শারদ-সাহিত্যে ঐতিহ্য এবং আধুনিকতা

উৎসবের মরশুমে প্রকাশিত হয়েছে ‘মাসিক বসুমতী’ এবং ‘কালি কলম মনন’ পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যা। মেলবন্ধন ঘটেছে ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার। অনবদ্য দুটি সংখ্যার উপর আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা ‘মাসিক বসুমতী’। প্রকাশিত হয়েছে শারদীয় ১৪৩০ সংখ্যা। দেবাশীষ বিশ্বাসের সম্পাদনায়। স্থান পেয়েছে নানা বিষয়ের লেখা।
শুরুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতায় মাতৃ-বন্দনা। শিরোনাম ‘স্বর্গাদপি গরীয়সী তুমি মা’। নানারূপে কল্পনা করা হয়েছে মা-কে। যেমন জগৎজননী, ভুবনমোহিনী, জীবনদায়িনী। একটি অংশে তিনি লিখেছেন, ‘তুমি তো বীরাঙ্গনা/ শান্তি স্বস্তির চাঁদমামা তুমি/ ধরণী মা অনন্যা/ জয় মা জয় মা/ স্বর্গাদপি গরীয়সী তুমি মা।’ কবিতাটি মর্মস্পর্শী।

আরও পড়ুন-সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব

শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার শিরোনাম ‘অন্নদাতা’। কয়েকটি পঙ্‌ক্তিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কৃষকদের জীবন-কথা। ইন্দ্রনীল সেনের ‘নীল সীমানায়’ কবিতায় ধরা পড়েছে ফিরে পেতে চাওয়ার আকুতি। কবিতা জুড়ে লেগে রয়েছে মায়া, মনকেমন। এ ছাড়াও আছে জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, পঙ্কজ সাহা, অভীক মজুমদার, পাপিয়া ঘোষাল, সুস্মেলী দত্ত, রুদ্রাণী রাই প্রমুখের কবিতা।

আরও পড়ুন-সৌদিতে কাজে গিয়ে রহস্য-নিখোঁজ নবগ্রামের যুবক, পরিবারের পাশে তৃণমূল

অনবদ্য উপন্যাস উপহার দিয়েছেন সন্মাত্রানন্দ। শিরোনাম ‘অনন্ত বাউটি’। সাধু ভাষায় লেখা। ঝরঝরে। এগিয়েছে নদীর গতিতে। লেখা জুড়ে ফুটে উঠেছে বিচিত্র মানুষের জীবনচিত্র। সত্য ঘটনা অবলম্বনে উপন্যাস লিখেছেন আবুল বাশার। শিরোনাম ‘বারুইপুর লোকাল’। বুনে দিয়েছেন কাল্পনিক চরিত্র। লেখার মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত চলন। চমৎকার বর্ণনা, গভীর সংলাপ। ফুটে ওঠে সময়ের ছবি। সুদীপ ঘোষের ‘কৃষ্ণপক্ষ’, দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের ‘কৃষ্ণসিন্ধুকী’, পাপিয়া ভট্টাচার্যর ‘আহ্নিক গতি’ উপন্যাসগুলিও উৎকৃষ্ট মানের।

আরও পড়ুন-ছটের নিরাপত্তায় শহরে আরও ৪০০০ পুলিশ

আছে কয়েকটি নিবন্ধ। আটশো বছর আগে লেখা একটি মহাকাব্য। ইংরেজি অনুবাদে পোশাকি নাম ‘সিক্রেট হিস্টরি অব দি মঙ্গোলস’। অনালোকিত এবং অনালোচিত মহাকাব্যের খোঁজ দিয়েছেন নির্বেদ রায়, ‘এক অজানা মহাকাব্যের খোঁজে’ রচনায়। সমুদ্র বসু লিখেছেন ‘অভয়া দুর্গার খোঁজে’। কলকাতা এবং জেলার কয়েকটি দুর্গা নিয়ে এই রচনা। সাহানা নাগ চৌধুরীর রচনার শিরোনাম ‘আজও সূর্যের মতো উজ্জ্বল বাংলা সিনেমার বসু-পরিবার’। লেখার কেন্দ্রে অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন। বসুমতীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরেছেন আশিস গুহ রায়, ‘অগ্রগতির পথে বসুমতী’ নিবন্ধে। প্রচেত গুপ্তর লেখার শিরোনাম ‘কে বলে দেবে কোন বই পড়ব’। লেখাটি ভাবায়, জাগায়। এ ছাড়াও আছে স্বামী সুপর্ণানন্দ, শাঁওলী মিত্রর নিবন্ধ।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

মন ছুঁয়ে গেছে তিলোত্তমা মজুমদার, অমলকৃষ্ণ রায়, সংযুক্তা সেনগুপ্ত, বীথি চট্টোপাধ্যায়, দীপান্বিতা রায়, বিনতা রায়চৌধুরী, বনানী শিকদারের নানা স্বাদের ছোটগল্প। ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ ‘চিরসবুজ সেই সময়’-এ রয়েছে অতীতের বিশ্বকর্মা এবং কালীপুজোর দিনের প্রাঞ্জল বর্ণনা।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, ব্রাত্য বসুর সাক্ষাৎকারগুলো পড়তে ভাল লাগে। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে কথোপকথনে। এ ছাড়াও আছে বিজ্ঞানচর্চা, স্বাস্থ্য, কমিকস, ভ্রমণ, সিনেক্যুইজ, খেলার জগৎ প্রভৃতি বিভাগ। প্রচ্ছদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সবমিলিয়ে অসাধারণ একটি সংখ্যা। দাম ১২০ টাকা।

