রাঁচি, ২৪ ফেব্রুয়ারি : শেষবেলায় ধ্রুব জুরেল আর কুলদীপ যাদব যে লড়াইটা লড়লেন, সেটা মাঝের দিকের ব্যাটাররা পারলে দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতকে ১৩৪ রানে পিছিয়ে থাকতে হত না। ৮৬-১ থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ১৭৭-৭ হয়ে গিয়েছিল ভারত (England-India)। সেখান থেকে অপরাজিত অষ্টম উইকেটে ৪২ রান যোগ করেছেন এই দু’জন। দলের রানকে টেনে নিয়ে গেলেন ২১৯-৭-এ। এখান থেকে এই জুটি যত এগোবে, ততই চাপ কমবে রোহিতের উপর থেকে।
রাজকোটে অভিষেক হয়েছিল জুরেলের। অল্পের জন্য হাফ সেঞ্চুরি মিস করেছেন। কিন্তু বল যেখানে ঘুরছে, সেখানে নিজের পা জোড়াকে ব্যবহার করা যে খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা বিলক্ষণ প্রমাণ করেছেন। শনিবার যেমন ৫৮ বলে ৩০ নট আউটের ইনিংসে জুরেল দুই ইংল্যান্ড স্পিনার শোয়েব বশির ও টম হার্টলিকে কখনও সামনের পায়ে, কখনও পিছনের পায়ে গিয়ে অনায়াসে খেলে দিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গী কুলদীপের প্রশংসা না করলে অন্যায় হবে। তিনি ৭২ বল কাটিয়ে গেলেন ১৭ নট আউটের ইনিংসে। দেকে মনে হল যশস্বী জয়সওয়ালের রুদ্ধশ্বাস লড়াই যদি কাউকে অনুপ্রাণিত করে থাকে তাহলে সেটা জুরেল ও কুলদীপকেই। শেষবেলায় প্রায় ১৮ ওভার কাটিয়ে গেলেন এঁরা দু’জন।
রাঁচির উইকেট দেখে ইংল্যান্ড (England-India) টিম ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে এখানে লম্বা স্পিনার খেলাতে হবে। সেই কারণেই শোয়েব বশিরকে দলে নেওয়া। আর ঠিক সেই কারণেই লেগস্পিনার রেহান আমেদকে বাইরে রাখা। রেহান অবশ্য পারিবারিক কারণে ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়েছেন। এই সিরিজে আর তাঁকে দেখা যাবে না। কিন্তু যেটা বলার, বাজবল নিয়ে তুলোধোনা হওয়ার মুখে স্টোকস আর ম্যাকালাম খুব ঠান্ডা মাথায় বশিরকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যেটা দ্বিতীয় দিনে তাঁদের ডিভিডেন্ড দিল।
স্টোকস ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের উইকেট দেখে বলেছিলেন এমন উইকেট এর আগে কোথাও দেখেননি। শনিবার বিকেলের দিকে দেখা গেল বাইশ গজে নদীর মতো ফাটল এমাথা থেকে ওমাথা ছড়িয়েছে। ইংল্যান্ড বশিরকে এনেছিল উইকেট ভাঙবে এটা ভেবেই। বশির অনেক লম্বা। তিনি অনেক উঁচু থেকে বল ছাড়েন। ফলে টার্নিং উইকেটে আরও বেশি টার্ন পাবেন। উইকেট থেকে বাউন্সও পাবেন। তাঁর এই পারফরম্যান্স সবকিছু মিলিয়ে দিয়েছে। বশিরের বোলিং গড় ৩২-৪-৮৪-৪।
কিন্তু বশির যতই ভাল বল করুন, ভারতের এই ব্যাটিং ব্যর্থতার কোনও ব্যাখ্যা হয় না। রোহিত শর্মার এই সিরিজ ভালমন্দে মিশিয়ে চলছে। এখানে যেমন সেই অ্যান্ডারসনকে উইকেট দিয়ে গেলেন ২ রানে। দলের রান তখন ৪। কিন্ত এখান থেকে যশস্বী জয়সওয়াল (৭৩) আর শুভমন গিল (৩৮) মিলে ভারতের রানকে ৮৬ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে পরপর উইকেট চলে গেল। শুভমনের এই ইনিংসে আত্মবিশ্বাস ছিল। খেলছিলেন ব্যাটের মাঝখান দিয়ে। কিন্তু সেট হয়েও উইকেট দিয়ে আসা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন- শিখদের এই অপমান মেনে নেবে না বাংলা, ক্ষমা চাইতে হবে গদ্দার ও বিজেপিকে
যশস্বী অবশ্য নিজের খেলা খেলে গেলেন। ১১৭ বলে ৭৩। মনে হচ্ছিল আরও একটা সেঞ্চুরি তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু সেটা হতে দেননি বশির। তার আগে রজত পাতিদার (১৭) যখন আউট হলেন, বোর্ডে রান ১১২-৩। তাঁর জন্য সামনে ফিল্ডার রেখে বল করছিলেন বশির। মধ্যপ্রদেশ ব্যাটার তবু সেই ট্র্যাপে পড়লেন। টানা তিনটি টেস্ট সুযোগ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু সরফরাজ, জুরেল ও আকাশের মতো দাগ কাটতে পারেননি। রাহুল শেষ টেস্টে ফিরলে পাতিদারের জায়গা ঘোর সংকটে পড়বে।
জাদেজা ১২ রান করেছেন দু’বলে দুটি ছক্কার সাহায্যে। তবে ইনিংসকে আর টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। তাঁর মতোই বড় রান করতে পারেননি রবিচন্দ্রন অশ্বিনও (১)। প্রথমজন বশিরের শিকার। অশ্বিন উইকেট দিয়ে গেলেন টম হার্টলিকে। যিনি সরফরাজ খানকেও (১৪) ফিরিয়েছেন। তার আগে সরফরাজ একবার রান আউটের হাত থেকে বেঁচেছেন। কিন্তু ব্যাট উল্টোদিকে রেখে যেভাবে তিনি ডাইভ দিলেন, তার খুব সমালোচনা করলেন সুনীল গাভাসকর। তিনি বলেছেন, মুম্বইয়ের হয়ে রঞ্জি খেলা ব্যাটারের থেকে এমন ভুল আশা করা যায় না। ব্যাট সোজা ফেলতে হয়। না হলে হাওয়ায় থাকলে আউটের সম্ভাবনা থাকে।
অশ্বিন ১৭৭ রানে ফিরে যাওয়ার পর জুরেল আর কুলদীপ মিলে খুব জরুরি একটা পার্টনারশিপ খেলেছেন। মূলত এইজন্যই ভারতের রান ২১৯-৭ পর্যন্ত যেতে পেরেছে। ইংল্যান্ড এর আগে সকালে তাদের ইনিংস শেষ করেছে ৩৫৩ রানে। অলরাউন্ডার অলি রবিনসন করেছেন ৫৮ রান। আগের দিনের সেঞ্চুরি করা জো রুট নট আউট থেকে যান ১২২ রানে। শেষ দুই ব্যাটার বশির ও অ্যান্ডারসন কোনও রান করতে পারেননি। জাদেজা ৬৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। অশ্বিনের ঝুলিতে জমা পড়েছে ১টি উইকেট। এছাড়া দুই পেসার সিরিজ আকাশ নেন যথাক্রমে দুটি ও তিনটি উইকেট।