কালীপূজার ঠিক আগের দিন হল ভূত চতুর্দশী। মনে করা হয় এই দিন চারিদিকে প্রচুর ভূত-প্রেত ঘুরে বেড়ায়। হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী বিশ্বাস করা হয় যে ভূত চতুর্দশীর দিনে মৃত পূর্বপুরুষেরা মর্তে আসেন। এছাড়াও পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে দৈত্যরাজ বলি যখন স্বর্গ-মর্ত-পাতাল দখল করে সবার ওপর অত্যাচার করা শুরু করেন তখন বিষ্ণু বামন অবতারে বলির কাছে আসেন। যেসময় বিষ্ণু আসেন সেসময় বলি যজ্ঞ করছিলেন।
আরও পড়ুন-মা কালী অতীত ও ভবিষ্যৎ
বামনকে দেখে তিনি তাঁকে দান নিতে অনুরোধ করেন। তখন বিষ্ণু তাঁর কাছে মাত্র তিন পা জমি চাইলেন। বলি রাজি হলেন। তখন বামন তাঁর দুই পা স্বর্গ ও মর্তে দিলেন। এরপর নাভি থেকে বের হওয়া তাঁর তৃতীয় পাটি তিনি বলির মাথায় দিলেন। বলির ক্ষমতা এতে খর্ব হয়। তবে বিষ্ণু যে বামন অবতারে বলির কাছে এসেছেন এটা জানার পরেও বলি তাঁর কথা ফিরিয়ে নেননি। আর ফলস্বরূপ বিষ্ণু বলিকে প্রতিবছর পৃথিবীতে পুজো পাওয়ার আশীর্বাদ করেন। আর সেই থেকে কালীপুজোর আগের দিন রাতে রাজা বলি পাতাল থেকে পৃথিবীতে আসেন মানুষের পুজো নিতে এবং তাঁর সঙ্গে আসেন বহু ভূতপ্রেত আর অশরীরী আত্মা।
আরও পড়ুন-যত আঙুল তুলবে ততই সংঘবদ্ধ হবে তৃণমূল: চন্দ্রিমা
ভূত-প্রেত নিয়ে আমাদের কৌতূহল চিরকালীন। দৈত্যরাজ বলির সঙ্গে মাত্র একদিন পৃথিবীতে বহু ভূত-প্রেত, আত্মারা এলেও আমাদের কলকাতা তথা ভারতবর্ষের বুকে এমন বহু জায়গা রয়েছে যেখানে অশরীরী আত্মারা বসবাস করে। তাদেরকে অনুভব করেছে বহু মানুষ। ভূতের ভয় পেতে হলে রাতের অন্ধকারে এই জায়গাগুলোতে যাওয়া যেতেই পারে।
আরও পড়ুন-বেসরকারি উপদেষ্টা সংস্থার পিছনে টাকার শ্রাদ্ধ কেন্দ্রের
পুতুল বাড়ি, কলকাতা
উত্তর কলকাতায় আহিরিটোলায় গঙ্গার তীরে অবস্থিত পুতুল বাড়ির ইতিহাস অতি ভয়ানক। এই বাড়িটি অভিশপ্ত বাড়ি বলে খ্যাত। আর এই বাড়িতে নাকি সন্ধে হলেই ভূতের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। ১৮০০ সালের প্রথম দিকে বা তারও আগে এই বাড়িতে তৈরি হয়েছিল। এই বাড়িটির দোতলা এবং ছাদ জুড়ে রয়েছে বিচিত্র সব পুতুলের মূর্তি। জনশ্রুতি অনুযায়ী, একসময় বাবুদের আসর বসত এই পুতুল বাড়ির দোতলায়। মনোরঞ্জন করার জন্য এখানে বাইজিদের নিয়ে আসা হত। তাদের নাচ-গানে মেতে উঠত এই বাড়িটি। শোনা যায় সেই সময় এই বাড়িতে তথাকথিত বাবুদের লালসার শিকার হয়েছেন অসংখ্য মহিলা। আর সন্ধে হলেই এই বাড়িতে আজও তাদের হাসি-চিৎকার আর নূপুরের ঝংকার শোনা যায়। ২০১৩ সালে দ্য টেলিগ্রাফে একটি ভূতুড়ে বাড়ির তালিকা প্রকাশ হয়েছিল। সেই তালিকায় নাম ছিল এই পুতুল বাড়ির।
আরও পড়ুন-দু’মাসের মধ্যেই নিয়োগ মামলার তদন্ত শেষ করতে হবে : সুপ্রিম কোর্ট
রাইটার্স বিল্ডিং, কলকাতা
