নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ‘রক্তবীজ’-এর স্পেশাল ব্রাঞ্চের দুঁদে পুলিশ অফিসার পঙ্কজ সিংহ এবং পুলিশ আধিকারিক সংযুক্তা মিত্র এবার নতুন অবতারে। নাম পাবলো আর অদিতি। পঙ্কজ আর সংযুক্তার দেখা হয়েছিল একটা স্পেশাল মিশনে। ছবিতে তাঁরা নায়ক-নায়িকার ভূমিকায় হলেও ঠিক তথাকথিত নায়ক-নায়িকা হয়ে ওঠেননি। সেখানে প্রেম নয় ছিল আদর্শ, কতর্ব্যের লড়াই। প্রথমে বিরুদ্ধে থেকেও পরে একযোগে মিশন ইমপসিবলকে পসিবল করে করেছিলেন তাঁরা। এবার আর লড়াই নয় নিখাদ সরল প্রেমের দমকা হাওয়ায় ভাসলেন পাবলো আর অদিতি ওরফে অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায় এবং মিমি চক্রবর্তী। আজ মুক্তি পাচ্ছে প্রেমেন্দুবিকাশ চাকীর নতুন ছবি ‘আলাপ’। যেখানে নতুন রসায়ন গড়তে চলেছেন তাঁরা। ‘রক্তবীজ’-এর রুক্ষতা কাটিয়ে অনেক নরম আলাপচারিতায় এই দুই সুপারহিট জোড়ি। ছবির ধরনটা সম্পূর্ণ আলাদা। চরিত্ররাও আলাদা এবং তাঁদের বডি ল্যাঙ্গোয়েজও আলাদা। তাই আগের ইমেজ ভেঙে ছবিতে সম্পূর্ণ নতুন করে নিজেদের উপস্থিত করেছেন আবির এবং মিমি। গল্পটাও একেবারেই অন্যরকম। ভাললাগা ও ভালবাসার টানাপোড়েন, জটিলতা, মজা, হাসি— সবটা নিয়ে একটা সুন্দর প্রেমের গল্প বলেছেন পরিচালক।
আরও পড়ুন-কচিকাঁচাদের সঙ্গে ফুটবল খেলে ৫১তম জন্মদিন পালন শচীনের
ছবির বিষয়ভাবনা নিয়ে পরিচালক প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী জানান, আমাদের সময় সম্পর্ক, প্রেম অত সহজ ব্যাপার ছিল না। অনেক সময়, সংগ্রাম এবং পরিশ্রম লাগত। আজকের প্রজন্মের জন্য প্রেম সম্পর্কগুলো সহজেই তৈরি হয় এবং অনায়াসে ভেঙে যায় কারণ পছন্দ, ভাললাগা এবং ভালবাসার মধ্যের ফারাকটা তারা বোঝে না। প্রেমের ধরনটা একদম বদলে গেছে, পুরোটাই ভার্চুয়াল। হাতে লেখা চিঠি নেই, অপেক্ষা নেই। এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়েও দুটো মানুষ একে অপরকে না দেখেও প্রেমে পড়ে! মিষ্টি একটা অনুভূতি রয়েছে গোটা ছবি জুড়ে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটা সময় জীবনে ভাললাগা এবং ভালবাসার মাঝের দ্বন্দ্বে পড়েছি। দুটো আবেগ নিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছি। স্কুলে একটি মেয়ের আমার সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খেত আমি তার প্রেমে পড়েছিলাম। পরে বুঝেছিলাম ওটা ভাললাগা, ভালবাসা নয়। আমরা একে অপরকে শুধু পছন্দ করতাম। কেউ যদি প্রেমে ব্যর্থতার অনুভূতি না পায় তাহলে সত্যি ভালবাসার আসল মানেটাই কখনও বুঝবে না। আমার এই অভিজ্ঞতাই ‘আলাপ’ ছবির অনুপ্রেরণা বলা যায়।
আরও পড়ুন-দোম্মারাজু গুকেশের জয় কোনও ‘ফ্লুক’ নয়
এই ছবির কেন্দ্রে রয়েছেন তিনজন পাবলো মজুমদার, অদিতি মিত্র এবং স্বাতীলেখা সেন। তিনজনে তিনটে আলাদা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। স্বাধীন চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। পাবলো তাঁর কর্পোরেট জীবনে বেশ সফল। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে বিশেষত সম্পর্কের ক্ষেত্রে খানিক কনফিউজড বলা যায়। কোনও কমিটমেন্টে যেতে সে আদৌ প্রস্তুত কি না তা সে নিজেও জানে না। এহেন পাবলোর জীবনে দুই নারী অদিতি এবং স্বাতীলেখা। মজার বিষয় হল একই ফ্ল্যাট শেয়ার করেও পাবলো আর অদিতি কেউ কাউকে দেখেনি, চেনে না, শুধু অনুভব করেছে একে অপরকে অনুপস্থিতির মধ্যেও। ভার্চুয়াল প্রেমের যুগে নায়ক-নায়িকা নিজেদের প্রকৃত অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারে না। কমেডির রসদ নিয়ে এগোয় পুরো গল্প। কোথায় গিয়ে এই গল্প বাঁক নেয় সেটাই দেখবেন দর্শক।
