জেরুজালেমের সিনাকল পৃথিবীর প্রথম গির্জা। তবে সিরিয়ার ডুরা-ইউরোপোস গির্জাকে বিশ্বের টিকে-থাকা প্রাচীনতম গির্জা বলে মনে করা হয়। ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন গির্জা হল সেন্ট টমাস চার্চ। কেরলের ত্রিশুর জেলার পালায়ুরে অবস্থিত। এই গির্জাটি ৫২ খ্রিস্টাব্দে সাধু টমাস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আরও পড়ুন-স্মরণে বরণে মহম্মদ রফি
পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম চার্চ হুগলির ব্যান্ডেলে অবস্থিত— ‘ব্যাসিলিকা অব দ্য হোলি রোজারি’ বা পবিত্র রোজারির ব্যাসিলিকা, যা সাধারণ মানুষের কাছে ‘ব্যান্ডেল চার্চ’ নামে পরিচিত। ১৫৯৯ সালে এই গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন পর্তুগিজরা।
কলকাতার প্রাচীনতম গির্জাটি তৈরি হয় ১৬৮৮ সালে, আর্মেনিয়ান চার্চ অব দ্য হোলি নাজারেথ। কলকাতার মানুষ বলেন আর্মানি গির্জা। কলকাতার বড়বাজারের ২ নম্বর আর্মেনিয়ান স্ট্রিটে অবস্থিত এই চার্চে ৬ জানুয়ারি বড়দিন পালিত হয়।
আরও পড়ুন-জেব্রা ক্রসিং
ভারতের অবস্থিত সমস্ত আর্মেনিয়ান অ্যাপোস্টোলিক চার্চের মধ্যে কলকাতার চার্চটি প্রাচীনতম। এটি ভারতীয় আর্মেনিয়ানদের মাদার চার্চ। এর প্রতিষ্ঠাকাল ২২ জুন, ১৬৮৮ সাল। জনগণের অর্থে এই গির্জা নির্মিত হয়েছিল। গির্জার কাঠামোটি ছিল কাঠের। ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে এক বিধ্বংসী আগুনে ইমারতটি সম্পূর্ণরূপে ভস্ম হয়ে যায়। তার ঠিক সতেরো বছর পরে, ১৭২৪ সালে, নাজারেথের পবিত্র এই চার্চটি আগা নাজার নামক এক আর্মানি নতুন করে নির্মাণ করেন। এটি আর্মেনিয়ান সম্প্রদায়ের পুরনো সমাধিস্থলে নির্মিত হয়েছিল বলে এর নাম হয় নাজারেথের চার্চ। গির্জাটির স্থপতি ছিলেন ইরান থেকে আগত এক আর্মেনিয়ান, যাঁর নাম মিস্টার লেভন গেভন্ড। ১০ বছর পরে ১৭৩৪ সালে ম্যানুয়েল হাজারমল এই কাঠামোর সঙ্গে কিছু অংশ যোগ করেন। ১৭৬৩ সালে গির্জাটি মেরামত ও সংস্কার করেন খোজা পেট্রোস আরাতুন। তিনি গির্জাটিকে অলঙ্কৃত করেছিলেন এবং দুটি বেদি নির্মাণ করেন। দক্ষিণ দিকের প্রধান বেদিটি বাংলার নবাব মির কাশিমের মন্ত্রী এবং সেনাপতি গর্গিন খানের স্মৃতিতে তৈরি।
আর্মানি গির্জার কথা ছেলেবেলায় আমরা সকলে পড়েছি। রবীন্দ্রনাথ সহজ পাঠে লিখেছেন, “আর্মানি গির্জের কাছে আপিস। যাওয়া মুস্কিল হবে। পূর্বদিকের মেঘ ইস্পাতের মতো কালো”। রবীন্দ্রনাথের ‘জীবন স্মৃতি’-তেও ফিরে ফিরে এসেছে আর্মানি গির্জার ঘড়িতে ঘণ্টা বাজার কথা।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
কলকাতার সবচেয়ে বড় গির্জা হল সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চ। স্বাধীনতার ঠিক ১০০ বছর আগে তৈরি। কলকাতার বৃহত্তম ক্যাথিড্রাল চার্চের আশ্চর্যজনক আকর্ষণ আছে। এর সুন্দর স্থাপত্য আর নকশা মুগ্ধ করে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বিপরীতে অবস্থিত এই গির্জার ভিতরে রয়েছে বিভিন্ন শিল্পস্মারক, লাইব্রেরি এবং স্মৃতিচিহ্ন।