রাইটার্স বিল্ডিং স্থাপিত হয়েছিল ১৭৮০ সালে। এই বিল্ডিংটি প্রায় ১৭০ বছর ধরে ব্রিটিশ প্রশাসনের কেন্দ্রস্থল ছিল। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সদর দফতর হিসাবেও এই রাইটার্স বিল্ডিং খ্যাত। সরকারি অফিস থাকলেও এই রাইটার্স বিল্ডিং সন্ধে হলেই প্রায় ফাঁকা হয়ে যেত। এই রাইটার্স বিল্ডিংয়ের কিছু কিছু ব্লক দিনের বেলাতেও এড়িয়ে চলেন অনেকে। এই বিল্ডিংয়ের কিছু ঘর বহু বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে, সেখানে কেউ ঢোকার সাহস দেখায় না। শোনা যায় অত্যাচারী ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল সিম্পসনের বিদেহী আত্মা নাকি আজও ঘুরে বেড়ায় রাইটার্স বিল্ডিংয়ের আনাচে-কানাচে। ১৯৩০ সালে বিনয় বাদল দীনেশ এই তিনজন বিপ্লবীর হাতে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে মৃত্যু হয় অত্যাচারী কর্নেল সিম্পসনের। আর তারপর থেকেই তাঁর আত্মা এখানে ঘুরে বেড়ায় কারণ তিনি নাকি রাইটার্স বিল্ডিংয়ের মায়া কাটাতে পারেননি। এই রাইটার্স বিল্ডিংয়ে যেসব কর্মচারী কাজ করতেন তাঁরা সবাই সন্ধের পর পায়ের আওয়াজ থেকে শুরু করে চিৎকার কিংবা গা ছমছম করা অট্টহাসি শুনতে পেতেন।
আরও পড়ুন-জনমত নিতে চান সাকেত
রামোজি ফিল্ম সিটি, হায়দরাবাদ
নিজামের যুদ্ধক্ষেত্রের ধ্বংসাবশেষের ওপর তৈরি হওয়া রামোজি ফিল্ম সিটি ঘিরে রয়েছে অনেক ভৌতিক কার্যকলাপ। এর মধ্যে সবথেকে বেশি ভূতুড়ে কার্যকলাপের কথা শোনা যায় এই ফিল্ম সিটিতে অবস্থিত সিতারা হোটেলটি ঘিরে। এই হোটেলটির ঘর, বারান্দা, লিভিং রুম– সব জায়গা জুড়েই নাকি ছড়িয়ে আছে অশরীরীদের আনাগোনা। সেই অশরীরীরা নাকি তাদের অস্তিত্বের জানান দেয় সবাইকে। এই হোটেলের আলো নাকি নিজের থেকেই বন্ধ হয়ে যায় আবার নিজে থেকেই জ্বলে ওঠে। হঠাৎ করে লাইট পড়ে ভেঙে যায়, গভীর রাতে হোটেলের দরজায় অনেকে টোকা মারার শব্দেও শুনতে পেয়েছেন। এছাড়াও অনেকেই নাকি রহস্যময় কিছু ছায়া দেখতে পান। এছাড়াও ফিল্ম সিটি ঘিরে রয়েছে বহু ভৌতিক কর্মকাণ্ড। এই জায়গাটি ছিল মহাবীর নিজামের যুদ্ধক্ষেত্র। এই জায়গাটিতে অনেকবারই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল। আর সেই যুদ্ধে বহু সৈনিক মৃত্যুবরণ করেছিল। মনে করা হয় এইখানে সেই সব সৈনিকদের অতৃপ্ত আত্মারাই ঘোরাফেরা করে। আর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অশরীরীদের উপদ্রব বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুন-নজরদারি চালাতে নয়া ফন্দি কেন্দ্রের
হোটেল ব্রিজরাজ ভবন, রাজস্থান
