পৃথিবীর স্বর্গ উত্তরাখণ্ড। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছোট-বড় প্রতিটি পাহাড়। এখানকার শহর এবং গ্রামগুলো নিজের মতো করে সুন্দর। রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছে। এরকমই একটি পাহাড়ি অঞ্চল হল চকৌরি। কুমায়নের কোলে লুকানো রত্ন। পিথরাগড় জেলার একটি ক্ষুদ্র শৈল শহর। উচ্চতা ২০১০ মিটার। চকৌরিকে স্থানীয়রা বলেন চকোরি। এত সুন্দর শহর, যেন এক টুকরো স্বপ্নের দেশ। একদিকে ওক, পাইন, আর রডোডেনড্রনের জঙ্গল, অন্যদিকে বিস্তীর্ণ চা-বাগিচার পিছনে দুধসাদা হিমালয়ের সুউচ্চ প্রাচীর। এখানকার নিরালা প্রকৃতি এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মায়াবী রংবদল পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাধ্য করে বারবার যেতে।
আরও পড়ুন-মেট্রোয় আত্মহত্যা, অফিস টাইমে ব্যাহত পরিষবা
বাগেশ্বর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চকৌরি। কৌসানি থেকে দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। চাইলে আলমোড়া থেকেও যাওয়া যায়। গাড়িতে কৌশানি থেকে আলমোড়া হয়ে চৌকরি পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা। যেতে যেতে দু-চোখ ভরে উপভোগ করা যায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। যাওয়ার পথে গোলু চেতনা, বৈজনাথ, বাগেশ্বর, সোমেশ্বরের মতো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মন্দির পড়ে। অনেকে মনের ইচ্ছে জানিয়ে তা পূর্ণ হওয়ার আশায় ঘণ্টা বেঁধে দেন গোলু চেতনা দেবীর মন্দিরে। তাই মন্দির-চত্বরে প্রবেশ করলে চোখে পড়ে চারিদিকে ঘিরে থাকা বিভিন্ন আকারের ঘণ্টা।
আরও পড়ুন-তৈরি হবে ১০০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ, নয়া জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রাজ্যের
শহুরে জীবনযাত্রা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন চকৌরি। রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি দোকান। আর রয়েছে খানপাঁচেক হোটেল। তৈরি হচ্ছে কয়েকটি রিসর্ট। তবে এখানে খুব বেশি মানুষ রাত্রিবাস করেন না। অবশ্য রাত্রিবাস করলে হিমালয়ের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। তারাদের সমাহার দিনের সব ক্লান্তি কেড়ে নেয়। দরকার হয় না ল্যাম্পপোস্টের আলো। তারাদের আলোতেই আলোকিত হয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ এলাকা। এমন দৃশ্য উত্তরাখণ্ডের অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
আরও পড়ুন-‘বিধানসভাকে মর্যাদা দেওয়া উচিত ছিল’ বিল নিয়ে ফের সরব স্পিকার
আলাদা করে এই জায়গায় তেমন কিছু নেই। এমনকী বিংশ শতাব্দীতে গড়ে ওঠা চা-বাগানগুলোও প্রায় মুছে যেতে বসেছে। নেই তথাকথিত সানসেট পয়েন্ট। নেই কোনও সাইটসিনের জায়গা। হিমালয়ের কোলে সূর্য অস্ত গেলেই চিতাবাঘের ভয়ে বাইরে বেরনোরও উপায় নেই। তবু চৌকরি বহু পর্যটকের পছন্দের জায়গা। কারণ এই নির্জন পাহাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে অপার শান্তি, চিরসবুজ প্রকৃতির সঙ্গ লাভের সুযোগ। ভোরের নরম আলো, কিচিরমিচির পাখির ডাক মন ভাল করে দিতে পারে।
পুরনো চা-বাগানের রাস্তা এখনও কাঁচা-পাকা। এই রাস্তা ধরে সোজা হেঁটে গেলেই নিচের দিকে রয়েছে গভীর জঙ্গল। তবে জঙ্গল শুরুর আগে রয়েছে এমন এক জায়গা, যেখান থেকে হিমালয়ের প্যানারামিক ভিউ দেখা যায়। এক দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে নন্দাদেবী, অন্যদিকে পঞ্চচুল্লি। যেন অনন্ত মহাকাব্য লিখে রেখে গেছেন কোনও মহাকবি। প্রকৃতির মতো কবিতা আর কী আছে!
চৌকরি হল মেঘের দেশ। মাঝেমধ্যেই চারিদিক মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায়। নামে অঝোরে বৃষ্টি। বৃষ্টি থামার পর ঝলমলিয়ে ওঠে চারদিক। তখন অনেকটা স্নান-সারা যুবতীর মতো লাগে। সেই সৌন্দর্য মনের মণিকোঠায় আলাদা জায়গা করে নেয়। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে দু-চোখ ভরে দেখা যায়, দূরে রাশি রাশি গিরিশৃঙ্গ, মাথায় বরফের সাদা মুকুট পরে রাজার আসনে অধিষ্ঠিত। শ্বেতশুভ্র সাদা চূড়াগুলি থেকে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়। তাকালেই চোখের আরাম।
পাহাড় চূড়া থেকে নিচের বাড়িগুলো অনেকটা ছোট ছোট দেশলাইয়ের বাক্সের মতো লাগে। দেখতে দেখতে মনে হয় প্রকৃতি তার সমস্ত রহস্যময়তা ও সৃষ্টি উজাড় করে দিয়েছে আমাদের। আর আমরা ধ্বংস করে চলেছি ক্রমাগত। চিকৌরির মতো পাহাড়ি অঞ্চলে কমপক্ষে দু-রাত কাটাতেই হবে। নাহলে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বেড়ানো। এই সময় ঘুরে আসুন। কিছুদিন পর এলাকার অধিকাংশ ঢাকা পড়ে যাবে বরফের চাদরে।
কীভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে ট্রেন বা বিমানে দিল্লি। দিল্লি থেকে ট্রেন, বিমান অথবা সড়কপথে নৈনিতাল। পুরনো ও নতুন দিল্লি স্টেশন থেকে কাঠগোদাম পর্যন্ত ট্রেন আছে। দিল্লি থেকে সড়কপথে নৈনিতাল পৌঁছতে প্রায় ৬ ঘণ্টা লাগে। নৈনিতালের কাছাকাছি বিমানবন্দর পান্থগড়। কাঠগোদাম থেকে গাড়ি নিয়ে পুরোটা ঘোরা ভাল।
আরও পড়ুন-কলকাতায় চলবে উবের বাস, হল মউ স্বাক্ষর
কোথায় থাকবেন?
চৌকরিতে হোটেল সংখ্যা হাতে গোনা। তাই আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভাল। আশেপাশের পর্যটনকেন্দ্রেও আছে কিছু হোটেল। থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। গাড়ি ও হোটেল বুকিংয়ের সময় সাম্প্রতিকতম দর জেনে নেবেন। মরশুম-ভেদে এই দর ওঠানামা করে।