অলোক সরকার: শনিবার ইডেনে ঘণ্টা বাজালেন মিচেল স্টার্ক। বলা ছিল গৌতম গম্ভীরকেও।
তিনি গম্ভীর বলেই ব্যাক আপ রাখা ছিল। কেউ জানে না গোতি কা গুসসা কিউ আতা হ্যায়। কখন কী করেন। আসলে তিনি এই। একরোখা। একগুঁয়ে। কিন্তু ক্রিকেট স্ট্র্যাটেজিস্ট। ধরুন, শনিবারের ম্যাচ। রানা, বরুণদের সামনে রেখে ছক সাজিয়েছিলেন। পিছনে নারিন, সুয়শ, রাসেল। পরের দিকে এই বোলিংটাই সামলাতে পারেনি সানরাইজার্স। আস্কিং রেট চড়তে থাকল। বেড়ে গেল চাপ। তারমধ্যে ক্লাসেন লড়লেন। ২৯ বলে ৬৩ রান। তবু চাপ সামলাতে না পেরে তাঁরা হেরে গেলেন ৪ রানে।
আরও পড়ুন-এনআরসি আতঙ্কে আত্মঘাতী, বাড়িতে গেলেন মমতাবালা
চার উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ডাগ আউট টিভি ক্যামেরা ধরল পণ্ডিত, গম্ভীরকে। উইকেটে তখনও ক্লাসেন। চিন্তান্বিত কোচ। তবে মেন্টর শুধু মাপছেন। শ্রেয়স আগের দিন বলছিলেন, গোতি স্যার থাকায় আমাদের কাজ সহজ হয়েছে। সবাই জানে কাকে কী করতে হবে। রাসেল ঝড় তুলে গেলেন। বোর্ডে দু’শো প্লাস। পরেরদিকে সেই রাসেল, রানা, নারিন, বরুণরা ভাঙলেন। কঠিন অঙ্ক জয় করে পুরো পয়েন্ট পেল কিং খানের দল।
১০ ওভারে হায়দারাবাদের রান ছিল ৯৯/২। ম্যাচ তখন সমান-সমান। রাতের দিকে শিশির পড়ার যে ব্যাপারটা থাকে, সেটা মার্চের কলকাতায় নেই। কিন্তু বরুণ চক্রবর্তী যদি ত্রিপাঠীর ওই লোপ্পা ক্যাচ নিতে পারতেন, তাহলে সানরাইজার্স এতদূর আসত না। এই লেভেলের ক্রিকেটে এগুলো সিটার। রিঙ্কু সেই ভুল করেননি। বরুণের বলে মার্করাম ফিরেছেন ১৮ রানে। তার আগে মায়াঙ্ক ও অভিষেক শর্মা দুজনেই ৩২ রান করে ফিরে গিয়েছেন। একটা সময় বিনা উইকেট ৬০ রান উঠে গিয়েছিল তাঁদের। শেষ লড়াইটা অবশ্য তোলা ছিল ক্লাসেনের জন্য।
আরও পড়ুন-চন্দ্রনাথের বাড়িতে ইডি, নেত্রীর ফোন
তার আগে বিধ্বংসী রাসেলকে ফিরে পেল ইডেন। রোম্যান্টিক ক্রিকেট আর মাসল পাওয়ার মিশে গেলে যেটা হয়, সেটাই আন্দ্রে রাসেল। ২৫ বলে ৬৪ নট আউট থেকে কেকেআরকে ২০৮/৭-এ নিয়ে গেলেন তিনি। ফিল সল্ট যখন আউট হলেন, নাইটরা ১১৯/৬। সেখান থেকে রিঙ্কুকে (২৩) সঙ্গে নিয়ে ৮১ রানের পার্টনারশিপ। এটা না হলে কিছুতেই দু’শো পার করত না কেকেআর।
স্রেফ ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেছিলেন জামাইকান অলরাউন্ডার। হাঁটু গেড়ে কভারের উপর দিয়ে ছক্কা, ফ্লিকে স্কোয়ার লেগের উপর দিয়ে আরও এক ছক্কা। লাগাতার এসবই দেখল শনিবাসরীয় ইডেন। তিনটি বাউন্ডারি, সাত ছক্কায় মোড়া রাসেলের এই ইনিংস। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে রাসেলের সাতে নামা নিয়ে। এমন ভয়ঙ্কর ফর্মে থাকা লোককে যত বেশি বল দেওয়া যায় ততই ভাল। কিন্তু রাসেলকে পিছনে ঠেলার এই ব্যাপারটা গম্ভীরের আমলেও বদলাল না! তিনি সাতে নামবেন কেন?
