‘যে তারাপদ পদ্য লেখে, সে তারাপদ অন্য। এ তারাপদ গদ্য লেখে, মদ্য খাবার জন্য।’
আজ দুই তারাপদর কথকতাই শোনাব। অবশ্য তারাপদ রায় নিজেই দু’জনের কথা বলেছেন। পদ্যময় জীবন শুরু করে উপসংহারে গদ্যময় রূপকথা হয়ে উঠেছেন তারাপদ। লিখতে লিখতে হেসে উঠেছেন, হাসিয়েছেন পাঠককেও। স্কুলজীবন শেষ করে তারাপদর পদ্য কৈশোরের সফলতাকে উসকে দিয়েছিল— ‘সাহসিনী/ চায়ে বড় দিয়েছিলে চিনি/ দুধ কম, /তবু ভাল, এই প্রথম/ তোমার হাতের তৈরি উষ্ণ পানীয়ের/যতটুকু তাপ মেলে তারই স্বাদ ঢের।’ এইসব পদ্য কবিতা লেখার সাহস জুগিয়েছিল।
আরও পড়ুন-শারদ-সাহিত্যে ঐতিহ্য এবং আধুনিকতা
ছিলাম ভালোবাসার নীল পতাকাতলে স্বাধীন
তারাপদ রায়ের প্রথম বই ‘তোমার প্রতিমা’ বেরিয়েছিল ১৯৬০ সালে। কিন্তু সাহসিনী— যেই পদ্যের কথা বললাম তাও প্রকাশ পেয়েছিল ওই সময়েই। কাব্যগ্রন্থের নাম ছিল— ‘ছিলাম ভালোবাসার নীল পতাকাতলে স্বাধীন’। এই রকম আশ্চর্য বই সেইসময় দেখা যেত না। বোর্ড বাইন্ডিং, ৮০ পাতার বইয়ে ছিল অজস্র কবিতা। মজার কথা কবিতা শুরু হয়েছিল প্রচ্ছদ থেকেই— ‘ছিলাম ভালোবাসার নীল পতাকাতলে স্বাধীন, কয়েকদিন মাত্র তবু এখনো সেই স্বাধীনতার স্বাদ এখনো ভোলা গেলো না/ সেই যে ফাঁকা আকাশ ধু ধু ময়দানে নীল পতাকা, জীবন যাপন ভালোবাসার দাবি, অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অগ্নিযুগে দামাল টেলিগ্রাফের লাইন কেটে, ট্রেজারী লুট থানা চড়াও বর্গ কয় মাইল জুড়ে অসম্ভব স্বরাজ ঘোষণায়, তোমার নীল পতাকাতলে কয়েকদিন মাত্র।’ তবু তারাপদ ওই বয়সে সেই স্বাধীনতার স্বাদ, সেই ভালবাসার স্বাদ ভুলতে পারেনি। আর সূচিপত্র ছিল পিছনের প্রচ্ছদে। অধিকাংশই ছিল ছোট ছোট কবিতা। দু-তিনবার পড়লেই হৃদয়ে গেঁথে যায়। পদ্যের তারাপদ অনায়াসে লেখেন— ‘কাঁসার গেলাসে লিখে রেখেছিলে নাম/ পুরানো ধাতুর দাম/ সে গেলাস কবে একেবারে বিক্রি হয়ে গিয়েছে বাজারে।/ আজকাল কারা পান করে,/ তোমার নামের জল আজ কার ঘরে?’ (কাঁসার গেলাস)।
আরও পড়ুন-১২ বছর পর বিশ্বজয়ের মুখে রোহিতরা, আজ বিশ্বকাপ ফাইনাল, তিনের বদলা তেইশে?