কলকাতার সেন্ট জন’স চার্চ তৈরি হয়েছিল ১৭৮৪ সালে। কিন্তু গির্জাটি ছিল আকারে বেশ ছোট। শোভাবাজারের ধনী নবকৃষ্ণ দেবের জমিতে এই গির্জা নির্মিত হয়। এটি রাজভবনের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত। নাজারেথের আর্মেনিয়ান চার্চ এবং ওল্ড মিশন চার্চের পরে এটি ছিল শহরের তৃতীয় প্রাচীনতম গির্জা। ধীরে ধীরে কলকাতায় ইউরোপীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সেন্ট জন’স চার্চে স্থানাভাবের কারণে এই গির্জাটির পরিবর্তে সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল নির্মিত হয়।
আরও পড়ুন-ইচ্ছাকৃত জটিলতা বোসের, সমাবর্তনের আগে বর.খাস্ত ভিসি
১৮১৯ সালে বাংলার গভর্নর-জেনারেল ছিলেন মার্কুইস অফ হেস্টিংস। তাঁর উদ্যোগে স্থপতি উইলিয়াম নেইন ফোর্বস সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালটির নকশা প্রস্তুত করেন। তবে সেই নকশা অনুযায়ী ক্যাথিড্রাল নির্মাণ যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ ছিল। তাই ওই নকশা বাদ দেওয়া হয়। শহরের যে অংশটি এখন ‘ফাইভস কোর্ট’ নামে পরিচিত সেই অংশে ক্যাথিড্রালটি নির্মাণের প্রস্তাব রাখেন টমাস মিডলটন। এখানেই বর্তমানে ক্যাথিড্রালটি অবস্থিত। ১৭৬২ সালে এই অঞ্চলটিকে ব্যাঘ্রসংকুল অরণ্য বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। প্রথম দিকে মনে করা হয়েছিল, এই জায়গাটি শহরের ‘একটু বেশি দক্ষিণে’ অবস্থিত। নির্মাণ পরিকল্পনা রূপায়িত হওয়ার আগেই ১৮২২ সালে মিডলটন মারা যান। পরবর্তী তিন বিশপ— রেজিনাল্ড হিবার, টমাস জেমস ও জন টার্নার বেশ অল্প সময় বিশপ পদে আসীন থেকে মারা যান। ১৮৩২ সালে বিশপ ড্যানিয়েল উইলসনের উদ্যোগে ক্যাথিড্রাল নির্মাণের প্রকল্পটি পুনরায় গৃহীত হয়।
আরও পড়ুন-যানজট এড়াতে নয়া উড়ালপুল বাইপাসে, ১ হাজার কোটিতে ৬ কিমি দীর্ঘ ফ্লাইওভার
ক্যাথিড্রাল নির্মাণের জন্য ৭ একর (৩ হেক্টর) জমি অধিগ্রহণের পর একটি কমিটি গঠিত হয়। বিশপ উইলসনের অনুরোধে সামরিক ইঞ্জিনিয়ার উইলিয়াম নেইন ফোর্বস ক্যাথিড্রালটির নকশা প্রস্তুত করেন। নরউইচ ক্যাথিড্রালের আদলে এই ক্যাথিড্রালের টাওয়ার ও মোচাকৃতি চূড়াটির রূপদানে তাঁকে সাহায্য করেন স্থপতি সি কে রবিনসন। ১৮৩৯ সালের ৮ অক্টোবর ক্যাথিড্রালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় এবং আট বছর পর নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়। তার পর ১৮৪৭ সালের ৮ অক্টোবর ক্যাথিড্রালটিতে ধর্মীয় মতে উপাসনা শুরু হয়। উদ্বোধনের অনুষ্ঠানটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য রানি ভিক্টোরিয়া ‘রুপোর গিলটি-করা দশটি পাত’ উপহার পাঠিয়েছিলেন। মূলত ইউরোপীয় ও স্থানীয় খ্রিস্টানরা ক্যাথিড্রালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ক্যাথিড্রালটি নির্মিত হয়েছিল গথিক নবজাগরণ শৈলীতে। নির্মাণকার্যে মোট ব্যয় হয় চার লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার ছশো ঊনসত্তর টাকা। বর্তমানে ক্যাথিড্রালটিতে ৮০০ থেকে ১,০০০ লোক একসঙ্গে উপাসনা করতে পারেন। সেন্ট পলস গির্জাটির নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ হওয়ার পর সেন্ট জন’স চার্চের পরিবর্তে সেন্ট পল’স গির্জাটি ক্যাথিড্রালের মর্যাদা লাভ করে।
