প্রতিবেদন : সাধারণত যখন কোনও রাজনৈতিক দল কোনও প্রতিশ্রুতি দেয় তখন তা রাখবে না বলেই দেয়। কিন্তু মেঘালয়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি নয়, দশ অঙ্গীকার করেছে, যা শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও রক্ষা করব আমরা। কারণ তৃণমূল কংগ্রেস একমাত্র দল যারা কথা দিলে কথা রাখে। বাংলায় সেটা আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। বক্তা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-একুশের ডায়েরি
শনিবার মেঘালয়ের খাসি হিলসের অন্তর্গত মিলিয়েমের উমলিংকায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি। একইসঙ্গে অভিষেক বলেন, মেঘালয়ের মানুষের ভাষা খাসি ও গারোকে অষ্টম অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস। স্থানীয় মানুষের বোঝার সুবিধার্থে শনিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণ এক স্থানীয় যুবকের মাধ্যমে অনুবাদ করে শোনানোর ব্যবস্থা করেন। এ-বিষয়ে অভিষেক শুরুতেই বলেন, আমি মনে করি যে কোনও জায়গায় তার স্থানীয় ভাষাতেই কথা বলা উচিত। আমি এখনও আপনাদের ভাষা রপ্ত করে উঠতে পারিনি। কিন্তু কথা দিচ্ছি এরপর যখন মেইলিমে আসব তখন আপনাদের সঙ্গে আপনাদের ভাষায় কথা বলব। একথা শোনা-মাত্র ভিড়ে ঠাসা সভায় হাততালির ঝড় ওঠে।
আরও পড়ুন-আত্মজাগানিয়া শ্রীরামকৃষ্ণ
শাসক দল এনপিপি ও বিজেপিকে তুলোধনা করে অভিষেক বলেন, গোটা দেশের মধ্যে মেঘালয় এমন একটি রাজ্য যেখানে কোনও মেডিক্যাল কলেজ নেই। এরপর বাংলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, শুনলে খুশি হবেন বাংলায় ২৩ জেলা এবং ২৩টি মেডিক্যাল কলেজ। এখানে ১২ জেলা, প্রতিটি জেলায় অন্তত একটা করে মেডিক্যাল কলেজ হওয়া উচিত। একইসঙ্গে মুখরোর হত্যাকাণ্ড নিয়ে এনপিপি সরকারকে তোপ দেগে তিনি বলেন, অসম পুলিশের গুলিতে মেঘালয়ের ৫ জন কৃষক মারা গেল। কেন মুখ্যমন্ত্রী কোনও তদন্ত করলেন না? তদন্ত ছাড়ুন কেন একটা নোটিশও দেওয়া হল না। কারণ উনি দিল্লি ও গুয়াহাটির কাছে নিজের শিরদাঁড়া বিক্রি করেছেন। উনি জানেন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হলে ওনার বাড়িতে ইডি-সিবিআই নোটিশ পাঠাবে। আপনারা কি এই পুতুল সরকার চান? না এমন কাউকে চান যে আপনাদের জন্য লড়াই করবে? তাঁর সংযোজন, মেঘালয়ের মতো বাংলাতেও একাধিক রাজ্যের বর্ডার রয়েছে। কিন্তু কারও ক্ষমতা নেই গুলি চালাবে। কারণ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেঘালয়েও এমন কাউকে দরকার যার শিরদাঁড়া শক্ত। যে এখানের মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করবে।
আরও পড়ুন-চৈতন্যের আলো
এ-ছাড়াও মেঘালয়ের মানুষের ভাষা খাসি ও গারোকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবি তুলে অভিষেক বলেন, ‘‘এতদিন মেঘালয়ের মানুষের মাতৃভাষা খাসি ও গারোকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার দাবি এখানকার কোনও সাংসদ তোলেননি। কিন্তু আমরা সংসদে একাধিকবার এই দাবিতে সরব হয়েছি। আগামী ২৭ তারিখ ভোট দেওয়ার সময় মাথায় রাখবেন আপনারা শুধু দুর্নীতিগ্রস্ত এনপিপিকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে ভোট দেবেন না, আপনারা ভোট দেবেন আগামী ৫ বছর মেঘালয়ের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে, মেঘালয়কে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছতে, এই রাজ্যের হারানো গৌরব ফেরাতে, পুতুল সরকার নয় একজন সত্যিকারের লড়াকু নেতাকে শাসকের আসনে বসাতে। মনে রাখবেন কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার অর্থ বিজেপিকে ভোট দেওয়া। এনপিপিকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া। ওরা এতদিন আপনাদের বোকা বানিয়েছে, এখন সময় এসেছে ওদের বোকা বানানোর ওদের দেখানো পথেই। সাফ কথা অভিষেকের। একইসঙ্গে সঙ্গে অভিষেক এটাও জানান, মাইকার্ড ও উইকার্ড-সহ তৃণমূল ইস্তাহারে যে ১০ প্রতিশ্রুতির কথা বলেছে ক্ষমতায় আসার ১ মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়িত করব আমরা।
আরও পড়ুন-সাগরদিঘি তৃণমূলেরই : ফিরহাদ
এদিন টিএমসি এবং জোড়া ফুলের মানে বুঝিয়ে বলেন অভিষেক। তাঁর কথায়, টি মানে ট্রাস্ট— এম মানে মস্ক এবং সি মানে চার্চ। অর্থাৎ সর্বধর্ম সমন্বয় ও বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য— এটাই টিএমসি৷ একই সঙ্গে মজার ছলে বলেন, টিএমসি-র আরও একটা মানে আছে। টি মানে ট্রাস্ট— এম মানে মুকুল সাংমা এবং সি মানে চার্লস পিনগ্রোপ। এরপরই তিনি বলেন, সব ভোট জোড়া ফুলে। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘সিজুর কে সিমথিও’।