মনে আছে কলকাতা
‘কয়েকজন’ নামে একটি আশ্চর্য পত্রিকা প্রকাশ করতেন তারাপদ রায়। সময়টা ছিল ১৯৬৮ সাল। সম্পাদিকা মিনতি রায়। পত্রিকার লেখালিখি শুরু হত প্রচ্ছদ থেকেই। পিছনের প্রচ্ছদে লেখা থাকত ‘সম্পাদিকা সহ পুরো পত্রিকার দেখভাল করে তারাপদ রায়’। তখন দেশ পত্রিকায় মাঝে মাঝে কোনও বিশিষ্ট কবির কবিতা ছাপা হত এবং সেটা ছিল সম্মানের। সেবারে দেশ পত্রিকায় প্রথম এক পাতা জুড়ে তারাপদ রায়ের ‘মনে আছে কলকাতা’ লেখাটি বেরিয়েছিল। অসামান্য কবিতা। সেদিন দফতরে ঢুকেই তিনি সকলকে একগাল হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা করলেন। একটু চাপা গলায় আস্তে আস্তে বললেন ‘দেখেছ!’ সবাই জোরে বলে উঠল, ‘তারাপদদা দারুণ কবিতা!’ তারাপদদা আবেগ-মাখা গলায় বললেন ‘বলছ’! তারপরে সকলকে ব্রিস্টল সিগারেট খাওয়ালেন। ওই কবিতায় তারাপদদা লিখেছিলেন— ‘‘মধ্যে মধ্যে মনে হয় আমি আর তোমার সীমানার মধ্যে নেই/ আজ কোথাও নেই আমার সেই শহর/ যেখানে দুই ল্যাম্প-পোস্টের মধ্য দিয়ে লম্বা পেনাল্টি কিকে/ কে যে শূন্যে পাঠিয়ে দেয় চাঁদের ফুটবল/ গ্যালারিতে অস্পষ্ট ছায়াছন্ন মানুষেরা চেঁচিয়ে ওঠে, ‘গোল, গোল’/ এই কুড়ি বছরেও তোমার সঙ্গে আমার কিছুই মিললো না/ আমার ছেঁড়া স্বপ্ন, আমার শতছিন্ন কবিতার টুকরো/ ময়লা কাগজের ঝোলায় ভবঘুরেরা কুড়ি বছর ধরে প্রতিদিন কুড়িয়ে নিয়েছে/ নিক্তিতে ওজন করে বিক্রি হয়ে গেছে আমার স্বপ্নের শব্দগুলি।”
আরও পড়ুন-রেলে নাভিশ্বাস দেশবাসীর, বিমান ভাড়াকেও হার মানাচ্ছে টিকিটের দাম
আনন্দ ছিল তাঁর প্রতিদিনের সঙ্গী
কলকাতা শহরের সঙ্গে তারাপদ রায়ের পরিচয় ১৯৫৯ সালে। ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে টাঙ্গাইল থেকে কলকাতায় আসেন তারাপদ রায়। ওঠেন ডেকার্স লেনে ছোটমাসির বাড়ি। দেবী রায় ছিলেন ছোট মেসোমশাই— নামকরা পুলিশ অফিসার। ওই বাড়ি থেকেই প্রথম কাগজ বের করেন ‘আপনজন’ নামে। পরের কাগজ ‘পূর্ব মেঘ’ এবং শেষ কাগজ ‘কয়েকজন’। সরকারি চাকুরে তারাপদ সামলেছেন বিভিন্ন সরকারি দফতর দক্ষতার সঙ্গে। বিভিন্ন সরকারি আবাসনের ফ্ল্যাটকে নিজের ঘর করে তুলেছিলেন। শেষে অবশ্য সল্টলেকে নিজের বাড়ি বানিয়েছেন। আনন্দ ছিল তাঁর প্রতিদিনের সঙ্গী। প্রতিবেশীদের নিয়ে আনন্দে থাকতেন। জানতেন প্রতিদিনের জীবন থেকে আনন্দ কীভাবে নিংড়ে বের করে আনতে হয়। নিজে খেতে যেমন ভালবাসতেন, খাওয়াতে ভালবাসতেন আরও বেশি। খাওয়াদাওয়া নিয়ে তাঁর এক্সপেরিমেন্টও ছিল অনেক।
আরও পড়ুন-আজ ছটপুজোয় ঘাটে মুখ্যমন্ত্রী
নোটিশ : অবসর গ্রহণ নিয়ে কোনো কথা নয়