আরও পড়ুন-আজ টেট
অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতো গ্রিকরাও কলকাতায় একটি গির্জার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। ১৭৫২ তাঁরা প্রথম গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন ক্যানিং স্ট্রিটের কাছে মুরগিহাটা এলাকায়। ওই এলাকাটি তখন পর্তুগিজ-অধ্যুষিত ছিল। গ্রিকদের প্রথম গির্জাটির নাম ছিল ‘গ্রিক চার্চ অফ ট্রান্সফিগারেশন’। তবে সেই প্রথম গ্রিক গির্জাটির সঠিক অবস্থানটি এখনও পরিষ্কার নয়। নানা প্রমাণ থেকে আন্দাজ করা যায় যে, ক্যানিং স্ট্রিটের পর্তুগিজ গির্জার কাছাকাছি সেই গ্রিক গির্জা অবস্থিত ছিল। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সেটি ছিল এজরা স্ট্রিটের নিকটে কোথাও।
এর কিছুকাল পর ১৭৮১ সালে উত্তর কলকাতার আমড়াতলা লেনে গ্রিকদের আর একটি গির্জা গড়ে ওঠে। সেই গির্জা নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। ধনী এক গ্রিক ব্যবসায়ী সেই গির্জা তৈরির অর্থ জোগান দেন। তাঁর নাম প্যানাঘিওটিস অ্যালেক্সিওস আরগিরি। তিনি ক্যাপ্টেন থর্নহিল নামক অন্য একজন গ্রিক ব্যক্তির দোভাষী হিসাবে ভারতে এসেছিলেন। ভারতে আসার সময় তাঁর জাহাজ মধ্যসমুদ্রে একটি ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিল। নিরাপদে পৌঁছনোর জন্য তিনি একটি গির্জা নির্মাণের মানত করেছিলেন। কলকাতায় পৌঁছনোর পর তিনি ওয়ারেন হেস্টিংসের কাছ থেকে এই গির্জা নির্মাণের অনুমতি নেন। রেভ নিকিফোরস ছিলেন ওই গ্রিক চার্চের প্রথম যাজক।
আরও পড়ুন-কুণালের সঙ্গে বৈঠকে এসে বিস্ফো.রক দাবি করলেন চাকরিপ্রার্থীরা, ২৭ লক্ষ নিয়ে প্রতা.রণা বিকাশের
আমড়াতলার গির্জাটি ১৭৮১ সালের ৬ অগাস্ট থেকে চালু হয়। এই গির্জার পাশেই একটি কবরস্থান ছিল। পরে শহরে গ্রিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁরা ১৭৭৭ সালে ফুলবাগানে একটি নতুন কবরস্থান স্থাপন করেন। এই গির্জাটি একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে চালু ছিল এবং চার্চটি স্থানীয় গ্রিকদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। কলকাতার গ্রিকরা অবশ্য পরে অন্যান্য ইউরোপীয়দের সঙ্গে মিশে যান। মূলত আর্মেনিয়ান এবং ব্রিটিশদের সঙ্গে মিশে তাঁরা নিজেদের গ্রিক পরিচয় হারিয়ে ফেলেন।
১৯২৪ সালে কলকাতার গ্রিকরা তাঁদের আমড়াতলা-গির্জা বন্ধ করে দেন এবং কালীঘাটে চলে আসেন। কালীঘাটে গ্রিক স্থাপত্য-শৈলীতে একটি নতুন গির্জা নির্মিত হয় ১৯২৪ সালের ৩ নভেম্বর, যা জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হয় ১৯২৫ সালের ১৯ নভেম্বর। এটিকেই এখন গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ বলা হয়। গির্জাটি কালীঘাট ট্রাম ডিপোর কাছে।
