বিগত ১০ বছরে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর থেকেই গণতন্ত্রের সব স্তম্ভগুলিতেই কুঠারাঘাত সম্পন্ন হয়েছে। দেশের যুক্তরাস্ট্রীয় কাঠামো, ধর্মনিরপেক্ষতা, রাজ্যের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জায়গাগুলোকে ধ্বংস করার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে ।
২০২১-এ ‘আবকি বার দোশো পার’ স্লোগান দেওয়া বিজেপিকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বাংলা তাঁর নিজের মেয়েকেই চেয়েছিল। রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২১৩+ আসনে জয়ী করেছেন বাংলার মানুষ। মানুষের ভোটে হেরে যাওয়ার সেই রাগ থেকেই কি আপনি রাজনৈতিকভাবে না পেরে প্রতিশোধস্পৃহা চরিতার্থ করতে সিবিআই/ইডি/ইনকাম ট্যাক্স ইত্যাদি কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে কাজে লাগাচ্ছেন? পাশাপাশি একশ্রেণির মিডিয়ার সাহায্যে সুকৌশলে শুরু করেছেন রাজ্যকে অস্থির করে তোলার অপপ্রয়াস?
আরও পড়ুন-দেবলোকে নারীবাদ
এরই সমান্তরালে চলছে নিরন্তর বঞ্চনা। ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করে দিয়ে রাজ্যকে অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া করে দেওয়ার প্রয়াসও সমানভাবে চালিয়ে যাচ্ছে আপনার সরকার । তাই তো?
নানা অছিলায় রাজ্যের প্রায় ১ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি ন্যায্য প্রাপ্য অর্থ আটকে রেখেছেন আপনি। আর এ ঘটনা আজ শুধু বাংলায় না, দেশের সব অবিজেপি রাজ্যের সঙ্গেই এই বৈমাতৃসুলভ আচরণে তৎপর মোদিজির সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথেই কর্নাটকের কংগ্রেসের সরকার, কেরলের সিপিএমের নেতৃত্বাধীন সরকারের মুখ্যমন্ত্রীরা বিজেপির এই অন্যায়ের প্রতিবাদে দিল্লিতে ধরনা-অবস্থানের ডাক দিয়েছেন, যদিও এ-রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস এবং বঙ্গ সিপিএমের নেতারা ব্যস্ত বিজেপির দালালি করতে, তাঁদের তাঁবেদারি করতে ।
ক্ষমতায় আসার বছর দুয়েক পরে রেলেরই এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দাবি ছিল, দেশের রেল-পরিষেবা উন্নত এবং আর্থিক ভাবে সবল হলে দেশেরই লাভ। তার পর কেটে গিয়েছে প্রায় একটি দশক। আরও একটি লোকসভা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে, দেশের ‘নির্বাচনী সংস্কৃতির ঐতিহ্য’ বজায় রেখে ভোটের মুখে ‘জনগণের উদ্দেশ্যে’ ৪১,০০০ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে দু’হাজারেরও বেশি রেল-পরিকাঠামো প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন মোদি। সেই সঙ্গে দাবি করেছেন, পূর্বে যেখানে রেল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হত, আজ সেখানে পরিবর্তনের হাওয়া। দুর্নীতি না থাকায় এই ক্ষেত্রে অনেক অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে এবং করদাতাদের প্রতিটি পয়সা যাত্রীদের কল্যাণে খরচ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-উত্তর থেকে দক্ষিণে পাঁচটি মেগা জনসভা করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
জেনে শুনে আপনি মিথ্যে বলছেন না কি? আর সেদিক থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই কি এখন নানা বাহানা খুঁজে চলেছেন?
ফেকুজি বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার জন্য পশ্চিমবঙ্গে রেল প্রকল্পগুলোতে অগ্রগতি হচ্ছে না। কিন্ত আমরা জানি, রেল-পরিকাঠামো সম্প্রসারণের জন্য বর্তমান সরকার গোড়া থেকেই বাজারের ঋণের উপরে নির্ভর করেছে। অন্যদিকে, সপ্তম বেতন কমিশন চালু হওয়ায় বেতন ও পেনশনের খরচ বেড়েছে। বিবিধ কারণে রেলের পণ্য পরিবহণ বাবদ আয়ও কমেছে, ফলে যাত্রী-ভাড়ায় ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া যায়নি। রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষণ কোষ তহবিলের অর্থ অফিসের আসবাব, এমনকী বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। এর পাশাপাশি খারাপ রক্ষণাবেক্ষণ, রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস করতে সাধারণ কামরা কমানো এবং সময়ানুবর্তিতার অভাবও আয়ের পথে বাধা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তো এসবের জন্য দায়ী নয়। তাই না মোদিজি?
