কোন কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ

পৌনে চার লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে সপ্তম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে।

Must read

প্রতিবেদন : পৌনে চার লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে সপ্তম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে। প্রাণিসম্পদ, ক্ষুদ্র-মাঝারি ক্ষেত্র, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন-সহ শিল্পের হাত ধরে এসেছে এই বিনিয়োগ। একনজরে দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ক্ষেত্রে কত বিনিয়োগ এল।

আরও পড়ুন-‘মানুষের উন্নয়নের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে’ সম্মেলনের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রকে নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর

কৃষি ও কৃষিনির্ভর শিল্প : ১৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। স্বাক্ষরিত হয়েছে ৯৩টি মউ। বুধবার সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে একথা জানিয়েছেন আইটিসি চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের কৃষিনির্ভর শিল্পের উন্নয়নে রাজ্য সরকারের গঠিত কমিটির প্রধান সঞ্জীব পুরী। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে তৈরি আইটিসি মার্স অ্যাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে তিনি বলেন, কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহারে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে এই অ্যাপ। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাঁদের প্রযুক্তিগত সহায়তা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, সবই দেওয়া হবে সংস্থার তরফে। রাজ্যের ৫ লক্ষ কৃষক উপকৃত হবেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র জানান, ডিম উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। আগামী বছরই ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

আরও পড়ুন-১৮৮ MOU স্বাক্ষর, ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব: জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ম্যানুফ্যাকারিং শিল্প : চামড়া, বস্ত্র, প্লাস্টিক, কেমিক্যাল সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১১টি মউ স্বাক্ষরিত। যার মধ্যে ৯টি সরকারি ক্ষেত্রে, ৯টি বেসরকারি। মোট বিনিয়োগ সাত হাজার কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন জেলায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬টি পাওয়ার লুম প্ল্যান্ট, ১৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১.৭ মিটার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ডেনিম কারখানা, ২০ লক্ষ কোটি টাকার গারমেন্ট পার্ক যার মধ্যে অন্যতম। রাজ্য সরকারের নতুন বস্ত্র নীতিও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়। যার মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে আগামী দিনে আরও বড়সড় বিনিয়োগের আশা করছে রাজ্য সরকার।

আরও পড়ুন-জগদ্ধাত্রীর ঐতিহ্যবাহী ঘট বিসর্জনে ভিড় কৃষ্ণনগরে

শিক্ষা : শিক্ষাক্ষেত্রে গত ১০ বছরে রাজ্য সরকারের বাজেট বেড়েছে ১১ গুণ। এর ফলশ্রুতি হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে বাণিজ্য সম্মেলনে। বিশিষ্ট শিল্পপতি তথা রাজ্য সরকারের শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শদাতা কমিটির প্রধান হর্ষ নেওটিয়া জানান, এবারের সম্মেলনে স্বাক্ষরিত হয়েছে ১৩টি শিক্ষা সংক্রান্ত মউ। এর মধ্যে বিদ্যালয় শিক্ষাক্ষেত্রে ১৬৭৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। ৩৬০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে। কারিগরি শিক্ষাক্ষেত্রে মোট বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিমাণ ১৮৫৯ কোটি টাকা। রাজ্যের নতুন ৩৮টি আইটিআই কলেজ তৈরি হবে। যার প্রতিটির জন্য সাত কোটি টাকা করে খরচ হবে। এছাড়া গড়ে উঠবে ১০৪৮টি স্বয়ম্ভর ফার্মাসি ইনস্টিটিউট।

আরও পড়ুন-তৈরি হল ৫ নীতি

রফতানি বাণিজ্য : রফতানি বাণিজ্যে উৎসাহ দিতে নতুন নীতি প্রণয়ন করেছে রাজ্য সরকার। এর হাত ধরে ইতিমধ্যেই রাজ্যের রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ক পরামর্শদাতা কমিটি প্রদান সঞ্জয় বুধিয়া। এদিনের সম্মেলনে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিনিধির বিভিন্ন সহযোগী দেশ অ্যামাজন, ফ্লিপকার্টের মতো সংস্থার সঙ্গে রাজ্য সরকারের দফায় দফায় বৈঠক হয় রফতানি বাণিজ্যের প্রসারে।

আরও পড়ুন-মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিলে ১ কোটি টাকা জরিমানা