লোকজনকে অবাক করে দিতে তাঁর তুলনা ছিল না। নানারকম নোটিশ টাঙাতেন নিজের বাড়িতে। সল্টলেকের বাড়িতে তাঁর বসার জায়গার পিছনে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ‘অবসর গ্রহণ নিয়ে কোনো কথা নয়’ এই নোটিশ দেখে সবাই যখন বিস্ময় প্রকাশ করছেন তারাপদ রায় তখন বললেন, ‘আমার অবসর গ্রহণ নিয়ে লোকে যে এতটা চিন্তিত, তাদের যে এত বক্তব্য— তা দেখে ও শুনে আমি ক্লান্ত। সেদিন এক ভদ্রলোক এসে যাতে আমার মনখারাপ না হয়, সে ব্যাপারে অনেক জ্ঞানগর্ভ কথা বলেছিলেন। আমি মাঝে মাঝে আমার নিজস্ব স্টাইলে (একচোখ কুঁচকে) তাঁর দিকে কয়েকবার তাকালাম। অভিধানের পাতা উল্টে উল্টে বিরক্তির সমার্থবোধক শব্দ কী কী, খুঁজতে লাগলাম। তিনি অত্যন্ত ব্যথিত চিত্তে আনমনা হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। মানুষকে কষ্ট পাওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ওই’।
আরও পড়ুন-ছটের নিরাপত্তায় শহরে আরও ৪০০০ পুলিশ
তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি ছিল শেখার মতো। পড়াশুনোর পরিধিও ছিল বেশ লম্বা। আর তাঁর গদ্য লেখার ভাষা ছিল হিংসা করার মতো। নিজে টাঙ্গাইল ছেড়ে চলে এলেও টাঙ্গাইল তাঁকে কোনওদিনই ছাড়তে পারেনি। তাই কবিতা, গল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা— সবগুলিতেই থাকত টাঙ্গাইলের ছায়া।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘টর্পেডো’— তারাপদ রায়
৫০-৬০-এর দশকে দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট মন্দিরের কাছে মহিম হালদার স্ট্রিটে আড্ডা মারতে আসতেন বাংলার স্বপ্ন দেখা একদল তরুণ। সবার চোখে বাংলা ভাষার সমুদ্রের তরী ভেসে আছে তাদের ভরসা ছিল কলম। কবিতা, গল্প, আড্ডা, হুল্লোড় ধুলোর মতো আঁকড়ে থাকত সেই রাস্তায়। সেখানেই ছিল তরুণ তারাপদর বাড়ি। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কাছে তারাপদ মানেই টর্পেডো। তারাপদ রায় মানে শুধু কবিতা বা রম্যরচনা নয় সঙ্গে তৈরি হয় অসংখ্য গল্প। তারাপদর যেমন ছিল গলার স্বর, তেমন ছিল গল্পের ভাঁড়ার। একটা সময় তারাপদ রায়ের বাড়িতেও বসত আড্ডার আসর। তাঁদের দৌরাত্ম্যে থাকা দায় হত পাড়ার অন্যদের। নিজের মধ্যে একটা আলাদা জীবনের বৃত্ত তৈরি করেছিলেন তারাপদ রায়। সহজ সাবলীল ভাষা তার মধ্যে নিজস্ব দর্শন। আড্ডার ছলেই যখন প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘তোমার প্রতিমা’ প্রকাশ করলেন তখনও মহিম হালদার স্ট্রিটেই থাকতেন তারাপদ। এই প্রথম কাব্যগ্রন্থের মধ্যেই থেকে যায় অনেক ভুল যা নিয়ে বন্ধুরা ঠাট্টা করতেন। মহিম হালদার স্ট্রিটের মহিম বদলে যায় মহিষে।
আরও পড়ুন-বিদেশ সফরে মলদোভার পোষ্য কুকুরের কামড় খেলেন অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট!