রাজস্থানের চম্বল নদীর তীরে অবস্থিত ব্রিজরাজ ভবন প্যালেসটি অষ্টাদশ শতকে নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে স্বাধীনতার পর এই প্যালেসটিকে হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়। এই প্যালেসটির বিলাসবহুল ঘর, অন্দরসজ্জা এতটাই সুন্দর যে এটি সবাইকে আকর্ষণ করে। এই হোটেলটি ঘিরেই আছে একটি ভৌতিক জনশ্রুতি। বলা হয়ে থাকে যে এই হোটেলটিতে মেজর বার্টনের অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায়। ১৮৩০ সালে এই প্যালেসটি গড়ে তোলা হয়েছিল ব্রিটিশ আধিকারিকদের বাসভবন হিসাবে। পরে ব্রিটিশ মেজর চার্লস বার্টন এই ব্রিজরাজ ভবন প্যালেসটিকে নিজের বাসভবন হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। সিপাহি বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহী সেনারা বার্টনের বাসভবনটি আক্রমণ করেছিলেন। বাসভবনে বসবাসকারী অন্যরা পালিয়ে গেলেও বার্টন এবং তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিদ্রোহীদের হাতে খুন হয়েছিলেন। এরপরে বার্টন ও তাঁর পরিবারের সবার দেহ উদ্ধার করে প্যালেসের সেন্ট্রাল হলে সমাধিস্থ করা হয়। বার্টনের মৃত্যুর পর এই প্যালেসটি কোটার তৎকালীন রাজার দখলে চলে আসে। এবং পরবর্তীতে রাজস্থান সরকার এই প্যালেসটিকে হোটেল হিসেবে গড়ে তোলে। অনেকেই দাবি করেছেন এই প্যালেসটিতে আজও বার্টনের অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা এই প্যালেস থেকে নাকি মাঝেমধ্যেই অদ্ভুত সব ভূতুড়ে আওয়াজ শুনতে পান। ১৯৮০ সালে কোটার মহারানি নাকি বার্টনের অশরীরী আত্মাকে দেখেছিলেন। তিনি নাকি পড়ার ঘরে বসে বই পড়ছিলেন, হঠাৎ করে মুখ তুলেই দেখেন যে কিছুটা দূরে বার্টন লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর মাথায় পাকা চুল। ওখানকার নিরাপত্তারক্ষীরাও নাকি বার্টনের আত্মাকে বহুবার দেখেছেন। তাঁরা বলেছেন যদি তাঁরা পাহারা দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে বার্টনের আত্মা তাঁদের চড় মেরে জাগিয়ে দেন। শুধু চড় নয়, তিনি নাকি আবার ধমকও দেন। হোটেলের সেন্ট্রাল হলে অনেকেরই অনেক অদ্ভুত অনুভব অনুভূত হয়েছে। যাঁরা এই হোটেলে রাত কাটাতে আসেন তাঁদের রাত্রিবেলা ঘরে থাকতেই পরামর্শ দেন হোটেল কর্তৃপক্ষ, এমনকী হোটেলের বাগানে হাঁটতেও নিষেধ করা হয় তাঁদের।
আরও পড়ুন-ডায়মন্ড হারবার মডেল, ৭০ হাজার মহিলাকে বার্ধক্যভাতা, ঘোষণা অভিষেকের
ন্যাশনাল লাইব্রেরি, কলকাতা
কলকাতার আলিপুরে ১৮৩৬ সালে এই ন্যাশনাল লাইব্রেরি স্থাপিত হয়েছিল। আর এই ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে নাকি সন্ধ্যা নামার পর থেকেই ঘুরে বেড়ায় অশরীরী আত্মারা। আজ যেটা ন্যাশনাল লাইব্রেরি আগে সেখানে ছিল সেটা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বাস। রাত যখন গভীর হয় তখন নাকি হেস্টিংসের আত্মার আগমন ঘটে এই ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে। অনেকেই নাকি তাঁকে ন্যাশনাল লাইব্রেরির আশপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন। এছাড়াও দিনের বেলায় এখানে যাঁরা পড়াশোনা করতে আসেন তাঁদের অনেকেই বলেছেন মুখ বুজে মাথা নিচু করে পড়ার সময় আচমকাই নাকি ঘাড়ে অদৃশ্য কারও নিঃশ্বাস অনুভব করে তাঁরা। অনেকেই মনে করেন এটি লেডি মেটকাফের আত্মা। লেডি মেটকাফ ছিলেন পরবর্তী গভর্নর জেনারেল চার্লস মেটকাফের স্ত্রী, যিনি এখানেই আত্মহত্যা করেছিলেন। লাইব্রেরিতে যেসব কর্মচারীরা কাজ করেন তাঁদের অনেকেই দাবি করেছেন যে একটি কালো ছায়া ঘরের মধ্যে ঘুরতে দেখেছেন তাঁরা। