তীব্রতা কিছুটা কমেছে। তবে গরম কমেনি। কাগজে কলমে গ্রীষ্ম শেষ হতে ঢের বাকি। এরমধ্যে কোথাও ঘুরে আসার কথা ভাবছেন? এমন কোনও জায়গায়, যেখানে নেই গরমের চোখ রাঙানি? আমাদের রাজ্যে আছে কয়েকটি সুন্দর শৈলশহর। রাজ্যের বাইরে যেতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন হাফলং। অসমের একমাত্র শৈলশহর এবং ওই রাজ্যের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটনক্ষেত্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা প্রায় ২২৩০ ফিট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। যেন কোনও শিল্পীর আঁকা। দেখলেই ছন্দ জেগে উঠবে কবিমনে।
আরও পড়ুন-আজ মুখ্যমন্ত্রীর দুই সভা, রোড-শো নিয়ে আগ্রহে মানুষ
ডিমাসা ভাষায় হাঁফলাঁও শব্দের অর্থ সাদা উইপোকার ঢিবি। এই হাঁফলাঁও থেকেই এসেছে হাফলং শব্দটি। এখানে আছে একটি সুন্দর ম্যাল। অনেকটা দার্জিলিংয়ের ম্যালের মতো। পাহাড় জুড়ে শুধু সবুজের সমারোহ। নানারকমের গাছপালা। কিছু চেনা, কিছু অচেনা। পাইন এবং নীল অর্কিড জায়গাটির শোভা বাড়িয়েছে। দেখা যায় নাসপাতি, আনারস, কমলালেবু প্রভৃতি ফলের গাছ।
অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে পূর্ব হিমালয়ের ছোট্ট এই শৈলশহরটি যেন স্বর্গরাজ্য। ট্রেকিং, প্যারাগ্লাইডিং-সহ নানা অ্যাডভেঞ্চার বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। রোমাঞ্চকর অভিযানে যান বহু মানুষ। হাফলং শহরে মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। যেমন দিমাসা কাছারি, বোরো কাছারি, নাগা, কার্বি, খাসি। অফিস-কাছারিতে কাজ করা এবং ব্যবসায়ী মানুষজন মূলত অসমিয়া, বাঙালি, নেপালি। স্থানীয় বাসিন্দারা দারুণ অতিথিবৎসল। ঠোঁটের কোণে লেগে রয়েছে হাসি। বরাক নদীর উপত্যকার এই পাহাড়ি শহরের আকর্ষণীয় খাবার হল ডিম পোলাও। নিউ হাফলং স্টেশনে নামলে চোখে পড়বে সারি সারি খাবারের দোকান। সেই সব দোকানে বিক্রি হয় পোলাও আর ডিমের কারি। কোনও কোনও দোকানে পাওয়া যায় ডিম দেওয়া পোলাও।
আরও পড়ুন-দিঘায় যাওয়ার পথে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
শহরে এবং আশপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হল হাফলং হ্রদ। শান্ত হ্রদের পাশে চুপচাপ বসে সূর্যাস্ত দেখতে দারুণ লাগে। এখানে স্থানীয় ও বিদেশি পর্যটকদের আড্ডা জমে। হ্রদের জলে ভেসে বেড়ায় মাছ। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধারের দিকে আসে। মানুষের ছুঁড়ে দেওয়া খাবার খায়। এখানে নৌকাবিহার করতেও দারুণ লাগে। বিশেষত সূর্য পাটে যাওয়ার সময়। কাছেই আছে সুন্দর একটি চার্চ।
হাফলং থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পানিমুর জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাতটি দূর থেকে দেখলে মনে হবে, জল নয়, পাহাড়ের উপর থেকে দুধের স্রোত গড়িয়ে পড়ছে। জলপ্রপাতটি আসলে অসমের কপিলি নদীর এক অশান্ত রূপ। নদীটির জল স্বচ্ছ। পাথুরে পথ পেরিয়ে নিচের পাথরে আছড়ে পড়ে পানিমুর জলপ্রপাত নাম নিয়েছে। এখানকার কাছাকাছি রেল স্টেশন লামডিং। পানিমুর পৌঁছনো যায় সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে। চাইলে জলপ্রপাত এলাকায় এক রাত কাটিয়ে আসা যায়। থাকার জন্য রয়েছে ফরেস্ট ইনস্পেকশন বাংলো। তার জন্য আগে থেকে বুকিং করতে হয়।
জলপ্রপাত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত থুরুক গ্রাম। মাঝে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল গ্রামটি। শীতের মরশুমে সাদা বরফে ঢেকে গিয়েছিল এলাকা। সেই বরফ দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন পর্যটকরা। সমস্যা একটাই— গ্রামে যাওয়ার জন্য কোনও পাকা সড়ক নেই। মাটি কেটে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। নেই উপযুক্ত পর্যটন সুবিধাও। ফলে চাইলেও পর্যটকরা গ্রামে রাত কাটাতে পারেন না।
আরও পড়ুন-হাওড়ায় প্রসূনের সমর্থনে পা মেলাল আমজনতা, জনস্রোতে মধ্যমণি দলনেত্রী
অসমের কাছাড় জেলায় অবস্থিত একটি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য হল বরাইল। এই জেলারই উত্তর কাছাড় রিজার্ভ ফরেস্ট এবং বরাইল রিজার্ভ ফরেস্ট সংযুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে অভয়ারণ্যটি। আয়তন মোটামুটি ৩২৬.২৪ বর্গকিলোমিটার। এটা মূলত পার্বত্য বনাঞ্চল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অরণ্যের কিছু কিছু অংশের উচ্চতা প্রায় ১৫০০ মিটার। এই বনাঞ্চলে চিরসবুজ এবং অর্ধ চিরসবুজ বৃক্ষ দেখা যায়। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস, বাঁশ এবং অর্কিড। জঙ্গল সাফারির সময় চিতাবাঘ, বন বিড়াল, উল্লুক, ভালুক, হাতি, হনুমানদের দেখা মিলতে পারে। চোখে পড়তে পারে কাও ধনেশ, হাড়গিলার মতো পাখি। এছাড়াও ফেঁটিসাপ, পাইথন, কচ্ছপ। হাফলং থেকে অনায়াসেই ঘুরে আসা যায়।
দারুণ জায়গা জাটিঙ্গা গ্রাম। অবস্থান হাফলং থেকে মাত্র সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এই গ্রামের বার্ড ওয়াচিং সেন্টারটি অবশ্যই ঘুরে দেখতে হবে। এই সেন্টার থেকে পাখিদের ওড়া দেখা যায়।
শৈলশহর হাফলং মোটামুটি সারা বছর শীতের চাদরে মোড়া থাকে। গরমের হাত থেকে কিছুদিনের জন্য রক্ষা পেতে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন। দূর হয়ে যাবে শরীর ও মনের ক্লান্তি।
আরও পড়ুন-হাওড়ায় প্রসূনের সমর্থনে পা মেলাল আমজনতা, জনস্রোতে মধ্যমণি দলনেত্রী
কীভাবে যাবেন?
আকাশপথে গেলে কলকাতা থেকে যেতে হবে শিলচর। সেখান থেকে হাফলং ট্রেনে ১০০ কিলোমিটার। শিয়ালদহ থেকে সরাসরি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসেও হাফলং যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
হাফলংয়ে আছে বেশকিছু হোটেল, গেস্ট হাউস, হোমস্টে। ফলে থাকা এবং খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। তবে যাওয়ার আগে বুকিং করে গেলেই ভাল। কারণ সারা বছরই পর্যটকের ভিড় থাকে।