অষ্টাদশ অশ্বারোহী তারাপদ নিজেই
কবিতা লিখতে লিখতেই তিনি চলে আসেন কৃত্তিবাসে যেখানে স্বপ্ন এবং কবিতা এক হয়ে ওঠে। অনেকের মতো তারাপদ রায়ও বিশ্বাস করতেন ‘কৃত্তিবাস শুধু কবিতার কাগজ নয়, একদম উদ্দেশ্যহীন যুবক সাহিত্যিকের বেপরোয়া জীবন নয়, তার থেকে আরও অনেকটা বেশি, বেঁচে থাকা কিংবা নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো অনিবার্য হয়ে উঠেছিল আমাদের কাছে।’ একবার কৃত্তিবাসের এক সংখ্যায় তিনি ১৮টি কবিতা লিখেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘অষ্টাদশ অশ্বারোহী’ কিন্তু ছাপানোর সময় দেখা গেল ১৭টি কবিতা রয়েছে। শেষে ১৮ নম্বর কবিতার ফাঁকা জায়গায় একটি ঘোড়ার ব্লক দিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয় অশ্বারোহী হিসেবে তারাপদই তো রয়েছেন।
আরও পড়ুন-ভারতীয় তরুণীর প্রাণভিক্ষার আর্জি, খারিজ ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্টে
একটু আধটু জ্যোৎস্না ঢোকে
অত্যন্ত মজার মানুষ ছিলেন তারাপদ। তা না-হলে দুর্দান্ত রম্যরচনা লিখতে পারতেন না। বন্ধুদের লেখা চিঠির ভেতরেও থাকত মজার কথা। ১৯৬৫ সালে টাঙ্গাইল থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে লিখলেন নিজের অসুস্থতার কথা— ‘এখন দু-একটা নীরস সংবাদ দিতে পারি। মধ্যে চৌদ্দদিন যাকে বলে মনে হচ্ছিল সারা শরীরে যেন পঁচিশটা মৌমাছির চাক বসেছে। বর্তমানে ভালো হয়ে গেছি তবে একেবারে চিতাবাঘের মতো, পাকা কাঁঠালের মতো চিত্রবিচিত্র হয়ে গেছি। ইচ্ছে হলে নিজেকে এখন সচিত্র তারাপদ রায় বলে বিজ্ঞাপিত করতে পারি।’ কৃত্তিবাসের পর ‘কয়েকজন’ প্রকাশ করেছিলেন তারাপদ নিজেই। নিজের ছেলের নাম রেখেছিলেন কৃত্তিবাস। রম্যরচনার পাশাপাশি নির্জন পাহাড়ি নদীর মতো বয়ে যেত তাঁর কবিতা। জীবন দিয়ে যা দেখতেন যা বুঝতেন তাই লিখতেন পদ্যে। কবিতার হাত ধরেই নিজেকে খুঁজতেন। স্ত্রীর কথা এনেছেন বারবার কবিতায়। ভালবাসার কবিতাও উৎসর্গ করেছিলেন স্ত্রী মিনতি রায়কে। তাই তো তাঁর কলম পরমহংসতে লিখতে পেরেছিল— ‘মাথার কাছে সমস্ত রাত/ জানলা দিয়ে বাতাস আসে/ বৃষ্টি এলে ঝাপটা আসে/ ভাগ্য যেদিন সুপ্রসন্ন/ একটু আধটু জ্যোৎস্না ঢোকে/ জ্যোৎস্না আমার, বৃষ্টি আমার/ বাতাস আমার পরমহংস/ মিনতি রায়ের মাথার কাছে/ সমস্ত রাত জেগে থাকেন।’
আরও পড়ুন-সম্ভাবনা নেই, জানাল কেন্দ্র
বিচ্ছিরি— এ পদ্য আমার নয়
মাঝে মাঝে মনে হয় নিজের লেখা নিয়ে তারাপদ রায় সন্দিহান ছিলেন। তাই একদিন ‘আমি লিখিনি’ বলে লিখে ফেললেন মনের কথা— ‘কোথাও ছাপার ভুল হয়ে গেছে ভীষণ, বিচ্ছিরি/ এ পদ্য আমার নয় এই আলপনা, এই পিঁড়ি;/এই ছবি আমি তো আঁকিনি/ এই পদ্য আমি তো লিখিনি।… আমার পুরোনো খাতা, উড়ছে হাওয়ায়/ ছেঁড়া মলাটের নিচে পোকা কাটা মলিন পাতায়/ আমের বোলের গন্ধ, ঝরে আছে অমোঘ পলাশ/ কবেকার সে পলাশ, ধলেশ্বরী নদীটিরে ঘাটে/ একা একা ঝরে পড়ে সে কি সেই উনিশশো পঞ্চাশ/মদন জাগলার মাঠে
আজও এক বিষণ্ণ শিমুল/গাছ ভরা, পাতা ভরা ভুল/
স্মৃতি নিয়ে এই ছিনিমিনি/কোথাও ভীষণ ভুল হয়ে গেছে/ ঐ ছবি আমার নয়/ এই পদ্য আমি তো লিখিনি।’