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ করেই সেই ছায়াটা দেওয়ালের মধ্যে মিলিয়ে যায়। আবার কখনও কখনও লাইব্রেরির সিঁড়িতেও শোনা যায় পায়ের আওয়াজ। ২০১০ সালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া লাইব্রেরি ভবনের একদম নিচে একটি পরিত্যক্ত ঘরের সন্ধান পায়। অনেকেই মনে করেন এটা ব্রিটিশ আমলের কোনও গোপন কুঠুরি। ২০১২ সালে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সময় রহস্যজনক ভাবে ১২জন শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন এইখানেই। আর তারপর থেকেই নাকি অশরীরীর উপদ্রব আরও বেড়েছে এই ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে।
আরও পড়ুন-মুম্বইয়ের টোল প্লাজায় একের পর এক গাড়িতে ধাক্কা, মৃত একাধিক
রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো, কলকাতা
শোনা যায় কলকাতার বুকের এই মেট্রো স্টেশনটিতে রাত বাড়লেই অশরীরীদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। বহু আত্মহত্যার সাক্ষী এই মেট্রো স্টেশন। মনে করা হয় যাঁরা এই মেট্রো স্টেশনে আত্মহত্যা করেছিলেন তাঁদের আত্মাই রাত বাড়লে ঘোরাফেরা শুরু করে এই স্টেশনের মধ্যে। শেষ ট্রেনের বহু যাত্রী এই মেট্রো স্টেশনে অশরীরীর উপস্থিতি টের পেয়েছেন। তাঁরা বহু ছায়ামূর্তি দেখেছেন যেগুলো হঠাৎ করে আসে আবার হঠাৎ করেই মিলিয়ে যায়। এছাড়া ট্রেন লাইনের মধ্যেও বহু ছায়ামূর্তি মাঝে মাঝেই দেখা যায়।
টানেল নম্বর ৩৩, হিমাচল প্রদেশ
টানেল নম্বর ৩৩ বারোগ টানেল নামে পরিচিত। এই টানেলটি যখন তৈরি হচ্ছিল সেই সময় একজন ব্রিটিশ শ্রমিকের অকাল মৃত্যু ঘটেছিল এখানে। আর তারপর থেকেই নাকি এই জায়গাটি ভূতুড়ে তকমা পেয়েছে। ১৯০৩ সালে কর্নেল বারোগকে এই টানেলটি তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। সেই সময় এই জায়গাটি ছিল জনবসতিহীন। কর্নেল বারোগ কঠোর পরিশ্রমী এবং পেশাদার ছিলেন। কিন্তু তিনি এই টানেলটি করতে গিয়ে একটু ত্রুটি করে ফেলেছিলেন। আর তাঁর জন্য তাঁকে জনসমক্ষে অপমানিত হতে হয়েছিল। কর্নেল বারোগ এতটাই অপমানিত হয়েছিলেন যে তিনি তখন অসম্পূর্ণ সুড়ঙ্গটির মধ্যে নিজের উপরে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। পরবর্তীকালে সুড়ঙ্গটি শেষ করা হয়েছিল এবং সেই সুড়ঙ্গর চারপাশে গড়ে উঠেছিল ছোট একটি শহর। কিন্তু স্থানীয়দের মতে, আজও নাকি সেই সুড়ঙ্গপথে কর্নেল বারোগের অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায়। আর এই অশরীরীর উপলব্ধি অনেকেই অনুভব করেছেন।