আরও পড়ুন-প্রয়াত হলেন ‘নেহরুর বউ’ বুধনি মেঝান ঘুচল অপবাদ

আধুনিক সময়ের অনন্য সাহিত্য পত্রিকা ‘কালি কলম মনন’। অল্প দিনেই সমাদর পেয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে শারদ ১৪৩০ সংখ্যা। ড. পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়। বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর।
আছে কয়েকটি মূল্যবান প্রবন্ধ। নীলেশ নন্দী লিখেছেন ‘দেবী দুর্গার জানা-অজানা কাহিনী’। তনুশ্রী কাঞ্জিলাল মাশ্চরকের লেখার শিরোনাম ‘হর-গৌরীর বিবাহ’। দুটি রচনাই পুরাণ আশ্রিত। বেতারের মহিষাসুরমর্দিনী ছাড়া দুর্গাপুজো ভাবাই যায় না। কীভাবে প্রাণ পেয়েছিল অনুষ্ঠানটি, জানিয়েছেন প্রণবকুমার মিত্র, ‘বেতারে মহিষাসুরমর্দিনীর ইতিকথা’ প্রবন্ধে। শ্রীপর্ণা দে লিখেছেন ‘সাবিত্রী রায়— সাহিত্যের এক অনালোচিত নির্বাসিত অধ্যায়’। লেখাটি বিস্মৃতপ্রায় সাহিত্যিককে চিনতে, জানতে সাহায্য করে। সুমনকল্যাণ চক্রবর্তীর ‘শিবের বাস্তবতা ও ব্যাখ্যা’, অনীশ ঘোষের ‘সেরার সেরা বাঙালি স্বামী বিবেকানন্দ’, প্রীতিময় রায় বর্মনের ‘যাত্রাসম্রাট শান্তিগোপাল’ প্রভৃতি প্রবন্ধগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। রম্যরচনা উপহার দিয়েছেন ডাঃ নির্মল ভানু গুপ্ত। শিরোনাম ‘ইঁদুরের ইতিকথা’। লেখাটি মনের ঘরে আনন্দের সঞ্চার করে। অন্যান্য রচনায় মনে রেখাপাত করেছেন পীযূষকান্তি সরকার, দিব্যেন্দু ঘোষ, মলয় সিনহা, শুভজিৎ মজুমদার, তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, প্রবীর চট্টোপাধ্যায়, সোহম দাশগুপ্ত, জয়িতা ব্রহ্ম, সোহিনী চ্যাটার্জি। এবার যুব সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন হামিরউদ্দিন মিদ্যা। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন লোপামুদ্রা ভৌমিক। ‘কলমের টানে ফসলের গান’ শীর্ষক সাক্ষাৎকারটি প্রাণবন্ত। সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন কবি-সাহিত্যিক শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে স্মরণ করেছেন গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদ্যোত ভট্টাচার্য, কাঞ্চন চট্টোপাধ্যায়, শিবাজী পণ্ডিত প্রমুখ।

আরও পড়ুন- রেলে নাভিশ্বাস দেশবাসীর, বিমান ভাড়াকেও হার মানাচ্ছে টিকিটের দাম

ভালো ঘোরা বিভাগে শীর্ষেন্দু সেনের ‘উঠল বাই তো প্যারিস যাই’ একটি ঝলমলে লেখা। ঝাড়গ্রাম জেলার কনকদুর্গা মন্দিরের ইতিহাস তুলে ধরেছেন সোমনাথ নন্দী, ‘ডুলুংয়ের তীরে রহস্যেঘেরা কনকদুর্গা’ রচনায়। লেখাটি অজানাকে জানতে সাহায্য করে।
কবিতা বিভাগটি আকর্ষণীয়। লিখেছেন অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী, রবীন বসু, সঞ্জয় কর্মকার, শান্তনু ভট্টাচার্য, সুমাল্য মৈত্র, জুলি লাহিড়ী, শান্তা ভট্টাচার্য, নীলাঞ্জনা ভট্টাচার্য প্রমুখ। দীর্ঘ কবিতা উপহার দিয়েছেন ড. পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপসকুমার রায়, প্রিয়ব্রত নিয়োগী।

আরও পড়ুন-১২ বছর পর বিশ্বজয়ের মুখে রোহিতরা, আজ বিশ্বকাপ ফাইনাল, তিনের বদলা তেইশে?

সুকুমার রুজের বড়গল্পটি টানটান। এক দমে পড়ে ফেলা যায়। ছোটগল্পের ডালি সাজিয়েছেন পূর্বাশা মণ্ডল, দীপক সাহা, কাজরী মজুমদার, ঋভু চট্টোপাধ্যায়, হেমন্ত জানা, সৌমী গুপ্ত, সুমিতা চক্রবর্তী প্রমুখ। ভালো থাকা বিভাগে আছে স্বাস্থ্য বিষয়ক কয়েকটি রচনা। লিখেছেন এই সময়ের কয়েকজন খ্যাতনামা চিকিৎসক। লেখাগুলো মূল্যবান। সবমিলিয়ে জমজমাট একটি সংখ্যা। প্রচ্ছদ পরিকল্পনায় গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়। দাম ১৭০ টাকা।

Latest article