আরও পড়ুন-হাওড়ায় প্রতিবাদ মিছিলে মানুষের ঢল
সেন্ট অ্যান’স চার্চের কথা না বললে কলকাতার গির্জার ইতিহাসের কিছুই বলা হয় না। কলকাতায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শুরুর সময়ে সেন্ট অ্যান গির্জাই ছিল ইংরেজদের উপাসনার একমাত্র জায়গা। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ তৈরির পরে এই গির্জাটি বানানো হয় ১৭০৯ সালে। কেউ কেউ বলেন, এটি কলকাতার দ্বিতীয় প্রাচীন গির্জা। তাহলে প্রথম কোনটি? এ বিষয়ে নানা মুনির নানা মত। একটি মত, কলকাতার প্রথম গির্জাটি হল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম প্রেসিডেন্সি চার্চ। এখন যেখানে জেনারেল পোস্ট অফিস বা জিপিও, ঠিক সেই জায়গাতে ছিল ইংরেজদের ওল্ড ফোর্ট বা পুরনো কেল্লা। আর তার অন্দরে ছিল প্রথম গির্জাটির অবস্থান। সেই সময় ধনী ইংরেজ ব্যবসায়ীদের অর্থে নির্মিত হয় ওই গির্জাটি।
১৭৩৭ সালে বাংলায় হয় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। সেই ঝড়ের দাপটে সেন্ট অ্যান’স গির্জার চূড়াটি ভেঙে যায়। আফশারি বংশের প্রথম বাংলার নবাব ছিলেন আলিবর্দি খাঁ। তাঁর মৃত্যুর পরে নাতি সিরাজ-উদ্-দৌলা নবাব হলেন। তিনি ছিলেন ঘোর ইংরেজ বিরোধী। ইংরেজরা ভয় পেয়ে তাঁদের কেল্লা আরও সুরক্ষিত ও মজবুত করতে শুরু করে। বাংলার নবাব সিরাজ তাঁদের সেই কাজ করতে নিষেধ করেন। ইংরেজরা সে-কথা গ্রাহ্য করে না। ১৭৫৬ সালে সিরাজ কলকাতা আক্রমণ করেন। সেই সময় বাংলার নবাবের কামানের গোলায় এই গির্জাটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়।
আরও পড়ুন-গোয়ার কাছে লজ্জার হার মোহনবাগানের
‘প্রভু যিশুর গির্জা’ কলকাতার একটি গুরুত্বপূর্ণ চার্চ। লর্ড জেসাস চার্চ হল ক্যাথলিক গির্জা। এটি কলকাতা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত তালতলায়। এটি আগে ছিল চার্চ অব স্কটল্যান্ড প্রেসবিটেরিয়ান উপাসনালয়। ১৯৬৯ সালে উপাসনালয়টি জেসুইটদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার পর জেসুইটরা গির্জাটিকে ধর্মপ্রচারমূলক নানা কার্যকলাপের কেন্দ্র করে তোলে।
এর ইতিহাসের দুটি ভাগ। একটি হল প্রেসবিটেরিয়ান তথা প্রটেস্টান্ট গির্জা হিসাবে, আর দ্বিতীয়টি হল ক্যাথলিক গির্জা হিসাবে। আলেকজান্ডার ডাফ ছিলেন একজন প্রেসবিটেরিয়ান স্কটিশ ধর্মপ্রচারক। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে তিনি কলকাতায় আসেন। তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় ধর্মপ্রচারক ও শিক্ষাবিদ। ১৮৩০ সালে তিনি জেনারেল অ্যাসেম্বেলি’স ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা এখন স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন-‘গীতা পাঠ হলে কি বেকারত্ব কমবে’, প্রশ্ন ব্রাত্যর
