বিয়ের মরশুম। বিয়ের পরেই মধুচন্দ্রিমা। নবদম্পতিরা নিজেদের মধ্যে সময় কাটাবেন। নির্জনে। নিরিবিলিতে। দূরে কোথাও গিয়ে। কিন্তু কোথায় যাবেন সেই নিয়ে চলতে থাকে চিন্তাভাবনা, আলাপ-আলোচনা। পাহাড় যদি পছন্দের তালিকায় থাকে, তাহলে আদর্শ জায়গা হতে পারে লাংসেল। কালিম্পংয়ের ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। জলপাইগুড়ি থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে। পাথরঝোরা চা-বাগান থেকে ১২ কিলোমিটার চড়াই রাস্তা পার হয়ে পৌঁছানো যায়। একটা সময় ছিল যখন, কালিম্পং বেড়াতে গেলেই তালিকায় থাকত লাভা, লোলেগাঁওয়ের মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলো। তবে গত কয়েক বছরে ভ্রমণপিপাসুদের আদরের ছোঁয়া পেয়েছে লাংসেল। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই গ্রাম। পরিবেশ অতি মনোরম। না বেশি ঠান্ডা, না বেশি গরম। প্রিয়জনের সঙ্গে দু’দণ্ড সময় কাটাতে এমন আবহাওয়ার জুড়ি মেলা ভার। পাহাড় বেয়ে নেমে আসে ঝরনা। চঞ্চলা যুবতীর মতো। তাকালেই চোখের আরাম।
আরও পড়ুন-বঞ্চিতদের পাশে রাজ্য, ৫৯ লক্ষ জবকার্ড হোল্ডারকে টাকা, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
এখান থেকে ১০-১২ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভিউ পয়েন্ট। তার মধ্যে অন্যতম কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট এবং লেপচা হেরিটেজ ভিউ পয়েন্ট। কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখা যায় সূর্যাস্তের দৃশ্য। এককথায় অসাধারণ। আপনমনে হাঁটতে হাঁটতে ঘুরে নেওয়া যায় অন্যান্য ভিউ পয়েন্টগুলো। রয়েছে বেশকিছু চার্চ এবং মন্দির। সেখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়।
লাংসেলের বেশিরভাগ রাস্তাই মাটির। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। পাহাড়ের গায়ে এইরকম সাজানো-গোছানো গ্রাম যে থাকতে পারে, সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। যত খুশি ঘোরা যায়। শরীর এবং মনে ছোঁবে না ক্লান্তি। অ্যাডভেঞ্চার যাঁদের পছন্দ, তাঁরা ছোট ছোট ট্রেকও করতে পারেন। অবশ্যই দলবেঁধে। পাহাড়ি এলাকায় একা একা না ঘোরাই ভাল। জঙ্গলে রয়েছে বন্যপশু। যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে বিপদ।
আরও পড়ুন-বঞ্চিতদের পাশে রাজ্য, ৫৯ লক্ষ জবকার্ড হোল্ডারকে টাকা, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
চারপাশে সবুজের সমারোহ। নির্জন বনাঞ্চল। পাহাড়ি নদী আর পাখির কলতানে মাঝেমাঝে ব্যাকুল হয়ে উঠতে পারে মন। গোটা গ্রাম জুড়ে ছিমছাম কাঠের ঘর। আকাশে ভেসে বেড়ায় পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। প্রিয়জনের হাত ধরে হারিয়ে যেতে পারেন খোলামেলা পাহাড়ি পরিবেশে। নানা ধরনের ফুল চারপাশটা রঙিন করে তুলেছে। মাঝেমাঝে মনে হবে কেনও চিত্রকর যেন সব রং একসঙ্গে সাদা ক্যানভ্যাসে ছুঁড়ে দিয়েছে। ভরা বসন্তে দারুণ সব অর্কিড, রডোডেনড্রন এবং নাম না জানা অনেক ফুলের সমারোহে মন হারাতে বাধ্য।
এখানে এলে কফির চাষ দেখার সুযোগ রয়েছে। একেবারে অরগ্যানিক ফার্মিং। স্কোয়াস থেকে শুরু করে হলুদ-আদা সব কিছুর চাষ হয়। এখানকার অন্যতম একটি আকর্ষণের জায়গা হল এলাচের বাগান। অনেকেই ঘুরে দেখেন। গ্রামটিতে ঘুরতে ঘুরতে মনে হতে পারে বিদেশের কোনও কান্ট্রি সাইড লোকেশনে এসেছেন। রাতে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর মিটিমিটি আলোয় ভরে যাবে মন। আশপাশের আরও কিছু জায়গা ঘুরে দেখা যায়। তার মধ্যে রয়েছে গীতখোলা। গ্রামের পথে ট্রেকিং করে বা হাঁটতে হাঁটতেই পৌঁছে যাওয়া যায়। সেখানে রয়েছে ছোট্ট একটা ঝরনা। তার উপরে ব্রিটিশ আমলের তৈরি একটি ব্রিজ। পরে আবার নতুন একটি ঢালাই ব্রিজ পাশেই তৈরি হয়েছে। কাছেই রয়েছে থ্রি সিস্টার ফলস। পরপর তিনটি ঝরনা। তিনটি ঝরনার জল এসে মিশেছে গীতখোলা নদীতে। দূর থেকে দেখলে অনেকটা মেঘালয়ের সেভেন সিস্টার ফলসের মতো লাগে।
আরও পড়ুন-‘সিঙ্গুর হল সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম হল নন্দীগ্রাম’ সন্দেশখালি নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর
খুব কাছেই ঝান্ডি। বর্তমানে যেটা অন্যতম জনপ্রিয় ডেস্টিনেশন হয়ে উঠেছে। লাংসেল থেকে সেখানকার দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। যদি ভোরে উঠতে পারেন, তাহলে ঝাণ্ডির সূর্যোদয় দেখার মতো। কোনওভাবেই মিস করবেন না। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস, লাংসেল বেড়ানোর আদর্শ সময়। কী ভাবছেন? যাবেন? চটপট ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিন। হাতছানি দেয় পাহাড়ি গ্রামটি।
আরও পড়ুন-হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু রাজীব গান্ধী হত্যা মামলার দোষী সান্থনের
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে দূরপাল্লার ট্রেন। নামতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে কালিম্পং। তারপর আরও একটি গাড়িতে অল্প কিছুক্ষণের পথ গেলেই পৌঁছবেন লাংসেলে। গজলডোবা দিয়েও যাওয়া যায়। ওদলাবাড়ি হয়ে। কালিম্পং থেকে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মতো গাড়ি ভাড়া। শিলিগুড়ি থেকে গেলে ভাড়া বেশি পড়বে। ৩৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকার মতো। গাড়িতে ওঠার আগেই বিস্তারিত জেনে নেবেন। যাওয়া যায় আকাশপথেও। বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব ৪৭ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন?
লাংসেলে বেশ কয়েকটি সুন্দর হোম-স্টে রয়েছে। যাওয়ার আগে সেইগুলোর মধ্যে কোনও একটি বেছে নিতে পারেন। অনলাইনে বুকিং করা যায়। হোম-স্টেতে মাথাপিছু খরচ প্রতিদিন ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকার মতো।