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
গুরবাজকে বাইরে রেখে কেকেআর যে এই ম্যাচে ফিল সল্টকে খেলাবে, সেটা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু পিঞ্চ হিটার নারিনকে শুরুতে এনে সেই পুরনো চমক দিলেন গম্ভীর। নারিনের (২) রান আউট অবশ্য অবাক করল। সল্ট মার্কো জেনসেনকে গালিতে ট্যাপ করে ক্রিজ থেকে নড়েননি। নারিন তবু হুড়মুড় করে মাঝ ক্রিজে চলে এলেন।
২৩ রানে প্রথম উইকেট। দ্বিতীয় ওভারে। সেটাই চার ওভারে ৩২/৩ হয়ে গেল। তিনে নেমে ভেঙ্কটেশ আইয়ার (৭) নটরাজনের শিকার হলেন। শ্রেয়সও (০) নটরাজনের শিকার। আইপিএলে একদা উল্কার গতিতে উত্থান ঘটেছিল দক্ষিণী পেসারের। চোট তাঁকে মেন স্ট্রিম ক্রিকেটের বাইরে রেখেছে দীর্ঘদিন। বাঁহাতি নটরাজন প্রথম ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়ে পুরনো দিনকে সামনে নিয়ে এলেন। মারাত্নক স্লোয়ার দিলেন এদিন।
আরও পড়ুন-দলের পাশে থাকতে হবে, বলেছিলাম নিজেকে
কামিন্স টস জিতে নাইটদের ব্যাট করতে দেওয়ার আগেই ইডেনে বার্তা ছুটেছিল, শাহরুখ শহরে পা রেখেছেন। তবে বাদশাহ এলেন পরে। এটাই অভ্যেস। খেলা কিছুটা গড়িয়ে যাওয়ার পর মাঠে আসেন। শাহরুখ যখন ইডেনে ঢুকলেন, ঘড়ির কাঁটা আটটা ছাড়িয়েছে। কেকেআর ৪৩/৩। কিং খান নিজের চেনা স্টাইলে গ্যালারির দিকে হাত ছড়িয়ে দিতেই উদ্বেল হল সোনালি-বেগুনি গ্যালারি।
১০ ওভারে কেকেআর ছিল ৭৭/৪। তার আগে নীতীশ রানা (৯) ফিরে গিয়েছেন মার্কাণ্ডের বলে। মুশকিল হচ্ছে উইকেটে কোনও জুজু না থাকলেও নাইটরা পরপর উইকেট দিয়ে গেলেন। তবে স্বস্তি ছিল এটাই যে, যাঁর হাতে বল দেখতে উন্মুখ ছিল জনতা সেই কামিন্স প্রথম দুই ওভারে ২০ রান দিয়ে উইকেটের মুখ দেখেননি। ততক্ষণে অবশ্য রমনদীপ (৩৫) আর সল্ট(৫৪) দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। রমনদীপকে দ্বিতীয় স্পেলে এসেই তুলে নেন কামিন্স। পরের ওভারে সল্টকে ফিরিয়ে দেন মার্কান্ডে।
তারপর বাকিটা রিঙ্কু-রাসেল অধ্যায়। রিঙ্কুর পাঁচ ছক্কার গল্প এখন অমর আখ্যান আইপিএলে। প্রথম ম্যাচে রাসেল পাওয়ারও দেখা গেল আগের মতোই। সবমিলিয়ে ভালই শুরু করল কেকেআর। বাকিটা পরের অধ্যায়।