আরও পড়ুন-প্রার্থী অরূপের হয়ে প্রচারে ঝাঁপাল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ
এই ছবি প্রসঙ্গে অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এটা খুব মিষ্টি, মজার, রোম্যান্টিক ছবি। আকর্ষণীয় একটা ওল্ড স্কুল রোম্যান্টিক ড্রামা বলা যায়। চাকীদা একজন আন্ডাররেটেড পরিচালক এবং তিনি যেভাবে গল্প বলেন তা অনন্য। আমি ওঁর সঙ্গে ডিওপি হিসাবে কাজ করেছি এবং ওঁকে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিনি। ১০-১২ বছর আগে, চাকীদা মিমি এবং আমাকে একসঙ্গে একটি ছবির প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটি হয়নি। অবশেষে, কাজটা হল। এই ছবির সঙ্গে সবাই নিজেকে রিলেট করতে পারবে। ছবিটা নতুন জেনারেশনের। চরিত্রেরা সব অল্পবয়সি যারা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায় এবং সেই অনুযায়ী নিজের জীবনের লক্ষ্য বেছে নিয়েছে। কোনও সম্পর্কই জীবনের সুনির্দিষ্ট পথে চলে না। প্রতিটা মানুষ আলাদা। তাদের বুঝতে সময় লাগে তারা আসলে নিজেরা কী চায় এই ছবি সেই কথাই বলবে।’
আবিরের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে মিমি বললেন, ‘আবিরদা আমার কাছে পরিবারের মতো। যখন আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাউকে চিনতাম না, তখন আবিরদা আমার পাশে ছিলেন। আবিরদার সঙ্গে যেকোনও বিষয় নিয়ে আমি আজও আলোচনা করতে পারি। আমাদের দুজনের মধ্যে দারুণ একটা বোঝাপড়া রয়েছে। এই গল্পে আমাদের রসায়ন সবার ভাল লাগবে আশা করি।’
আরও পড়ুন-প্রার্থী অরূপের হয়ে প্রচারে ঝাঁপাল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ
অভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্ত এই ছবির খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে রয়েছেন। যে চরিত্রটির অনস্ক্রিন নাম স্বাতীলেখা। এই ছবিতে তাঁর চরিত্র প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, আমি যদি স্বাতীলেখার মতো হতাম যে জানে সে জীবনে ঠিক কী চায় তাহলে হয়তো আমার জীবনটা আরও অন্যরকম হত। খুব ইন্টারেস্টিং একটা চরিত্র। শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘খুব সুন্দর মনের দুজন মানুষের সঙ্গে অভিনয় করছি। তাই শ্যুটিংটা খুব এনজয় করেছি।’
রোম্যান্টিক কমেডি ঘরানার এই ছবিতে হাসি মজার ছলেই উঠে আসবে সম্পর্কের জটিলতা, প্রেম, প্রতিশ্রুতির বিষয়গুলো। প্রেম, বন্ধুত্ব, ভাললাগা, ভালবাসা ছাড়াও নিজেকে চেনার, নিজেকে আবিষ্কার করার গল্প হল ‘আলাপ’। ছবির প্রযোজনায় সুরিন্দর ফিল্মস। চিত্রনাট্য লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। সঙ্গীতের দায়িত্বে থাকছেন অনুপম রায়। লগ্নজিতা চক্রবর্তী, শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে শোনা যাবে অনবদ্য কিছু গান। মিমি, আবির, স্বস্তিকা ছাড়াও ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায়। এছাড়া রয়েছেন তন্নি লাহা রায় ও কিঞ্জল নন্দা প্রমুখ।