীক পায়রা। জমিদারির শুরু থেকেই তাই পরম যত্নে পায়রা পোষা হত জমিদার বাড়িতে।

Must read

নকিবউদ্দিন গাজি: শান্তির প্রতীক পায়রা। জমিদারির শুরু থেকেই তাই পরম যত্নে পায়রা পোষা হত জমিদার বাড়িতে। পায়রার নিশ্চিন্ত-নিরুপদ্রব বাসভূমি ছিল জমিদার মণ্ডল পরিবারের বিশাল অট্টালিকা। আজও সেই শান্তির প্রতীক পায়রার অবাধ বিচরণ এই জমিদার মণ্ডল বাড়িতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বাদ্দনের মণ্ডল বাড়ির ইতিহাসের আজও সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এই পায়রা। তখন অবিভক্ত বাংলা। ১৮-র দশকে বেশ কিছু জমিদার রাজ্যপাট গড়ে তুলেছিলেন দক্ষিণে।

আরও পড়ুন-কাজ অনেক, সবাইকে নিয়ে ঝাঁপাতে চান উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী

নদীপথেই মূলত চলত তাঁদের বাণিজ্য। আর সেই সময় গোলক চন্দ্র মণ্ডল সাবান, ধান, চালের ব্যবসা করে প্রচুর ভূ-সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। তাঁর জীবদ্দশাতেই গ্রামের মানুষের মঙ্গল কামনায় ১৮৫৭ সালে শুরু হয় দুর্গাপুজো। এই বছর সেই পুজো ১৫৮তম বর্ষে পদার্পণ করল। বাদ্দনের মণ্ডল পরিবারের পুজো আজও রীতিনীতি মেনে চললেও বেশ কিছু নিয়মের রদবদল হয়েছে সময়ের হাত ধরে। তখন এই পুজোর ৫টা দিন দূরদূরান্তের বহু প্রজাই আসতেন এই জমিদার বাড়িতে। তবে সবার প্রবেশের অধিকার ছিল না এই মণ্ডল বাড়িতে। সিংহদুয়ারের সামনে থাকতেন বন্দুকধারী দুই দারোয়ান। বাড়ির মহিলারাও সেই সময় আসতে পারতেন না। বিশাল বড় দুর্গা দালানেই পুজোর পাঁচটা দিন খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে নাচ-গান সমস্ত কিছুরই ব্যবস্থা থাকত।

আরও পড়ুন-সাফ চ্যাম্পিয়ন ভারতের ছোটরা

বস্তা বস্তা চিঁড়েগুড় আসত প্রজাদের খাওয়ানোর জন্য। তবে সময়ের হাত ধরে এখন অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। জমিদার নেই, সেই জমিদারিও এখন আর নেই। কিন্তু এখনও রীতি মেনে চলে আসছে মণ্ডল বাড়ির দুর্গাপুজো। তবে নিয়মকানুনেও এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। আগে মায়ের সামনে বলি হত। কিন্তু সেই প্রথা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়েছে। আগে সন্ধিপুজোর সময় বন্দুকের গর্জন শোনা যেত। কিন্তু সেই প্রথাও এখন বিলুপ্ত। তবে বেশ কিছু নিয়মের পরিবর্তন হলেও রীতি মেনে এখনও চলে আসছে মণ্ডল বাড়ির পুজো। আগে পুজোয় মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও এখন কিন্তু সমস্ত কাজই সামলান বাড়ির মহিলারাই। নিয়ম রয়েছে ষষ্ঠীর দিন মায়ের পূজার সময় যে হোমযজ্ঞের আগুন জ্বালানো হয় তা গিয়ে নেভে সেই দশমীতে। মায়ের বোধন থেকে শুরু করে কলাবউ স্নান, সন্ধিপুজো, নৈবেদ্য তৈরি সমস্ত কিছুই এখন বাড়ির মহিলারাই সামলান।

Latest article