আপনি ও আপনার পারিষদবর্গ একটি অভ্যাস রপ্ত করেছেন— যে কোনও ব্যর্থতাকে আপনারা কথার ভাঁজে সাফল্য হিসাবে তুলে ধরতে চান। রেলের আর্থিক অস্বাস্থ্যকেও আপনারা স্বাস্থ্যে ফেরার নির্ভুল লক্ষণ হিসাবে প্রচার করছেন আর যা করতে পারছেন না, যা করার মুরোদ আপনাদের নেই, তার দায় ঠেলে দিচ্ছেন মা-মাটি-মানুষের সরকারের কাঁধে। তাই না মোদিজি?
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বিরোধীদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছে
বাংলার মানুষের স্বার্থে লড়াই করার কোনও ইস্যু নেই। তাই খড়কুটোর মতো এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সেইসঙ্গে সন্দেশখালির ঘটনাকে আঁকড়ে ধরছেন। কিন্তু একটিবারের জন্যও মন কাঁদল না মণিপুর, উন্নাও, হাতরাসের ঘটনায়? যখন মণিপুরে মেয়েদের বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয়েছিল, যখন গণধর্ষণ হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে, যৌননিগ্রহ করা হয়েছিল মহিলা কুস্তিগিরদের, তখন দেশ কেঁদেছে, কিন্তু কিছুই চোখে পড়েনি নরেন্দ্র মোদির। জানতে চাই, মোদিজির উদ্বেগ কি ঘটনা-বেছে-বেছে আসে? সন্দেশখালির ঘটনায় রাজ্য পুলিস অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। মোদি যদি এতই গ্যারান্টি দেন, তাহলে ইডি তাকে ধরতে পারল না কেন? কলকাতাকে নিরাপদতম শহরের তকমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারেরই রিপোর্ট। যেখানে বাংলার মেয়েরা সুরিক্ষত, সেখানে মোদিজির উচিত বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির দিকে তাকানো। আরে, আপনার বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে গিয়েই তো দুর্নীতিগ্রস্ত লোকগুলো ধোয়া তুলসীপাতা হয়ে যাচ্ছেন।
দূরবিন লাগবে না। আপনার পাশেই তাকান। আপনার মঞ্চে উপবিষ্ট রাজ্যের বিরোধী দলনেতার নামেও তো অভিযোগ রয়েছে সিবিআইয়ের খাতায়। তাঁকে ধরার মুরোদ তো হচ্ছে না আপনাদের?
আরও পড়ুন-ডেবরার প্রস্তুতিসভায় লোকসভা ভোটে একজোট হয়ে লড়ার বার্তা দিলেন সুব্রত
আমরা বুঝে গেছি। আপনার বক্তব্য হল ‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতির গ্যারান্টি।’ ২০২২ সালের মধ্যে পাকা ছাদ করে দেবেন বলেছিলেন, কিন্তু পারেননি। প্রতিশ্রুতিমতো বছরে দু’কোটি চাকরি দেননি, ১৫ লক্ষ টাকাও দেননি কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। ফের ভাঁওতা দিচ্ছেন আর একটি লোকসভা ভোটের মুখে এসে। কেন্দ্র থেকে শতাধিক টিম এল, তাদের রিপোর্টে কোথাও দুর্নীতির কথা নেই, অথচ নরেন্দ্র মোদি মনরেগা শ্রমিকদের প্রাপ্য টাকা দিলেন না। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন, তখন ‘ফাঁপা গ্যারান্টি’ আওড়ালেন প্রধানমন্ত্রী! কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে বাংলার মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাহস হল না!
বাংলায় এসেছেন যখন, তখন এইসব প্রশ্নের উত্তরগুলো দিয়ে যাবেন, প্লিজ।
‘আয়ে হো তো বতা কে যাও’।