১৮৪৩ সালে একটি গুরুতর বিষয়কে কেন্দ্র করে চার্চ অফ স্কটল্যান্ড দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ভারতেও অনুরূপ ভাগ হয়। প্রেসবিটেরিয়ানদের নতুন শাখার নাম হয় ‘ফ্রি চার্চ অফ স্কটল্যান্ড’। তারা কলকাতায় ওয়েলেসলি স্ট্রিটে নতুন ‘ফ্রি’ চার্চ তৈরি করে। ১৯২৯ সালে দুটি প্রেসবিটেরিয়ান চার্চ মিলিত হয় এবং একটি নতুন ইউনিয়ন গঠন করে। এর ফলে ওয়েলেসলি স্ট্রিটের ফ্রি চার্চ তার গুরুত্ব হারায়। ১৯৪২ সাল থেকে দুটি ধর্মীয় শাখা একত্রিত হয় ও সেন্ট অ্যান্ড্রু’স চার্চকে তাদের উপাসনার স্থান হিসেবে গ্রহণ করে।
ফলে ১৯৬৯ সালে ওয়েলেসলি গির্জা এবং সংযুক্ত ভবনগুলি জেসুইট ফাদারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফাদাররা এই উপাসনালয়ের নতুন নাম দেন বাংলায়— ‘প্রভু যিশুর গির্জা’।
কলকাতার সেন্ট টমাস চার্চ হল একটি রোমান ক্যাথলিক ও ল্যাটিন রীতিনিয়মের চার্চ। মিডলটন রো, পার্ক স্ট্রিটে অবস্থিত। অনেকের মনে থাকবে, ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে মাদার টেরেসাকে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগে এই চার্চে রাখা হয়েছিল।
আরও পড়ুন-কবে লক্ষ্যে পৌঁছবে আদিত্য এল১, জানাল ইসরো
১৮৪১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এম জি আর কেরিউ সেন্ট টমাস এই চার্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৮৪২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। এটি এম জি আর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কলকাতার দ্বিতীয় চার্চ।
সেন্ট মেরি’স চার্চ লালা লাজপত রায় সরণিতে অবস্থিত। বাংলায় ক্যাথিড্রালের ধারণা ১৮৮৫ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হয়। রেভারেন্ড হরিহর সান্যাল ছিলেন একজন প্রখ্যাত ধর্মপ্রচারক। তিনি কয়েকজন খ্রিস্টান কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাথিড্রালে উপাসনা শুরু করেছিলেন। পরে নিজেদের উপাসনার জন্য আলাদা গির্জা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি একটি জমি অধিগ্রহণ করেন এবং বাঙালি প্রোটেস্ট্যান্টদের একটি গির্জা নির্মাণের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন। দুঃখজনকভাবে রেভারেন্ড হরিহর সান্যাল ৪ সেপ্টেম্বর ১৮৮৭ সালে প্রয়াত হন। তাঁর স্বপ্নের গির্জা তখনও তৈরি হয়নি। অবশেষে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৯ সালে রেভারেন্ড অঘোরনাথ ব্যানার্জি এই কাজ সম্পন্ন করেন। রেভারেন্ড অঘোরনাথ ব্যানার্জি সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের ‘ক্যানন’ পদ লাভ করেছিলেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি এই সম্মান পেয়েছিলেন। সেন্ট মেরি’স চার্চ হল প্রথম বাঙালি ক্যাথিড্রাল। চার্চটি ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজের বিপরীতে এলগিন রোডে (লালা লাজপত রায় সরণি) অবস্থিত।