পর্যটন : পর্যটনকে শিল্পের মর্যাদা দিয়েছে রাজ্য সরকার। এর ফলে আগামী দিনে রাজ্যের পর্যটনের বিপুল প্রসারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা নিরিখে দেশের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। তাছাড়াও গতবছর দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকে নয় কোটি পর্যটক বাংলায় পা রেখেছেন। পর্যটন খাতে রাজ্যের আয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। খুব তাড়াতাড়ি পর্যটনের নিরিখে এ রাজ্য দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন শিল্পের পরামর্শদাতা কমিটির প্রধান রুদ্র চ্যাটার্জি। তিনি জানান, পর্যটন নিয়ে আরও কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। ইউরোপের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ বাড়াতেও লাগাতার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই দুই উদ্যোগ সফল হলে পর্যটনে এক নম্বর স্থানে পৌঁছনো শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।

আরও পড়ুন-তিনগুণ কর্মসংস্থান আগামী ৩ বছরেই : টিভিএস চেয়ারম্যান

স্বাস্থ্য : স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও বিনিয়োগের নতুন জোয়ার দেখা গিয়েছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে। এই সম্মেলনে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ২৫টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৭৯৩৩ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শদাতা কমিটির প্রধান রূপক বড়ুয়া। তিনি জানান, স্বাস্থ্যের বিনিয়োগের জন্য উত্তরবঙ্গকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। নতুন প্রকল্পগুলির অনেকগুলি উত্তরবঙ্গকেন্দ্রিক। এইসব প্রকল্প রূপায়িত হলে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ১৯ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

চলচ্চিত্র শিল্প : চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে রাজ্যের বিপুল সম্ভাবনাকে তুলে ধরার মঞ্চ হিসেবে এবার পথচলা শুরু করল বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। এবারই প্রথম বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চকে ব্যবহার করে চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক তথা এই ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য গৌতম ঘোষ জানিয়েছেন, আগামী দিনে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের স্বর্গ হয়ে উঠবে পশ্চিমবঙ্গ।

আরও পড়ুন-BGBS: ‘অগ্নিকন্যা’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে বাংলায় আরও ২০ হাজার কোটি লগ্নির ঘোষণা মুকেশ আম্বানির

তথ্যপ্রযুক্তি : তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই দেশের মধ্যে প্রথম সারির রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব তথা ওয়েবেলের চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বাণিজ্য সম্মেলনে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। মোট পাঁচটি মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে।

আরও পড়ুন-পূর্বিতায় দ্বিতীয় দফায় জেরা করা হল বিদ্যুৎকে

এছাড়া এদিন সম্মেলনের সমাপ্তি মঞ্চ থেকে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে একাধিক বিনিয়োগের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সরকারি, বেসরকারি মিলিয়ে মোট এক ডজন সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এদিনের মঞ্চে। সমাপ্তি অনুষ্ঠানেও একাধিক শিল্পপতি নতুন বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন। যার মধ্যে হাসনাবাদের সদিপুরে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় নতুন ওয়াগন ফ্যাক্টরি অন্যতম। রাষ্ট্রায়ত্ত টেক্সম্যাকো সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্লোভাকিয়ার একটি সংস্থা এই কারখানা গড়ে তুলবে। ইউএসসি গ্রুপের অন্যতম অংশীদার রাজারহাটে নতুন ডাটা সেন্টার তৈরির কথা ঘোষণা করেন যার আনুমানিক ব্যয় ২০০০ কোটি টাকা। এছাড়া রিয়াল এস্টেট ক্ষেত্রে আরও ৭৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে ওই সংস্থা। সিঙ্গাপুরের নিউট্রি সোর্স সংস্থার তরফে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পানাগড়ে পাঁচ হাজার টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সার কারখানা তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে পাঁচশো মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে। রং উৎপাদক সংস্থা বার্জার পানাগড়ে ৩০ একর জমিতে বিল্ডিং কেমিক্যালের নতুন কারখানা তৈরি করবে বলে ঘোষণা করেন ওই সংস্থার কর্ণধার অভিজিৎ রায়। এছাড়া হুগলিতে নিজেদের বর্তমান কারখানাটির সম্প্রসারণের কথা জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া ডানকুনিতে আড়াইশো কোটি টাকার একটি সুতো কারখানা তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে ৩৫০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। হুগলিতে একটি নতুন বস্ত্র কারখানা তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যার আনুমানিক ব্যয় ২০০ কোটি টাকা। কর্মসংস্থান হবে ২০০০ এর বেশি মানুষের।

Latest article