আরও পড়ুন-হাসপাতালে ভর্তি গায়ক বিশাল দাদলানি
এখন দেখছি গল্পটা ফুটে আছে, সিঁড়ির নিচেই কাগজ ফুলের গাছে
তারাপদ রায়ের অসম্ভব এক লেখার শৈলী ছিল। গল্পের মধ্যে ছোট ছোট কবিতা লিখতেন। একবার সন্দেশ পত্রিকায় একটি গল্প লিখলেন ‘কাগজ ফুলের গাছে’ সেখানে একটা ছড়া ছিল— ‘আমার একটা মজার গল্প আছে/মজাটা এই যে গল্পটা নেই কাছে/ জামার পকেটে গল্পটা ছিল গোঁজা/ একদিন গেল ধোপার বাড়িতে সোজা/ এখন দেখছি গল্পটা ফুটে আছে/ সিঁড়ির নিচেই কাগজ ফুলের গাছে।’ ওই গল্পতেই আবার লিখলেন— ‘পুষি যখন অল্পে খুশি/ পুষিবেড়াল পেলেই পুষি/ পুষিবেড়াল খুশি বেড়াল/ তুমিও পোষো, আমিও পুষি।’ আবার কবিতায় গল্পে তিনি ভূতকে নিয়ে এসেছেন। দুটো ভূত গল্প পড়ছে। তাদের একজন মানুষকে ভয় পায় জেনে অন্য জন বলল ‘মানুষ দেখেছো কখনো?’ অন্য জন তখন স্বীকার করল যে, সে কখনও মানুষ দেখেনি। রামের কীর্তি লিখে নিজেই সোচ্চার হলেন— আজকাল সবাই হয় রামের বিপক্ষে না হয় রামের পক্ষে। এই কবিতাটি লিখে আমি এতদ্বারা ঘোষণা করছি যে আমি অদ্য হইতে রামের বিপক্ষে যোগ দিলাম— ‘নাই পুষ্টাফিস, নাই টেলিফুন/ নাই রে টেলিগ্রাম/ এ আমার চেষ্টায়, তুমি/ ছাইড়্যা গেলা রাম!!/ নাই ইস্টিমার, রেইলের গাড়ি/ নাইলে টেক্সি, ট্রাম/ এ আমারে কোথায়, তুমি/ ছাইড়্যা গেলা রাম।’
আরও পড়ুন-মিধিলির ল্যান্ডফল বাংলাদেশে, সামান্য বৃষ্টি বিভিন্ন জেলায়
নীল দিগন্তে এখনও ম্যাজিক
রম্যরচনায় মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন তারাপদ রায় সুনামও পেয়েছেন। লিখেছেন গল্প ও ছোট উপন্যাস ও শিশু সাহিত্য। তাঁর ‘ডোডো তাতাই’ বাঙালির ঘরে ঘরে বিচরণ করেছে অনায়াসে। ‘নক্ষত্র রায়’ এবং ‘গ্রন্থ কীট’ ছদ্মনামে লিখেছেন বহু লেখা। কাণ্ডজ্ঞান, বুদ্ধিশুদ্ধি, জ্ঞানগম্যি তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে বাঙালির কাছে। ‘টমটম পুরের’ গল্প আর ‘দুই মাতালের গল্প’ ছোটরা গোগ্রাসে গিলে নেয়। তাঁর লেখায় নীল দিগন্তে এখনও ম্যাজিক রয়েছে। রয়েছে পাতা ও পাখিদের আলোচনা। অনুভূতি নিয়ে লিখেছেন ‘ভালো আছো গরীব মানুষ’। নিজেই লিখেছিলেন ‘কোথায় যাচ্ছেন তারাপদ বাবু?’
আরও পড়ুন-ছাত্রজীবনে বিজেপির ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের কুকীর্তি প্রকাশ্যে, নিন্দায় সরব তৃণমূল কংগ্রেস
শুধু শব্দ ভালবাসতেন না, গল্প ভালবাসতেন, নিজেকেও ভালবাসতেন। তাই নিজেকে করে তুলেছিলেন গল্পের চরিত্র। নিজের জীবনকে শুধু অনুভব করতেন না নিজের জীবনের শেষ দৌড় আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন মনে হয়। ২০০০ সালে ‘পরবাস’ পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন আমি হয়তো ৭২ বছর পর্যন্ত বাঁচব। চলে যাওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৭২। তার আগেই লিখে গেলেন ‘এক জন্ম’—
অনেকদিন দেখা হবে না, তারপর একদিন দেখা হবে। দুজনেই দুজনকে বলবো, ‘অনেকদিন দেখা হয় নি’।
এইভাবে যাবে দিনের পর দিন, বৎসরের পর বৎসর।
তারপর একদিন হয়ত জানা যাবে
বা হয়ত জানা যাবে না, যে তোমার সঙ্গে আমার অথবা
আমার সঙ্গে তোমার আর দেখা হবে না।