প্রতিবেদন : পরিবহণের কালা কানুন প্রত্যাহারের জন্য দেশ জুড়ে আন্দোলন – ধর্মঘট চালাচ্ছে ট্রাক ও লরি চালকরা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ন্যায় সংহিতা যে আইন পাশ করিয়ে নিয়েছে সংখ্যা গরিষ্ঠতার জেরে তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে উত্তাল গোটা দেশ। এরই মধ্যে নির্লজ্জ বিজেপি সরকার পিছনের দরজা দিয়ে ট্রাক ও লরি মালিকদের হাত করে ধর্মঘট প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু চালকদের অনড় মনোভাবের ফলে তাদের টলানো যায়নি।
আরও পড়ুন-পুরনো মেজাজে ফিরছে শীত
মালিকদের বিরুদ্ধে গিয়েই চালকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এই পরিবহণের কালা কানুন প্রত্যাহার বা সংশোধন না করলে তারা ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন। তাদের পক্ষে আর ভারতী জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মালিকদের গোপনে কী কথা হয়েছে তা আমাদের জানা নেই জানতেও চাই না। তবে আমাদের দাবী না মানা পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে।
দেশ মানুষের উপর নিপীড়ন হয়ে উঠবে এই আইন। কায়েম হতে পারে পুলিশি রাজ। এই স্বৈরাচারী কালো আইনের মধ্যে যদি কোন পথ দুর্ঘটনা হয়ে কারও মৃত্যু হয় তাহলে ট্রাক ড্রাইভারদের
১০ বছর জেল ও ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। মূলত সেই কারণেই আন্দোলন। দেশজুড়ে ট্রাক চালকরা পথ অবরোধ করছে।
আরও পড়ুন-সংবর্ধনা কনিষ্ঠতম বিজ্ঞানীকে
যোগী রাজ্যে পুলিশের গুলি
অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও। ট্রাক চালকদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদে ব্যাপক গণ্ডগোল উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, ছত্তিশগড়, উত্তরাখণ্ড সহ বিভিন্ন রাজ্যে। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে আরও খারাপ হতে পারে। এরই মধ্যে উত্তর প্রদেশ থেকে ব্যাপক গণ্ডগোলের খবর আসছে। ধর্মঘটীরা পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়তে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পাল্টা পুলিশের দিক থেকে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে।
কী এই আইন
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দু’দিনে ‘ভারতীয় দণ্ডবিধি’ সংশোধন করে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ আইন নিয়ে আসে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ সংহতি ১০৪ (২) ধারায় পথ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত নয়া বিধানের সংযোজন করেছে কেন্দ্র ৷ সেখানে বলা হয়েছে, গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে অভিযুক্ত চালক নিজে পুলিশকে ফোন করে সেই কথা জানাবে ৷ তা না-করে চালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলে, তার বিরুদ্ধে ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলায় অভিযোগ দায়ের হবে ৷ সেক্ষেত্রে চালকের সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে ৷
আরও পড়ুন-বিষ্ণুপুরে করুণাময়ী কালীবাড়ির পৌষমেলায় মানুষের ঢল
কলকাতাতেও বিক্ষোভ
বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে কলকাতাতেও। খিদিরপুরে রাস্তা আটকে রাখেন ট্রাক ও লরি চালকরা। পরে বন্দর এলাকার রামনগর মোড়, অ্যাসবেস্টস মোড়, হাইড রোড, সিক লেনেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মতলা বা হেস্টিংসের দিক থেকে আসা গাড়িগুলিকে খিদিরপুর ও ডায়মন্ড হারবার রোডের সংযোগস্থল থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, গার্ডেনরিচের দিক থেকে আসা গাড়িগুলিকে ঘোরানো হয় ব্রেস ব্রিজ দিয়ে। এর ফলে সকাল থেকে চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। এই ঘটনায় অফিস টাইমে খাস কলকাতা অবরুদ্ধ, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। লরি ও ট্রাক চালকরা বলছেন কেন্দ্রের বর্তমান পরিবহন নীতির পরিবর্তন না হলে তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে এতটুকু সরবেন না।
জেলায় জেলায় বিক্ষোভ
উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের বামনগাছিতেও চলে ট্রাক ও লরি চালকদের সমর্থনে প্রতিবাদ। এখানে রাস্তায় নামেন ম্যাটাডোর চালকরা। সকাল ১০টায় যশোর রোডে বামনগাছি মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন মিনি ট্রাক ড্রাইভার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অ্য়াসোসিয়েশনের সদস্যরা। অবিলম্বে কেন্দ্রের কালা আইন বাতিল করতে হবে বলে দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের হস্তক্ষেপে একঘণ্টা পর অবরোধ ওঠে। এছাড়া কাঁকসা, আসানসোল, দুর্গাপুরেও বিক্ষোভ দেখান ট্রাক ও লরি চালকরা।
আরও পড়ুন-কিসান সম্মাননিধি প্রকল্প রূপায়ণে চূড়ান্ত ব্যর্থতা কেন্দ্রের, নোডাল অফিসার নিয়োগে দ্বারস্থ রাজ্যের
জিনিসের দাম বাড়ার আশঙ্কা
কেন্দ্রের এই কালা কানুন চালকদের রোজগার কেড়ে নিয়ে ভাতে মারার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, দেশ জুটে ট্রাক চালকদের বিদ্রোহে স্তব্ধ পণ্য পরিবহন। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পৌছানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ সালের জিনিসের আকাশ সমূহ মূল্যবৃদ্ধি হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।