বিষ্ণুপুরে করুণাময়ী কালীবাড়ির পৌষমেলায় মানুষের ঢল

কালীপুজো উপলক্ষে সেজে উঠেছে বহরমপুরের বিষ্ণুপুরে প্রাচীন করুণাময়ী কালীবাড়ি। এই মন্দিরে নিত্যপুজোর সঙ্গে প্রতি শনি ও মঙ্গলবারে হয় বিশেষ পুজো

Must read

গণেশ সাহা, মুর্শিদাবাদ: কালীপুজো উপলক্ষে সেজে উঠেছে বহরমপুরের বিষ্ণুপুরে প্রাচীন করুণাময়ী কালীবাড়ি। এই মন্দিরে নিত্যপুজোর সঙ্গে প্রতি শনি ও মঙ্গলবারে হয় বিশেষ পুজো। আর প্রতি বছর পৌষে চলে টানা এক মাসের মেলা। মায়ের আবির্ভাব মাস হিসাবে পৌষের প্রতি শনি-মঙ্গল উপচে পড়ে ভিড়। জেলা ও জেলার বাইরের প্রচুর মানুষ পুজো দিতে আসেন। এখানকার মা জাগ্রত বলে পরিচিত।

আরও পড়ুন-পর্যটনের নয়া দিশা বেঙ্গল সাফারি

মন্দিরের সেবাইত বিশ্বতোষ পাণ্ডে জানান, নবাব সরফরাজ খানের আমলে কাজের সন্ধানে মহারাষ্ট্র থেকে বাংলায় আসেন কৃষ্ণনন্দ হোতা নামে এক ধার্মিক ব্রাহ্মণ। কিছুদিন পরেই তিনি কাশিমবাজারের নবাবের অধীনে কাজ পান। তবে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত কোনও সন্তান না হওয়ায় মানসিক কষ্টে ছিলেন। কয়েক বছর কাজ করার পরে তাঁর মনে হয়, অনেক অর্থোপার্জন হয়েছে। এবার দেশে ফিরতে হবে। কিন্তু তিনি একদিন স্বপ্নাদেশ পান, তুই এখানেই থাক, আমি তোর কাছেই আসছি। এক বছর পরই তাঁর কন্যাসন্তান হলে তিনি নাম রাখেন করুণাময়ী। বাবাঅন্তপ্রাণ মেয়েকে একা রেখে কোথাও যেতেন না কৃষ্ণনন্দ। সঙ্গে নিয়ে অফিসেও যেতেন। সেই সময় বিষ্ণুপুর ছিল জঙ্গলাকীর্ণ মহাশ্মশান এলাকা। সেখানে বাঘের উপদ্রব ছিল ভীষণ। বহরমপুর শহরের বহু প্রাচীন ‘হোতার সাঁকো’ আজও বর্তমান। সেখানে ছিল পারাপারের ঘাট। কৃষ্ণনন্দর বাড়ি ছিল সৈদাবাদে।

আরও পড়ুন-মনরেগা নিয়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে চিঠি তৃণমূলের, সাংসদ চাইলেন একাধিক প্রশ্নের উত্তর

প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার আগে তিনি বিষ্ণপুর মহাশ্মশানে বটবৃক্ষের তলায় ধ্যান করতেন। মেয়ে করুণাময়ী তখন সেখানে খেলে বেড়াত। একদিন বিষ্ণপুরে এসে তাঁর মনে পড়ে অফিসে জরুরি কাজ ফেলে এসেছেন। তাঁকে ফের কাশিমবাজার যেতে হবে। সে সময় তিনি দেখেন রাস্তা দিয়ে পরিচিত এক শাঁখারি যাচ্ছেন। তাঁকে কৃষ্ণনন্দ তাঁর মেয়েকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বলেন। শাঁখারি তাঁর কন্যাকে নিয়ে হোতার সাঁকোর ঘাটে আসতেই করুণাময়ী ঘাটে নেমে জলে নিমজ্জিত হয়ে যায়। কৃষ্ণনন্দ কন্যাশোকে নবাবের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বিষ্ণপুর মহাশ্মশানে ধ্যানস্থ হয়ে মায়ের দর্শন পান গাছের কুঠুরিতে। সেখানেই মায়ের প্রতিষ্ঠা করে চলে পুজো। এখন সেই কালীবাড়ির মাঠে পৌষ মাস জুড়ে বসে বিশাল মেলা।

Latest article